ঢাকা ০৪:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

ফেনীতে ঘোষণা দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের মুখ্য সমন্বয়ক পদ ছাড়লেন মুহাইমিন তাজিম

এম এ রহমান দুলাল ভুইয়া, ফেনী
  • আপডেট সময় : ৬৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফেনীতে গতকাল রোববার ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফেনীর মুখ্য সমন্বয়ক পদ হতে ইস্তেফার ঘোষণা দিলেন মুহাইমিন তাজিম । এই কারনে তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ২০২৪ এর জুলাই দেশের ছাএ সমাজের কোটা বিরোধী আন্দোলন যখন ফ্যাসীবাদ বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে রুপ নিয়েছিল তখন ফেনীসহ সমগ্র দেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত নির্বিকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে ওঠা মানুষের কণ্ঠস্বর, প্রতিবাদের অগ্নিশিখা। এই আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে আপনাদের সঙ্গে এক কণ্ঠে, এক হৃদয়ে পথ চলতে পেরে আমি গর্বিত। গতবছর এই দিনে আমাদের আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয়। আন্দোলনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিটি বিজয় ছিল আপনাদের শক্তি ও সমর্থনের ফল। আমি কৃতজ্ঞ সেই অসংখ্য সহযোদ্ধা, যুবক, বৃদ্ধ, নারী ও তরুণদের প্রতি যারা কখনো ক্লান্ত হননি, কখনো পিছিয়ে যাননি। যারা ভয়কে জয় করে রাস্তায় নেমেছেন, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন, যাদের আত্মত্যাগে এই অভ্যুত্থান একটি গণজাগরণে পরিণত হয়েছে।
যদিও এই পদ থেকে আন্দোলনের পরপরই সরে যেতে চেয়েছিলাম কিন্ত ক্ষমতার অপব্যাবহার রুখতে, জুলাইয়ের স্পিরিট ছড়িয়ে দিতে এবং সংস্কার কার্যক্রমে সক্রিয় থাকতে ও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমে নিজের অবস্থান হতে সহযোগিতা করার জন্য এই পথচলা এতদূর। আন্দোলনের সমন্বয়ক থেকেও আন্দোলন পরবর্তী সমন্বয়কের পথচলা কঠিন ছিলো।
এই পথচলায় অনেক সিনিয়র ভাইয়েরা, জুনিয়র ভাইয়েরা, সাংবাদিক ভাইয়েরা, অনেক রাজনৈতিক দলের নেতাসহ অনেকেই আমাকে সাদরে গ্রহন করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, সম্মান দিয়েছেন সেজন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। আলহামদুলিল্লাহ স্রষ্টার নিকট।
এই মাঠে বিচরন নিয়ে আমি ধারাবাহিকভাবে লিখবো। নিজের ভুল-সঠিক সবগুলো কাজকে সামনে তুলে ধরবো, উঠে আসা তরুণ নেতৃত্বের পথের দিশারি হবে বলে আশা করি। এ মাঠে এসে আমি বহুবার ব্যাবহৃত হয়েছি নিজের অজান্তে এবং অনভিজ্ঞতার কারনে। এ ময়দানে এসে বুজেছি কেউ সাধু নয় কেউ ধোয়া তুলসি পাতা নয় সেটা ইমাম,শিক্ষক,প্রশাসনের হর্তাকর্তা কিংবা জনদরদি নেতা। জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে সবাইকেই অবস্থান থেকে বিচ্যুত হতে হয়। এমনকি নিজের সহযোদ্ধাদের টগবগে রক্তেও ক্ষমতা,অহংকার এবং অর্থের মোহ মিশে যেতে দেখেছি । অনেকে আদর্শে ফিরে এসেছে তাদেরকে সাধুবাদ এবং শুভকামনা জানাই। ছবির রাজনীতি এবং গলাবাজির রাজনীতি থেকে চুপ থেকে রিজার্ভ থাকার রাজনীতিকেই অনেক সময় বেচে নিতে হয়েছে ।
