ঢাকা ০৬:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

দাগনভূঞা ভারী বর্ষণে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে

শাখাওয়াত হোসেন টিপু, দাগনভূঞা
  • আপডেট সময় : ১০২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দাগনভূঞা অতিভারী বর্ষণে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এখানে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সব্বোর্চ ৪০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে ফেনী জেলা আবহাওয়া অফিস। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে জেলায় ও এটি সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমে এসেছে মারাত্মক বিপর্যয়। বিশেষ করে খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ, অফিসগামী লোকজন, বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে।
সরেজমিন ঘুরে গতকাল মঙ্গলবার (০৮ জুলাই) দেখা যায়, গত সোমবার থেকে টানা বর্ষণে দাগনভূঞা পৌর সভার ৬,৭,৮ ও নং ওয়ার্ডের গনিপুর, উদরাজপুর, রামানন্দপুর, কৃষ্ণরামপুর, বদরপুর, দাগনভূঞা নামার বাজার, বসুরহাট রোড, হাসপাতাল রোড, দাগনভূঞা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, একাডিমি রোড, ফাজিলেরঘাট রোড আলিপুর, ৭ নং মাতুভূঞা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সকাল থেকে সড়কে চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েন দাগনভূঞা বাসী। কোথাও কোথাও কোমর সমান পানি কোথাও হাটু সমান পানি দেখা যায়।
দাগনভূঞা পৌরসভার রাস্তা ছাড়া প্রায় গ্রাম অঞ্চলের প্রায় রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। অনেক এলাকার বাড়িতে পানি উঠে গিয়ে মারাত্মক কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। অনেকে বন্যা আক্রান্তের মত অবস্থা দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ছাড়া অতি বৃষ্টির কারণে দাগনভূঞার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
দাগনভূঞা থানার সামনে রৌশন আরা বেগম জানান, গত মঙ্গলবার সকাল থেকে অবিরাম বর্ষণে আমাদের বাড়িতে পানি উঠে যায়। এতে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আসবাবপত্র নিয়ে এক আত্নীয়ের বাসায় চলে যাচ্ছি।
দাগনভূঞা একাডেমির শিক্ষক মাওলানা গাজী ছালাহ উদ্দিন জানান, আমাদের স্কুলে পানি উঠে মাঠ ডুবে রয়েছে। স্কুলের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
দাগনভূঞা সুলতান মার্কেটের ব্যবসায়ী সুমন পাটোয়ারী বলেন, চৌমুহনী রোড়ে পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক না থাকার কারনে মার্কেটে পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
দাগনভূঞা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী মেডিকেল অফিসার ডাঃ আলাউদ্দিন বলেন, অতিভারী বর্ষনে উপস্বাস্থ্য পানি উঠে যাওয়ার আজকে রোগীদের সেবা দেওয়া যায়নি।
এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনগুলোর সঙ্গে কোন খালের সংযোগ স্থাপন করা হয়নি। দাগনভূঞা শহরের বিগত বছরগুলোতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ দাদনার খাল অবৈধ দখলদারদের কবলে। দাগনভূঞাবাসী অবিলম্বে এসব খাল উদ্ধার করে পানি প্রবাহের পথ উন্মুক্ত করার দাবি জানান।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, গত সোমবার (৭ জুলাই) বেলা ১২টা থেকে মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত (২৪ ঘণ্টায়) আবহাওয়া অফিস ফেনীতে বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ৪০৬ মিলিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় এটি এ মৌসুমের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় বৃষ্টিপাত আরও বাড়ার সম্ভবানা রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার নাগাদ বৃষ্টিপাত কমে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানান, মুহুরী নদীর পানি এখনো বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে ভারি বৃষ্টি হলে নদীর পানি বাড়বে। ভাঙন রোধে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। তাছাড়া বন্যার কোনো সম্ভবনা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। তিনি সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দাগনভূঞা পৌর প্রশাসক ও দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স ম আজহারুল ইসলাম জানান, এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য কাজ করা হচ্ছে । দাদনার খালও পরিষ্কারের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। দাগনভূঞা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে যে খাল রয়েছে সেটিও পৌর সভার উদ্যেগে পরিষ্কার করা হয়েছে। যে অংশ বাকি আছে সে অংশটুকু আগামি কাল থেকে কাজ শুরু হবে। এরইমধ্যে পানি নামতে শুরু করছে। অতি বর্ষণ বন্ধ হলে আশা করি পানি পুরোপুরি নেমে যাবে। এজন্য পৌরবাসীকে তিনি ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

