ঢাকা ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo বুদ্ধ পূর্ণিমায় ২০ লাখ বৌদ্ধের প্রার্থনা নিরাপত্তাবলয়ে ৫ হাজার বৌদ্ধ বিহার Logo নিষিদ্ধ হলো আওয়ামী লীগ Logo নরসিংদীতে দেশ টিভির সাংবাদিকের উপর দূর্বৃত্তদের হামলা Logo “মাধবপুর থানা কর্তৃক ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার” Logo সুন্দরবন রক্ষায় পিরোজপুরে শিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা বিনিময় সভা Logo ওয়াইফাই লাইন টানতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট কাশিয়ানীতে যুবকের মৃত্যু  Logo হবিগঞ্জে সমন্বয়ক মাহাদী সহ চারজনের উপর সন্ত্রাসী হামলা Logo ঝিনাইদহে বজ্রপাতে মৃত দুই কৃষক পরিবারকে তারেক রহমানের মানবিক সহায়তা প্রদান Logo ডামুড্যায় জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানা পুলিশ কর্তৃক ১৩৮৬ বোতল ভারতীয় মদ উদ্ধার

নিষিদ্ধ হলো আওয়ামী লীগ

হালিম মোহাম্মদ
  • আপডেট সময় : ০৪:২৩:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫ ১২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কায়
সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল শনিবার রাত ৮টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনও রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেস-সহ আওয়ামি লীগ এর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে। এর পাশাপাশি, আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।
এদিকে আওয়ামীলীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর রাজধানীসহ সারাদেশে চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সকল জেলার এসপিকে ক্ষুদে বার্তায় সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। তা ছাড়া জেলা শহরের সকল কার্যক্রম মনিটরিং ও নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া আগাম গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামীলীগের অপতথ্যমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এমনকি তারা চোরাগোপ্তা হামলা করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পূর্ব-নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে পুলিশ সদর দপ্তর। ওই স্মারকে আওয়ামী লীগের অপতৎপরতা রোধে ১১টি সুপারিশ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের অপতৎপরতার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ‘যে কোনো অরাজকতা প্রতিহত করা হবে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের এক ডিআইজি জানান, গোয়েন্দা টিম মাঠে তথ্য সংগ্রহের জন্য কাজ করছে। যেসব নেতা দেশে ও প্রবাসে দেশবিরোধী কর্মকা-ে সক্রিয় হবেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা, নিষিদ্ধ দলটি বিভিন্ন স্থানে ‘ঝটিকা মিছিল’, চোরাগোপ্তা হামলা বা অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা করতে পারে। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও এই অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সমর্থক, ছাত্র-জনতা ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। দলটি সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত করে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করতে পারে। রেলপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারি স্থাপনার ক্ষতি করতে পারে। এ ছাড়া চোরাগোপ্তা হামলা বা নাশকতার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা হতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ও বিদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করছে। সর্বশেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০ জানুয়ারি কলকাতায়। সেখানে শেখ হাসিনা সরাসরি উপস্থিত থাকতে না পারলেও তার বক্তব্য প্রচার করা হয়। এদিকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন সাবেক এমপি হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া কারাগারে থাকা নেতারা সরকার উৎখাতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে পুলিশ সহিংসতা ও উচ্চ ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছে।
প্রতিবেদনে ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হলো আওয়ামী লীগ অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমেও ব্যাপকভাবে সরকারবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। নেতাকর্মীরা রাতের সময় বিভিন্ন দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে দ্রুত স্থান দখল করতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে ঝটিকা মিছিলের আয়োজন করতে পারে। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে মিছিলেরও সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন স্থাপনাসহ, দেশের বিভিন্ন স্থানে গুপ্ত হামলার হতে পারে, টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসী গ্রুপের ব্যবহার হতে পারে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার করতে পারে আওয়ামী লীগ। এসকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে হার্ডলাইনে সরকার। রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
অপরদিকে আওয়মীলীগকে নিষিদ্ধের পর আইন উপদেষ্টা বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল ও তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। তিনি জানান, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে। এর পাশাপাশি আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে অবরোধ করে ছাত্র-জনতা। দলটি নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশে এনসিপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ইসলামি সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। সাধারণ ছাত্র ও নাগরিকদেরও প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন হাতে সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়। কেউ কেউ মিছিল নিয়েও সমাবেশস্থলে পৌঁছান।
তারও আগে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে আসছে এনসিপি, শিবিরসহ কয়েকটি সংগঠন। শুক্রবার সকালেও দলের নেতাকর্মীদের সেখানে স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরবর্তীতে শুক্রবার রাতে শাহবাগ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে ৩ দফা দাবি সামনে রেখে গণজমায়েত কর্মসূচির ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সেই সঙ্গে দাবি আদায়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথাও জানান তিনি।
এর অংশ হিসেবে শনিবার বিকেল থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিতে থাকে ইসলামী ছাত্রশিবির, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ), জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী ছাড়াও ছাত্র-জনতা। সন্ধ্যা পর্যন্ত দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানের পাশাপাশি নানা স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের।
এর আগে ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। হত্যা, নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও জননিরাপত্তা বিঘœসহ নানা অপরাধের দায়ে এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের দাবির মুখে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নিষিদ্ধ হলো আওয়ামী লীগ

