প্রতিদিনই ঢুকছে রোহিঙ্গা, স্হানীয়দের মাঝে বাড়ছে ক্ষোভ
- আপডেট সময় : ৬৭ বার পড়া হয়েছে
মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চল থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ থামছে না। প্রতিদিন গড়ে ২০–৩০ জন সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে বলে জানা গেছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে। গত এক বছরে নতুন করে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজার— বলছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়।
স্থানীয় অধিকার সংগঠনগুলোর মতে, সীমান্তে অনুপ্রবেশ এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাই থাকবে না। নতুন করে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মতোই তাদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে।তাদের চলাচলে বিধিনিষেধ লুটপাট, নির্বিচারে আটক, দুর্ব্যবহার, এবং বেআইনিভাবে জোরপূর্বক শ্রম ও নিয়োগের মতো অন্যান্য নির্যাতন করা হচ্ছে।যার কারণে তারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।
ছালেহা নামের এক নারী ছয় সন্তান নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে বলেন, বুচিডংয়ে বোমায় স্বামী ও এক ছেলে মারা গেছে। কাজ নেই, খাবার নেই। তাই এখানে আসছি। রোহিঙ্গাদের ব্যাপক নির্যাতন করা হচ্ছে জানিয়ে মকবুল আহমেদ নামের একজন রোহিঙ্গা বলেন, আরসার কাছে ওষুধ বিক্রি করেছিস। ভাত খাইয়েছিস। তোরাও আরসার সমর্থক। এসব মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমার বাড়ি নিয়েছে। বিরাট ওষুধে দোকান দখল নিয়েছে।
উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের একটি ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ রফিক। তিনি এসেছেন ২০১৭ সালে। তিনি বলছেন তার ক্যাম্পেই এক হাজারের বেশি নতুন পরিবার যুক্ত হয়েছে গত এক বছরে। কেন নতুন করে এই রোহিঙ্গাদের আসাটা বেড়ে গেল সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাখাইনে বসবাসের অবস্থা নেই। সব মিয়ানমার সরকার নয় আরাকান আর্মি সব নিয়ন্ত্রণ করছে।
‘রোহিঙ্গা যারা আছে, তারা নিরাপদ নয়। বিশ বছরের ছেলে দেখলে তাদের দলে নিয়ে যায়। মিয়ানমার আর্মির সাথে যুদ্ধ করার সময় তাকে সামনে দিয়ে দেয়। সেখানে মারা যাচ্ছে। অথবা বিরুদ্ধে কোনও কথা বললে তারা মেরে ফেলতেছে। মা বোনদের মধ্যে দেখতে ভালো লাগলে তাকে তুলে নিয়ে ইজ্জত ধ্বংস করে। নিজ বাড়িতে থাকতে পারতেছে না। আরাকান আর্মি যেখানে চায় সেখানে থাকতে হচ্ছে। পশুপাখির মতো পাহাড় জঙ্গলে রাখা হচ্ছে বলেও জানা যাচ্ছে।’
স্থানীয়রা বলছেন, নতুন ঢল স্থানীয়দের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্যাম্পের চাপ বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য ও আবাসনের ব্যবস্থা দুর্বল, এবং অনেক রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে ভাড়া বাড়ি নিয়ে বসবাস করছে।
কক্সবাজারের পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলছে রোহিঙ্গারা। বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে খুনোখুনি চলছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করছে। অনেক দিন ধরে মাদক চোরাচালানের আখড়ায় পরিণত হয়েছে ক্যাম্প।
এদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বাজেট সহায়তাও ধীরে ধীরে কমছে। এছাড়া অনিশ্চয়তার মুখে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষাজীবন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, নতুন রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন চলছে। অনেকেই নিবন্ধনের অপেক্ষায় আছেন। গড়ে প্রতিদিন ২০-৩০ জন এখনও বাংলাদেশে ঢুকছেন বলে তারা শুনছেন।
‘ওইখানে মূলত রোহিঙ্গারা মাঝখানে পড়েছে। আরাকান আর্মি যখন মংডু দখল নেয়ার চেষ্টা করে আক্রমণটা চূড়ান্ত পর্যায় পৌছে তখন রোহিঙ্গাদের আগমনটা বেড়ে যায়। এটা মে জুন মাসে বেড়ে যায় এরপর জুলাই আগস্ট সেপ্টেম্বরে আরো বেশি আসে। বিশেষ করে আমাদের সীমান্তে যখন কিছুটা শীথিলতা দেখা দেয় যখন বিজিবিকে আইন শৃঙ্খলার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয় সে সময়টাতে অনেক লোক ঢুকে পড়ে।’
তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে প্রত্যাবাসন ছাড়া বিকল্প নেই। সরকার গুরুত্বসহকারে এগুচ্ছে। যদিও মানুষজন এখনও আসছে। ওইপারে পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক না।




















