বৃষ্টিতে ঢাকার অলি-গলি সয়লাব কেন?
- আপডেট সময় : ১২:৪৫:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪ ২২২ বার পড়া হয়েছে
আমিনুল হক ভূইয়া
ছুটির দিনে আরাম-আয়েশে দিনকাটানোর পরিকল্পনা নিয়েই সুখনিদ্রায় যান নগরবাসিন্দাদের একটা বড় অংশ। কিন্তু ছুটির দিনে ফুরফুরে সকাল কাটানোর গুড়ে বালি। বরং ঘরের বাইরে ঘুম ভাঙ্গা চোখে তাকাতেই মনটা বিষাদের ছায়ায় ঢেকে যায়।
যতদূর চোখ যায়, ততদূর পানি আর পানি। ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে হাজারো আবর্জনা। এমন দৃশ্য দেখার পর আপনার মনকি আর ঠিক থাকবে?
কয়েকদিন ধরেই আকাশের মর্জি ভালো ছিলো না। ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরেও বৃষ্টি হয়েছে। তখনও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পানি জমেছিলো। যা ধীরে ধীরে নিষ্কাশন হয়ে যায়। বৃষ্টি হলেও গরম কমছিলো। ভ্যাবসা গরমটা চলছিলোই।
আবহাওয়া অফিসের বার্তা ছিলো বৃষ্টিপাতের। শুক্রবার ছুটির দিন সকালে সেই বৃষ্টি নামে। বিকট শব্দে বাজ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি। সকাল ৬ থেকে ৯টা পর্যন্ত ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে হাওয়া অফিস। তাতেই ঢাকার অলিগলি তলিয়ে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে।
ঢাকায় জলাবদ্ধতা কেন?
ঢাকায় জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হচ্ছে, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে বাধগ্রস্ত হওয়া। স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশনে ডেসব ড্রেন রয়েছে, কোথাও কোথাও তার পুরোটা বা অধিকাংশ ভরাট! ময়লা-আবর্জনা এবং পলিথিনে ভরা। ফলে অল্প বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি।
মানুষ সচেতন নয়!
তথ্য-প্রযুক্তির যুগে ‘আধুনিক’ জীবন ধারণের উপকরণ ব্যবহারে অভ্যস্ত নগরীরর সিংহভাগ মানুষ। রিকশাওয়ালা, ফেরিওয়ালা, সব্জি বিক্রেতা, কুলি-মজুর থেকে অনেক টোকাইও স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে থাকে।
কিন্তু অধিকাংশই নাগরিক দায়িত্ব শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নন। কারণ, তারা এমন এক সমাজ ব্যবস্থায় বেড়ে ওঠেছেন, যেখানে নিজেকে রক্ষা ছাড়া সমাজের কথা ভাবেন কম সংখ্যক মানুষ। বরং তারা মিথ্যা আর ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে অর্থ উপার্জনের পথে হাটেন।
প্রয়োজন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ
মানুষকে দায়িত্বশীল করে তোলতে কখনও কখনও কঠোর ব্যস্থা গ্রহণ করতে হয়। ৫৩ বছরের বাংলাদেশে এখনও মানুষকে সচেতন করতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এই বিষয়ে ভাবতে গেলে মনে হয়, আমরা কি এতোটাই অসভ্য?
ছুটির দিনের সকালটা অনেকের জন্য সুখের হলেও খেটে খাওয়া কর্মজীবী মানুষের জন্য নয়। তাদের রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘর থেকে রেবুতে হয়। দিনভর কাজ করে যা উপার্জন হয়, তা দিয়ে পণ্য কিনে ঘরে ফেরেন তারা। কিন্তু ছুটির দিনের আয়েশি বৃষ্টি তাদের সেই কর্ম কেড়ে নিয়েছে। ঢাকার অলিগলি বৃষ্টিতে সয়লাব।
সব্জির অগ্নিমূল্য
আগুন স্পর্শ করলে হাত বা অঙ্গ পুড়ে যায়। পণ্যমূল্যের যখন অস্বাভাবিকভাবে উর্ধমুখী, তখন আগুনের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয় অগ্নিমূল্য। তাতে হাত না পুড়লে অর্থ পুড়ে যায়। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়।
সব্জিবাজার
টমেটো ২০০ টাকা, কাঁচামরিচ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, শশা ১০০টাকা, বেগুন ১০০, কাকরোল ১০০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ভালোমানের ডাটা ৪০ থেকে ৫০ টাকা আঁটি। প্রতিটি কাঁচাপণ্যের মূল্য ঊর্ধমুখী। ফলে মানুষের পরিকল্পিত বাজেটে টান পড়েছে। এ কারণ প্রয়োজনের তুলনায় কমপণ্য কিনছেন সাধারণ ভোক্তা।
ছুটির দিনে ঢাকা
ঢাকায় সরকারি নিয়োগসহ বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা ছুটির দিনেই বেচে নেওয়া হয়। এদিন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা । এই বৃষ্টিতে বেশ বিপাকে পড়েছেন পরীক্ষায় অংশ নেওয়া চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের অনেককে কাকভেজা হয়ে আসতে হয়েছে পরীক্ষা কেন্দ্রে। ছাতা দিয়ে কোনও রকম প্রবেশপত্র রক্ষা করলেও ভিজেছে সারা শরীর।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঢাকায় ছুটির সারা দিনই থেমে থেমে ঝরতে পারে বৃষ্টি। এদিন ঢাকায় ৬০ মিলিমিটার এবং দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করনা হয়েছে কক্সবাজারে ৩০৯ মিলিমিটার।
কেন ঢাকায় বৃষ্টি ?
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক সংবাদামাধ্যমকে জানান, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবেই সারা ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে।
কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টির কারণে কক্সবাজরের অন্তত পাঁচটি এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী ও শিশু মারা গেছে। ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।