ফেনীকে বন্যা প্রবণ এলাকা হিসাবে ঘোষণা করে আশ্রয় কেন্দ্র খোলার দাবি

- আপডেট সময় : ৩১ বার পড়া হয়েছে
স্বরণকালের ঐতিহাসিক ভয়াবহ ২৪শের বন্যার কবলে পড়ে নিঃষ ও সর্বশান্ত ফেনীর জনপদ। বিশেষ করে ১৯ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বন্যা অতীতের সর্ব কালের সকল ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে যায়। ওই বন্যায় প্রাণ হারান বিভিন্ন বয়সী ২৯ জন। এছাড়া সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মোটরযান, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় প্রতিটি খাতে শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ভয়াবহ এই বন্যায় গত বছর জুলাই থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪১টি অংশ ভেঙে প্রবল স্রোতের তোড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ফেনী জেলার অবকাঠামো গত কৃষিখাত । তাছাড়া মৎস পোল্ট্রি গবাদী পশু পালন ।
জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের বন্যায় কৃষি, সড়ক যোগাযোগ, মৎস্য, প্রাণিসম্পদসহ বিভিন্ন খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নুন্যতম হিসাবে দাঁড়িয়েছে ২৩৮ কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৪৩১ টাকা।
কৃষি ও মৎস্য খাতে বিপর্যয়ঃ
বন্যায় ২ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমির ফসল ও বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষি খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি ৪৪০ হেক্টর হ্যাচারি ও ১ হাজার ৬৭৭টি পুকুর-জলাশয় ভেসে যাওয়ায় মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
প্রাণিসম্পদ ও অবকাঠামোগত ক্ষতি : জেলায় বন্যায় মারা গেছে ও ভেসে গেছে ৬৬ হাজার ৮২৫টি গবাদিপশু ও পোলট্রি। এর আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে প্রবল পানির স্রোতে ৩১৯ কিলোমিটার সড়ক এবং অন্তত ৬১টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে সড়ক ও সেতু খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জেলার ৪৩ কিলোমিটারের বেশি বাঁধ ভেঙে গেছে, যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫৪ কোটি টাকা। এছাড়া ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১৪টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, তিন হাজারের বেশি নলকূপ ও প্রায় তিন হাজার স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন বিভাগ জানিয়েছে, ৩৯ হেক্টরের বেশি বনায়ন ও কয়েক হাজার নার্সারি ভেসে গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৫ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন।
ফুলগাজীর সদর ইউনিয়নের উওর বড়ইয়ার বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দা শারিরীক প্রতিবন্ধী নুরুল আমিন বলেন, “বন্যায় ঘরের জিনিসপত্রের সঙ্গে পুকুরও ভেসে গেছে। বছর বছর আমরা একইভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছি। এখানে টেকসই বাঁধ না হলে দুর্ভোগ কখনো শেষ হবে না।”
স্থানীয় উদ্যোক্তা মো. মহসিন বলেন, “ভারতের উজানের পানি আর নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে প্রতিবছর শত কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতায় এ অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।”
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, “সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের জন্য বরাদ্দ এলে পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হবে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের স্থানীয় পর্যায়ে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এনজিও ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমন্বয়ে পুনর্বাসন কার্যক্রম চালানো হবে।”
২০২৪ সালের বন্যা এবং এবারের বন্যার অভিজ্ঞতায় স্পষ্ট হয়েছে—জেলায় প্রতিটি এলাকায় বেশি আশ্রয়কেন্দ্র প্রয়োজন। ফেনী এখন একটি বন্যা প্রবণ এলাকা। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানাতে উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে ।