ঢাকা ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::

নানামুখী ষড়যন্ত্রে বাড়ছে অস্থিরতা

মহিউদ্দিন তুষার
  • আপডেট সময় : ০৮:১১:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১৩৯ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

# আ.লীগের প্রথম সারির প্রায় ২০০ শ’ পলাতক নেতা পশ্চিমবঙ্গে
# জেলা-উপজেলা স্তরের ১ হাজারের বেশি সভাপতি-সম্পাদক ভারতে
# নিয়মিতই দেখা সাক্ষাৎ করছেন কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী এলাকার পলাতকরা
# ইউরোপসহ বিশ্বের নানা দেশে পলাতক শতাধিক নেতা-নেত্রী
# ফোন কলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের হুমকি
# ৩২ ভাঙ্গার জড়িতদের জবাইয়ের হুমকি ছাত্রলীগ নেতার

পালিয়ে গিয়েও দেশকে অস্থিতিশীল করতে উসকানি দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। উসকানির কারনে প্রতিদিনই দেশের কোথায় না কোথায় অনাকাক্ষিত ঘটনা ঘটছে। গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর ছয় মাসের মাথায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। ড. ইউনূস সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আগামী ১৬ ও ১৮ই ফেব্রুয়ারি হরতাল-অবরোধের ডাক দেয় আওয়ামীলীগ। নিজেদের দাবির পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী দুই সপ্তাহ সারা দেশে লিফলেট বিতরণ ও বিক্ষোভ-সমাবেশ পালনেরও ঘোষণা দিলেও মাঠের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

৫ আগস্টেও পরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ ভারতে পালিয়ে পালিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের একটা বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গে আছেন। কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়, কেউ দিল্লিতে, কেউ আবার ত্রিপুরায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। ইউরোপ সহ অন্যান্য দেশেও আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ কেউ অবস্থান করছেন। এদের কেউ ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে আসার পরেই পালিয়ে ভারতে আসেন, কেউ আবার কয়েক মাস পরে এসেছেন। প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে অন্তত ২০০ জন পশ্চিমবঙ্গে বাস করছেন। এই শ্রেণির নেতাদের মধ্যে যেমন আছেন দল এবং সাবেক সরকারের শীর্ষ পদাধিকারী এবং মন্ত্রীরা, তেমনই আছেন প্রায় ৭০ জন সংসদ সদস্যও।

বাকিদের মধ্যে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার, পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের অনেক জেলা সভাপতি-সম্পাদকরা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাও। প্রথম সারির নেতা এবং সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও জেলা-উপজেলা স্তরের সভাপতি-সম্পাদক, জুনিয়র এবং কম গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামী লীগ নেতাদের সংখ্যাটা প্রায় এক হাজারের বেশি। ভারতের বাইরে ইউরোপসহ বিশ্বের নানা দেশেই আওয়ামী লীগ নেতা-নেত্রীরা আছেন। ভারত এবং অন্যান্য দেশে যে সব আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপন করে আছেন, তাদের মূল যোগাযোগের মাধ্যম এখন হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামের মতো নানা ডিজিটাল মাধ্যম।

যারা কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী এলাকায় আছেন, নিয়মিতই তাদের দেখা সাক্ষাৎ হয় একে অন্যের বাসায় যান। আর সারা বিশ্বে এবং বাংলাদেশে কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ হয় মূলত ডিজিটাল মাধ্যমে, জানাচ্ছেন আত্মগোপনে থাকা একাধিক নেতা। আত্মগোপনে থাকা নেতারা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রামে অনেক গ্রুপ তৈরি করেছে নানা স্তরে যোগাযোগ রক্ষার জন্য। উপজেলা, জেলা ভিত্তিক এবং জাতীয় স্তরে, সহযোগী সংগঠনগুলোর নানা স্তরে যেমন গ্রুপ আছে, তেমনই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক-বিহীন এরকম নামেও গ্রুপ রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের নেতা-কর্মীরা যেমন পোস্ট করছেন, তেমনই নানা নির্দেশ যাচ্ছে আত্মগোপনে থাকা নেতৃত্বের তরফ থেকে।

ওইসব গ্রুপ গুলোতে নিয়মিত ভয়েস চ্যাটও হয়, মতামত বিনিময় করেন নেতা-কর্মীরা। যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ, সেসব কেমন ভাবে চলছে বাংলাদেশের নানা এলাকায়, সেই সব ছবি ভিডিও ওই গ্রুপ গুলোতে নিয়মিত শেয়ার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আবার কোন এলাকায় কোন আওয়ামী লীগ নেতার ওপরে হামলা হলো বা কাকে গ্রেফতার করল পুলিশ, সেই সব তথ্যও গ্রুপ গুলোতে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আত্মগোপনকারী কয়েকজন নেতা। এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা যত ভাষণ দিয়েছেন, তার সবই অডিওতে। পাঁচ আগস্টের পর থেকে তার ভিডিও এখনও দেখা যায়নি।

