ঢাকা ০৫:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::

 এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদন

ভারতীয় বাঙালি মুসলমানদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ২৬ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারত তার দেশের শত শত বাংলাভাষী মুসলমানকে বাংলাদেশে বিতাড়িত করছে। এমন তথ্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটির দাবি, ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর অনেক মুসলমান, যারা প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় নাগরিক তাদের ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে জোরপূর্বক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক বিস্তারিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ভারত দেড় হাজারেরও বেশি মুসলমান নারী, পুরুষ ও শিশুকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বিতাড়িতদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীও আছে।
ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য না দিলেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তথ্যের ভিত্তিতেই প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এইচআরডব্লিউর এশিয়া বিভাগের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন বলেন, বাংলাভাষী মুসলমানদের যথেচ্ছভাবে দেশ থেকে বের করে দিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার বৈষম্যের সংস্কৃতি তৈরি করছে। এতে করে বহু ভারতীয় নাগরিকও বিদেশি হিসেবে বিপাকে পড়ছেন।
প্রতিবেদন তৈরিতে এইচআরডব্লিউ জুন মাসে ১৮ জন ভুক্তভোগী এবং ৯টি পরিবারের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই বিতাড়নের শিকার হয়েছেন। এমনকি তাদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার পর আবার ভারতে ফিরে গিয়েছেন এবং পরে নিখোঁজ হয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। যাদের ভারত থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে, তাদের একটা বড় অংশ আসাম আর পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক ও বাংলাভাষী মুসলমান। বাংলাদেশও বারবার জানিয়েছে, ভারত সরকার প্রত্যর্পণের স্বীকৃত প্রক্রিয়া না মেনেই বাংলাদেশি সন্দেহে লোকজনকে ঠেলে দিচ্ছে। ৮ মে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে পাঠানো এক কূটনৈতিক চিঠিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় ‘পুশ-ইন’ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ঢাকা জানিয়েছে, কেবল বাংলাদেশি নাগরিক বলে নিশ্চিত হওয়া গেলে এবং প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই কাউকে গ্রহণ করা হবে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর হামলার পর থেকেই এই বিতাড়ন প্রক্রিয়া তীব্র হয়। মুসলমানদের নাগরিকত্ব প্রমাণের কাগজপত্র অগ্রাহ্য করে, তাদের ফোন এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র কেড়ে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
এইচআরডব্লিউ বলছে, আসাম, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা ও রাজস্থানের বিজেপিশাসিত সরকারগুলো বিশেষ করে গরিব, পরিযায়ী মুসলমানদের চিহ্নিত করে আটক করছে এবং পরে বিএসএফের হাতে তুলে দিয়ে জোরপূর্বক সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছে। সীমান্তরক্ষীরা আটক হওয়া ব্যক্তিদের মারধর করছেন। যথাযথভাবে তাদের নাগরিকত্ব যাচাই না করেই জোর করে বাংলাদেশ সীমান্ত পার করতে বাধ্য করছেন। কিছু ক্ষেত্রে এমনও ঘটেছে, যারা নিজেদের ভারতীয় নাগরিক বলে প্রমাণ করতে পেরেছেন, এমন ডজনখানে মানুষকে আবার ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে ভারত সরকার।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, মে মাসেই আসামের একটি ডিটেনশন সেন্টার থেকে প্রায় ১০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। এছাড়া জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আরও ৪০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার সীমান্তে লাইফ জ্যাকেট হাতে ধরিয়ে সমুদ্রে নামিয়ে দিয়ে বলা হয় সাঁতরে পার হয়ে যাও। জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুস এই ঘটনাকে ‘মানবিক মর্যাদার ঘোরতর লঙ্ঘন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই কাজ ‘ননরিফাউলমেন্ট’ নীতির সরাসরি লঙ্ঘন, যার আওতায় কাউকে এমন জায়গায় ফেরত পাঠানো যায় না, যেখানে তার জীবন হুমকির মুখে পড়বে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি অস্বীকারও করেনি, আবার সরকারিভাবে কোনো বক্তব্যও দেয়নি। শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্টে এ নিয়ে মামলা হলে, আদালত একে ‘সাজানো গল্প’ বলে মন্তব্য করেন। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়টি পুরোপুরি নাকচও করেনি। এইচআরডব্লিউ তাদের প্রতিবেদনে মনে করিয়ে দিয়েছে, জাতিগত বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি, রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কনভেনশন অনুযায়ী ভারত বাধ্য; যাতে ধর্ম, জাতি, ভাষা বা বর্ণের ভিত্তিতে কাউকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা না হয়। যদিও বিএসএফ বারবার ‘পুশ-ব্যাক’ শব্দটি অস্বীকার করে বলছে, এটা তাদের কার্যপ্রণালীতে নেই, তবু কর্মকর্তারা বিবিসির কাছে অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন, এত বেশি অনুপ্রবেশকারীর চাপ পড়ছে যে সবাইকে নিয়মমাফিক বন্দি করে রাখলে সব কারাগার খালি করে দিতে হবে। তাই সময় বাঁচাতে তাদের সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যে এমনকি ভারতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও অনেককে দিনের পর দিন আটক করে রাখা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই চলছে তাদের আদি রাজ্যের থানার মাধ্যমে, এই সময় তারা ডিটেনশন সেন্টারে আটক থাকছেন; এই তথ্যও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

 এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদন

ভারতীয় বাঙালি মুসলমানদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে

আপডেট সময় :

ভারত তার দেশের শত শত বাংলাভাষী মুসলমানকে বাংলাদেশে বিতাড়িত করছে। এমন তথ্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটির দাবি, ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর অনেক মুসলমান, যারা প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় নাগরিক তাদের ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে জোরপূর্বক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক বিস্তারিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ভারত দেড় হাজারেরও বেশি মুসলমান নারী, পুরুষ ও শিশুকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বিতাড়িতদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীও আছে।
ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য না দিলেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তথ্যের ভিত্তিতেই প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এইচআরডব্লিউর এশিয়া বিভাগের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন বলেন, বাংলাভাষী মুসলমানদের যথেচ্ছভাবে দেশ থেকে বের করে দিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার বৈষম্যের সংস্কৃতি তৈরি করছে। এতে করে বহু ভারতীয় নাগরিকও বিদেশি হিসেবে বিপাকে পড়ছেন।
প্রতিবেদন তৈরিতে এইচআরডব্লিউ জুন মাসে ১৮ জন ভুক্তভোগী এবং ৯টি পরিবারের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই বিতাড়নের শিকার হয়েছেন। এমনকি তাদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার পর আবার ভারতে ফিরে গিয়েছেন এবং পরে নিখোঁজ হয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। যাদের ভারত থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে, তাদের একটা বড় অংশ আসাম আর পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক ও বাংলাভাষী মুসলমান। বাংলাদেশও বারবার জানিয়েছে, ভারত সরকার প্রত্যর্পণের স্বীকৃত প্রক্রিয়া না মেনেই বাংলাদেশি সন্দেহে লোকজনকে ঠেলে দিচ্ছে। ৮ মে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে পাঠানো এক কূটনৈতিক চিঠিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় ‘পুশ-ইন’ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ঢাকা জানিয়েছে, কেবল বাংলাদেশি নাগরিক বলে নিশ্চিত হওয়া গেলে এবং প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই কাউকে গ্রহণ করা হবে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর হামলার পর থেকেই এই বিতাড়ন প্রক্রিয়া তীব্র হয়। মুসলমানদের নাগরিকত্ব প্রমাণের কাগজপত্র অগ্রাহ্য করে, তাদের ফোন এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র কেড়ে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
এইচআরডব্লিউ বলছে, আসাম, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা ও রাজস্থানের বিজেপিশাসিত সরকারগুলো বিশেষ করে গরিব, পরিযায়ী মুসলমানদের চিহ্নিত করে আটক করছে এবং পরে বিএসএফের হাতে তুলে দিয়ে জোরপূর্বক সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছে। সীমান্তরক্ষীরা আটক হওয়া ব্যক্তিদের মারধর করছেন। যথাযথভাবে তাদের নাগরিকত্ব যাচাই না করেই জোর করে বাংলাদেশ সীমান্ত পার করতে বাধ্য করছেন। কিছু ক্ষেত্রে এমনও ঘটেছে, যারা নিজেদের ভারতীয় নাগরিক বলে প্রমাণ করতে পেরেছেন, এমন ডজনখানে মানুষকে আবার ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে ভারত সরকার।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, মে মাসেই আসামের একটি ডিটেনশন সেন্টার থেকে প্রায় ১০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। এছাড়া জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আরও ৪০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার সীমান্তে লাইফ জ্যাকেট হাতে ধরিয়ে সমুদ্রে নামিয়ে দিয়ে বলা হয় সাঁতরে পার হয়ে যাও। জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুস এই ঘটনাকে ‘মানবিক মর্যাদার ঘোরতর লঙ্ঘন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই কাজ ‘ননরিফাউলমেন্ট’ নীতির সরাসরি লঙ্ঘন, যার আওতায় কাউকে এমন জায়গায় ফেরত পাঠানো যায় না, যেখানে তার জীবন হুমকির মুখে পড়বে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি অস্বীকারও করেনি, আবার সরকারিভাবে কোনো বক্তব্যও দেয়নি। শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্টে এ নিয়ে মামলা হলে, আদালত একে ‘সাজানো গল্প’ বলে মন্তব্য করেন। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়টি পুরোপুরি নাকচও করেনি। এইচআরডব্লিউ তাদের প্রতিবেদনে মনে করিয়ে দিয়েছে, জাতিগত বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি, রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কনভেনশন অনুযায়ী ভারত বাধ্য; যাতে ধর্ম, জাতি, ভাষা বা বর্ণের ভিত্তিতে কাউকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা না হয়। যদিও বিএসএফ বারবার ‘পুশ-ব্যাক’ শব্দটি অস্বীকার করে বলছে, এটা তাদের কার্যপ্রণালীতে নেই, তবু কর্মকর্তারা বিবিসির কাছে অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন, এত বেশি অনুপ্রবেশকারীর চাপ পড়ছে যে সবাইকে নিয়মমাফিক বন্দি করে রাখলে সব কারাগার খালি করে দিতে হবে। তাই সময় বাঁচাতে তাদের সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যে এমনকি ভারতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও অনেককে দিনের পর দিন আটক করে রাখা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই চলছে তাদের আদি রাজ্যের থানার মাধ্যমে, এই সময় তারা ডিটেনশন সেন্টারে আটক থাকছেন; এই তথ্যও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।