ঢাকা ০৪:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo জয়পুরহাটে স্ত্রীকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা স্বামীর Logo ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা শিল্পীরা Logo ডাকসু হল সংসদে মাগুরার জয়জয়কার: ছয় কৃতি মুখে গর্বিত জনপদ Logo ইসলামপুরে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত Logo জামালপুরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে স্মরণসভা Logo ঘাটাইলে স্বাধীন বাংলা মিনি ফুটবল টুর্নামেন্ট ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত Logo গৌরীপুরে ৩১ দফা বাস্তবায়ন ও দলকে নির্বাচন মুখী করতে বিএনপির আলোচনা সভা Logo গোলাপগঞ্জে শিশু ধর্ষনের মিথ্যা মামলার অভিযোগে মানববন্ধন Logo ভেদরগঞ্জে জমি বিক্রির বায়না নিয়ে প্রতারণায় পাল্টা পাল্টি অভিযোগ Logo খুনিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

নিঝুমদ্বীপে ঘরবাড়িতে হাঁটুপানি

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ১০২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিম্নচাপের প্রভাবে বিপর্যস্ত জনজীবন

বসতঘরের ভেতরে হাঁটুপানি, রান্নাঘর থেকে উঠান সবই এখন পানির রাজত্বে। স্তব্ধ চোখে দাঁড়িয়ে আছেন নিঝুমদ্বীপের বাসিন্দা মো. মিলন। তার চোখে হতাশা, মুখে কথা নেই। স্ত্রী-সন্তান ঠাঁই নিয়েছেন খাটের উপর, গবাদিপশুগুলো কোনোভাবে টিকে আছে গ্রামীণ কাঁচা সড়কে। চারদিকে শুধু পানি আর নীরবতা—যেন নিঝুমদ্বীপের প্রতিটি ঘরেই এখন এমন করুণ চিত্র।
শনিবার সকাল থেকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ। হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িঘর, দোকানপাট ও সড়কে। মাছের ঘের ভেসে গেছে, তলিয়ে গেছে শাকসবজি ও ধানের জমি। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। স্থানীয়রা জানান, জোয়ারের পানি এত দ্রুতগতিতে এসেছে যে, বাসিন্দাদের কিছুই করার সময় মেলেনি। শিশু, বৃদ্ধ ও নারীরা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন গাছতলায় বা টিনশেড ঘরের উঁচু জায়গায়। দ্বীপের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। মাছের ঘের, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মিলন নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি বলেন, আমাদের জীবন এমনই, সবসময় নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। এবারের বর্ষায় তেমন মাছও নেই। ঋণ করে চলছি, এখন বিপদে পড়ে গেছি। ঘরে চুলা জ্বালানোর মতো কিছু নেই। পুকুরে লবণ পানি ঢুকে মাছ মরছে, ফসল গেছে। আমাদের কষ্ট কেউ বোঝে না। নিঝুমদ্বীপের আরেক বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন, সকাল ১০টা থেকে টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেড়ে যাওয়ায় নামার বাজার, বন্দর কিল্লা, ইসলামপুর, মোল্লা গ্রামসহ পুরো নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন পানির নিচে চলে যায়। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। গরুর খাবার, মাছের ঘের সব ভেসে গেছে। আমরা অসহায়। নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কেফায়েত হোসেন বলেন, নিঝুমদ্বীপ এখন জলাবদ্ধতার দ্বীপে পরিণত হয়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় আমরা প্রতিবারই ডুবে যাই। এবার পুরো ইউনিয়ন পানির নিচে। হাজারো পরিবার এখন পানিবন্দি। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর এমন দুর্যোগে নিঝুমদ্বীপের মানুষ হারায় ঘরবাড়ি, হারায় জীবিকা। অথচ এখনও এখানে নেই পর্যাপ্ত বেড়িবাঁধ, নেই ত্রাণ বা টেকসই ব্যবস্থা। কবে মিলনেরা ঘরে ফিরতে পারবেন? কবে নিঝুম দ্বীপের মানুষ সত্যিকার অর্থে নিরাপদে বাঁচতে পারবে এই প্রশ্নই যেন ভাসছে পানির সাথে। হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিন বলেন, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় সবার জীবন অনেক সংগ্রামের। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে চলতে হয়। জোয়ারের পানি নামতে শুরু করেছে তবে রাতে আরেকবার জোয়ার হতে পারে। আমরা খোঁজ রাখছি। কোথাও কোনো ক্ষতি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নিঝুমদ্বীপে ঘরবাড়িতে হাঁটুপানি

