পুলিশে অস্থিরতার পাঁয়তারা!

- আপডেট সময় : ১২:২৫:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১১৩ বার পড়া হয়েছে
# সাবেক আইজিপি বেনজিরসহ পলাতক পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেশের বাইরে থেকে দেশের পুলিশ বিভাগে কর্মরত তাদের দোসরদের উস্কানিমুলক তথ্য দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় মিথ্যাচার ও গুজব ছড়াচ্ছেন
# নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে বরখাস্ত ও চাকুরিচ্যূতদের বাড়িতে
ফেরারি আসামি সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ গত ৫ আগষ্টের আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ছাত্রদের বৈষম্য বিরোধী কোটা আন্দোলল চলমান অবস্থায় দেশের বেগতিক অবস্থা দেশে ফ্যাসিষ্ট হাসিনা পালানোর আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বেনজির আহমেদ। বেনজিরসহ পলাতক পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেশের বাইরে থেকে দেশের পুলিশ বিভাগে কর্মরত তাদের দোসরদের উস্কানিমুলক তথ্য দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অভিপ্রায়ে মিথ্যা বা গুজব ছড়াচ্ছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনায় এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। যা গোটা বাংলাদেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে কওে তুলেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এ সকল তথ্য উপাদ্য নিয়ে পুলিশের শীর্ষ মহলে একাধিক বৈঠক হয়েছে পুলিশ সদর দফতরে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত ক্রমে রাজারবাগ পুলিশ সদও দফতরসহ পুলিশের সকল ব্যারাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি ট্রমায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের কাউন্সিলিং করানো হচ্ছে।
এছাড়া পলাতক থাকা বরখাস্তকৃত সকল পুলিশ সদস্যেও গ্রামের বাড়ি ও স্বজনদের বাড়িদে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। তাদেও কার্যক্রম এবং চলাফেরা আচরন মনিটরিং করা হচ্ছে। উচ্ছৃংখল আচরনে বা কার্যক্রমের প্রমান পেলেই তাদের স্বজনদেও আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে সাবেক আইজিপি পলাতক বেনজীর পুলিশ বিভাগকে অস্থির করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তিনি দেশের বাইরে থেকে ভার্চুয়াল পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে উস্কানিমূলক বক্তব্য পাঠাচ্ছেন। পুলিশ নিয়ে সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বক্তব্য অবমাননাকর ও ষড়যন্ত্রমূলক। বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি এমনটি বলেছে। পাশাপাশি অজ্ঞাত স্থান থেকে বেনজীরের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যানও করেছে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের এই সমিতি। এরপরিপেক্ষিতে রোববার অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি এম আকবর আলী ও মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিয়া লুৎফর রহমান চৌধুরীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বেনজীরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফ্যাসিস্ট হাসিনার আওয়ামী লীগের দলদাস এবং অসংখ্য হত্যা, গুম, অপহরণ, দুর্নীতি মামলার পলাতক আসামি বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশ নিয়ে যে অবমাননাকর ও ষড়যন্ত্রমূলক মন্তব্য দিয়েছেন, সেটি বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সমিতি তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং তার বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।
এতে বলা হয়, কুখ্যাত বেনজীর গংদের নজিরবিহীন দলবাজি ও দুর্নীতির কারণেই বাংলাদেশ পুলিশ সব পুলিশি কার্যক্রম ও সংস্কৃতি জলাঞ্জলি দিয়ে আওয়ামী দলীয় লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। পুলিশকে ডুবিয়ে বেনজীর গং সম্পদের পাহাড়ে আরোহণ করেছিল। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ১৬ বছরে তাদের অপকর্মের কারণেই পুলিশকে জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। তাদের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ পুলিশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কলুষিত হয়েছে, এলিট বাহিনী র?