মামা বাড়ির অবদার: পূজায় ইলিশ চাইলো ভারত
- আপডেট সময় : ১১:২১:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩০ বার পড়া হয়েছে
দেশের বাজারে প্রতি কেজি ১৪শ’ টাকা অথচ ভারতে ইলিশ পাঠানো হয় ১১শ’ টাকায়,
কলকাতার বাজারে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২২শ’ রুপিতে
আমিনুল হক ভূইয়া
পেঁয়াজ নিয়ে নাকানি-চুবানি খাওয়ানো ভারতে ইলিশ পাঠাতেন হাসিনা। তাঁর ভারত প্রীতিই দেশের চেয়ে কম দামে ভারতে পাঠনো হয় ইলিশ। এবারে পূজা উপলক্ষ্যে ইলিশ চেয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবরে আবেদন করেছে ভারতের ফিস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন। যদিও ৫ বছর ধরে ইলিশ ভারতে পাঠিয়েছে হাসিনা সরকার। কিন্তু হাসিনা সরকার ইলিশ পাঠালেও ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নাকানি-চুবানি খাইয়েছে। তারপরও গত বছর হাসিনা সরকারের পাঠানো ইলিশ ভারতের বাজারে পৌছানো পর্যন্ত প্রতি কেজি ১ হাজার রুপি ব্যয় হয়। সেই ইলিশ ভারতের বাজারে পাইকারী বিক্রি হয়েছে ১৬শ’ থেকে ১৮শ’ রুপি দরে। আর খুরচা বাজারে বিক্রি হয়েছে ২২শ’ থেকে ২৬শ’ রুপি দরে।
ভারতের কারসাজিতে বাংলাদেশের বাজারে ২০০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। কোন রকমের নোটিশ ছাড়াই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশের বাজারে সংকট তৈরি করে ভারত। পরবর্তীতে কৌশলে ৪০ শতাংশ রপ্তানি ট্যাক্স বাড়িয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি করে বন্ধু ভারত। গত বছর জুন মাসের আগে প্রতিটন পেঁয়াজ ২২০ ডলারে রপ্তানি করা হতো। কিন্তু জুন মাসের পর থেকে ২২০ ডলারের সঙ্গে ৪০ শতাংশ রপ্তানি ট্যাক্স আরোপ করে ভারত। বর্তমানে প্রতিটন পেঁয়াজ ৫৫০ ডলারের সঙ্গে ৪০ শতাংশ ট্যাক্সসহ বাংলাদেশ আমদানি করছে (৯২ হাজার ৪০০ টাকায়)।
বন্ধুদের খুশি করতে মাত্র ১১শ টাকা কেজি দরে ভারতে পাঠানো ইলিশ কলকাতায় বিভিন্ন বাজারে ২২শ থেকে ২৬শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে বন্ধুদের খুশি রাখতে ইলিশ পাঠতে কসুর করেনি হাসিনা সরকার। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ১০ ডলার কেজি দরে যাওয়া ইলিশের দাম ভারতে পড়েছে ৮২০ রুপি। টাকার সঙ্গে রুপির বিনিময় হিসাব করলে যা দাঁড়ায় ৯০২ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহণসহ অন্যান্য যোগ করলে খরচ দাঁড়াতে পারে সর্বোচ্চ ১ হাজার রুপি। রপ্তানি মূল্য অনুযায়ী এই ১ হাজার রুপির ইলিশ কলকাতার পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৬শ’ থেকে ১৮শ’ রুপিতে। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২১শ টাকা।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। ৮ আগস্ট নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ পান বিশিষ্টসমাজ চিন্তক ফরিদা আকতার। ভারতে ইলিশ রপ্তানি প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আগে ইলিশ খাবে। তারপর চিন্তা করা হবে আদৌ রপ্তানি কোন সুযোগ থাকে কিনা। উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে। এর আগে সাধারণ মানুষের কথা গণতান্ত্রিক লেবাসধারী সরকার চিন্তা করেনি।
এবারেও ইলিশের বাজার চড়া। বাজারের কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬শ’ টাকা কেজি দরে। সোয়া কেজির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২০০০ টাকায়। ৬০০ টাকার নীচে মিলছে জাটকা ইলিশ। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজিতে। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছের আমদানি কম। এ জন্য দাম চড়া। আমদানি বাড়লে দাম কমে আসবে। এমন পরিস্থিতিতে ইলিশ রপ্তানির আবেদন জানালো ভারত।
মুর্শীদাবাদের সংবাদকর্মী শান্তনু রায় এবং কলকাতার সঙ্গীতশিল্পী কস্তুরি সাহা জানালেন, ভারতে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন বাজারের প্রকারভেদে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫শ’ থেকে ৩ হাজার রুপি দরে। তারপরও ভালো মাছ মিলছে না।
থেমে নেই ভারতে ইলিশ পাচার : বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ভাবে ভারতে ইলিশ পাচার হচ্ছে। সম্প্রতি সিলেটের গোয়াইনঘাট দিয়ে মেঘালয়ে পাচারকালে একটি ইলিশের চালান আটক হয়। নদীপথেও পাচার হয়ে থাকে ইলিশ। সাগর থেকে ভারতের জেলেরা মাছ ধরে নিয়ে যাবার কথা মাছে মধ্যেই শোনা যায়। প্রশাসনের কঠোর অবস্থান এবং আমাদের মানুষিকতা রুখতে পারে ভারতে ইলিশ পাচার। তাহলেই ইলিশের বাড়ি বাংলাদেশে ইলিশের দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালে আসবে ।