আপডেট সময় : ০৪:২৩:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কায়
সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল শনিবার রাত ৮টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনও রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেস-সহ আওয়ামি লীগ এর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে। এর পাশাপাশি, আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।
এদিকে আওয়ামীলীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর রাজধানীসহ সারাদেশে চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সকল জেলার এসপিকে ক্ষুদে বার্তায় সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। তা ছাড়া জেলা শহরের সকল কার্যক্রম মনিটরিং ও নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া আগাম গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামীলীগের অপতথ্যমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এমনকি তারা চোরাগোপ্তা হামলা করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পূর্ব-নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে পুলিশ সদর দপ্তর। ওই স্মারকে আওয়ামী লীগের অপতৎপরতা রোধে ১১টি সুপারিশ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের অপতৎপরতার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ‘যে কোনো অরাজকতা প্রতিহত করা হবে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের এক ডিআইজি জানান, গোয়েন্দা টিম মাঠে তথ্য সংগ্রহের জন্য কাজ করছে। যেসব নেতা দেশে ও প্রবাসে দেশবিরোধী কর্মকা-ে সক্রিয় হবেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা, নিষিদ্ধ দলটি বিভিন্ন স্থানে ‘ঝটিকা মিছিল’, চোরাগোপ্তা হামলা বা অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা করতে পারে। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও এই অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সমর্থক, ছাত্র-জনতা ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। দলটি সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত করে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করতে পারে। রেলপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারি স্থাপনার ক্ষতি করতে পারে। এ ছাড়া চোরাগোপ্তা হামলা বা নাশকতার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা হতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ও বিদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করছে। সর্বশেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০ জানুয়ারি কলকাতায়। সেখানে শেখ হাসিনা সরাসরি উপস্থিত থাকতে না পারলেও তার বক্তব্য প্রচার করা হয়। এদিকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন সাবেক এমপি হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া কারাগারে থাকা নেতারা সরকার উৎখাতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে পুলিশ সহিংসতা ও উচ্চ ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছে।
প্রতিবেদনে ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হলো আওয়ামী লীগ অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমেও ব্যাপকভাবে সরকারবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। নেতাকর্মীরা রাতের সময় বিভিন্ন দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে দ্রুত স্থান দখল করতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে ঝটিকা মিছিলের আয়োজন করতে পারে। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে মিছিলেরও সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন স্থাপনাসহ, দেশের বিভিন্ন স্থানে গুপ্ত হামলার হতে পারে, টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসী গ্রুপের ব্যবহার হতে পারে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার করতে পারে আওয়ামী লীগ। এসকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে হার্ডলাইনে সরকার। রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
অপরদিকে আওয়মীলীগকে নিষিদ্ধের পর আইন উপদেষ্টা বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল ও তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। তিনি জানান, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে। এর পাশাপাশি আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে অবরোধ করে ছাত্র-জনতা। দলটি নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশে এনসিপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ইসলামি সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। সাধারণ ছাত্র ও নাগরিকদেরও প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন হাতে সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়। কেউ কেউ মিছিল নিয়েও সমাবেশস্থলে পৌঁছান।
তারও আগে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে আসছে এনসিপি, শিবিরসহ কয়েকটি সংগঠন। শুক্রবার সকালেও দলের নেতাকর্মীদের সেখানে স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরবর্তীতে শুক্রবার রাতে শাহবাগ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে ৩ দফা দাবি সামনে রেখে গণজমায়েত কর্মসূচির ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সেই সঙ্গে দাবি আদায়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথাও জানান তিনি।
এর অংশ হিসেবে শনিবার বিকেল থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিতে থাকে ইসলামী ছাত্রশিবির, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ), জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী ছাড়াও ছাত্র-জনতা। সন্ধ্যা পর্যন্ত দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানের পাশাপাশি নানা স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের।
এর আগে ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। হত্যা, নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও জননিরাপত্তা বিঘœসহ নানা অপরাধের দায়ে এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের দাবির মুখে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।