বাইডেনের কাছে মোদির নালিশ, ভারতের যেটি গুরুত্বপূর্ণ, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তা গুরুত্বহীন
- আপডেট সময় : ১১:৫২:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪ ২৩৩ বার পড়া হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এসময় তারা ইউক্রেনের পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে বিশদ মতবিনিময় করেন। ফোনালাপে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে দাবি করেছেন মোদি। যদিও বাইডেন ও মোদির মধ্যকার এই ফোনালাপের বিষয়ে দেওয়া হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বাংলাদেশ ইস্যু উল্লেখ করা হয়নি।
অর্থাৎ মোদির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেনসহ অন্যান্য ইস্যুতে আলোচনা করেছেন বলে জানানো হলেও বাংলাদেশ ইস্যুতে উভয় নেতা কোনও কথা বলেছেন কি না তা সেখানে উল্লেখ করা হয়নি।
বাইডেন-মোদি ফোনালাপ নিয়ে একই দিন ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ বিষয়টির কোনও উল্লেখ ছিল না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ভারতের কাছে যেটি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তত গুরুত্বপূর্ণ নয়
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যাবার পর, ভারতের বিভিন্ন মিডিয়াই কেবল নয়, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পর্যায়ে ন্যাক্কারজনকভাবে অপপ্রচার চালানো হয়। তারা বলছে হাজারো হাজার হাজার বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। হাজারো হিন্দু সীমান্তে এসে বসে আছে। এমন অপপ্রচারে বাংলাদেশের হিন্দু নাগরিকেরাও লজ্জআবোধ করেছে।
এসব অপপ্রচারের রহস্য বেড়িয়ে আসে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির অনুসন্ধ্যানে। ভারতীয় কতিপয় মিডিয়া কতটা দায়িত্বহীন তা প্রমাণ করে বিবিসি। ভারতীয় মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব প্রচার করা হয়েছে, তা ভুয়া এবং এই অপপ্রচার যেসব একাউন্ট থেকে করা হয়েছে, তার ৯৫ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও ভারতের।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমই কেবল নয়, রাজনৈতিক নেতারাও দায়িত্বহীন বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের হিন্দুদের নিয়ে ভারতের জনগন দুঃচিন্তায় রয়েছে।
কিন্তু কেন? এখানেতো এমন কিছুই ঘটেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের হিন্দুদের দাবার গুটি বানিয়ে তাদের ব্যবহার করা খুব সহজলভ্য। তাতে দ্রুত রাজনৈতিক ফায়দা লোটা যায়। কিন্তু দায়িত্বশীল কোন নাগরিকের বেলায় এমনটি হওয়া উচিত নয়। অপপ্রচার করে মানুষে মানুষে যে বন্ধন তা নষ্ট করাটা সঠিক কাজ নয়।
এদিক বাইডেনের কাছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মি. নরেন্দ্র মোদি নালিশ দিয়েছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু তথা হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। এই বিষয়টি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ছাড়াও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সোমবার (২৬ আগস্ট) ফোনালাপের পর দিল্লি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে দুই নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং আইনশৃঙ্খলা পুনপ্রতিষ্ঠা করা ও সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের, নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়েছেন।
অথচ বাইডেন-মোদি ফোনালাপ নিয়ে একই দিন ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ বিষয়টির কোনও উল্লেখ ছিল না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ভারতের কাছে যেটি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তত গুরুত্বপূর্ণ নয়।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, বাংলাদেশ নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের ভিন্নতা কোনও গোপন বিষয় নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাংলাদেশের দুর্বল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার ভারতকে সতর্ক করে তাদের অবস্থান পরিবর্তনের চেষ্টা করেছে। কিন্তু গত তিন সপ্তাহে এই অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ভারত স্বস্তিকর অবস্থায় ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব সতর্ক অবস্থান নিয়েছিল। অন্যদিকে এখন দিল্লি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং পশ্চিমা বিশ্বে স্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছে। মোটাদাগে সমীকরণ উল্টে গেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ
দুই দেশের মধ্যে যখন রাজনৈতিক আলাপ হয়, তখন দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের পাশাপাশি উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। তবে উভয় দেশের একটি অভিন্ন অবস্থান না থাকলে, তৃতীয় দেশ নিয়ে আলোচনা সাধারণত প্রকাশ করা হয় না। যেমন বাইডেন-মোদি ফোনালাপের পর উভয় দেশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউক্রেন ইস্যুতে কথা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু শুধু ভারতের সংবাদ বিজ্ঞপিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি এসেছে।