ঢাকা ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

বিশ্বনাথে ব্যবসায়ী থেকে সফল কৃষক আবুল মনছুর খান

মোঃ রোহেল উদ্দিন, বিশ্বনাথ সিলেট
  • আপডেট সময় : ০২:০০:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫ ১৬ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ব্যবসায়ী আবুল মনছুর খান এখন সফল কৃষক। প্রথমে অনেকটা সখ করে নিজ বাড়িতে সবজি চাষ শুরু করেন। পরে ধিরে ধিরে সবজি চাষের পাশাপাশি মৌসুমের ধান চাষও শুরু করে তিনি এখন রিতিমতো সফল কৃষক।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের কজাকাবাদ গ্রামের আবুল মনছুর খান পেশায় একজন ব্যাবসায়ী। বিশ্বনাথ বাজারে আল-হেরা মার্কেটে উনার কাপড়ের ব্যবসা ছিল। সেখানে তিনি সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি চিন্তা করতে লাগলেন নিজে সবজি চাষ করলে অন্তত বাজার থেকে আর সবজি কেনা লাগবেনা। সেই চিন্তা থেকেই তিনি নিজ বাড়ির জঙ্গল পরিস্কার করে প্রথমে সবজি চাষ করলেন। সবজি চাষে তিনি সফলতা দেখে পরে তাদের পতিত থাকা প্রায় ৩০ কেদার জমিতে ধান চাষ শুরু করেন। সেখানেও তিনি সফলতা দেখে গত তিন বৎসর থেকে তিনি ব্যবসা ছেড়ে পুরোপুরি কৃষি ক্ষেতে মনোনিবেশন করেন। তার অদম্য আগ্রহ ও ধর্যই তাকে সফলতা এনে দিয়েছে।

এ বৎসর তিনি তিনি শষা, টমেটু,ফুলকপি, বাধাঁ কপি, ঢেঁড়স, মুলা, গাজর, পেপে, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, কোয়াশ, বাংড়ি, সরিষা, লালশাক, লাইপাতা শাক, কাঁচা মরিচ, বেগুন, কচুর ছড়া, সিম সহ অনেক শাক সবজির চাষ করেছেন। এছাড়া মালটা, ড্রাগন ফল, ডালিমসহ অসংখ্য ফলাদিও চাষ করেছেন। পাশাপাশি বাড়ির আশপাশ প্রায় ৩০ কেদার পতিত জমিতে মৌসুমী ধান চাষও করে থাকেন। এবারও আমন চাষে বিশাল সাফল্য পেয়েছেন।গত বছর তিনি সারা বছরের খাবারের চাউল রেখেও ১৫ লক্ষ টাকার ধান বিক্রী করেছেন।
বিশ্বনাথ একটি প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা। এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ ইউরোপ, আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছেন। সিলেট জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক মানুষ এ উপজেলার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে রয়েছেন। তাই অধিকাংশ আত্মীয়স্বজন প্রবাসে থাকায় এ উপজেলার বসবাসকারীরা অনেকটাই কর্মবিমুখ। শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম এড়িয়ে চলেন তারা। যার দরুন বছরের পর বছর ধরে এ এলাকার অধিকাংশ জমি পতিত পড়ে থাকে। বিশ্বনাথ কৃষি অফিসের তথ্য মতে মোট ফসলি জমি হচ্ছে ১৭,২০৫ হেক্টর। তার মধ্যে সারা বছর পতিত থাকে ১৭৮ হেক্টর জমি। বোর মৌসুমে ৬৫২৫ হেক্টর ও আমন মৌসুমে ৩৫০০ হেক্টর জমি পতিত থাকে।

এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপ কালে আবুল মনছুর খান জানান, বাড়িতে প্রচুর জায়গা জঙ্গলের মতো পড়ে থাকতে দেখে প্রথমে সেই জায়গা পরিস্কার করাই। তার পরে সেখানে সবজি চাষ শুরু করি। সেই বৎসর সবজি ভাল হওয়ায় আমরা নিজেরা খেয়ে আত্মীয় স্বজনকে দিয়েও পাড়া প্রতিবেশীকে অনেক সবজি দিতে পেরেছি। তার পর থেকে ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে চাষাবাষে মনোনিবেশন করি। আমার সবজি খেত থেকে আমাদের প্রয়োজন মিটিয়েও অনেক কে দিতে পারায় অনেকটা ভাল লাগে।
অন্যকে খাওয়াতে অনেক আনন্দ পাই। এছাড়া আমার জামির ধান সারা বছরের নিজ চাহিদা মিটিয়ে বিক্রী করে অনেক টাকা লাভ হয়। তাই আমি বিশ্বনাথের পতিত জমির পাশাপাশি এ এলাকার অনেক বাড়িতে খালি জমি ফেলে না দিযে অল্প অল্প করে সবজি চাষ করতে বেকার ভাইদের আহবান জানাই। তাতে আমাদের নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে নিজ এলাকা ও দেশের উপকার করা সম্ভব।

এব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলা কৃষি অফিসার কনক চন্দ্র রায় বলেন, আবুল মনছুর খান আমাদের গর্ভ, উনার পাশাপাশি এ উপজেলার অনাবাদি পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে কৃষি বিভাগ সর্বাত্মক সচেষ্ট রয়েছে। এ ব্যাপারে আগ্রহী তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের বিশেষ গুরুত্ব সহকারে কৃষি কাজের যেকোন পরমর্শ সেবা, নতুন জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণে প্রদর্শণী স্থাপন, কৃষি বিয়য়ে প্রশিক্ষণপ্রদান এবং কৃষি প্রণোদনা ও পূনর্বাসন কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ বিতরণ করে থাকে। ফসলের ভালো ফলন পেতে সরাসরি পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক এ্যাপস পরিচালনার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া যেখানে পানির উৎস রয়েছে সেখানে সেচ পাম্পসহ প্রয়োজনীয় পাইপ স্থাপনে সহযোগীতা করা হয়। বিশ্বনাথের কৃষি খ্যাতকে আকর্ষণীয় ও লাভ জনক করে গড়ে তোলতে বিশ্বনাথ কৃষি অফিস বদ্ধপরিকর।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিশ্বনাথে ব্যবসায়ী থেকে সফল কৃষক আবুল মনছুর খান

আপডেট সময় : ০২:০০:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

ব্যবসায়ী আবুল মনছুর খান এখন সফল কৃষক। প্রথমে অনেকটা সখ করে নিজ বাড়িতে সবজি চাষ শুরু করেন। পরে ধিরে ধিরে সবজি চাষের পাশাপাশি মৌসুমের ধান চাষও শুরু করে তিনি এখন রিতিমতো সফল কৃষক।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের কজাকাবাদ গ্রামের আবুল মনছুর খান পেশায় একজন ব্যাবসায়ী। বিশ্বনাথ বাজারে আল-হেরা মার্কেটে উনার কাপড়ের ব্যবসা ছিল। সেখানে তিনি সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি চিন্তা করতে লাগলেন নিজে সবজি চাষ করলে অন্তত বাজার থেকে আর সবজি কেনা লাগবেনা। সেই চিন্তা থেকেই তিনি নিজ বাড়ির জঙ্গল পরিস্কার করে প্রথমে সবজি চাষ করলেন। সবজি চাষে তিনি সফলতা দেখে পরে তাদের পতিত থাকা প্রায় ৩০ কেদার জমিতে ধান চাষ শুরু করেন। সেখানেও তিনি সফলতা দেখে গত তিন বৎসর থেকে তিনি ব্যবসা ছেড়ে পুরোপুরি কৃষি ক্ষেতে মনোনিবেশন করেন। তার অদম্য আগ্রহ ও ধর্যই তাকে সফলতা এনে দিয়েছে।

