ধেয়ে আসছে মহামারী করোনা সীমান্ত ও বন্দরে সতর্কতা জারি

- আপডেট সময় : ০৩:২৮:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫ ৪ বার পড়া হয়েছে
প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে মানুষের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ থেকে করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। তাই সংক্রমণ এড়াতে দেশের সব নৌ, স্থল ও আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে স্ক্রিনিংসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মানার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যেক বন্দর ও সীমান্তের চেকপপোষ্টের হেলখ সেন্টারে প্রবেশের ক্ষেত্রে যাত্রীদের স্ক্রিনিংসহ সকল পরিক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভারতসহ বিভিন্ন সংক্রমিত দেশ থেকে আগত সন্দেহজনক যাত্রীদের দেশের স্থল, নৌ বন্দর ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ও আইএইচআর হেলথ ডেস্কের সহায়তার বিষয়ে স্বাস্থ্য বার্তা প্রদান এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিবিড়ভাবে পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, বাংলাদেশে মহামারী কোভিড-১৯ বা করোনার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ২ জনের মৃত্যুও খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি কোভিড ১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। পরিক্ষা নিরীক্ষায় চার জনের তিনজনই করোনায় আক্রান্তে ধরা পড়েছে। এ কারনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও রোগ নিয়ন্ত্রনের পক্ষ থেকে সর্তক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের পরামর্শ মতে জনসমাগমে মাস্ক পরার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
দেশে আবারও ঊর্ধ্বমুখী কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক না হলেও তা কঠোরভাবে অনুসরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশেষভাবে বয়স্ক এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের জনবহুল স্থান এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সবাইকে মাস্ক ব্যবহার, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজার ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এবিষয়ে গত ৪ জুন রোগ নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য অধিদফতর মহাখালীর পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জেনেটিক সিকুয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, এসব স্থানে ওমিক্রন ধরনের (াধৎরধহঃ) খঋ.৭, ঢঋএ, ঔঘ.ও ধহফ ঘই.১.৮.১ উপধরনের কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। রোববার (৮ জুন) সকাল ১০টার দিকে সরেজমিনে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে দেখা গেছে, মেডিকেল ডেস্কে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের করোনার উপসর্গ আছে কি না তা যাচাই-বাছাই করতে দেখা গেছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার আব্দুল মজিদ বলেন, ভারতে জেনেটিক সিকুয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, ভারতের কিছু কিছু স্থানে ওমিক্রন ধরনের নতুন উপধরন সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে করোনার এ ধরনটি যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সতর্কতার জন্য ভারত ফেরত প্রত্যেক যাত্রীকে আমরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি।
তিনি বলেন, আমাদেরকে পরিচালক স্যার নির্দেশনা দিয়েছেন, যদি কারও শরীরে করোনা বা ওমিক্রনের উপধারার উপসর্গ পাওয়া যায় তাহলে যেন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন করে।
এদিকে গত ৫ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ দেশে করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ওইদিন থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় তিন জনের শরীরে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন আরও তিনজন। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনে। আর শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৩৯ জনে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময়ে শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। মোট করোনা পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এ নিয়ে করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৬০ জনে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদের তথ্য মতে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ হারের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় সবাইকে মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। বিশেষত বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের এ ধরনের স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের এই উদ্যোগ সময়োপযোগী। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকার পর আবারও কিছু এলাকায় নতুন করে কোভিড সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। এর ধারাবাহিকতায় কিছু এলাকায় স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।
অপরদিকে রাজশাহীতে আবারও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। গত দুই দিনে চারজন চিকিৎসকসহ মোট ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জানা যায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের পিসিআর ল্যাবে হত পহেলা জুন ও ২ জুন যথাক্রমে রোববার ও সোমবার ১৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে রোববার দুইজন এবং সোমবার নয়জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। সোমবার শনাক্ত হওয়া ৯ জনের মধ্যে ৪ জন চিকিৎসক রয়েছেন। আক্রান্তদের অধিকাংশের হালকা জ্বর, সর্দি, কাশি ও গা ব্যথার উপসর্গ দেখা গেছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. খন্দকার মো. ফয়সাল আলম বলেন, রোববার দুইজনের করোনা পরীক্ষা করা হলে তারা পজিটিভ হন। তাদের একজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এবং তার শ্বাসকষ্ট রয়েছে। সোমবার ১৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে, যাদের মধ্যে ৪ জন চিকিৎসক রয়েছেন। আক্রান্তদের উপসর্গ প্রায় একই ধরনের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও একই উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রাজশাহী অঞ্চলে শুধুমাত্র রাজশাহী মেডিকেল কলেজেই করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব গত বছর থেকেই বন্ধ থাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় কলেজের ল্যাবে এ পরীক্ষা পরিচালনা করা হয়।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চারজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে তিনজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সবাই ঢাকার বাসিন্দা। এছাড়া করোনা শনাক্তের হার ৭৫ শতাংশ। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ২৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
অন্যদিকে গত একদিনে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৬ জন। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৩ জন করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে। এছাড়া প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে এখন পর্যন্ত দেশে ২৯ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।