নামাজ শেষে নেচে গেয়ে দেশবাসীর ঈদ উদযাপন

- আপডেট সময় : ০৩:৫৫:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫ ৪৮ বার পড়া হয়েছে
মোনাজাতে জুলাই শহীদদের শান্তি কামনা
ঈদ মানে খুশি। এক মাস রোজা রাখার পর ঈদের নামাজ শেষে বর্নাঢ্য আনন্দ মিছিল করে উৎসাহ উদ্দীপনায় নেচে গেয়ে দিনটি কাটাল দেশবাসী। ঈদ আনন্দের দিন হলেও বিগত বছরগুলোতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব পালনে ছিল নানা বিধিনিষেধ, ছিল ভয়, শঙ্কা ও গ্রেপ্তারের আতঙ্ক। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পূর্বে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জন্য দিনটি ছিল আতঙ্কের। স্বাধীনভাবে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারেননি অনেক নেতাকর্মী। তবে পতিত সরকার পতনের পর ঈদ উদযাপনে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। আজ ঈদের দিন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠন কর্মীরা একত্রে ঈদ উদযাপন করছে। সারাদেশের বিভাগীয় এবয় জেলা ও থানা পর্যায়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করছে নানা কর্মসূচি।
এদিন জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত ঈদের নামাজ আদায় করলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঈদের এ জামাতে আরও অংশগ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ হাজারো মুসল্লিরা।
এবারের ঈদে ভিন্ন চিত্র দেখা যায় যে, সব রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতো করে ঈদ উদযাপন করতে থাকেন। কোনো ভয় বা বাধা ছাড়াই।এ ছাড়াও এদিন ঢাকাতে সুলতানি মোঘল আমলের কায়দায় ঈদ আনন্দ মিছিল শুরু হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় এ আনন্দ মিছিল। যেখানে অংশ নিয়েছে অসংখ্য মানুষ। মিছিলটি আগারগাঁওয়ের প্রধান সড়ক দিয়ে খামারবাড়ি মোড় হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে গিয়ে শেষ হবে।
ঈদের জামাত শেষে শুরু হয় ব্যান্ডপার্টির বাজনা, যেখানে বাজতে থাকে জনপ্রিয় ঈদ গান ‘ও মোর রমজানের ওই রোজার শেষে’। গান ও বাজনার তালে মেতে ওঠে হাজারো মানুষ। তবে মিছিলের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল পাঁচটি ঘোড়ার গাড়ি। পরে মিছিলে মোট ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি যোগ হয়। ঘোড়ার গাড়িগুলোর অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আনন্দ-উল্লাসে আরও বাড়িয়ে তোলে। এটি ছিল ঢাকার ঈদ উৎসবের এক বিরল মুহূর্ত, যা সুলতানি ও মোঘল আমলের ঐতিহ্যের স্মৃতিকে নতুন করে জাগিয়ে তুলল।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আয়োজনে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার সকাল সাড়ে আটটায় ঈদের জামাত শুরু হয়। জামাতে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।
এই জামাত ও আনন্দমিছিলে অংশ নেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে তিনি গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, এবারের ঈদটাকে সত্যিকার অর্থেই ঈদ ঈদ মনে হচ্ছে। ঢাকার যে ঐতিহ্যবাহী ঈদ মিছিল, সেটা হয়তো কয়েক শ বছর পর আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। আগামী দিনে প্রতিবছর এভাবেই নগরবাসী এক হয়ে ঈদ উদ্যাপন করবে। এখন থেকে ঈদ উৎসব হবে আনন্দময়। ঘরে বসে টিভি দেখে সময় কাটাতে হবে না। সবাই একসঙ্গে ঈদ মিছিল করবে, মেলা উপভোগ করবে, সবাই একসঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেবে।
জামাতের পর সবাইকে নিয়ে বের হয় এক বর্ণাঢ্য আনন্দমিছিল। মিছিলটি আগারগাঁও থেকে শুরু হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানেই অনুষ্ঠিত হয় একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে সেমাই ও মিষ্টি দিয়ে আগত সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়।
ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানান, ঈদের জামাতের জন্য পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রায় ৪৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের প্যান্ডেল করা হয়। প্যান্ডেলের বাইরেও নামাজ আদায়ের জন্য কার্পেট ও নামাজের বিছানা রাখা হয়। জামাত শুরুর আধঘণ্টা আগে সকাল আটটার দিকে নির্ধারিত প্যান্ডেল মুসল্লিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এর পরে যাঁরা আসেন, তাঁরা খোলা মাঠে নামাজে অংশ নেন।
আনন্দমিছিল শেষে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। উন্মুক্ত মঞ্চে জাসাসের শিল্পীরা ঈদের দর্শকপ্রিয় গান ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ’ গানটি পরিবেশন করেন। এর পর ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম, দেখা পাইলাম না’, ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’র মতো জনপ্রিয় গানগুলো শিল্পীরা পরিবেশন করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এ সময় সাধারণ মানুষদের সেমাই ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
আনন্দমিছিলে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা অংশগ্রহণ করেছেন জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ঈদের আনন্দ সকলের। ঈদের যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, ঈদের নামাজের পর ঘরে ঢুকে যাওয়া এবং শুধু নিজেদের পরিবারকে সময় দেওয়া, সেটার পরিবর্তন দরকার। কারণ, ঈদ মানেই জমায়েত, সমাজের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগই নেওয়া হয়েছে।