ঢাকা ১১:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo কালিগঞ্জে নিরাপদ সড়ক দিবসে র‍্যালি ও আলোচনা সভা Logo মোংলায় জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালন Logo কক্সবাজারে পর্যটক নিরাপত্তায় রিজিয়ন ট্যুরিস্ট পুলিশের এডিআইজি আপেল মাহমুদ Logo সিরাজদিখানে গ্রাম পুলিশের মাঝে পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ Logo কালিগঞ্জে মাংসের দোকানে ভ্রাম্যমান আদালত Logo পলাশবাড়ী পৌরসভার বহুমুখী উন্নয়নে কাস্টার ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান শীর্ষক দিনব্যাপি কর্মশালা Logo টেকনাফে পাহাড়ের পর সাগর পথে পাচার কালে ২৯ জন ভুক্তভোগী সহ মানব পাচারকারী চক্রের ৩ সদস্য আটক Logo তিতাসে বিএনপির লিপলেট বিতরণ Logo গোমস্তাপুরে জোরপূর্বক ধানীজমি দখলের চেষ্টা Logo কিশোরগঞ্জে রেলের গাছ কেটে বিক্রি করলেন কর্মচারীরা

কর্মসংস্থান সংকট, অভাবনীয় সুযোগ ও ভবিষ্যৎ ভাবনায় যুবসমাজ

বিদেশমুখী হচ্ছে তরুণরা

মহিউদ্দিন তুষার
  • আপডেট সময় : ১৯০ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশে বর্তমানে তরুণদের মধ্যে বিদেশমুখী প্রবণতা নতুন কিছু নয়, চাকরির অভাব এবং উন্নত জীবনের আকাঙ্খা ক্রমশ বেশি উদ্বেগজনক মাত্রা পাচ্ছে। শিক্ষিত যুবসমাজের বড় একটি অংশ মনে করছে, দেশের শ্রমবাজারে সুযোগ সীমিত, আর দেশে থাকা মানসম্পন্ন চাকরি পাওয়া কঠিন। ফলে অধিকাংশ তরুণ উচ্চশিক্ষা শেষে বা মধ্য পর্যায়ের চাকরি না পেয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার কথা ভাবছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের কর্মজীবী তরুণদের মধ্যে বিদেশগমন উচ্চ জোরেই চলেছে-গত পাঁচ বছরে (২০২০-২০২৪) প্রবাসী কর্মী সংখ্যায় লক্ষণীয় যোগ হয়েছে, যদিও ২০২৪ সালে বৈশ্বিক ও দেশীয় কারণ মিলিয়ে যাত্রার সংখ্যা কিছুটা কমেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ১৫-২৪ বয়সী যুবকদের বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫.৭ শতাংশ। শিক্ষিত তরুণরা চাকরি খুঁজে না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন, আর যাদের হাতে সামান্য কিছু কাজ আছে তারাও টেকসই বা মানসম্মত কর্মসংস্থান পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় অনেকেই মনে করছেন দেশের ভেতরে চাকরির চেয়ে বিদেশে শ্রমবাজারে প্রবেশ করা তুলনামূলকভাবে বেশি লাভজনক।
সরকারি সংস্থা বিএমইটি’র তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৩ লাখ কর্মী বিদেশে গেছেন। তবে ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা নেমে আসে প্রায় ১০ লাখে। যদিও এক বছরে কিছুটা পতন ঘটেছে, তবু এটি দেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় আকারের কর্মী প্রেরণ ধারা। গত পাঁচ বছরে মোট প্রায় চার মিলিয়ন মানুষ প্রবাসী হয়েছেন, যার বড় অংশই তরুণ প্রজন্ম।
দেশে মানসম্মত চাকরির অভাব ও সীমিত বেতনের কারণে তরুণরা হতাশ হচ্ছেন। উচ্চশিক্ষিত অনেক তরুণ তাদের পড়াশোনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চাকরি পাচ্ছেন না। স্থানীয় বাজারে শ্রমের দাম তুলনামূলকভাবে কম, অথচ বিদেশে একই দক্ষতায় অনেক বেশি আয় সম্ভব। গ্রাম বা পরিবারে কারো বিদেশে সফলতার কাহিনি অন্য তরুণদেরও বিদেশযাত্রায় অনুপ্রাণিত করছে।
যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা মো: তায়েবুর রহমান বলেন, আমি সরকারি চাকরির জন্য কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছি, কিন্তু ফাঁকা নিয়োগ, প্রতিযোগিতা এবং দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে এখন বিদেশে কাজ করার পরিকল্পনা করছি। শুধু বিদেশ নয়, বিদেশে আমার পেশাগত উন্নয়ন সম্ভব। দেশে থাকলে তা ধীরগতিতে সম্ভব। চট্টগ্রামের আইটি প্রকৌশলী শাহারিয়ার আলম (২৪) জানান, আমাদের মতো নতুন প্রজন্ম প্রযুক্তিতে দক্ষ, কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। বিদেশে গেলে শুধু বেতনই বেশি নয়, অভিজ্ঞতাও অর্জন করা সম্ভব। একরকম বাধ্যতামূলক ভাবেই বিদেশে যাওয়ার চিন্তা হচ্ছে। ক্যাম্পাসে পড়ুয়া তরুণরা জানান, বিদেশ যাত্রা তাদের জন্য শুধু চাকরি নয়, উচ্চমানের জীবন, প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক পরিবেশের আকর্ষণও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী রুমি ইসলাম বলেন, দেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা খুব সীমিত। বিদেশে গেলে শিক্ষা ও ক্যারিয়ারের সুযোগ অনেক। আমাদের জন্য এটি এখন এক বাস্তবতা। একইভাবে নারায়ণগঞ্জের স্কুল শিক্ষক আবির খান বলেন, আমাদের শিক্ষিত যুব সমাজ এখন আর অপেক্ষা করতে চায় না। চাকরির অভাব, কম বেতন, অস্থিতিশীল নিয়োগ এসব কারণেই তারা বিদেশমুখী হয়ে উঠছে। এটি শুধু ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিফলন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের যুবসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি। তার মধ্যে শিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষিত যুবসমাজের বড় অংশ নিয়োগপ্রাপ্ত নয়। বেসরকারি খাতে চাকরির সুযোগ আছে, কিন্তু বেতন ও কাজের মান তুলনামূলক কম।
অর্থনীতিবিদ ড. সেলিনা আখতার বলেন, চাকরির অভাব শুধু শিক্ষিতদের সমস্যা নয়, এটি অর্থনীতির একটি মৌলিক সংকট। বিদেশমুখী তরুণরা দেশের মানবসম্পদ হারাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বিনিয়োগ ও উৎপাদন খাতে প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও বলেন, সরকারকে তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, স্টার্টআপ সমর্থন এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের মাধ্যমে চাকরির সুযোগ বাড়াতে হবে। অন্যথায় পেশাগত উদ্বেগ ও বিদেশ যাত্রার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। চাকরির অভাব ও বিদেশমুখী প্রবণতা কেবল তরুণদের নয়, পরিবারকেও উদ্বিগ্ন করে তুলছে। রাকিব হাসানের মা নাজমা বেগম বলেন, আমরা চাই ছেলে দেশে থেকে দেশের উন্নয়নে কাজ করুক। কিন্তু যখন সুযোগ নেই, বিদেশই তার বিকল্প। এ পরিস্থিতি পরিবারের জন্য মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। কিছু পরিবার মনে করে বিদেশে যাওয়া এখন শুধু কর্মসংস্থানের বিষয় নয়, এটি সামাজিক মর্যাদা ও পরিবারের নিরাপত্তারও প্রতীক।
শিক্ষা ও কর্মসংস্থান বিশেষজ্ঞ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, তরুণদের বিদেশমুখী হওয়ার প্রধান কারণ হল দেশের সীমিত চাকরির বাজার, অভাবনীয় সুযোগ, ও স্থিতিশীল বেতন। যদি দেশে শিক্ষিত যুব সমাজের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করা না হয়, তারা বাধ্যতামূলকভাবে বিদেশের দিকে ঝুঁকবে। তিনি আরও বলেন, দেশীয় শ্রমবাজারকে আধুনিকায়ন, উদ্যোক্তা উদ্যোগে সহজতা, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক মানের চাকরির সুযোগ দিলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্টার্টআপ, আইটি খাত, রপ্তানি শিল্প ও অন্যান্য খাতে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে বাস্তবে এই সুযোগ শিক্ষিত যুব সমাজের বড় অংশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। এক কর্মকর্তার বক্তব্য, আমরা প্রশিক্ষণ, ব্যাংক ঋণ, উদ্যোক্তা সুবিধা দিয়ে