নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি বীজের দাম বাড়ায় বিপাকে কৃষক
- আপডেট সময় : ৯১ বার পড়া হয়েছে
টানা বর্ষণ ও ফেনী মহুরী নদী থেকে আসা পানিতে নোয়াখালীতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার আউশ ধান, আমনের বীজতলা ও গ্রীষ্মকালীন-শরৎকালীন শাকসবজির ক্ষেত এখন পানির নিচে। এতে একদিকে যেমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে আমন ধানের বীজের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকেরা।
জানা গেছে, চলতি জুলাই মাসের ৭ তারিখ থেকে নোয়াখালী জেলায় মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। টানা ৪ দিনের ভারী বর্ষণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির মতো জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এর সঙ্গে ফেনীর মহুরী নদীর পানি প্রবাহিত হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি ডুবে যায়। ফলে কৃষকের আউশ ধানের খেত, আমনের বীজতলা এবং বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে যায় পানির নিচে।
সুবর্ণচরের কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “চারদিকে পানি। নতুন করে বীজতলা তৈরির জন্য উঁচু জমি খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব জায়গা একটু উঁচু, সেগুলোর জন্য ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো সেভাবে পুঁজি নিয়ে নামিনি, এখন নতুন করে বীজতলা বানানো প্রায় অসম্ভব।”
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কৃষক মনির হোসেন বলেন, “বৃষ্টিতে সবজি খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এর ক্ষতি মেটাতে গিয়ে দেনা করতে হবে। এমূহুর্তে কৃষকদের ঘুরে দাড়ানোর জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৫,১৯৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে ৮৯১ হেক্টর আমনের বীজতলা, ২,৫০০ হেক্টর আউশের খেত, ১,২০০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি ও ৫৭৫ হেক্টর শরৎকালীন সবজি পানিতে নিমজ্জিত। এতে আমনের বীজ সংকট দেখা দিয়েছে এবং দাম বেড়ে গেছে বাজারে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতায় এখনো ২৪,৯৫০টি পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা প্রায় ৯০,৪০৩ জন। বিভিন্ন এলাকায় ৫৮টি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন ১,০২৩ জন মানুষ। স্বাস্থ্যসেবা দিতে মাঠে রয়েছে ২৯টি মেডিকেল টিম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মীরা রানী দাস জানান, ‘সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কবিরহাট, সুবর্ণচর ও সদর উপজেলায়। পানি দ্রুত না সরলে ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়বে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মাঠে থেকে কৃষকদের সহযোগিতা করছেন।’ এমন অবস্থায় কৃষকেরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে সরকারের জরুরি সহযোগিতা এবং পর্যাপ্ত বীজ ও সার সহায়তা চাচ্ছেন, যাতে করে তারা দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারেন এবং চাষাবাদ আবার শুরু করতে পারেন।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশরেফুল হাসান জানান, উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে আমনের বীজতলায় পানি জমে থাকায় কৃষকের সমস্যা হচ্ছে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর বীজের প্যাকেটের গায়ের রেটের অতিরিক্ত দাম রাখলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।




















