নিরবতার রহস্য কী
- আপডেট সময় : ২৫ বার পড়া হয়েছে
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর রহস্যজনকভাবে লুট হয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ। ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট তথ্য জানাতে পারেনি রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদের এড়িয়ে চলছে সংশ্লিষ্টরাও।
অগ্নিকান্ডে ধ্বংস হয়ে যাওয়া কার্গো ভিলেজের আমদানি শাখার ভেতরে থাকা অত্যন্ত সুরক্ষিত ভল্ট বা স্ট্রং রুমের তালা ভেঙে অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো। এই ঘটনায় বিমানের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
২৮ অক্টোবর সকালে কার্গো ভিলেজের ভেতরে তালা ছাড়া ভল্ট দেখতে পেয়ে বিমানের কর্মকর্তারা বিস্মিত হয়ে পড়েন। এই ভল্টেই ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য আমদানি করা ৬৭টি অত্যাধুনিক পিস্তল, ১২টি শর্টগান, একটি অ্যাসল্ট রাইফেল, ১৩৮টি পিস্তলের ম্যাগাজিন ও বিপুল পরিমাণ গুলি ও অস্ত্র সরঞ্জাম। ঘটনার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এয়ারপোর্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরবর্তীতে পুলিশ ভল্ট থেকে অবশিষ্ট অস্ত্র ও সরঞ্জাম হেফাজতে নেয়।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ২৪ অক্টোবর একাধিক সংস্থার উপস্থিতিতে ভল্ট পরীক্ষা করে সিলগালা করা হয়েছিল এবং নতুন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। তবুও কীভাবে তালা ভাঙা হলো সে প্রশ্নে হতবাক সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও।
একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। কারো না কারো সম্পৃক্ততা থাকবেই। কারণ বিমানবন্দর সম্পূর্ণ সার্ভেলেন্সের আওতায় থাকে—চারপাশে সিসি ক্যামেরা, নিরাপত্তা বাহিনী ও কঠোর অনুমতির ব্যবস্থা রয়েছে। তাই ভল্টে অনুপ্রবেশ করা কোনোভাবেই সহজ নয়।
১৮ অক্টোবরের অগ্নিকান্ডে কার্গো ভিলেজের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সিসি ক্যামেরাগুলোর অনেকগুলোই অকার্যকর হয়ে পড়ে। এই সুযোগে কারা, কীভাবে স্ট্রং রুমে প্রবেশ করে তালা ভেঙেছে—তা এখনো অজানা। বিমান কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে পুলিশ ইতোমধ্যে ভল্ট থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র, গুলি ও সরঞ্জাম হেফাজতে নিয়েছে। লুট হওয়া অস্ত্রের সঠিক হিসাব এখনো প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
বিমান মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা জমা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, কিন্তু তারা এখনো বলতে পারেনি কতসংখ্যক অস্ত্র ও কী পরিমাণ মালামাল খোয়া গেছে। শুধু তাই নয়, এবিষয়ে মহাপরিচালক গন মাধ্যম কর্মীদের এড়িয়ে চলছেন।
ঘটনাটিকে এখন বিমানবন্দর নিরাপত্তা ব্যবস্থার বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সংস্থা বলছে, এটি একটি পরিকল্পিত অপরাধ হতে পারে, যার পেছনে অভ্যন্তরীণ সহযোগিতা থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুড়ে যাওয়া কার্গো কমপ্লেক্সের স্ট্রং রুম থেকে ‘৭টি’ অস্ত্র চুরির ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। খোয়া যাওয়া অস্ত্র ৭টি না আরও বেশি তা নিয়েও চলছে তদন্ত। বিমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ—তিনটি সংস্থা আলাদাভাবে বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় এখনো কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুলছেন না।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, তদন্তে অস্ত্র হারানোর সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ও সংখ্যার তথ্য পেলে মামলা করবে বিমান কর্তৃপক্ষ। তবে খোয়া যাওয়া অস্ত্র নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। ঠিক কতগুলো অস্ত্র ছিল এবং কতগুলো চুরি হয়েছে, তা নিয়ে কেউ পরিষ্কার করে কিছু বলতে চান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। পুলিশের কাছে বিমানের পক্ষ থেকে শুধু ভল্ট ভাঙার বিষয়ে একটি জিডি হয়েছে। কিন্তু অস্ত্র চুরির ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।
একই বিষয়ে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার সময় অস্ত্র চুরির অভিযোগটি তদন্তাধীন। আসলেই কোনো অস্ত্র চুরি হয়েছে কি না, তা তদন্ত শেষে জানা যাবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি প্রমাণ হয় যে অস্ত্র চুরি হয়েছে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
গত ১৮ অক্টোবর দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ২৭ ঘণ্টা সময় লাগে। ওই ঘটনার পর থেকেই কেপিআইভুক্ত বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরই মধ্যে ভল্ট ভাঙা পাওয়ার বিষয়ে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, পুড়ে যাওয়া আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের স্ট্রং রুমের ভল্ট থেকে চুরি হয়েছে ৭টি আগ্নেয়াস্ত্র। গত রোববার দুপুরে দ্বিতীয়বারের মতো ভল্ট পরিদর্শনে গিয়ে কর্মকর্তারা দেখেন, সেখানে একটি ভল্টে থাকা ২১টি অস্ত্রের মধ্যে ৭টি নেই। ৩টি অস্ত্রের পেছনের অংশ আগুনে পোড়া ছিল আর অন্যগুলো বক্সবন্দী অবস্থায় ছিল। তালিকা মিলিয়ে দেখা যায়, ওই ৭টি অস্ত্র ভল্ট থেকে খোয়া গেছে। এসব অস্ত্রের একটি অংশ বাংলাদেশ পুলিশের জন্য এবং অন্যগুলো বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের আমদানি করা পণ্য ছিল। চুরি হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এম ৪ কারবাইন রাইফেল ও ব্রাজিলের টরাস কোম্পানির তৈরি সেমি-অটোমেটিক পিস্তল। এর আগে, ২৮ অক্টোবর বিমান কর্তৃপক্ষ ভল্ট ভাঙা এবং অস্ত্র চুরির আশঙ্কা থেকে বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে।



















