পঞ্চগড়ে মালিকানা দ্বন্দ্বে চা কারখানা দখলের অভিযোগ

- আপডেট সময় : ১৪ বার পড়া হয়েছে
পঞ্চগড়ে যৌথ মালিকানায় আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারনে প্রতিষ্ঠিত একটি চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা দখলের অভিযোগ উঠেছে। মালিক পক্ষের একাংশ সহ স্থানীয় কয়েকজন চা ব্যাবসায়ির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দায়ের করেছেন কারখানাটির আরেক মালিক পক্ষ জেলা প্রশাসন, স্থানীয় টি বোর্ড সহ বিভিন্ন দপ্তরে তারা এই অভিযোগ করেছেন। অভিযোগকারীরা হলেন আব্দুর রাজ্জাক ও তারিকুল ইসলাম। মালিকানা দন্দ্বের কারণে চা কারখানাটি বন্ধের উপক্রম দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন মালিক পক্ষের দন্দ্বের কারণে চা কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেলে আশপাশের চা- চাষিরা বিপাগে পড়বে সেই সাথে কারখানায় কর্মরত শতাধিক শ্রমিক কর্মচারী বেকার হয়ে পড়বে। অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে ২০১৮ সালে তৎকালীন পঞ্চগড় জেলা শিক্ষা অফিসার কাজী বোরহান উদ্দিনের ছায়া উদ্যোগে সদর উপজেলার কেচেরা পাড়ায় উত্তরা গ্রীন টি ইন্ডস্ট্রিজ নামে চা কারখানাটি গড়ে উঠে। তিনি সরকারি কর্মকর্তা বলে নিজের নামে জয়েন্ট স্টক কোম্পানী থেকে রেজিস্ট্রেসন না করে তার বিশ^স্থ কাজী এ এন এম আমিনুল হকের নামে ৬৫ শতাংশ মালিকানা উল্লেখ করে এই কারখানার রেজিস্ট্রেষন করা হয়। ৩০ শতাংশের মালিক হন আব্দুর রাজ্জাক এবং ৫ শতাংশের মালিক হন তারিকুল ইসলাম। পরবর্তিতে কাজী আমিনুল হক বোরহান উদ্দিনের স্ত্রী আইরিন পারভিনের নামে ১০, ছেলে নর্থ সাউথ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক শায়মান সাদিকের নামে ৩৫, তার ভায়রা শাহ আলমের নামে ১০ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করেন। করোনা সংকট কালে কাজী আমিনুর রহমান মারা গেলে তার রেখে যাওয় ১৫ শতাংশের শেয়ার এখনো অবশিষ্ট আছে। অন্যদিকে আব্দুর রাজ্জাক ও তারিকুল ইসলাম মালিকানা রিসিডিল করে ২০ ও ১০ শতাংশের মালিক হন। ঢাকার রুপালী ব্যাংক দিলখুশা স্থানীয় কার্যালয় থেকে মর্টগেজ কৃত ২৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এসময় বোরহান উদ্দিন এবং আব্দুর রাজ্জাকের পরিচালনায় ৬ লেনের এই কারখানাটি চা উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার কেজী চা উৎপাদন হয়। পরে হিসাব নিকাশের গড়মিলের অভিযোগ তুলে তৎকালীন জেলা আওয়ামীলীগের এক বড় মাপের নেতাকে নিয়ে কারখানা থেকে পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক এবং তারিকুল ইসলামকে বের করে দিয়ে পুরো কারখানা দখলে নেন বোরহান উদ্দিন। পরবর্তিতে নানা ধরণের রাজনৈতিক হুমকি দিয়ে বোরহান উদ্দিনের পরিবারের কাছে ২০২২ সালের ২৪ মার্চ এই দুই পরিচালককে শেয়ার হস্তান্তরের জন্য একটি চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। চুক্তিপত্র অনুযায়ী দুই পরিচালকের পাওনা ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা ৩ মাসের মধ্যে পরিশোধ করার কথা। এর মধ্যে ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও বাকি টাকা এখনো পরিশোধ করেননি। ৫ আগষ্টের পর এই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তিতে স্থানীয় কয়েকজন চা ব্যবসায়ির কাছে বোরহান উদ্দিন, তার স্ত্রী, ছেলে এবং ভায়রা মিলে ৩ বছরের জন্য লিজ প্রদান করেন। অভিযোগকারী আব্দুর রাজ্জাক এবং তারিকুল ইসলাম বলেন আওয়ামীলীগ শাসনামলে আমাদেরকে জোর করে বের করে দেয়া হয়। জয়েনস্টক কম্পানীর রেজিস্ট্রেসন অনুযায়ি আমরা এই কোম্পানীর এখনো পরিচালক। আমাদেরকে না জানিয়ে কোম্পানী লিজ দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর নিয়ে মালিকানা হস্তান্তরের চুক্তিপত্র করা হয়েছে। সেই চুক্তি পত্রেরও সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। ব্যাংক ঋণের বোঝা টানতে হচ্ছে। আমাদেরকে কারখানায় প্রবেশ করতে দিচ্ছেনা। দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি কোন বিচার পাচ্ছিনা। তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বোরহান উদ্দিন জানান, তারা কারখানার মালিক এটা সত্যি। কিন্তু তারা মালিকানা আমার পরিবারের কাছে হস্তাস্তর করেছে। কোন রাজনৈতিক দলের নেতার শেল্টার নেয়া হয়নি। তারা এখনো আমাদেরকে মালিকানা হস্তান্তর করছেনা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুমন চন্দ্র দাশ জানান, এই অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পঞ্চগড় চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান ছুটিতে আছেন। তবে তাঁকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।