আমার রাজনৈতিক যাত্রায় আমি কিছু ভুল করেছি—কখনো সিদ্ধান্তে, কখনো অবস্থানে, কখনো হয়তো নীরব থাকার মাধ্যমে। কিছু ভুল হয়েছে বুঝে, কিছু অজান্তে। সেইসব ভুলের কারণে কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে, কারও বিশ্বাসে ফাটল ধরলে—আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—শেখা ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে, আরও দায়িত্বশীল ও জনমুখী অবস্থানে আমি নিজেকে প্রস্তুত করব। রাজনীতি একটি চলমান শিক্ষা, একটি দায়িত্বশীল যাত্রা—যেখানে প্রত্যেক সিদ্ধান্ত, প্রতিটি পদক্ষেপ জনস্বার্থে হওয়া উচিত। কিন্তু মানুষ মাত্রেই ভুল হয়, আমিও তার বাইরে নই।
অসাধারণ থেকে সাধারণ, সন্তোষজনক, আদর্শিক জীবনেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি ।
আমার বিশ্বাস, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান” এখন আর কোনো একজনের নেতৃত্বে নয়—এটি এখন প্রতিটি মানুষের আন্দোলন, প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্রতীক। আমার বিদায় কোনো বিচ্ছেদ নয়, বরং নতুন যাত্রার সূচনা । বরাবরের মতোই আপনাদের পাশে থাকবো, আপনাদের কণ্ঠস্বর হয়ে কথা বলবো—শুধু ভিন্ন অবস্থান থেকে। আমি থাকবো আপনাদের মধ্যেই—শুধু পদে নয়, বিশ্বাসে। আবার দেখা হবে—সময়ের দাবি নিয়ে, জনগণের পক্ষে। এই বক্তব্য প্রদান শেষে তিনি আরও জানান ।
শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি ,গাজী সহযোদ্ধা ভাইদের প্রতি রইলো সালাম।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ফেনীতে ঘোষণা দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের মুখ্য সমন্বয়ক পদ ছাড়লেন মুহাইমিন তাজিম

আপডেট সময় :

ফেনীতে গতকাল রোববার ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফেনীর মুখ্য সমন্বয়ক পদ হতে ইস্তেফার ঘোষণা দিলেন মুহাইমিন তাজিম । এই কারনে তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ২০২৪ এর জুলাই দেশের ছাএ সমাজের কোটা বিরোধী আন্দোলন যখন ফ্যাসীবাদ বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে রুপ নিয়েছিল তখন ফেনীসহ সমগ্র দেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত নির্বিকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে ওঠা মানুষের কণ্ঠস্বর, প্রতিবাদের অগ্নিশিখা। এই আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে আপনাদের সঙ্গে এক কণ্ঠে, এক হৃদয়ে পথ চলতে পেরে আমি গর্বিত। গতবছর এই দিনে আমাদের আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয়। আন্দোলনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিটি বিজয় ছিল আপনাদের শক্তি ও সমর্থনের ফল। আমি কৃতজ্ঞ সেই অসংখ্য সহযোদ্ধা, যুবক, বৃদ্ধ, নারী ও তরুণদের প্রতি যারা কখনো ক্লান্ত হননি, কখনো পিছিয়ে যাননি। যারা ভয়কে জয় করে রাস্তায় নেমেছেন, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন, যাদের আত্মত্যাগে এই অভ্যুত্থান একটি গণজাগরণে পরিণত হয়েছে।
