ভাষার মাসেও পাঠক নেই শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগারে

- আপডেট সময় : ০২:৫৮:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১২২ বার পড়া হয়েছে
বই থাকলেও পাঠক নেই ফেনীর ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে। সব সুযোগ-সুবিধা ও আধুনিকতার ছোঁয়া থাকার পরও বছরজুড়ে পাঠকশূন্য থাকে গ্রন্থাগারটি। পাঠক ফেরাতেও নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। কেবল ফেব্রুয়ারি মাস এলে চলে তোড়জোড়। স্থানীয়দের দাবি, তরুণ প্রজন্মকে পাঠাগারমুখী করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ যেন নেয়া হয়। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিলে নেমে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে গুলিবিদ্ধ হন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামের যুবক আবদুস সালাম। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ৭ই এপ্রিল মারা যান তিনি। এই ভাষা শহীদের স্মৃতি রক্ষায় ২০০৮ সালে দাগনভূঞা উপজেলার সালামনগর গ্রামে তাঁর বাড়ির অদূরে ‘আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
কিন্তু গ্রন্থাগারে তিন হাজার বইয়ের সংগ্রহ থাকলেও নেই পাঠক। নিয়মিত গ্রন্থাগারটি খোলাও হয় না বলে জানিয়েছেন ফেনী দাগনভূঁঞা ভাষা শহীদ সালাম গ্রন্থাগার গ্রন্থাগারিক নাজমুল ইসলাম। বছরজুড়ে সুনশান নিরবতা থাকলেও ফেব্রুয়ারি মাসে বদলে যায় চিত্র। শুরু হয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আনাগোনা। একুশে ফেব্রুয়ারির নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়। স্থানীয়রা বলছেন, আগামী প্রজন্মকে ভাষা শহীদ ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানাতে এই গ্রন্থাগারের কোন বিকল্প নেই।
এদিকে, এই ভাষা শহীদ আবদুস সালামের নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হলেও কাগজপত্র জটিলতায় তা সরকারিভাবে আগের নামই রয়ে গেছে। এ সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। গ্রন্থাগারে পাঠক ফেরাতে ও বিদ্যালয়ের নাম জটিলতা নিরসনে প্রশাসন দ্রুত উদ্যোগ নেবে, এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের। শনিবার (১৫ ফেব্রয়ারি) সকালে ভাষা শহীদ আবদুস সালাম লাইব্রেরি ও স্মৃতি জাদুঘরে স্থানীয় প্রশাসন হাতের লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়।
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নায়ক আবদুস সালামের ভাগ্নে নুরে আলম বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষ এখানে আসেন। জাদুঘরের ভেতরে আবদুস সালামের একটি মাত্র ছবি রয়েছে বলে জানান তিনি।আবদুস সালামের নাম ও ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখতে, ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে আবদুস সালামের নামে একটি গেটওয়ে নির্মাণের দাবি জানান তিনি। ইতোমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসন তার নামানুসারে দাগনভূঁইয়া উপজেলা মিলনায়তনের নাম পরিবর্তন করে ভাষা শহীদ আবদুস সালাম অডিটোরিয়াম করেছে। এছাড়া গ্রামে ভাষা শহীদ সালাম মেমোরিয়াল কলেজ নামে একটি বেসরকারি কলেজ নির্মাণ করা হয়েছে। লাইব্রেরি উদ্বোধনের সময় স্থানীয় প্রশাসন লাইব্রেরিতে প্রচুর বই সরবরাহ করে।এরপর লাইব্রেরিতে আর নতুন কোনো বই আসেনি। এছাড়া লাইব্রেরিতে কোনো সংবাদপত্র রাখা হয়না। একজন গ্রন্থাগারিক ও একজন তত্ত্বাবধায়ক আছেন। পাঠকের অভাবে তারা অলস সময় পার করেন।
সম্প্রতি লাইব্রেরি পরিদর্শনকালে দেখা গেছে শেলফে শত শত বই। তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও কোনো পাঠক পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে বিগত বন্যায় বই রাখার সেল্প গুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এখন বইগুলো রাখা হয়েছে টিবিলের উপর। গ্রন্থাগারিক মো. লুৎফুর রহমান বাবুল বলেন, লাইব্রেরিতে সাড়ে তিন হাজার বই রয়েছে এবং সেগুলো পুরনো। লাইব্রেরিটি প্রতিদিন খোলা রাখা হলেও সেখানে কোনো পাঠক আসে না। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনা ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে হলেও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতো যথাযথ সম্মান ভাষাশহিদরা পাননি; পায়নি তাদের পরিবারও। মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে সরকার থেকে ভাতা পাচ্ছেন, ভাষাশহিদ বা তাদের পরিবার সে রকম ভাতা পাচ্ছেন না। ভাষাশহিদদের পরিবারের সংখ্যাও কম। তাই তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হোক।’
ভাষাশহিদ আবদুস সালামের একমাত্র জীবিত ভাই আবদুল করিম বলেন, গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটিকে সরগরম করে রাখার জন্য এবং পাঠক ও দর্শনার্থী বাড়াতে গ্রন্থাগারের পাশে নদীর পাড়ে পার্ক নির্মাণ করা প্রয়োজন। ভাষা শহীদ আবদুস সালাম স্মৃতি পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, “তরুণ প্রজন্ম তাদের পাঠ্যপুস্তক থেকে আবদুস সালাম সম্পর্কে জানতে পারে; তবে তা সম্প্রসারণ করতে হবে। তিনি সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলনের ওপর জোর দেন। দাগনভূইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স ম আজহারুল ইসলাম জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও দিবসটি উপলক্ষে স্থানীয় প্রশাসন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ভাষা শহীদ গ্রন্থাগারটি বেশ সমৃদ্ধ ও অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য বই রয়েছে। পাঠক বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন শ্রেণীপেশার ব্যক্তিরদের আলোচনা করা হবে। উল্লেখ্য, আবদুস সালামের পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে, তার মৃত্যুর ৬৫ বছর পর ২০১৭ সালে আজিমপুর কবরস্থানে তার কবর শনাক্ত করে সরকার।