এ বৎসর তিনি তিনি শষা, টমেটু,ফুলকপি, বাধাঁ কপি, ঢেঁড়স, মুলা, গাজর, পেপে, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, কোয়াশ, বাংড়ি, সরিষা, লালশাক, লাইপাতা শাক, কাঁচা মরিচ, বেগুন, কচুর ছড়া, সিম সহ অনেক শাক সবজির চাষ করেছেন। এছাড়া মালটা, ড্রাগন ফল, ডালিমসহ অসংখ্য ফলাদিও চাষ করেছেন। পাশাপাশি বাড়ির আশপাশ প্রায় ৩০ কেদার পতিত জমিতে মৌসুমী ধান চাষও করে থাকেন। এবারও আমন চাষে বিশাল সাফল্য পেয়েছেন।গত বছর তিনি সারা বছরের খাবারের চাউল রেখেও ১৫ লক্ষ টাকার ধান বিক্রী করেছেন।
বিশ্বনাথ একটি প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা। এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ ইউরোপ, আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছেন। সিলেট জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক মানুষ এ উপজেলার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে রয়েছেন। তাই অধিকাংশ আত্মীয়স্বজন প্রবাসে থাকায় এ উপজেলার বসবাসকারীরা অনেকটাই কর্মবিমুখ। শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম এড়িয়ে চলেন তারা। যার দরুন বছরের পর বছর ধরে এ এলাকার অধিকাংশ জমি পতিত পড়ে থাকে। বিশ্বনাথ কৃষি অফিসের তথ্য মতে মোট ফসলি জমি হচ্ছে ১৭,২০৫ হেক্টর। তার মধ্যে সারা বছর পতিত থাকে ১৭৮ হেক্টর জমি। বোর মৌসুমে ৬৫২৫ হেক্টর ও আমন মৌসুমে ৩৫০০ হেক্টর জমি পতিত থাকে।

এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপ কালে আবুল মনছুর খান জানান, বাড়িতে প্রচুর জায়গা জঙ্গলের মতো পড়ে থাকতে দেখে প্রথমে সেই জায়গা পরিস্কার করাই। তার পরে সেখানে সবজি চাষ শুরু করি। সেই বৎসর সবজি ভাল হওয়ায় আমরা নিজেরা খেয়ে আত্মীয় স্বজনকে দিয়েও পাড়া প্রতিবেশীকে অনেক সবজি দিতে পেরেছি। তার পর থেকে ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে চাষাবাষে মনোনিবেশন করি। আমার সবজি খেত থেকে আমাদের প্রয়োজন মিটিয়েও অনেক কে দিতে পারায় অনেকটা ভাল লাগে।
অন্যকে খাওয়াতে অনেক আনন্দ পাই। এছাড়া আমার জামির ধান সারা বছরের নিজ চাহিদা মিটিয়ে বিক্রী করে অনেক টাকা লাভ হয়। তাই আমি বিশ্বনাথের পতিত জমির পাশাপাশি এ এলাকার অনেক বাড়িতে খালি জমি ফেলে না দিযে অল্প অল্প করে সবজি চাষ করতে বেকার ভাইদের আহবান জানাই। তাতে আমাদের নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে নিজ এলাকা ও দেশের উপকার করা সম্ভব।

এব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলা কৃষি অফিসার কনক চন্দ্র রায় বলেন, আবুল মনছুর খান আমাদের গর্ভ, উনার পাশাপাশি এ উপজেলার অনাবাদি পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে কৃষি বিভাগ সর্বাত্মক সচেষ্ট রয়েছে। এ ব্যাপারে আগ্রহী তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের বিশেষ গুরুত্ব সহকারে কৃষি কাজের যেকোন পরমর্শ সেবা, নতুন জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণে প্রদর্শণী স্থাপন, কৃষি বিয়য়ে প্রশিক্ষণপ্রদান এবং কৃষি প্রণোদনা ও পূনর্বাসন কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ বিতরণ করে থাকে। ফসলের ভালো ফলন পেতে সরাসরি পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক এ্যাপস পরিচালনার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া যেখানে পানির উৎস রয়েছে সেখানে সেচ পাম্পসহ প্রয়োজনীয় পাইপ স্থাপনে সহযোগীতা করা হয়। বিশ্বনাথের কৃষি খ্যাতকে আকর্ষণীয় ও লাভ জনক করে গড়ে তোলতে বিশ্বনাথ কৃষি অফিস বদ্ধপরিকর।