পৃষ্ঠপোষকদের দিকে ঝুঁকছে ডাকসু

- আপডেট সময় : ১৬৭ বার পড়া হয়েছে
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ঘাটতির মধ্যেও নানা কল্যাণমূলক ও অবকাঠামোগত বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নব-নির্বাচিত কমিটি। ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট নেতৃত্বাধীন এই কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কার্যত শূন্য ব্যালেন্সে পরিচালিত হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনও প্রশাসনিক বা কার্যক্রমভিত্তিক অর্থ সহায়তা পায়নি ডাকসু। এমন পরিস্থিতিতে কমিটি তাদের ঘোষিত ৩৬টি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বহিরাগত পৃষ্ঠপোষক মডেল গ্রহণ করেছে।
নতুন কমিটি দায়িত্ব নেয়ার প্রথম মাসে পরিকল্পনা ও কাঠামো দাঁড় করাতে সময় ব্যয় হওয়ায় ট্রায়াল প্রকল্প চালু, ডাকসু ভবন সংস্কার, চিকিৎসা ক্যাম্প আয়োজন ও আবাসিক হলের ছারপোকা নিধন কার্যক্রম শুরু হলেও কোনও প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি পূরণ সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে ডাকসু সহ-সভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম বলেন, ডাকসু এতদিন নিষ্ক্রিয় ছিল, তাই শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছে। প্রথম মাসটা মূলত পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই গেছে। তিনি জানান, প্রথমপর্যায়ে কার্যকর কাঠামো গঠন ও হল কাউন্সিলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ বৈঠকের মাধ্যমে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি মোকাবিলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সেসব প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি যারা আগে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে চেয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী তো পৃথিবীর নানা প্রান্তে আছেন— তাদের যুক্ত করার চেষ্টা চলছে।
কমিটি এখন পর্যন্ত কোনও প্রশাসনিক বা পরিচালন ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে পায়নি; ফলে ডাকসুর হিসাব কার্যত ‘শূন্য ব্যালেন্সে’। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফারহাদ জানিয়েছেন, তারা ব্যক্তিগত অর্থে যাতায়াত, অতিথি আপ্যায়নসহ অন্যান্য খরচ বহন করছেন। ভিপি সাদিক কায়েম জানান, ডাকসু ইতোমধ্যে কোষাধ্যক্ষের দফতরে দুটি আনুষ্ঠানিক আবেদন দিয়েছে। এতে ১৯৯০ সাল থেকে সংগৃহীত ছাত্র ফি’র হিসাব, ২০১৯ সালের অডিট রিপোর্ট ও ২০১৯-২০২৪ সালের বার্ষিক ৬০ টাকার ফি’র ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা ৩০ লাখ টাকার বরাদ্দের কথা জানালেও ডাকসু স্পষ্ট করেছে যে এটি ভবন সংস্কারের জন্য, কার্যক্রমের জন্য নয়। প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা না পাওয়ায় ডাকসু বড় প্রকল্পগুলোতে বহিরাগত পৃষ্ঠপোষকতার পতে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে জিএস ফরহাদ বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতা দেবে, যারা দেবে, তাদের নামে প্রকল্পটি হবে। তারা সরাসরি বাস্তবায়ন করবে, আমাদের হাতে কোনও টাকা থাকবে না। এই মডেলটি ব্যয়বহুল প্রকল্প—যেমন ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ছারপোকা নিধন অভিযান, মেয়েদের হলগুলোতে ১ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে এসি স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে। স্পনসররা সরাসরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দেবে। তবে জিএসের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়কে ন্যূনতম সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের ব্যয় মেটানোর দায়িত্ব নিতে হবে।
প্রথম দিকে ডাকসু মূলত অবকাঠামোগত ভিত্তি গড়ে তোলা ও ট্রায়াল প্রকল্প চালু করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জরাজীর্ণ ডাকসু ভবন সংস্কারের কাজ শুরু করেছে, টয়লেটগুলো সংস্কার ও নারী-পুরুষের টয়লেট আলাদা করা হচ্ছে।
ভিপি সাদিক কায়েম জানান, প্রশাসন, কর্মচারী, শিক্ষক, সামাজিক সংগঠন ও হল প্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলাই প্রথম মাসে তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল। পাশাপাশি দলীয় রাজনীতিতে জড়িতদের ডাকসু অফিস থেকে অপসারণ ও এস্টেট অফিসের নিরাপত্তাকর্মীদের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।