দাগনভূঞা ভারী বর্ষণে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে

আপডেট সময় :

দাগনভূঞা অতিভারী বর্ষণে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এখানে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সব্বোর্চ ৪০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে ফেনী জেলা আবহাওয়া অফিস। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে জেলায় ও এটি সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমে এসেছে মারাত্মক বিপর্যয়। বিশেষ করে খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ, অফিসগামী লোকজন, বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে।
সরেজমিন ঘুরে গতকাল মঙ্গলবার (০৮ জুলাই) দেখা যায়, গত সোমবার থেকে টানা বর্ষণে দাগনভূঞা পৌর সভার ৬,৭,৮ ও নং ওয়ার্ডের গনিপুর, উদরাজপুর, রামানন্দপুর, কৃষ্ণরামপুর, বদরপুর, দাগনভূঞা নামার বাজার, বসুরহাট রোড, হাসপাতাল রোড, দাগনভূঞা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, একাডিমি রোড, ফাজিলেরঘাট রোড আলিপুর, ৭ নং মাতুভূঞা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সকাল থেকে সড়কে চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েন দাগনভূঞা বাসী। কোথাও কোথাও কোমর সমান পানি কোথাও হাটু সমান পানি দেখা যায়।
দাগনভূঞা পৌরসভার রাস্তা ছাড়া প্রায় গ্রাম অঞ্চলের প্রায় রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। অনেক এলাকার বাড়িতে পানি উঠে গিয়ে মারাত্মক কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। অনেকে বন্যা আক্রান্তের মত অবস্থা দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ছাড়া অতি বৃষ্টির কারণে দাগনভূঞার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
দাগনভূঞা থানার সামনে রৌশন আরা বেগম জানান, গত মঙ্গলবার সকাল থেকে অবিরাম বর্ষণে আমাদের বাড়িতে পানি উঠে যায়। এতে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আসবাবপত্র নিয়ে এক আত্নীয়ের বাসায় চলে যাচ্ছি।
দাগনভূঞা একাডেমির শিক্ষক মাওলানা গাজী ছালাহ উদ্দিন জানান, আমাদের স্কুলে পানি উঠে মাঠ ডুবে রয়েছে। স্কুলের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
দাগনভূঞা সুলতান মার্কেটের ব্যবসায়ী সুমন পাটোয়ারী বলেন, চৌমুহনী রোড়ে পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক না থাকার কারনে মার্কেটে পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
দাগনভূঞা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী মেডিকেল অফিসার ডাঃ আলাউদ্দিন বলেন, অতিভারী বর্ষনে উপস্বাস্থ্য পানি উঠে যাওয়ার আজকে রোগীদের সেবা দেওয়া যায়নি।
এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনগুলোর সঙ্গে কোন খালের সংযোগ স্থাপন করা হয়নি। দাগনভূঞা শহরের বিগত বছরগুলোতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ দাদনার খাল অবৈধ দখলদারদের কবলে। দাগনভূঞাবাসী অবিলম্বে এসব খাল উদ্ধার করে পানি প্রবাহের পথ উন্মুক্ত করার দাবি জানান।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, গত সোমবার (৭ জুলাই) বেলা ১২টা থেকে মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত (২৪ ঘণ্টায়) আবহাওয়া অফিস ফেনীতে বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ৪০৬ মিলিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় এটি এ মৌসুমের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় বৃষ্টিপাত আরও বাড়ার সম্ভবানা রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার নাগাদ বৃষ্টিপাত কমে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানান, মুহুরী নদীর পানি এখনো বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে ভারি বৃষ্টি হলে নদীর পানি বাড়বে। ভাঙন রোধে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। তাছাড়া বন্যার কোনো সম্ভবনা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। তিনি সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দাগনভূঞা পৌর প্রশাসক ও দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স ম আজহারুল ইসলাম জানান, এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য কাজ করা হচ্ছে । দাদনার খালও পরিষ্কারের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। দাগনভূঞা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে যে খাল রয়েছে সেটিও পৌর সভার উদ্যেগে পরিষ্কার করা হয়েছে। যে অংশ বাকি আছে সে অংশটুকু আগামি কাল থেকে কাজ শুরু হবে। এরইমধ্যে পানি নামতে শুরু করছে। অতি বর্ষণ বন্ধ হলে আশা করি পানি পুরোপুরি নেমে যাবে। এজন্য পৌরবাসীকে তিনি ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।