ক্ষমতাচ্যুতির ৬ মাস পর প্রথমবার জনসম্মুখে ভাষণ দেয় ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা। সেই লাইভ ভাষণ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ হয় দেশের ছাত্র-জনতাসহ তরুণ প্রজন্ম। হাসিনার উসকানির জেরে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা। শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের পাল্টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে দেওয়া বুলডোজার মিছিল কর্মসূচি কেবল সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ঐ দিন রাতেই আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডি ৫-এ শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে।

শুধু ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি আর হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেই নয় ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের ম্যুরাল ভাঙচুর, আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি ও আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

বিদেশে থেকেই বিভিন্ন দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আবারও ক্ষমতায় আসার জন্য গোপনে আঁকছেন নীলনকশা। এর ফলে মাঝেমধ্যেই সামনে আসতে থাকে শেখ হাসিনাসহ দলটির নেতাদের একাধিক ফোনালাপ। এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি ফোন কল। ভাইরাল হওয়া ফোন কলে দেখা যায় জাহাঙ্গীর আলম ফোন কলে নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরার কথা বলে তিনি বলেন আমাদের সব টিম রেডি আছে। আমাদের সম্রাট ভাই এখানে আছে। রাজধানীতে আমাদের মানুষ দিনে শান্তিতে ঘুরতে পারবে না, চলতে পারবে না, সেই রাজধানীর মানুষ রাতে ঘুমাতে পারবে না। আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, যে রাজধানীতে আমরা দিনে থাকতে পারব না সেই রাজধানীর মানুষের ঘুম আল্লাহ দিবে না। আমরা সেইভাবে আমাদের তৈরি করে নিয়েছি।

গাজীপুর মহানগরের ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর চালানো হামলাটি ছিল সুপরিকল্পিত। ন্যক্কারজনক এ হামলার পেছনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। ছাত্রদের দাবি, পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকে ওত পেতে থাকা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়- সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেলের বাসায় ডাকাত পড়েছে। পরে ওই সন্ত্রাসী ও এলাকাবাসী জড়ো হয়ে ছাত্রদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

ধানমণ্ডি ৩২সহ বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ও জাতীয় চার নেতার স্মৃতিফলক ভাঙার সঙ্গে জড়িতদের জনসম্মুখে জবাই করার হুমকি দিয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক। গত বুধবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রফাইলের এক পোস্টে তিনি এ হুমকি দেন। অভিযুক্ত আসাদুল্লা-হিল গালিব বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া খেয়ে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যান তিনি। বর্তমানে পলাতল রয়েছে।

এমপি/ এএটি

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নানামুখী ষড়যন্ত্রে বাড়ছে অস্থিরতা

আপডেট সময় : ০৮:১১:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

# আ.লীগের প্রথম সারির প্রায় ২০০ শ’ পলাতক নেতা পশ্চিমবঙ্গে
# জেলা-উপজেলা স্তরের ১ হাজারের বেশি সভাপতি-সম্পাদক ভারতে
# নিয়মিতই দেখা সাক্ষাৎ করছেন কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী এলাকার পলাতকরা
# ইউরোপসহ বিশ্বের নানা দেশে পলাতক শতাধিক নেতা-নেত্রী
# ফোন কলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের হুমকি
# ৩২ ভাঙ্গার জড়িতদের জবাইয়ের হুমকি ছাত্রলীগ নেতার

পালিয়ে গিয়েও দেশকে অস্থিতিশীল করতে উসকানি দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। উসকানির কারনে প্রতিদিনই দেশের কোথায় না কোথায় অনাকাক্ষিত ঘটনা ঘটছে। গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর ছয় মাসের মাথায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। ড. ইউনূস সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আগামী ১৬ ও ১৮ই ফেব্রুয়ারি হরতাল-অবরোধের ডাক দেয় আওয়ামীলীগ। নিজেদের দাবির পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী দুই সপ্তাহ সারা দেশে লিফলেট বিতরণ ও বিক্ষোভ-সমাবেশ পালনেরও ঘোষণা দিলেও মাঠের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

৫ আগস্টেও পরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ ভারতে পালিয়ে পালিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের একটা বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গে আছেন। কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়, কেউ দিল্লিতে, কেউ আবার ত্রিপুরায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। ইউরোপ সহ অন্যান্য দেশেও আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ কেউ অবস্থান করছেন। এদের কেউ ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে আসার পরেই পালিয়ে ভারতে আসেন, কেউ আবার কয়েক মাস পরে এসেছেন। প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে অন্তত ২০০ জন পশ্চিমবঙ্গে বাস করছেন। এই শ্রেণির নেতাদের মধ্যে যেমন আছেন দল এবং সাবেক সরকারের শীর্ষ পদাধিকারী এবং মন্ত্রীরা, তেমনই আছেন প্রায় ৭০ জন সংসদ সদস্যও।