যদিও এই পদ থেকে আন্দোলনের পরপরই সরে যেতে চেয়েছিলাম কিন্ত ক্ষমতার অপব্যাবহার রুখতে, জুলাইয়ের স্পিরিট ছড়িয়ে দিতে এবং সংস্কার কার্যক্রমে সক্রিয় থাকতে ও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমে নিজের অবস্থান হতে সহযোগিতা করার জন্য এই পথচলা এতদূর। আন্দোলনের সমন্বয়ক থেকেও আন্দোলন পরবর্তী সমন্বয়কের পথচলা কঠিন ছিলো।
এই পথচলায় অনেক সিনিয়র ভাইয়েরা, জুনিয়র ভাইয়েরা, সাংবাদিক ভাইয়েরা, অনেক রাজনৈতিক দলের নেতাসহ অনেকেই আমাকে সাদরে গ্রহন করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, সম্মান দিয়েছেন সেজন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। আলহামদুলিল্লাহ স্রষ্টার নিকট।
এই মাঠে বিচরন নিয়ে আমি ধারাবাহিকভাবে লিখবো। নিজের ভুল-সঠিক সবগুলো কাজকে সামনে তুলে ধরবো, উঠে আসা তরুণ নেতৃত্বের পথের দিশারি হবে বলে আশা করি। এ মাঠে এসে আমি বহুবার ব্যাবহৃত হয়েছি নিজের অজান্তে এবং অনভিজ্ঞতার কারনে। এ ময়দানে এসে বুজেছি কেউ সাধু নয় কেউ ধোয়া তুলসি পাতা নয় সেটা ইমাম,শিক্ষক,প্রশাসনের হর্তাকর্তা কিংবা জনদরদি নেতা। জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে সবাইকেই অবস্থান থেকে বিচ্যুত হতে হয়। এমনকি নিজের সহযোদ্ধাদের টগবগে রক্তেও ক্ষমতা,অহংকার এবং অর্থের মোহ মিশে যেতে দেখেছি । অনেকে আদর্শে ফিরে এসেছে তাদেরকে সাধুবাদ এবং শুভকামনা জানাই। ছবির রাজনীতি এবং গলাবাজির রাজনীতি থেকে চুপ থেকে রিজার্ভ থাকার রাজনীতিকেই অনেক সময় বেচে নিতে হয়েছে ।
আমার রাজনৈতিক যাত্রায় আমি কিছু ভুল করেছি—কখনো সিদ্ধান্তে, কখনো অবস্থানে, কখনো হয়তো নীরব থাকার মাধ্যমে। কিছু ভুল হয়েছে বুঝে, কিছু অজান্তে। সেইসব ভুলের কারণে কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে, কারও বিশ্বাসে ফাটল ধরলে—আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—শেখা ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে, আরও দায়িত্বশীল ও জনমুখী অবস্থানে আমি নিজেকে প্রস্তুত করব। রাজনীতি একটি চলমান শিক্ষা, একটি দায়িত্বশীল যাত্রা—যেখানে প্রত্যেক সিদ্ধান্ত, প্রতিটি পদক্ষেপ জনস্বার্থে হওয়া উচিত। কিন্তু মানুষ মাত্রেই ভুল হয়, আমিও তার বাইরে নই।
অসাধারণ থেকে সাধারণ, সন্তোষজনক, আদর্শিক জীবনেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি ।
আমার বিশ্বাস, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান” এখন আর কোনো একজনের নেতৃত্বে নয়—এটি এখন প্রতিটি মানুষের আন্দোলন, প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্রতীক। আমার বিদায় কোনো বিচ্ছেদ নয়, বরং নতুন যাত্রার সূচনা । বরাবরের মতোই আপনাদের পাশে থাকবো, আপনাদের কণ্ঠস্বর হয়ে কথা বলবো—শুধু ভিন্ন অবস্থান থেকে। আমি থাকবো আপনাদের মধ্যেই—শুধু পদে নয়, বিশ্বাসে। আবার দেখা হবে—সময়ের দাবি নিয়ে, জনগণের পক্ষে। এই বক্তব্য প্রদান শেষে তিনি আরও জানান ।
শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি ,গাজী সহযোদ্ধা ভাইদের প্রতি রইলো সালাম।