দেশজুড়ে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি, পুলিশের বাধা-আটক
- আপডেট সময় : ০৬:০১:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪ ১৩৪ বার পড়া হয়েছে
দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার ওপর চালানো গণহত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা, মামলা, গুম ও খুনের প্রতিবাদে দেশজুড়ে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুধবার (৩১ জুলাই) আদালত, ক্যাম্পাস ও রাজপথে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনকারীরা।
কর্মসূচীতে অংশ নিতে সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দোয়েল চত্বরে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে ওঠে স্লোগানের ঝড়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।
শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে সংহতি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ। যৌক্তিক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার কথা জানান তারা। এদিন বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে আইনজীবীরা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি নিয়ে শিক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট মাজার গেট পেরিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভবনের সামনে মিছিল করেন। যদিও প্রথমে মাজার গেট এলাকায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে তারা সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় প্রবেশ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টার মতো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে অবস্থান শেষে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে শতাধিক শিক্ষার্থীরা মাজার গেটের সামনে অবস্থান নেন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, গ্রিন ইউনিভার্সির্টি, ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মিছিল নিয়ে মাজার গেটের সামনে যায়।
বরিশাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। রাজপথ থেকে তাদের হটানোর চেষ্টা করলে উভয় পক্ষে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। কোথাও কোথাও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়। ঘটনাস্থলে কমপক্ষে ৫০ জনকে আটক করে পুলিশ।
দেশের জেলায় জেলায় আদালতের সামনে অবস্থান নিয়ে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করেন। বাধা হয়ে দাঁড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসলে অবশেষে করা হয় লাঠিচার্জ।
মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালনে বরিশালের সদর রোডে প্রথমে জড়ো হন আন্দোলনরতরা। বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশের বাধা অতিক্রম করেই এগিয়ে যান আন্দোলনকারীরা। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পরবর্তীতে সদর রোড থেকে কাকলী সিনেমা হলের সামনে আবারও জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।
জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি এবং ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবিও তুলে ধরেন তারা। পুলিশের বাধা অতিক্রম করেই পরবর্তীতে কোর্ট চত্বরে অবস্থান নেন তারা। এ সময় পুলিশের পাশাপাশি রাজপথে বিজিবিও অবস্থান নেয়। এ ঘটনায় অনন্ত ১০ জন আহত হয়েছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে মার্চ ফর জাস্টিস পদযাত্রা কর্মসূচিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা। সকাল সাড়ে ১১টায় নগরের কোতোয়ালির লালদীঘির পাড় এলাকার জেলা পরিষদ ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। পরে আইনজীবীদের একপক্ষ আন্দোলনে যোগ দিলে তাদের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা আদালত চত্বরে অবস্থান নেন।
পুলিশ আধাঘণ্টার মধ্যে সড়ক থেকে সরে আসতে তাদের আল্টিমেটাম দেয়। এ সময় আইনজীবীদের একটি দল মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়। পরে শিক্ষার্থী ও আইনজীবীদের সম্মিলিত দলটি মিছিল নিয়ে আইনজীবী ভবনের সামনে অবস্থান নেয়।
ঠাকুরগাঁওয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। জেলা শহরের একাত্তরের অপরাজেয় চত্বরে আন্দোলনকারীরা জড়ো হলে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। পরে আন্দোলনরতরা তা ভেঙে মূল শহরের দিকে গিয়ে আদালত চত্বরে অবস্থান নেন।
যশোরেও নয় দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলের চেষ্টা করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা আবারও জড়ো হয়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা। এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হলে পুলিশের দাবি, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া হচ্ছে।
খুলনার রয়্যাল মোড় এলাকায় আন্দোলনকারীদের জড়ো হতে দেয়নি পুলিশ; বরং আটক করা হয় ৩০ জনকে। দিনাজপুরে শহীদ মিনার চত্বরে বৈষম্যবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালীন ১০ জনকে আটক হয়। এদিকে, শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতা ও একাত্মতা ঘোষণা করে ঘণ্টাব্যাপী চলা অবস্থান কর্মসূচিতে নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের অর্ধশতাধিক শিক্ষক।
গাইবান্ধায় নীপিড়নের প্রতিবাদে উদীচি শিল্পী গোষ্ঠী প্রতিবাদ সমাবেশ করে।