নিয়ন্ত্রহীন সবজির বাজার, সংসারের ঘানি টানতে দিশাহারা নিম্ন আয়ের মানুষ
- আপডেট সময় : ০১:১১:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪ ৭৯ বার পড়া হয়েছে
জামালপুরের ইসলামপুরে সব্জির চাষাবাদে সুনাম রয়েছে। এলাকাবাসী সব মৌসুমে তুলনামূলকভাবে সস্তায় সব্জি কেনায় অভ্যস্ত। কিন্তু ইদানিং সে আশার গুড়ে বালি।
যেখানে সব্জির উৎপাদন, সেখানেই সব্জির উচ্চমূল্য। একসময়ে এ অঞ্চলের বসবাসকারীরা সবসময় শহরের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে সব ধরনের সবজি কিনতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কারণে ছন্দপতন ঘটেছে। এখন শহর আর গ্রামের হাট-বাজারে সব ধরনের সবজির দাম প্রায় একই দরে বিক্রি হচ্ছে। একারণে সাধারণ মানুষ সব্জি কেনাটা অনেকটা নাগালের বাইরে।
গত কয়েক দিনে টানা বর্ষণে শহর ও চরাঞ্চলের হাট-বাজারে সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এতে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ অনেকটাই কোন ঠাসা হয়ে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১০অক্টোবর) সরেজমিনে ইসলামপুর বাজার ও বঙ্গবন্ধু বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলু ছাড়া সব সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
যেমন- ২০০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ এখন ৩৫০ টাকা, ৬০ টাকা কেজির বেগুন ১০০ টাকা, ৬০ টাকা কেজির করল্লা ৮০ টাকা, ৫০ টাকা কেজির মুখীকচু ৬৫ টাকা, ৫০ টাকা কেজির কাঁচা পেঁপে ৬০ টাকা, ৫০ টাকা কেজির ঝিংগা ৭০ টাকা, ৪০ টাকা কেজির মিষ্টিকুমড়া ৫০ টাকা, ৫০ টাকা কেজির বরবটি ৮০ টাকা, ৪০ টাকা কেজি কদর ৭০টাকা, ৫০ টাকা কেজির পটল ৮০ টাকা, ৫০ টাকা পিচের জাতি লাউ ১০০/১২০ টাকা, ১০ টাকা আঁটির লাল/মুলা শাক ২০ টাকা, সবচেয়ে আকাশ চুম্বী দাম ধনেপাতা তিনটা লতা ১০ টাকা।
আর এভাবে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক গতিতে। সেই সাথে বেড়েছে মুরগি ও ডিমের দাম। মুরগির খামারি সুবাহান মিয়া বলেন, কাঁচা পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে মুরগির খামারি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ইসলামপুর পৌরবাজারে সবজি কিনতে আসা পৌর এলাকার অটোভ্যান চালক কুদ্দুস আলী মণ্ডল (৪৫) জানান, সারা দিনে অটোভ্যান চালিয়ে যা আয় করেন তা পরিবারের ছয় সদস্যের সবজি কিনতে গেলে পকেট যেন শূন্য কোঠায় হয়ে যায়। সবজিসহ দ্রব্যমূল্যের এ অস্বাভাবিক দামে তিনি স্বল্প আয়ের মানুষ হয়ে চাপে আছেন- এমনই ভাষ্য তার।
আর এ অবস্থা শুধু অটোভ্যানচালক কুদ্দুস আলী মণ্ডলই নন এলাকার নিম্ন ও মধ্যবিত্তদেরও একই অবস্থা বলে জানান বাজার করতে আসা পরিবার পরিকল্পনার মাঠকর্মী বিউটি আক্তার (৩৮) তিনিও সবজির বর্তমান দামকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন। তিনি জানান, যা বেতন পাই তা দিয়ে সবজি কেনা, ওষুধ, বিদ্যুৎ, ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ দিয়ে আর কুলিয়ে উঠতে পারছি না।
গুঠাইল বাজারে সবজি কিনতে আসা চরমন্নিয়া এলাকার মনিরুল ইসলাম মনির কৃষক সোহেল মিয়া জানান, কয়েক দিন পূর্বেও প্রায় সব ধরনের সবজির দাম মোটামুটি সহনীয় ছিল। কিন্তু শীতের সবজির ভরা মৌসুমে এখন আবারও সবজির দাম চড়া। আর দামের ঠেলায় আমরা সাধারণ মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছি। বিশেষ করে ৬০ টাকা কেজির বেগুন কি কারণে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে তা বোধগম্য নয়।
অবশ্য, ইসলামপুর বাজারের কাঁচা সবজি বিক্রেতা মো. মফিজুল ইসলাম জানান, ইসলামপুর বাজারে বেশির ভাগ তরকারি গোয়ালেরচর, চরপুটিমারি, মহলগিরী, হারিয়াবাড়ি, চরদাদনা এলাকার পাইকারি দরের হাট-বাজার থেকে আসে। আর সে সব বাজারেও পাইকারি দরের তরকারির দাম হঠাৎ করেই আবার কেজিতে গড়ে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ কারণে খুচরা বাজারেও দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক।
অপরদিকে বর্তমান সময়ে সবজির অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিকে স্বাভাবিক ভাবছেন ধর্মকুড়া এলাকার সবজি বিক্রেতা মোঃ জালাল হোসেন তিনি জানান, নাপিতেরচর, ঝগড়ারচর, বকশিগঞ্জ এলাকা থেকে ইসলামপুরের পাইকারি সবজি ক্রেতারা সবজি কেনেন। আর এসব মোকামেই সবজির দাম চড়া। তাই সবজি ব্যবসায়ীরা চড়া দামে কিনে চড়া দামেই বিক্রি করবেন এটাই স্বাভাবিক।
ইসলামপুর মলমগঞ্জ বাজারে আসা কৃষক মো.আঃ করিম ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, সবজি এখন সিন্ডিকেটের ব্যবসা। সবজি ব্যবসায়ীরা বৃষ্টি, বন্যা, খরা এমন নানা অজুহাতে সবজির দাম বেশি নিয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছেন। আর বাজার মনিটরিং না থাকায় তারা যা ইচ্ছে তাই করছেন। এতে দেখার কেউ নেই।
এ প্রসঙ্গে ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুর রহমান বলেন, ইসলামপুর উপজেলা একটি বৃহৎ এলাকা। তবে ইসলামপুর বাজার গুলোর আড়ৎতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখার চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।