বিটিভি ভবনে হামলার-অগ্নিসংযোগ নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াত, ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা
- আপডেট সময় : ০৪:১৭:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪ ১৩৯ বার পড়া হয়েছে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বিএনপি, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চার হাজার কর্মী দলবদ্ধ হয়ে এ হামলা চালায়।
গত ১৮ জুলাই এ হামলার ঘটনায় পরদিন ১৯ জুলাই বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তার বাদী হয়ে রামপুরা থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলার এজাহারেই হামলার নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পনা ও প্ররোচনার বিষয়টি উঠে আসে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ অজ্ঞাতনামা আরও শীর্ষ নেতাদের পরিকল্পনা, প্ররোচনা ও অর্থ জোগানের মাধ্যমে এ ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এতে বিটিভির ৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
দন্ডবিধির ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/১৮৬/৩৫৩/৩৮৪/৪৩৬/৩০৭/১০৯/১১৪/৫০৬ ধারাসহ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) ধারায় মামলা করা হয়। মামলার অভিযোগগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে।
মামলার পর বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়। সবশেষ বুধবার (২৪ জুলাই) এ মামলায় আমীর খসরুকে তিনদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।
সেদিন শিক্ষার্থীরা বিটিভি ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেন। এরপরই বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণে অজ্ঞাতনামা তিন-চার হাজার কর্মী বেআইনি জনতায় দলবদ্ধ হয়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
আদালতে রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার উল্লেখ করেন, গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। আসামিরা জামিনে পলাতক হলে চিরতরে পলাতক হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ মামলায় গ্রেফতার অন্য আসামিরা হলেন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, বিএনপির এমএ সালাম, মাহমুদুস সালেহীন, আনোয়ারুল আজম অনু, বিল্লাল হোসেন, আব্দুল হক, রাহাত বিন হক, আজহারুল হক শাহীন, আকতার হোসেন, নূরুল হুদা, শাহাদাত হোসেন, ওবায়দুল হক, কাদির মিঝি, আব্দুর রশিদ খান ও রুহুল আমিন।
মামলার অভিযোগে বাদী মাহফুজা আক্তার উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন লেখা সম্বলিত ব্যানার নিয়ে ডিআইটি রোডগামী রামপুরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও বিটিভি ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেন। এরপরই বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণে অজ্ঞাতনামা তিন-চার হাজার কর্মীরা বেআইনি জনতায় দলবদ্ধ হয়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ ও আনসার সদস্যদের বাধা উপেক্ষা করে বিটিভি ভবনে প্রবেশ।
বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা লুটপাট, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস ও হত্যার উদ্দেশে লাঠিসোটা ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবৈধভাবে বিটিভি ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর তারা ভবনটিতে আক্রমণ চালায় এবং ইট পাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। একই সঙ্গে চলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করার কথা উল্লেখ করা হয় অভিযোগে।
বিটিভি ভবনের প্রধান চারটি গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যে ভবনের ভেতর ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। টেলিভিশন ভবনে কর্মরত বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নাম ও পদবি উল্লেখ করে খোঁজাখুঁজি করে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে
সেখানে বাদী আরও বলেন, বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানতে পারি যে, জামায়াত ও বিএনপির কতিপয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (৭০), সুলতান সালাউদ্দিন টুকু (৫৪), নিপুন রায় চৌধুরী (৩৮), এমএ সালাম (৫৬), কাজী সায়েদুল আলম বাবুল (৬২), মিয়া গোলাম পরওয়ার (৬৬), আমিনুল হক (৪৭) ও মাহমুদুস সালেহীনসহ (৩৭) অজ্ঞাতনামা আরও শীর্ষ নেতাদের পরিকল্পনা, প্ররোচনা ও অর্থ জোগানের মাধ্যমে এ ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।