আপডেট সময় :

নিম্নচাপের প্রভাবে বিপর্যস্ত জনজীবন

বসতঘরের ভেতরে হাঁটুপানি, রান্নাঘর থেকে উঠান সবই এখন পানির রাজত্বে। স্তব্ধ চোখে দাঁড়িয়ে আছেন নিঝুমদ্বীপের বাসিন্দা মো. মিলন। তার চোখে হতাশা, মুখে কথা নেই। স্ত্রী-সন্তান ঠাঁই নিয়েছেন খাটের উপর, গবাদিপশুগুলো কোনোভাবে টিকে আছে গ্রামীণ কাঁচা সড়কে। চারদিকে শুধু পানি আর নীরবতা—যেন নিঝুমদ্বীপের প্রতিটি ঘরেই এখন এমন করুণ চিত্র।
শনিবার সকাল থেকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ। হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িঘর, দোকানপাট ও সড়কে। মাছের ঘের ভেসে গেছে, তলিয়ে গেছে শাকসবজি ও ধানের জমি। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। স্থানীয়রা জানান, জোয়ারের পানি এত দ্রুতগতিতে এসেছে যে, বাসিন্দাদের কিছুই করার সময় মেলেনি। শিশু, বৃদ্ধ ও নারীরা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন গাছতলায় বা টিনশেড ঘরের উঁচু জায়গায়। দ্বীপের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। মাছের ঘের, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মিলন নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি বলেন, আমাদের জীবন এমনই, সবসময় নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। এবারের বর্ষায় তেমন মাছও নেই। ঋণ করে চলছি, এখন বিপদে পড়ে গেছি। ঘরে চুলা জ্বালানোর মতো কিছু নেই। পুকুরে লবণ পানি ঢুকে মাছ মরছে, ফসল গেছে। আমাদের কষ্ট কেউ বোঝে না। নিঝুমদ্বীপের আরেক বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন, সকাল ১০টা থেকে টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেড়ে যাওয়ায় নামার বাজার, বন্দর কিল্লা, ইসলামপুর, মোল্লা গ্রামসহ পুরো নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন পানির নিচে চলে যায়। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। গরুর খাবার, মাছের ঘের সব ভেসে গেছে। আমরা অসহায়। নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কেফায়েত হোসেন বলেন, নিঝুমদ্বীপ এখন জলাবদ্ধতার দ্বীপে পরিণত হয়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় আমরা প্রতিবারই ডুবে যাই। এবার পুরো ইউনিয়ন পানির নিচে। হাজারো পরিবার এখন পানিবন্দি। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর এমন দুর্যোগে নিঝুমদ্বীপের মানুষ হারায় ঘরবাড়ি, হারায় জীবিকা। অথচ এখনও এখানে নেই পর্যাপ্ত বেড়িবাঁধ, নেই ত্রাণ বা টেকসই ব্যবস্থা। কবে মিলনেরা ঘরে ফিরতে পারবেন? কবে নিঝুম দ্বীপের মানুষ সত্যিকার অর্থে নিরাপদে বাঁচতে পারবে এই প্রশ্নই যেন ভাসছে পানির সাথে। হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিন বলেন, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় সবার জীবন অনেক সংগ্রামের। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে চলতে হয়। জোয়ারের পানি নামতে শুরু করেছে তবে রাতে আরেকবার জোয়ার হতে পারে। আমরা খোঁজ রাখছি। কোথাও কোনো ক্ষতি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।