বাংলাদেশের বিমান দুর্ঘটনার যত ঘটনা

- আপডেট সময় : ১৪৭ বার পড়া হয়েছে
এদেশে বিমান দুর্ঘটনা নতুন কিছু নয়। বিশ্বে ভয়াবহ অনেক বিমান দুর্ঘটনার কথা আমরা জানি। এর মাঝে নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমান বন্দরের অদুরে ইউএস বাংলার বিমান ভয়াবহ দুর্ঘটনা হতাহতদের কথা স্বরন করিয়ে দেয়। বিভিন্ন কারণে ঘটে এ ধরনের দুর্ঘটনা। অসহায়ের মতো সমর্পণ ছাড়া যেন কিছুই করার থাকে না। বাংলাদেশের কয়েকটি বিমানের ভাগ্যেও জুটেছে এমন ঘটনা।
চলতি ২০২৫ সালের ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন বিদ্যালয়ে বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই ‘প্রশিক্ষণ বিমান’ বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে। এরপর মাইলস্টোন কলেজ সংলগ্ন মাঠে ‘এফ-৭ বিজিআই’ মডেলের প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় স্কুল শাখায় প্রথম শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চলমান ছিল। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।
২০২৪ সালে নগরীর পতেঙ্গায় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এক বৈমানিক নিহত হয়েছে। সকালে কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর বৈমানিকদ্বয় উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খাঁন, পিএসসি এবং স্কোয়াড্রন লীডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ জরুরী প্যারাসুট দিয়ে বিধ্বস্ত বিমান থেকে নদীতে অবতরণ করেন। দুপুর ১২টার দিকে নগরীর ঈশা খাঁ নৌঘাঁটিতে নৌবাহিনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্কোয়াড্রন লীডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের মৃত্যু হয়েছে। অপর বৈমানিক উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খাঁন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর রাশিয়ান প্রশিক্ষণ বিমান ইয়াক-১৩০ কর্ণফুলী নদীর মোহনায় বিধ্বস্ত হয়। এ সময় বিমানটির পেছনে আগুন জ্বলতে দেখেন স্থানীয়রা। সেটি পতেঙ্গা বোট ক্লাবের কাছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের বিপরীতে এইচ এম স্টিল মিলের সামনে পড়ে নদীতে তলিয়ে যায়।
২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (টিআইএ) ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। ৬৭ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রুবাহী বিমান থেকে ১৭ যাত্রীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বিমানে থাকা বাকী সকলেই মারা যান। ওই বিমানে বাংলাদেশী যাত্রী বেশি ছিল।
২০১৫ সালের আগস্ট মাসে সিলেট বিমানবন্দরের রানওয়েতে আরেক দফা দুর্ঘটনা ঘটে। সেদিন দুবাই থেকে সরাসরি আসা উড়োজাহাজে ২২০ জন যাত্রী ছিলেন। ওই সময় বিজি-৫২ বিমানের ডানদিকের ইঞ্জিনের ভেতর পাখি ঢুকে পড়ে। তখন চারটি ব্লেড ভেঙে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। সেদিন সকাল ৭টায় রানওয়েতে অবতরণের সময় এ ঘটনা ঘটে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
২০১৫ সালের ৯ মার্চ কক্সবাজারে একটি কার্গো বিমান বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয়। সে ঘটনায় পাইলটসহ ৩ জন নিহত হন। উড্ডয়নের ৫ মিনিটের মাথায় সাগরে আছড়ে পড়ে বিমানটি।
২০০৪ সালের ৮ অক্টোবর আবারও সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনা ঘটে। এটিও ১৯৯৭ সালে দুর্ঘটনার কবলে পড়া বিমানের মডেলের অনুরুপ ফকার এফ২৮-৪০০০ মডেল। সেদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-৬০১ ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিল। অবতরণের পর রানওয়ে ভেজা থাকার কারণে বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে খাঁদে পড়ে যায়। এতে ৭৯ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রুর মধ্যে ২ জন যাত্রী আহত হন।