যুব সমাজকে দেশে রাখার চেষ্টা করছি। তবে চ্যালেঞ্জ এখনও বড়-সুস্থ ও স্থিতিশীল চাকরির সুযোগ সীমিত। চাকরির অভাব এবং সুযোগ সীমিত হওয়ায় বাংলাদেশে যুবসমাজ ক্রমশ বিদেশমুখী হয়ে উঠছে। এটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের চেয়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিফলন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের মাধ্যমে এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কর্মসংস্থান সংকট, অভাবনীয় সুযোগ ও ভবিষ্যৎ ভাবনায় যুবসমাজ

বিদেশমুখী হচ্ছে তরুণরা

আপডেট সময় :

বাংলাদেশে বর্তমানে তরুণদের মধ্যে বিদেশমুখী প্রবণতা নতুন কিছু নয়, চাকরির অভাব এবং উন্নত জীবনের আকাঙ্খা ক্রমশ বেশি উদ্বেগজনক মাত্রা পাচ্ছে। শিক্ষিত যুবসমাজের বড় একটি অংশ মনে করছে, দেশের শ্রমবাজারে সুযোগ সীমিত, আর দেশে থাকা মানসম্পন্ন চাকরি পাওয়া কঠিন। ফলে অধিকাংশ তরুণ উচ্চশিক্ষা শেষে বা মধ্য পর্যায়ের চাকরি না পেয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার কথা ভাবছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের কর্মজীবী তরুণদের মধ্যে বিদেশগমন উচ্চ জোরেই চলেছে-গত পাঁচ বছরে (২০২০-২০২৪) প্রবাসী কর্মী সংখ্যায় লক্ষণীয় যোগ হয়েছে, যদিও ২০২৪ সালে বৈশ্বিক ও দেশীয় কারণ মিলিয়ে যাত্রার সংখ্যা কিছুটা কমেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ১৫-২৪ বয়সী যুবকদের বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫.৭ শতাংশ। শিক্ষিত তরুণরা চাকরি খুঁজে না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন, আর যাদের হাতে সামান্য কিছু কাজ আছে তারাও টেকসই বা মানসম্মত কর্মসংস্থান পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় অনেকেই মনে করছেন দেশের ভেতরে চাকরির চেয়ে বিদেশে শ্রমবাজারে প্রবেশ করা তুলনামূলকভাবে বেশি লাভজনক।
সরকারি সংস্থা বিএমইটি’র তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৩ লাখ কর্মী বিদেশে গেছেন। তবে ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা নেমে আসে প্রায় ১০ লাখে। যদিও এক বছরে কিছুটা পতন ঘটেছে, তবু এটি দেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় আকারের কর্মী প্রেরণ ধারা। গত পাঁচ বছরে মোট প্রায় চার মিলিয়ন মানুষ প্রবাসী হয়েছেন, যার বড় অংশই তরুণ প্রজন্ম।
দেশে মানসম্মত চাকরির অভাব ও সীমিত বেতনের কারণে তরুণরা হতাশ হচ্ছেন। উচ্চশিক্ষিত অনেক তরুণ তাদের পড়াশোনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চাকরি পাচ্ছেন না। স্থানীয় বাজারে শ্রমের দাম তুলনামূলকভাবে কম, অথচ বিদেশে একই দক্ষতায় অনেক বেশি আয় সম্ভব। গ্রাম বা পরিবারে কারো বিদেশে সফলতার কাহিনি অন্য তরুণদেরও বিদেশযাত্রায় অনুপ্রাণিত করছে।
যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা মো: তায়েবুর রহমান বলেন, আমি সরকারি চাকরির জন্য কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছি, কিন্তু ফাঁকা নিয়োগ, প্রতিযোগিতা এবং দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে এখন বিদেশে কাজ করার পরিকল্পনা করছি। শুধু বিদেশ নয়, বিদেশে আমার পেশাগত উন্নয়ন সম্ভব। দেশে থাকলে তা ধীরগতিতে সম্ভব। চট্টগ্রামের আইটি প্রকৌশলী শাহারিয়ার আলম (২৪) জানান, আমাদের মতো নতুন প্রজন্ম প্রযুক্তিতে দক্ষ, কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। বিদেশে গেলে শুধু বেতনই বেশি নয়, অভিজ্ঞতাও অর্জন করা সম্ভব। একরকম বাধ্যতামূলক ভাবেই বিদেশে যাওয়ার চিন্তা হচ্ছে। ক্যাম্পাসে পড়ুয়া তরুণরা জানান, বিদেশ যাত্রা তাদের