নন্দীগ্রাম ২০ শয্যা হাসপাতালে ২০ বছরেও চালু হয়নি ইনডোর সেবা
- আপডেট সময় : ৩৫ বার পড়া হয়েছে
২০ বছর আগের কথা। ২০০২ সালের ৮ মার্চ বিএনপির তৎকালীন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলায় ২০ শয্যা হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৬ সালে ১৮ অক্টোবর হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা। আজও পুরোপুরি চালু হয়নি হাসপাতালটির আন্তঃবিভাগ।
হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয় হয় ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। সিএমএমইউ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ কাজ বাস্তবায়ন করে। এত টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাসপাতালটি দুই যুগেও পুরোপুরি চালু না হওয়ায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী। চারটি ভবন দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় এতে ফাটল ধরেছে। বিভিন্ন অংশ ধসে পড়েছে। ময়লা আবর্জনায় ভরা জরাজীর্ণ হাসপাতালের দরজা, লোহার গ্রিল ও জানালার গ্লাস ভেঙে গেছে। পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান আসবাব ও যন্ত্রপাতি। এ অবস্থায় প্রধান ফটকসহ বেশির ভাগ কক্ষেই ঝুলছে তালা।
এদিকে হাসপাতালটির এ অবস্থার জন্য আওয়ামী লীগ-বিএনপি একে অপরকে দায়ী করে। একপক্ষের অভিযোগ, জনবল নিয়োগ না দিয়ে শুধু রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে বিএনপি সরকারের আমলে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়েছে। অন্যপক্ষ বলছে, বিএনপি সরকারের আমলে প্রকল্প হওয়ায় দলীয় সংকীর্ণতার কারণে আওয়ামী লীগ সরকার হাসপাতালটি চালু করেনি।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উপজেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে ভাটগ্রাম ইউনিয়নের বিজরুল বাজারে অবস্থিত। উপজেলা সদরে কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় পৌর শহরসহ আশপাশের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। এ কারণে তারা পৌর এলাকায় একটি আধুনিকমানের হাসপাতাল নির্মাণের দাবি তোলেন। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০ বছর আগে পৌর এলাকায় ২০ শয্যার অত্যাধুনিকমানের হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।
সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কথা হয় ডা. দিগন্তময় সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার কর্মস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এখানে মেডিকেল অফিসার নেই। তাই আমাকে আনা হয়েছে। এখানে আলট্রাসনোগ্রাম ছাড়া আর কোনো রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। ওষুধও নেই। রোগীরা যতক্ষণ থাকে আমি ততক্ষণ এখানে থাকি।’
চিকিৎসা নিতে আসা কালিকাপুর গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা সনিয়া খাতুন, কলেজপাড়ার জাহেরা বেগম ও ফোকপাল গ্রামের নূরুল ইসলাম জানান, এখান থেকে শুধু ওষুধ লেখে দেওয়া হয়। বড় কোনো সমস্যার সমাধান এখানে হয় না। ওষুধও পাওয়া যায় না। আমরা জরুরি ভিত্তিতে ২০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম পুরোপুরি চালুর দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তোফাজ্জল হোসেন মণ্ডল বলেন, জনবলের অভাবে হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাচ্ছে না। তবে চালুর প্রক্রিয়া রয়েছে। ২০ শয্যা অত্যাধুনিক এ হাসপাতালে চিকিৎসক, সেবিকা, চিকিৎসা সহকারী, ওষুধবিদ, ওয়ার্ডবয়, অফিস সহকারী, ল্যাব অ্যাটেনডেন্টসহ ১৩টি পদ রয়েছে। একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে হাসপাতালের আউটডোর চালু রাখা হয়েছে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা বলেন, নন্দীগ্রামসহ আশপাশের মানুষের চিকিৎসা সেবার কথা চিন্তা করে বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে ২০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর হাসপাতালের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আশা করি, আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করলে পুরোদমে হাসপাতালের সব সেবা চালু হবে।



