১৯৯৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ৮৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ফকার এফ২৮-৪০০০ মডেলের বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-৬০৯ ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিল। সিলেট বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময় কুয়াশার কারণে রানওয়ের পাদদেশ থেকে ৫ থেকে সাড়ে ৫ কিলোমিটার দূরে উমাইরগাঁও নামক স্থানের একটি ধানক্ষেতে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৭ জন যাত্রী অহত হন। এর অগে ১৯৯৬ সালে মার্ট মাসে বিমানের একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিব্ধস্ত হয় রাজধানীর দক্ষিনাংশের পোস্তা গোলা ফাইটিং ফাইভের অদুরে বুড়িগঙ্গা নদীবক্ষে। এ ঘটনায় বিমানে আগুন ধরে সম্পূর্ন বিব্ধস্ত হয়। বিমানে থাকা বৈমানিক প্রশিক্ষনরত সুমন ও ফারিয়া লারা মারা যান। নিহত দুজনের বাসা ছিল খিলক্ষেত নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা এবং উত্তরাতে।
১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকায় খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে অবতরণ করার সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফকার এফ- ২৭-৬০০ বিমানটি বর্তমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি জলাভূমির মধ্যে ক্র্যাশ করে। বিমানটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিমানবন্দর থেকে পূর্বনির্ধারিত ঘরোয়া যাত্রী ফ্লাইট পরিচালনা করছিল। এতে ৪ জন ক্রু ও ৪৫ জন যাত্রীসহ সবাই নিহত হন।
এর আগে, বিমান দুর্ঘটনায় সর্বোচ্চ ৪৯ জনের প্রাণহানি ঘটে ১৯৮৪ সালে। ওই বছরের ৫ই আগস্ট বাংলাদেশ বিমানের ফকার এফ২৭-৬০০ মডেলের ছোট একটি বিমান চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসে। রানওয়ে অবতরণের সময় বিমানবন্দরের খুব কাছেই বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানের অভ্যন্তরীণ সেই ফ্লাইটের ৪৫ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রুর সবাই নিহত হন। প্লেনটি চালাচ্ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা পাইলট কানিজ ফাতেমা রোকসানা। এর আগে ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর প্রশিক্ষণ বিমান ডিসি-৩ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলটসহ পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটে। ১৯৭৯ সালের ১৮ নভেম্বর সাভার বাজারে এফ ২৭-২০০ (এস২-এবিজি) বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়। ১৯৮০ সালের ৩ এপ্রিল সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্ট থেকে ছেড়ে ১০০ মিটার উচ্চতায় বিমানের ইঞ্জিন বিকল হলে বোয়িং ৭০৭-৩২০সি (ফ্লাইট এস২-এবিকিউ) রানওয়েতে ফিরে আসার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ১৯৯৭ সালের ২২ ডিসেম্বর এফ২৮-৪০০০ (এস২-এসইজে) বিমান ৮৯ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে সিলেটে রওনা হয়। কুয়াশার কারণে সিলেট বিমানবন্দরের অদূরে জরুরি অবতরণ করে বিমানটি। ২০০৪ সালের ৮ অক্টোবর এফ২৮-৪০০০ (এস২-এসইএইচ) মডেলের একটি বিমান ৭৯ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে গিয়ে বৃষ্টিপাতের কারণে পিচ্ছিল থাকায় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। ২০০৫ সালের ১ জুলাই ডিসি১০-৩০ ইআর (এস২-এডিএন) বিমান ২১৬ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণের সময় হেলে পড়ে। এতে বিমানের ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। ২০০৭ সালের ১২ মার্চ বাংলাদেশ বিমানের একটি ৩১০-৩০০ (এস২-এডিই) ফ্লাইট ২৩৬ জন যাত্রী নিয়ে দুবাই বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়। এ সময় ল্যান্ডিং গিয়ার অকেজো হয়ে যাওয়ায় রানওয়ের শেষ প্রান্তে গিয়ে থেমে যায় বিমানটি। তবে এসব দুর্ঘটনায় কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।