্যাবকে আন্তর্জাতিকভাবে একরকম নিষিদ্ধ বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি বলছে, বেনজীরের নজিরবিহীন দাম্ভিকতা ও অপকর্মের জন্য তার নিজ প্রভুরাই তাকে পরিত্যাগ করেছিল। আজ সেই পরিত্যক্ততা ভুলে সেই দলেরই সেবাদাসত্ব করার জন্য পুলিশকে আবারও ব্যবহার করার পাঁয়তারা করছে এই মাফিয়া গ্যাং লিডার। সমিতি আরও বলেছে, জনতার বাঁধভাঙ্গা বিপ্লবের তোড়ে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া এই কুলাঙ্গার গংয়ের কৃতকর্মের ঝাল সাধারণ মানুষ মিটিয়েছে দৃশ্যমান সাধারণ পুলিশের ওপর। অজস্র প্রতিকূলতার পরও দেশের নিরীহ সাধারণ পুলিশ তাদের মতো পালিয়ে যায়নি, তারা নতুনভাবে সংগঠিত হয়ে মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। ফেরারি বেনজীর পুনর্গঠিত পুলিশকে আবারও অস্থির করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে অভিযোগ করে সমিতির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনেক পুলিশ অফিসারকে সে আগের মতই বিপদে ফেলে ফায়দা লোটার পাঁয়তারা করছে। বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি তার এই অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। সমিতির দৃঢ় বিশ্বাস বাংলাদেশ পুলিশ আর কারো পাতানো ফাঁদে পা দেবে না।
বেনজীরকে আইসিটি মামলার ওয়ারেন্টে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোসহ তিনটি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি।
এবিষয়ে পুলিশের সাবেক একাধিক আইজিপি বলেছেন, পুলিশ বাহিনী যেভাবে দেশের আইন এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্য কঠোরভাবে কাজ করে, তেমনি তারা কোনো ধরনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হতে চাইবে না। এমন কোনো কাজ যা দেশের উন্নতি এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তা কখনোই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সমর্থন করবেন না। পুলিশ সদস্যরা সবসময় রাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করবেন এবং কোনো রকমের ষড়যন্ত্রে নিজেদের যুক্ত করবেন না।
বিচারিক ব্যবস্থা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এবং দেশের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধ করতে নিরলসভাবে কাজ করে আসছেন। পুলিশ বাহিনী কখনোই রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে না, তাদের কাজ জনগণের নিরাপত্তা এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা। পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন এরকম ঘটনায় খুবই ক্ষুব্ধ এবং তারা বেনজীর আহমেদের কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে, কারণ তার এসব কর্মকান্ড দেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাকে বিপদে ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেম এবং পেশাদারিত্বের প্রতি বিশ্বস্ত। তারা কখনোই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের আদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সহানুভূতির পরিচায়ক হতে পারে না, কারণ তারা প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষায় নিয়োজিত থাকে। তাদের মূল লক্ষ্য দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা করা।
পুলিশ সদর দফতরের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ৪ থেকে সর্বোচ্চ ১২ বছর ধরে সদর দপ্তরে কর্মরত আছেন এমন কর্মকর্তার সংখ্যা অন্তত ৫০ জন। বিগত ১২ বছর ধরে পুলিশ বাহিনীতে যে ব্যাপক দুনীতি হয়েছে, এসব দুনীতির অংশীদারও ছিলেন পুলিশ সদরদফতরে কর্মরত অনেক কর্মকর্তাই। তাদের কেউ কেউ প্রভাবশালীদের কাছাকাছি থাকার সুবাদে বদলিও ঠেকিয়েছেন বছরের পর বছর। সরকার বদলের পর এরাই এখন বঞ্চিত সেজে প্রভাব বিস্তার করছেন পুরো পুলিশ বাহিনীতে। অনেকেই পলাতক শীর্ষ কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে আখের গোছানোর চেষ্টা করছেন, যা পুরো পুলিশ বাহিনীর সংস্কারে মারাত্মক ক্ষতি করবে।
ওই কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিবিধি ও পুলিশ প্রবিধানে প্রতি তিন বছর পর বদলির নিয়ম থাকলেও পুলিশ বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা ঘুরেফিরে সদর দফতরেই থাকছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন এক যুগের বেশি সময় ধরে আছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিগত সরকারের আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে এসব কর্মকর্তা এত দিন ধরে সদর দপ্তরে শিকড় গেড়ে আছেন। সদর দপ্তরে থাকা এসব কর্মকর্তার মধ্যে আছেন অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা। তারাই এখন জুনিয়র পুলিশ সদস্যদের নিয়ে আলাদা জোট বাধার চেস্টা চালাচ্ছেন।