বাকিদের মধ্যে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার, পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের অনেক জেলা সভাপতি-সম্পাদকরা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাও। প্রথম সারির নেতা এবং সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও জেলা-উপজেলা স্তরের সভাপতি-সম্পাদক, জুনিয়র এবং কম গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামী লীগ নেতাদের সংখ্যাটা প্রায় এক হাজারের বেশি। ভারতের বাইরে ইউরোপসহ বিশ্বের নানা দেশেই আওয়ামী লীগ নেতা-নেত্রীরা আছেন। ভারত এবং অন্যান্য দেশে যে সব আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপন করে আছেন, তাদের মূল যোগাযোগের মাধ্যম এখন হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামের মতো নানা ডিজিটাল মাধ্যম।

যারা কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী এলাকায় আছেন, নিয়মিতই তাদের দেখা সাক্ষাৎ হয় একে অন্যের বাসায় যান। আর সারা বিশ্বে এবং বাংলাদেশে কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ হয় মূলত ডিজিটাল মাধ্যমে, জানাচ্ছেন আত্মগোপনে থাকা একাধিক নেতা। আত্মগোপনে থাকা নেতারা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রামে অনেক গ্রুপ তৈরি করেছে নানা স্তরে যোগাযোগ রক্ষার জন্য। উপজেলা, জেলা ভিত্তিক এবং জাতীয় স্তরে, সহযোগী সংগঠনগুলোর নানা স্তরে যেমন গ্রুপ আছে, তেমনই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক-বিহীন এরকম নামেও গ্রুপ রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের নেতা-কর্মীরা যেমন পোস্ট করছেন, তেমনই নানা নির্দেশ যাচ্ছে আত্মগোপনে থাকা নেতৃত্বের তরফ থেকে।

ওইসব গ্রুপ গুলোতে নিয়মিত ভয়েস চ্যাটও হয়, মতামত বিনিময় করেন নেতা-কর্মীরা। যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ, সেসব কেমন ভাবে চলছে বাংলাদেশের নানা এলাকায়, সেই সব ছবি ভিডিও ওই গ্রুপ গুলোতে নিয়মিত শেয়ার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আবার কোন এলাকায় কোন আওয়ামী লীগ নেতার ওপরে হামলা হলো বা কাকে গ্রেফতার করল পুলিশ, সেই সব তথ্যও গ্রুপ গুলোতে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আত্মগোপনকারী কয়েকজন নেতা। এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা যত ভাষণ দিয়েছেন, তার সবই অডিওতে। পাঁচ আগস্টের পর থেকে তার ভিডিও এখনও দেখা যায়নি।

ক্ষমতাচ্যুতির ৬ মাস পর প্রথমবার জনসম্মুখে ভাষণ দেয় ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা। সেই লাইভ ভাষণ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ হয় দেশের ছাত্র-জনতাসহ তরুণ প্রজন্ম। হাসিনার উসকানির জেরে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা। শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের পাল্টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে দেওয়া বুলডোজার মিছিল কর্মসূচি কেবল সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ঐ দিন রাতেই আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডি ৫-এ শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে।

শুধু ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি আর হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেই নয় ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের ম্যুরাল ভাঙচুর, আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি ও আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

বিদেশে থেকেই বিভিন্ন দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আবারও ক্ষমতায় আসার জন্য গোপনে আঁকছেন নীলনকশা। এর ফলে মাঝেমধ্যেই সামনে আসতে থাকে শেখ হাসিনাসহ দলটির নেতাদের একাধিক ফোনালাপ। এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি ফোন কল। ভাইরাল হওয়া ফোন কলে দেখা যায় জাহাঙ্গীর আলম ফোন কলে নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরার কথা বলে তিনি বলেন আমাদের সব টিম রেডি আছে। আমাদের সম্রাট ভাই এখানে আছে। রাজধানীতে আমাদের মানুষ দিনে শান্তিতে ঘুরতে পারবে না, চলতে পারবে না, সেই রাজধানীর মানুষ রাতে ঘুমাতে পারবে না। আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, যে রাজধানীতে আমরা দিনে থাকতে পারব না সেই রাজধানীর মানুষের ঘুম আল্লাহ দিবে না। আমরা সেইভাবে আমাদের তৈরি করে নিয়েছি।

গাজীপুর মহানগরের ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর চালানো হামলাটি ছিল সুপরিকল্পিত। ন্যক্কারজনক এ হামলার পেছনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। ছাত্রদের দাবি, পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকে ওত পেতে থাকা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়- সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেলের বাসায় ডাকাত পড়েছে। পরে ওই সন্ত্রাসী ও এলাকাবাসী জড়ো হয়ে ছাত্রদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

ধানমণ্ডি ৩২সহ বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ও জাতীয় চার নেতার স্মৃতিফলক ভাঙার সঙ্গে জড়িতদের জনসম্মুখে জবাই করার হুমকি দিয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক। গত বুধবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রফাইলের এক পোস্টে তিনি এ হুমকি দেন। অভিযুক্ত আসাদুল্লা-হিল গালিব বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া খেয়ে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যান তিনি। বর্তমানে পলাতল রয়েছে।

এমপি/ এএটি