ফাঁসি হচ্ছে প্রদীপ ও লিয়াকতের

- আপডেট সময় : ১১:৩৭:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫ ৩৮৭ বার পড়া হয়েছে
ডেথ রেফারেন্স ও আপিলে রায় বহাল
অবশেষে উচ্চ আদালত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ে ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছেন। গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এ রায় ঘোষনার পরই নিহত সিনহার পরিবার দ্রুত রায় কার্যকর তথা আসামিদেও ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন। সিনহার পরিবারের আশা, মামলার রায় যাতে দ্রুত কার্যকর করা হয়।
গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, রায় ঘোষণার পর প্রদীপ ও লিয়াকতকে কক্সবাজার কারাগারে নির্ধারিত পোশাক পরিয়ে কনডেম সেলে রাখা হয়। সেখান থেকে তাদের চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার ও গভীর রাতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে আনা হয়। দুজনকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের পৃথক দুটি কনডেমড সেলে রাখা হয়েছে। রায়ের খবরে দুজই সেলে বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা, এবিষয়ে আপাতত তারা কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। তাদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত এবং আলোচনার পরই এবিষয়ে জানা যাবে।
অপরদিকে সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, গত চার বছর দুঃসহ ও বেদনাগ্রস্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছি আমরা। মামলার রায় দ্রুত যাতে কার্যকর হয়, সংশ্লিষ্টরা যেন সে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তার জোর দাবি জানাই।
তিনি বলেন, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হাইকোর্টে আপিল করেছেন। আদালতের প্রতি আমাদের সম্মান আছে। উচ্চ আদালতের রায়ে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। সেই রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস আরও বলেন, গত ৪ বছর দুঃসহ ও বেদনাগ্রস্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছি আমরা। মামলার রায় দ্রুত যাতে কার্যকর হয়, সংশ্লিষ্টরা যেন সে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তার জোর দাবি জানাই।
এবিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বলেছেন, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রায় এক বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তর করা হয়েছে। এখানকার হাই সিকিউরিটি পার্ট-৪-এর একটি কনডেম সেলে তাদের রাখা হয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারীতে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে এই কারাগারে আনা হয়। এর আগে শনিবার তাদের কক্সবাজার কারাগার থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হয়েছিল।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীকে প্রিজনভ্যানে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে আনা হয়েছে।
এদিকে হাই সিকিউরিটি কারাগারের জেল সুপার বলেছেন, ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতকে পৃথক ভাবে কনডেমড সেলে রাখা হয়েছে। তারা সুস্থ এবং ভালো আছেন। তারা খাবার খাচ্ছেন। রুটিন মাফিক তাদের তদারকি করা হচ্ছে। জেল সুপার বলেন, আপিলের রায়ের খবরে তারা কিছুটা বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন। রায়ের পরে তাদেরকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদেও নিয়মি স্বাস্থ্য পরিক্ষা এবং কারা হাসপাতালের চিকিৎসক দিয়ে খাবার পরিক্ষার পর তাদেরকে পরিবেশন করা হচ্ছে। তাদের সেলে সামনে সিসি টিভি ছাড়াও তিনশিফটে তিনজন কারারক্ষীকে সার্বক্ষনিক তাদের পাহারার পাশাপাশি গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে তারা দুজনই সুস্থ এবং ভালো আছেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদ-, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত আসামিরা হলেন, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্তকৃত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন। বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তদের দ-াদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে দন্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে মেজর সিনহা নিহত হন। নিহতের চার দিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন।
মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করা হয়। সেই সঙ্গে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে দুই নম্বর আসামি করা হয়। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিতকে। কক্সবাজার র্যাব-১৫ মামলার তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়। এরপর সিনহা হত্যা মামলার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদন্ড এবং ছয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন আদালত।