ঢাকা ০৪:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

সুন্দরবনে ফের দস্যুতার কালো ছায়া ​

বনজীবীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক ৭টি সক্রিয় বাহিনী

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১৭ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

​দক্ষিণ-পশ্চিমের খুলনা, বাগেরহাট, ও সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবনে র‍্যাব ও কোস্টগার্ডের অব্যাহত অভিযান এবং বনদস্যুদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করা হলেও, এখন আবারও দস্যুতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে এই মুহূর্তে কমপক্ষে ৭টি দস্যু বাহিনী বনজীবী ও জেলে-বাওয়ালীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
​আতঙ্কের চিত্র ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
​চাঁদা আদায়: প্রতি গোনে ডাকাতরা জেলে-বাওয়ালীদের কাছ থেকে কোটি টাকার চাঁদা আদায় করছে।
​অপহরণ ও জিম্মি: বঙ্গোপসাগরের ফিশিং ট্রলার আটক করে জেলেদের জিম্মি করা তাদের নিত্যদিনের ঘটনা।
​সক্রিয় বাহিনী: বর্তমানে সক্রিয় ৭টি বাহিনীর মধ্যে শরীফ বাহিনী, মামা-ভাগ্নে বাহিনী, আছাবুর বাহিনী, মজনু বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, আনারুল বাহিনী ও রাঙ্গা বাহিনীর নাম উঠে আসছে।
​ভুক্তভোগীদের অভিযোগ: এই বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে অপহরণ, জিম্মি করে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের মতো গুরুতর অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী জেলেরা।
​নবাগত বাহিনী: খুলনার কয়রা উপজেলার একসময়ের আলোচিত হরিণ শিকারি ও একাধিক মামলার আসামি মহসিন গাজী এখন নতুন করে ‘মহসিন বাহিনী’ তৈরি করে সুন্দরবনের মূর্তিমান আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন।
পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের বাসু ওরফে বাসুদেব বাহিনী
​প্রভাব: এমন পরিস্থিতিতে বহু বনজীবী পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে বন বিভাগের রাজস্ব আদায় অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে।
​বনজীবী সমিতির নেতা আব্দুল গফুর বলেন, “প্রশাসনের যদি সত্যিকারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ভূমিকা নিতো তাহলে সুন্দরবনে ডাকাতে সয়লাব হতো না।”
​ নতুন করে দস্যুতার নেপথ্যে
​পালিয়ে আসা আসামি: গত ৫ আগস্টের পর সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে পালানো দাগী আসামি এবং ৭ বছর আগে আত্মসমর্পণ করা বনদস্যুরা পুনরায় সুন্দরবনে গিয়ে নতুন করে দস্যুতা শুরু করেছে।
​অস্ত্র সংগ্রহ: ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময় লুট হয়ে যাওয়া আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ, এবং মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্ত থেকে বিভিন্ন আধুনিক অস্ত্র ও দেশীয় তৈরি অস্ত্র সংগ্রহ করে ডাকাত বাহিনীগুলো এখন সুন্দরবনের অঘোষিত সম্রাটে পরিণত হয়েছে।
​বিদেশ থেকে চাঁদা দাবি: আত্মসমর্পণ করা বনদস্যু আলিম বাহিনীর প্রধান আব্দুল আলিম, মিলন, জিয়া, জনাব ও নুরু বর্তমানে ভারতে বসে চাঁদা দাবি করছে বলে জানা গেছে।
​আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ​কোস্টগার্ডের অব্যাহত অভিযানে গত এক বছরে প্রায় ৪৮ জন বনদস্যু ও তাদের সহযোগীকে আটক করা হয়েছে। এই সময়ে জিম্মি থাকা অর্ধশত জেলেকে মুক্ত করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সুন্দরবনে ফের দস্যুতার কালো ছায়া ​

বনজীবীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক ৭টি সক্রিয় বাহিনী

আপডেট সময় :

​দক্ষিণ-পশ্চিমের খুলনা, বাগেরহাট, ও সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবনে র‍্যাব ও কোস্টগার্ডের অব্যাহত অভিযান এবং বনদস্যুদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করা হলেও, এখন আবারও দস্যুতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে এই মুহূর্তে কমপক্ষে ৭টি দস্যু বাহিনী বনজীবী ও জেলে-বাওয়ালীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
​আতঙ্কের চিত্র ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
​চাঁদা আদায়: প্রতি গোনে ডাকাতরা জেলে-বাওয়ালীদের কাছ থেকে কোটি টাকার চাঁদা আদায় করছে।
​অপহরণ ও জিম্মি: বঙ্গোপসাগরের ফিশিং ট্রলার আটক করে জেলেদের জিম্মি করা তাদের নিত্যদিনের ঘটনা।
​সক্রিয় বাহিনী: বর্তমানে সক্রিয় ৭টি বাহিনীর মধ্যে শরীফ বাহিনী, মামা-ভাগ্নে বাহিনী, আছাবুর বাহিনী, মজনু বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, আনারুল বাহিনী ও রাঙ্গা বাহিনীর নাম উঠে আসছে।
​ভুক্তভোগীদের অভিযোগ: এই বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে অপহরণ, জিম্মি করে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের মতো গুরুতর অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী জেলেরা।
​নবাগত বাহিনী: খুলনার কয়রা উপজেলার একসময়ের আলোচিত হরিণ শিকারি ও একাধিক মামলার আসামি মহসিন গাজী এখন নতুন করে ‘মহসিন বাহিনী’ তৈরি করে সুন্দরবনের মূর্তিমান আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন।
পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের বাসু ওরফে বাসুদেব বাহিনী
​প্রভাব: এমন পরিস্থিতিতে বহু বনজীবী পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে বন বিভাগের রাজস্ব আদায় অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে।
​বনজীবী সমিতির নেতা আব্দুল গফুর বলেন, “প্রশাসনের যদি সত্যিকারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ভূমিকা নিতো তাহলে সুন্দরবনে ডাকাতে সয়লাব হতো না।”
​ নতুন করে দস্যুতার নেপথ্যে
​পালিয়ে আসা আসামি: গত ৫ আগস্টের পর সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে পালানো দাগী আসামি এবং ৭ বছর আগে আত্মসমর্পণ করা বনদস্যুরা পুনরায় সুন্দরবনে গিয়ে নতুন করে দস্যুতা শুরু করেছে।
​অস্ত্র সংগ্রহ: ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময় লুট হয়ে যাওয়া আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ, এবং মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্ত থেকে বিভিন্ন আধুনিক অস্ত্র ও দেশীয় তৈরি অস্ত্র সংগ্রহ করে ডাকাত বাহিনীগুলো এখন সুন্দরবনের অঘোষিত সম্রাটে পরিণত হয়েছে।
​বিদেশ থেকে চাঁদা দাবি: আত্মসমর্পণ করা বনদস্যু আলিম বাহিনীর প্রধান আব্দুল আলিম, মিলন, জিয়া, জনাব ও নুরু বর্তমানে ভারতে বসে চাঁদা দাবি করছে বলে জানা গেছে।
​আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ​কোস্টগার্ডের অব্যাহত অভিযানে গত এক বছরে প্রায় ৪৮ জন বনদস্যু ও তাদের সহযোগীকে আটক করা হয়েছে। এই সময়ে জিম্মি থাকা অর্ধশত জেলেকে মুক্ত করা হয়েছে।