জন্য শুধু চাকরি নয়, উচ্চমানের জীবন, প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক পরিবেশের আকর্ষণও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী রুমি ইসলাম বলেন, দেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা খুব সীমিত। বিদেশে গেলে শিক্ষা ও ক্যারিয়ারের সুযোগ অনেক। আমাদের জন্য এটি এখন এক বাস্তবতা। একইভাবে নারায়ণগঞ্জের স্কুল শিক্ষক আবির খান বলেন, আমাদের শিক্ষিত যুব সমাজ এখন আর অপেক্ষা করতে চায় না। চাকরির অভাব, কম বেতন, অস্থিতিশীল নিয়োগ এসব কারণেই তারা বিদেশমুখী হয়ে উঠছে। এটি শুধু ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিফলন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের যুবসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি। তার মধ্যে শিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষিত যুবসমাজের বড় অংশ নিয়োগপ্রাপ্ত নয়। বেসরকারি খাতে চাকরির সুযোগ আছে, কিন্তু বেতন ও কাজের মান তুলনামূলক কম।
অর্থনীতিবিদ ড. সেলিনা আখতার বলেন, চাকরির অভাব শুধু শিক্ষিতদের সমস্যা নয়, এটি অর্থনীতির একটি মৌলিক সংকট। বিদেশমুখী তরুণরা দেশের মানবসম্পদ হারাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বিনিয়োগ ও উৎপাদন খাতে প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও বলেন, সরকারকে তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, স্টার্টআপ সমর্থন এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের মাধ্যমে চাকরির সুযোগ বাড়াতে হবে। অন্যথায় পেশাগত উদ্বেগ ও বিদেশ যাত্রার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। চাকরির অভাব ও বিদেশমুখী প্রবণতা কেবল তরুণদের নয়, পরিবারকেও উদ্বিগ্ন করে তুলছে। রাকিব হাসানের মা নাজমা বেগম বলেন, আমরা চাই ছেলে দেশে থেকে দেশের উন্নয়নে কাজ করুক। কিন্তু যখন সুযোগ নেই, বিদেশই তার বিকল্প। এ পরিস্থিতি পরিবারের জন্য মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। কিছু পরিবার মনে করে বিদেশে যাওয়া এখন শুধু কর্মসংস্থানের বিষয় নয়, এটি সামাজিক মর্যাদা ও পরিবারের নিরাপত্তারও প্রতীক।
শিক্ষা ও কর্মসংস্থান বিশেষজ্ঞ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, তরুণদের বিদেশমুখী হওয়ার প্রধান কারণ হল দেশের সীমিত চাকরির বাজার, অভাবনীয় সুযোগ, ও স্থিতিশীল বেতন। যদি দেশে শিক্ষিত যুব সমাজের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করা না হয়, তারা বাধ্যতামূলকভাবে বিদেশের দিকে ঝুঁকবে। তিনি আরও বলেন, দেশীয় শ্রমবাজারকে আধুনিকায়ন, উদ্যোক্তা উদ্যোগে সহজতা, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক মানের চাকরির সুযোগ দিলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্টার্টআপ, আইটি খাত, রপ্তানি শিল্প ও অন্যান্য খাতে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে বাস্তবে এই সুযোগ শিক্ষিত যুব সমাজের বড় অংশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। এক কর্মকর্তার বক্তব্য, আমরা প্রশিক্ষণ, ব্যাংক ঋণ, উদ্যোক্তা সুবিধা দিয়ে যুব সমাজকে দেশে রাখার চেষ্টা করছি। তবে চ্যালেঞ্জ এখনও বড়-সুস্থ ও স্থিতিশীল চাকরির সুযোগ সীমিত। চাকরির অভাব এবং সুযোগ সীমিত হওয়ায় বাংলাদেশে যুবসমাজ ক্রমশ বিদেশমুখী হয়ে উঠছে। এটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের চেয়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিফলন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের মাধ্যমে এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।