বহিরাগতদের ইন্ধনেই শ্রমিক অসন্তোষ, কঠোর অবস্থানে সরকার
- আপডেট সময় : ০৮:০৬:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১৫ বার পড়া হয়েছে
শিল্প প্রবৃদ্ধিকে নতুন উচ্চতায় নেওয়া হবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস
দেশের বাইরে বসবাসকারী একটি গোষ্ঠীর প্ররোচনায় কারখানাগুলোতে ভাঙচুর
গাজীপুর, টঙ্গী ও আশুলিয়া শিঞ্চলে শ্রমিক অস্থিরতার পেছনে তার হাত থাকতে পারে
বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশের শিল্প প্রবৃদ্ধিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে বৈঠক করছেন, সেই মুহূর্তে বুধবার গাজীপুরে কিছু সংখ্যক শ্রমিক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লব দেশে নতুন যুগের সূচনা করেছে এবং অন্তর্বর্তী সরকার শিল্প, অর্থ ও উৎপাদন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এসময় ব্যবসায়ীরা নেতৃবৃন্দ পোশাক ও ওষুধখাতে অস্থিরতার বিষয় তুলে ধরেন এবং দেশের বাইরে বসবাসকারী গোষ্ঠীসহ বহিরাগতদের প্ররোচনায় কারখানাগুলোতে ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় ড. ইউনূস ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, তার সরকার কারখানাগুলোকে সহিংসতা ও হামলা থেকে রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমাদের দায়িত্ব শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ ও মীর নাসির হোসেন, বিজিএমইএ সভাপতি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসের এজাজ বিজয় সভায় অংশ নেন।
ছাত্র-জনতার একদফার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতন এবং হাসিনার ভারতে পলায়নের পর এক গোষ্ঠী বর্তমান সরকারকে অস্থিরতায় ফেলতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে বিভিন্ন অধিদপ্তরের কর্মরত আউটসোর্সিংয়ে কর্মীদের রাজপথে নামিয়ে দেবার অভিযোগ রয়েছে। অথচ বিগত দেড়যুগ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে এসব কর্মীরা রাস্তায় নেমে কোন দাবিদাওয়া জানাতে পারেনি। আউট সোর্সিং কর্মীদের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে, এমন কোন বিধিমালা নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিরতায় ফেলতেই এমন অবস্থার সৃষ্টি করা হয় বলে অভিযোগ।
সূত্রের খবর, শ্রমিক নেতা ও আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শাহজাহান খান ও তার লালিত গোষ্ঠী কৌশলে শ্রমিকদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিল্পকারখানায় অস্থিরতা সৃষ্টি করে মহলটি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছে। ৫ আগস্টের পর থেকে শাহজাহান খান গং পলাতক। তার অন্যতম সঙ্গ ওসমান আলীও আত্মগোপনে। শাহজাহান খান মূলত গার্মেন্টস, পরিবহন ও ব্যাংকসহ বিভিন্ন অধিদপ্তর, কর্পোরেশনের শ্রমিকদের নিয়ে সংগঠন পরিচালনা করতেন। গাজীপুর, টঙ্গী ও আশুলিয়া শিঞ্চলে শ্রমিক অস্থিরতার পেছনে তার হাত থাকতে পারে।
শ্রমিক অসন্তোষে জড়িত বেশিরভাগই বহিরাগত বলে মন্তব্য করেছেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ। াভারের আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক অসন্তোষে জড়িত বেশিরভাগই বহিরাগত বলে উল্লেখ করেন। দেশের অর্থনীতি ও শ্রমিকদের রক্ষায় কঠোর অবস্থান নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার দেন উপদেষ্টা। দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের নিরাপত্তায় যৌথ অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, পোশাক শিল্পের নিরাপত্তায় সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরে সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে। এর আগে গত সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন তৈরিপেশাকখাতের ব্যবসায়ীরা। পাশাক শিল্পের নিরাপত্তায় সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরে সোমবার রাতেই সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনারন কথা জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। পরবর্তীতে প্রয়োজনে যৌথ অভিযানে যোগ দেবে র্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বজিএমইএ সভাপতির রফিকুল ইসলামের বক্তব্য যারা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় তারা কেউ পোশাক শ্রমিক নয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন শিল্প মালিকরা। পরবর্তীতে আলোচনা করে কারখানা খোলা বা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে বিকেলে সচিবালয়ে বিজিএমইএ ও নিট শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) শ্রমিক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশেনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আক্তার চৌধুরী বলেন, কারখানার ক্ষতি করে কোনো আন্দোলন করা যাবে না। আর বিএকেএমইএ সভাপতি মো. হাতেম বলেন, কারখানায় হামলা বিশৃঙ্খলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ষড়যন্ত্র করে বহিরাগতরা অযৌক্তিক দাবি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের চেষ্টা করছে। সে বিষয়ে উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল বুধবার সচিবালয়ে তৈরি পোশাক শিল্প খাত ও শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে এক জরুরি বৈঠক শেষে হাসান আরিফ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ বলেন, সাভারের আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক অসন্তোষে জড়িত বেশিরভাগই বহিরাগত। দেশের অর্থনীতি ও শ্রমিকদের রক্ষায় কঠোর অবস্থান নেয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ার করেছেন। তৈরি পোশাক শিল্প খাত ও শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে জরুরি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, চারদিকে যে শ্রমিক অসন্তোষ হচ্ছে, তা নিয়ে এদিন আমরা বৈঠক করেছি। আমরা খবর পাচ্ছি যে প্রকৃত শ্রমিক যারা, তারা কেউ নিজের বাড়ি পোড়াবেনন না, কারণ এখানে তার জীবিকা। এটা বহিরাগতরা এসে করেছে। শ্রমিকদের উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা বাধা দেন, আপনারা বাধা দিলে আমরাও আপনাদের সঙ্গে থাকব। এমনভাবে তারা মিশে আছে যে, তাদের সেগরিগেট (আলাদা) করা ডিফিকাল্ট (কঠিন) হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাআরও বলেন, প্রকৃত শ্রমিকরা এ ধরনের কোনো বিশৃঙ্খলা করছেন না। যেখানে তার জীবিকা, সেখানে সে (শ্রমিক) ধ্বংস করবে না। আপনারা খেয়াল করে থাকবেন, যেগুলো ভাইব্রেন্ট (গুরুত্বপূর্ণ) কারখানা, কুমিল্লায় প্রাণ কোম্পানির কারখানা জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রাণ কোম্পানিতে কোনোদিন শ্রমিক বিশৃঙ্খলা ছিল না। কিন্তু এই কোম্পানি যেহেতু দিনকে দিন বিশ্ব ছেয়ে ফেলছে, তাহলে এটা যদি নষ্ট হয়, তাহলে এ খাতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বন্ধ হয়ে যাবে।
হাসান আরিফ বলেন, স্থানীয় কারখানা নষ্ট হয়ে যাবে, তাহলে কার লাভ হবে? কাজেই শ্রমিকরা কোনো বিশৃঙ্খলা করছেন না। যারা করছেন, তাদের অধিকাংশই বহিরাগত। তাদের কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে কারণে আমাদের একটু কঠিন হতে হবে। আমরা মনে রেখেছি, সরকার কোনো সময় তার নাগরিকের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করবে না, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কারখানা, শ্রমিক ও দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে গেলে কিছু সংখ্যকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সে ব্যাপারে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান ও শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন।