প্রাণের উৎসবে আজ বর্ষবরণ

- আপডেট সময় : ১১:৫৬:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ৭২ বার পড়া হয়েছে
নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ সোমবার সকালেই শুরু হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ প্রাণের উৎসব। সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে লাখ মানুষ জমায়েত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি, চারুকলা, শাহবাগমোড় ও যাদুঘর চত্বর
নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ সোমবার সকালেই শুরু হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ প্রাণের উৎসব। সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি, চারুকলা, শাহবাগমোড় ও যাদুঘর চত্বর। আনুষ্ঠানিকতা ও সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। শোভাযাত্রাসহ বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সকাল ৯টায় শুরু হচ্ছে চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।
বর্ষবরন ঘিরে পুরো ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় এলাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বমনা বটমুলসহ আশপাশ এলাকায় নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একাধিক কন্ট্রোল টাওয়ার স্থপিন করা হয়েছে। এ সকল টাওয়ার থেকে ডিএমপি সদস্যরা গোটা এলাকা মনিটরিং করছেন।
আজ দিনভর বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ পালিত হচ্ছে। এরআগে গতকাল রোববার উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান প্রতিপাদ্য নিয়ে সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্র’ বের করা হয়।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সকাল ৮টা থেকে শোভাযাত্রা শুরু হবে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়েছে। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা শুধু নীলক্ষেত ও পলাশী মোড় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পেরেছেন। শোভাযাত্রা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রবেশ পথ ও সংলগ্ন সড়ক বন্ধ ছিল। শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে আশপাশ দিয়ে শোভাযাত্রায় প্রবেশ দেয়া হয়নি। শেষ প্রান্ত দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছিল। নিরাপত্তার স্বার্থে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তা ছাড়া কোনো ক্রমেই শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহনকারিরা বিষ্ফোরক ও ধাতব পদার্থ বহন করবেন না। করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার বিধান রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুদিনের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা অব্যাহত রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য লোক-ঐতিহ্য ও ২৪ এর চেতনাকে ধারণ করে আরও বড় পরিসরে এবং বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এ বছর শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হচ্ছে। শোভাযাত্রায় এ বছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিবৃন্দ অংশ নিয়েছেন। এই বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় রয়েছে ৭টি বড় মোটিফ, ৭টি মাঝারি মোটিফ এবং ৭টি ছোট মোটিফ।
সর্তক করে দেয়া হয়েছে, পহেলা বৈশাখে দিনভর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
অপরদিকে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলার সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখস্থ রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেট, চারুকলা অনুষদ সম্মুখস্থ ছবির হাটের গেট এবং বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেইট সম্পুর্ণ ভাবে বন্ধ থাকছে।
শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে যানবাহন সম্পর্কিত নির্দেশনায় আছে, ক্যাম্পাসে নববর্ষের সকল ধরনের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫ টার পর কোনভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষ উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মোটর সাইকেল চালাকদের সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়। কেউ ব্যতিক্রম কিছু করার চেষ্টা চালালে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
অপরদিকে বাংলা নববর্ষের দিনে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্প ডেস্ক, কন্ট্রোল রুম,অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প থাকছে। এছাড়া জনতার স্বার্থে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠ সংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশে-পাশের এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় মোবাইল পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হচ্ছে। নববর্ষ উপলক্ষে নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করা হয়েছে। অকোজোগুলো সচল করা হয়েছে। এছাড়া জরুরী ভিত্তিতে টিএসসি দোয়েল চত্বর, শাহবাগ মোড়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, রমনা বটমুল এবং বাংলা একাডেমী এলাকায় পৃথক ভাবে দমকল বাহিনীর ইউনিট, অ্যাম্বুলেন্স এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকছে।
ঢাবি কর্তৃপক্ষ বলেছে, বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপনে চারুকলার আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে মঙ্গল শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রা’ নাম দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার চারুকলা অনুষদে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ। তিনি দাবি করেন, এবার নববর্ষ উদযাপন ‘একপেশে সাংস্কৃতিক চর্চা’ থেকে বেরিয়ে এসে ‘ইনক্লুসিভ সাংস্কৃতিক চর্চা’ হবে।
এদিকে গত শনিবার ভোরে চারুকলায় শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও একটি প্রতিকৃতি। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে মাস্ক পরা এক যুবককে আগুন দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। সংবাদ সম্মেলনে জাহারা নাজিফা আরও বলেন, ১৯৮৯ সাল থেকে এ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এখনে এভাবে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করছি আমরা।