বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ফুটবল ম্যাচ কঠোর নিরাপত্তাবলয়ে ঢাকা ষ্টেডিয়াম

- আপডেট সময় : ০৩:০৩:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫ ৭৯ বার পড়া হয়েছে
ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ১০ জুন আজ মঙ্গলবার এএফসি এশিয়ান কাপ ফুটবল বাছাইয়ের ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল বনাম সিঙ্গাপুর জাতীয় ফুটবল দলের মধ্যকার আসন্ন ম্যাচ উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিশেষ নিরাপত্তা এবং অত্র এলাকার নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ডিএমপি পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, ডিবি এবং বিশেষায়িত সোয়াট টীমের সকল সদস্যকে স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে নামানো হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচকে ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। মাঠের নিরাপত্তায় এবার দায়িত্ব পালন করবে পুলিশের এলিট ইউনিট সোয়াট। ৪ জুন গত বুধবার বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যকার প্রীতি ম্যাচে ঘটে যাওয়া বিশৃঙ্খলা থেকে শিক্ষা নিয়েই এই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ভুটান ম্যাচের দিন জাতীয় স্টেডিয়ামে দেখা গিয়েছিল চরম অব্যবস্থাপনা। টিকিট হাতে নিয়েও অনেক দর্শক স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে পারেননি, যার জেরে তারা অধৈর্য হয়ে পূর্ব গ্যালারির গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন। শুধু তাই নয়, গ্যালারি ডিঙিয়ে মাঠে প্রবেশেরও ঘটনা ঘটে। ম্যাচ চলাকালীন দুজন দর্শক মাঠে ঢুকে পড়েন, এবং শেষ বাঁশির পর আরও একজন। একজন তো খেলার মাঝেই বাংলাদেশ দলের ডাগআউটে ছুটে গিয়ে হামজা চৌধুরীর সঙ্গে ছবি তোলার চেষ্টা করেন।
এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বাফুফে এবার বদ্ধপরিকর। বাফুফে নিশ্চিত করেছে যে, ৯ জুন সোমবার বেলা ১১টায় সোয়াট সদস্যরা স্টেডিয়ামে নিরাপত্তা মহড়া দেবেন। ভুটান ম্যাচের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে ফিফার পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আশঙ্কা করছে বাফুফে। এর আগেও বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় দর্শক অনিয়মের কারণে বাফুফেকে আর্থিক জরিমানা গুনতে হয়েছে।
নিরাপত্তা গোয়েন্দা তথ্য বলছে, জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রায় পাঁচ বছর পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফেরায় ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। দর্শকদের নির্বিঘœ ও নিরাপদ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বাফুফে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যাতে সিঙ্গাপুর ম্যাচটি সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়। এরআাগে গতকাল ৯ জুন সোমবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় ফুটবল স্টেডিয়াম মাঠ, তার চারপাশ এবং গুলিস্তানে এই নিরাপত্তা মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। মহড়ায় ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের নেতৃত্বে সোয়াট টিম, বোম্ব ডিসপোজাল টিম এবং কে-নাইন টিম অংশগ্রহণ করে। মহড়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার কৌশল ও সক্ষমতা প্রদর্শন এবং সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্তুতি যাচাই করা। ম্যাচ চলাকালীন দর্শক এবং খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
অপরদিকে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ফুটবল ম্যাচ উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হাতে নেয়া হয়েছে। ইউনিফর্মে ও সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবসময় প্রস্তুত থাকছে ডিএমপির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াট ও ক্যানাইন ইউনিট।
এদিকে বাফুফে সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যা ৭টায় খেলা শুরু হলেও নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্টেডিয়ামের গেট খুলছে দুপুর ২টায়। সন্ধ্যা সাতটায় জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে মুখোমুখি হবে। এই ম্যাচ দেখতে বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকরা অধীর আগ্রহে চেয়ে আছেন। সন্ধ্যা সাতটায় খেলা হলেও দুপুর ২টায় স্টেডিয়ামের সব গেট খুলবে বাফুফে। দর্শকদের ব্যাগ, বোতল কিংবা অতিরিক্ত সামগ্রী সঙ্গে না আনার অনুরোধ জানিয়েছে ফেডারেশন। যাতে খেলার নিরাপত্তা ও পরিবেশ নিরাপদ রাখা যায়।
আন্তর্জাতিক ও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে টিকিটের কালোবাজারি দেখা যায়। আবার অনেক ফুটবল সমর্থক টিকিট না পেয়েও স্টেডিয়ামের গেটে ভিড় করেন। টিকিট না পাওয়া সমর্থকদের স্টেডিয়ামে প্রবেশের চেষ্টা করতে নিষেধ করা হয়েছে। টিকিট না পাওয়া দর্শকদের জন্য শহরের বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দায় খেলা উপভোগের ব্যবস্থা করেছে ফেডারেশন। সেখানে গিয়ে খেলা দেখার সবিনয় অনুরোধ জানান বাফুফে।
টিকিট জাল বা টিকিট সংক্রান্ত কোনো অনিয়ম করলে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ফেডারেশন। বাফুফের ব্যবস্থাপনা ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আগামীকাল স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকবে। জাতীয় স্টেডিয়ামের তিন নম্বর গেট দিয়ে যারা প্রবেশ করবেন তাদের দৈনিক বাংলা ও রাজউক দুই দিক দাঁড়ানোর জন্য দুটি লেন বরাদ্দ থাকবে। একটি লেনে যান চলাচল করবে।
বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ শেষ হবে রাত নয়টার পর। দুপুর দুইটায় দর্শকরা মাঠে প্রবেশ করলে সাত ঘণ্টার বেশি সময় স্টেডিয়ামে থাকতে হবে। গ্যালারিতে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বাফুফে এখনো কোনো তথ্য প্রদান করেনি।
অপরদিকে ঈদের ছুটির মধ্যে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ায় বাফুফে একটি উৎসবের আবহও রাখছে। খেলার দেড় ঘণ্টা আগে গান-বাজনার আয়োজন করছে। এ রকম আয়োজন অবশ্য গেমস কিংবা টুর্নামেন্টের আগে হয়। একটি ম্যাচের আগে দেশের ফুটবলে কখনো ইতোপূর্বে এমন ঘটনা দেখা যায়নি। এ কারণে সব মিলিয়ে প্রচুর দর্শকের সমাগম হচ্ছে বলে বাফুফে আশা প্রকাশ করেছেন।