মুজিব বই জব্দে সাঁড়াশি অভিযান

- আপডেট সময় : ৬৩ বার পড়া হয়েছে
রাজধানী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে মুজিব বই, পোষ্টার ব্যানার ও ফেষ্টুনের পেছনে গোয়েন্দারা চষে বেড়াচ্ছেন। সরকার তথা আইন শৃঙখলা বাহিনীর হাই কমান্ডের নির্দেশে রাজধানীসহ সারাদেশের সকল বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনী। এ সকল যৌথবাহিনীর সদস্যরা শুধুমাত্র সন্ত্রাসী বা অপরাধী গ্রেফতার নয়, অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি হন্য হয়ে খুঁজছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার পরিবার ও ঘনিষ্ট স্বজনদের নিয়ে লেখা বই উপন্যাস। শুধু তাই নয়, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগ এবং সেচ্ছাসেবক লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের ব্যানার ফেষ্টুন ও পোষ্টার বহনকারীদের। সক্রিয় ভুমিকা পালনের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট এলাকার নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। যার ফলে আওয়ামী সরকারের পতন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর পরই রাজধানীসহ সারাদেশের সকল বই বিতান বা ক্লাব অফিস আদালত এবং লাইব্রেরী থেকে এ সকল বই উধাও করে দেয়া হয়েছে। তারপরও এসকল বই রাখা বা গোপনে বিলি করা , মিটিং বা সম্মেলন করার কারনে রাজধানীর অদুরে মুন্সিগঞ্জ জেলা শহর থেকে বেশ কয়েজন আওয়ামীলীগ ও তার অ্গংসংগঠনের নেতাকমীদের গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দারা। তাদের দখল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার পরিবার এবং স্বজনদের নিয়ে লিখিত বই জব্দ করা হয়েছে। এ সংক্রান্তে গ্রেফতারকৃতদেওসহ ৫৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে অসমাপ্ত আত্মজীবনী লিখে আর্থিক সুবিধা নেওয়া কর্মকর্তারা নজরদারিতে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ দুদক তদন্ত করে দেখছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের তালিকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন দুদকের একাধিক টীম।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ লিখে আর্থিক সুবিধাভোগী সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীসহ ১২৩ জনকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রেখেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান। আক্তার হোসেন বলেন, অসমাপ্ত আত্মজীবনী নিয়ে যে প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেই প্রতিবেদন দুদকের নজরে এসেছে। দুদক এই বিষয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, এরইমধ্যে অভিযোগের বিষয়ে দুদকের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী কার্যক্রম চালানো হবে। শিগগিরই এই বিষয়ে তালিকা নিয়ে দুদকের একাধিক টীম মাঠে ময়দানে কাজ শুরু করছে। দুদকের এই তালিকায় সাবেক মন্ত্রী এমপি আইজিপি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও আমলা রয়েছে। যারা সে সময়ে ফ্যাসিষ্ট সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা ভোগ করেছেন। এমনই আভাষ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সময় বহুল আলোচিত একটি বই ছিল ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। ২০১২ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের চারটি খাতা ঘেঁটে সম্পাদনা ও সংশোধনের পর বইটি প্রকাশ করা হয় বলে দাবি করেছিলেন শেখ হাসিনা।
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে আসে ভিন্ন তথ্য। সেখানে বলা হয়, এই বইটি আসলে লিখেছেন সাবেক পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারী এবং তার নেতৃত্বাধীন ১২৩ সদস্যের একটি দল। বিনিময়ে তারা সরকারি পদ, নগদ অর্থ ও ফ্ল্যাট পান।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১৮ সালে জাবেদ নিয়োগ পান আইজিপি হিসেবে। আর আত্মজীবনী বইটি লিখতে যে ১২৩ জন সদস্য কাজ করেন তারা পান রাজধানীর ধানমন্ডি, বসুন্ধরা ও মিরপুরে কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট এবং নগদ ১ কোটি করে টাকা। এর সরাসরি তত্ত্বাবধান করেন শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
অপরদিকে মুন্সিগঞ্জে গোয়েন্দারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই জব্দ করেছে। পাশাপাশি ৫৫ জনের নামে মামলা করেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের গোপন বৈঠক, সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই জব্দ এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ, পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ৫৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এর আগে একই ঘটনায় আটক দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বইসহ গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গত রোববার সিরাজদীখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, গত শুক্রবার দুপুরে এসআই মো. হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে জেলার সিরাজদীখান থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলাটিতে ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেন মৃধা, রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, কেয়াইন ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আশরাফ আলী, বাসাইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম, লতব্দী ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক, ইছাপুরা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন হাওলাদার, শ্রীনগরের ষোলঘর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক, সিরাজদীখান উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিয়ান আব্দুল্লাহ অনিক ও সাধারণ সম্পাদক কাউসার আহমেদ। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে সিরাজদীখান উপজেলার ইছাপুরা ও কাঁঠালতলী গ্রামে অভিযান চালিয়ে দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করা হয়। তারা হলেন ইছাপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার ও জৈনসার ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আলম ঢালী। এ সময় তাদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে লেখা বেশ কয়েকটি বই ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত ১০টি পোস্টার উদ্ধার করা হয়। বইগুলোর মধ্যে রয়েছে শেখ ফজলুল করিম সেলিমের লেখা ‘ভারতবর্ষের স্বাধীনতা: ঘটনাবহুল ইতিহাস’, মো. আজিজ মাহমুদের লেখা ‘মুজিব ইজ এ গ্রেটম্যান’, রুহুল আমিন বাবুলের লেখা ‘ছোটদের শেখ মুজিব’ ও আসাদুজ্জামান খান কামালের লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর পথনির্দেশনার বাংলাদেশ’। বই জব্দের বিষয়ে ওসি বলেন, ‘ছাত্রলীগ যেহেতু নিষিদ্ধ সংগঠন, তাদের ব্যবহৃত এসব বই ও পোস্টারও নিষিদ্ধ। গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, শুধু মুন্সিগঞ্জে নয়, রাজধানীসহ সারাদেশে এই অভিযান চলমান রয়েছে। জেলা শহরে জেলা ডিবি নজরদারি করছেন। ডিবির কার্যক্রম জেলা পুলিশ সুপার মনিটরিং করছেন।