পর্যটনশিল্পে গতি ফেরাতে তিন দিনের ট্যুরিজম ফেয়ার
- আপডেট সময় : ০৬:৩০:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৯২ বার পড়া হয়েছে
পর্যটনশিল্পে গতি ফেরাতে ঢাকায় শুরু হলো তিন দিনব্যাপী ১১তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার ২০২৪। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এই ট্যুরিজম ফেয়ার চলবে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। এবারের মেলার প্রতিপাদ্য খুলবে পর্যটনের দুয়ার, এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এ মেলার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আফতাব হোসাইন প্রামাণিক।
ট্যুরিজম সেক্টরে ইনভেস্টমেন্ট করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব একেএম আফতাব হোসাইন প্রামাণিক বলেন, পর্যটন বিচিত্রার আয়োজিত এবারের এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার বাংলাদেশে হওয়া এখন পর্যন্ত সব থেকে বড় ট্যুরিজম ফেয়ার।
ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে একটি দেশের রাজনৈতিক, কালচারাল ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রয়োজন আছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে দেশের সাস্টিনেবল ডেভেলপমেন্ট পূরণ করা সম্ভব। আমি ট্যুরিজম সেক্টরে ইনভেস্টমেন্ট করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। ট্যুরিজম একটি ভালো ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্র।
পর্যটন করপোরেশনের এই চেয়ারম্যান বলেন, পৃথিবী সব দেশ যেহেতু প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের জন্য ট্যুরিজমের বিষয়ে বিভিন্ন দেশ জোর দিচ্ছে। তাই আমাদের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনকে আরও বেশি সাস্টিনেবল করতে আমাদেরও ট্যুরিজমের ওপর জোর দিতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বক্তব্যে চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর লি শাওপেং বলেন, আমরা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের চায়নার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এই এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার বাংলাদেশের এবং চায়নার সম্পর্কের মধ্যে এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করবে পর্যটনশিল্পে। এই ফেয়ারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চায়নার মধ্যে সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো আদান-প্রদান হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বক্তব্যে ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ হচ্ছে ডেডিকেটেডলি আমাদের পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়া এমনটি জানিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশের ডিআইজি মো. আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, পর্যটনশিল্প বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত। এর মাধ্যমে অনেক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যেমন হয় একইভাবে আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরা যাবে। আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ হচ্ছে ডেডিকেটেডলি আমাদের পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়া। পাশাপাশি এমন পরিবেশ তৈরি করা যেখানে পর্যটকরা নিরাপদ মনে করবে। কোনো ট্যুরিস্ট যদি কোনো ঝামেলায় পড়ে বা তাদের সাহায্যের প্রয়োজন পরে তারা চাইলে আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে যেকোনো সময়। এজন্য আমরা কিছু হটলাইন সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছি।
ট্যুরিস্ট পুলিশের এই ডিআইজি বলেন, আমি মনে করি, এই এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারের মাধ্যমে আমাদের পর্যটনশিল্প একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম পাবে। এর মাধ্যমে আমরা এই পর্যটনশিল্পকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে পারব।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বক্তব্যে মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিউনীন রাশেদ বলেন, এবারের এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারে মালদ্বীপের অনেক প্রতিষ্ঠান যোগ হয়েছে। এই ফেয়ারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের জনগণের মধ্যে এক প্রকার নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠবে। মালদ্বীপ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় পর্যটন খরচ অনেক কম। তাই আমি আহ্বান জানাবো পর্যটকদের মালদ্বীপে আসার জন্য।
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল অসান জুনিয়র বলেন, ফিলিপাইনের অ্যাম্বাসিডর হিসেবে আমি বাংলাদেশে মানুষকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি ফিলিপানের ঐতিহাসিক সব স্থানগুলোতে ভ্রমণের জন্য। আমাদের এখানে সমুদ্র, পাহাড় থেকে শুরু করে অনেক আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পষ্ট আছে। আমরা মনে করি, পর্যটন শিল্প মানুষের মধ্যে যেমন সম্পর্ক স্থাপন করে একইভাবে এটি অর্থনীতিকেও অনেক বেশি শক্তিশালী করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বক্তব্যে বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফাতেমা রহিম ভিনা বলেন, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক এক অপার সুন্দর দেশ। আমাদের বিশাল সুন্দরবনসহ যেসব পর্যটনকেন্দ্রগুলো আছে যা বিশ্বের অনেক পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এবারের মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশসহ এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে পর্যটনের এক অপার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় পর্যটন বিচিত্রার আয়োজনে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক দিক-নির্দেশনায়, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মেলার প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা, প্রবেশ কুপনের বিপরীতে র্যাফেল ড্র বিজয়ীদের জন্য থাকবে এয়ারলাইন্স টিকিটসহ বেড়ানোর আকর্ষণীয় গিফট ভাউচার।
এবারের মেলায় বাংলাদেশসহ মালদ্বীপ, চায়না, ফিলিপাইন, শ্রীলংঙ্কা, ভিয়েতনাম, ভুটান, সিঙ্গাপুরের প্রায় শতাধিক পর্যটন সংস্থা অংশগ্রহণ করেছে।
মেলায় রয়েছে আসন্ন পর্যটন মৌসুমে দেশ-বিদেশে বেড়ানোর বিভিন্ন আকর্ষণীয় ভ্রমণ অফার, হোটেল, রিসোর্ট বা প্যাকেজ বুকিংসহ বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজলাইন্স, এয়ারলাইন্স, টার অপারেটর ও থিমপার্কসহ বিনোদনের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া মেলায় বৈচিত্র্যময় আয়োজনে থাকছে পর্যটনবিষয়ক সেমিনার, শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) মিটিং।
মেলার প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে চায়না, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই মেলার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র দর্শনার্থীদের মাঝে তুলে ধরা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফাতেমা রহিম ভিনা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল অসান জুনিয়র, মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিউনীন রাশেদ, ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশের ডিআইজি মো. আবু কালাম সিদ্দিক।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মালদ্বীপের জাতীয় পর্যটন বোর্ডের মার্কেটিং ও পাবলিক রিলেশনস করপোরেশনের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক জিহুনি রাশেদ, চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর লি শাওপেং, শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনের কাউন্সেলর (বাণিজ্যিক) শ্রীমালী জয়রথনে এবং পর্যটন বিচিত্রার সম্পাদক ও এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হেলাল প্রমুখ।
মেলার টাইটেল স্পন্সর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, প্রাইম পার্টনার কান্ট্রি-মালদ্বীপ, হোস্ট কান্ট্রি বাংলাদেশ, হসপিটালিটি পার্টনার-ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা। ব্যাংক পার্টনার-মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, রিসোর্ট পার্টনার- ছুটি গ্রুপ, ট্রান্সপোর্ট পার্টনার- কনভয় সার্ভিস, কানেকটিভিটি পার্টনার- এডিএন টেলিকম, ক্রুজ পার্টনার- ঢাকা ডিনার ক্রুজ।