ঢাকা ০২:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

মেঘা প্রকল্পে মেঘা দুর্নীতি

মহিউদ্দিন তুষার
  • আপডেট সময় : ৩১ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজধানীতে মেট্রোরেলের ব্যারিং প্যাড খুলে ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশের মেঘা প্রকল্পগুলোর কাজের মান, দুর্নীতি ও জবাবদিহির অভাব। হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পগুলোর ব্যর্থতা, অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজ আজ যেন জাতির ঘাড়ে এক বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বছরের পর বছর ধরে চলে আসা দুর্নীতি ও তদারকির অভাবের ফলেই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে, যা কেবল সরকারি সম্পদ নয়, মানুষের জীবনকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে বাস্তবায়িত বা চলমান বড় বড় মেঘা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালসহ আরও বহু প্রকল্প। এসব প্রকল্পে সরকার দাবি করেছে উন্নয়নের জোয়ার, কিন্তু বাস্তবচিত্র ভিন্ন। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, এসব প্রকল্পে খরচ বেড়েছে ৫০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত সময় লেগেছে দ্বিগুণেরও বেশি। প্রকল্প অনুমোদনের সময় নির্ধারিত বাজেট যেখানে ছিল নির্দিষ্ট সীমায়, বাস্তবায়নের সময় সেখানে দেখা গেছে অজস্র বাড়তি বিল, নিম্নমানের উপকরণ ও রাজনৈতিক প্রভাবিত ঠিকাদারি।
পদ্মা সেতুর সময় দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কুশন চুরি কেলেঙ্কারি জনমনে তীব্র ক্ষোভ তোলে। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পায়রা বন্দরে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগও উঠে এসেছে। আর এবার মেট্রোরেলের ব্যারিং প্যাড খুলে যাওয়ার ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে, দুর্নীতির এই সংস্কৃতি বন্ধ না হলে উন্নয়ন শুধু প্রদর্শনীর বস্তু হয়েই থাকবে।
পরিবহন খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে মেঘা প্রকল্প মানেই ব্যয়ের ফুলে ফেঁপে ওঠা আর গুণগত মানে চরম অবনতি। যারা কাজ করে, তাদের জবাবদিহি নেই, যার ফল আজ মেট্রোর দুর্ঘটনা। মেট্রোরেল দুর্ঘটনার পর যাত্রী ও সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তারা বলছে,আমরা ভেবেছিলাম মেট্রোরেল নিরাপদ। কিন্তু এখন ভয় লাগে। যদি কোটি কোটি টাকার প্রকল্পে স্ক্রু খুলে পড়ে, তাহলে অন্য জায়গার কী অবস্থা? আরেকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রোকসানা বলেন, বিলাসবহুল বিজ্ঞাপন আর উদ্বোধনের জাঁকজমক দেখাই মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু টেকসই কাজ হয় না। সবখানেই লুটপাট আর দলীয় ভাগাভাগি।
বিশিষ্টজনদের মতে, মেঘা প্রকল্পগুলো উন্নয়নের চালিকাশক্তি হতে পারত, যদি সেগুলোর অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, স্বচ্ছতা ও প্রকৌশলগত মান নিয়ন্ত্রণ সঠিকভাবে হতো। আজ দুর্ঘটনার দায় শুধু প্রযুক্তিগত নয়, এটি নীতিগত ব্যর্থতারও প্রতিফলন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বলেন, মেঘা প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন প্রাণহানির আশঙ্কাও বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত তদারকি ছাড়া এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। অন্তবর্তী সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, মেট্রোরেল দুর্ঘটনা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সরকারি সূত্র বলছে, দুর্ঘটনার পেছনে কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি, নিম্নমানের উপকরণ বা রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। অন্তবর্তী সরকারের মন্ত্রী পরিষদের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিগত সরকারগুলো শুধু উদ্বোধনী ফিতা কেটেছে, কিন্তু টেকসই রক্ষণাবেক্ষণ বা নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করেনি। এখন এসব প্রকল্পের প্রকৃত মূল্যায়ন হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এখনই জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা না করা যায়, তাহলে এইসব মেঘা প্রকল্প ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ডেকে আনবে। প্রকৌশল নীতিমালা মেনে না চলা, রাজনৈতিক নিয়োগ, বিদেশি সরবরাহকারীদের সঙ্গে কমিশন বাণিজ্য—সবই মিলে দুর্নীতির এক অদৃশ্য জাল তৈরি করেছে।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সুলতানা কামাল বলেন, দুর্নীতি এখন উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। সরকার পরিবর্তন নয়-মানসিকতা পরিবর্তন জরুরি। তবেই উন্নয়ন টেকসই হবে।
এখন পর্যন্ত এটিই ঢাকার একমাত্র মেট্রোরেল। এর দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। স্টেশনসহ মোটাদাগে প্রতি কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ২০১২ সালে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মেট্রোরেল প্রকল্প পাস করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০২৪ সালে প্রকল্পটি শেষে হওয়ার কথা ছিল। পরে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রেলপথ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলে প্রকল্পের সময় ও মেয়াদ বাড়ানো হয়। এই প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। খরচ বাড়ার হার ৫২ শতাংশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নয়নমূলক কাজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প তুলনামূলকভাবে বেশি খরচে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মেট্রোরেলের তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। অর্থাৎ ঢাকার প্রায় কাছাকাছি সময়ে এই মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়। ওই সময় ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া তথ্য অধিকার আইনের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দিল্লি মেট্রোরেলের খরচ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। ওই খবরে বলা হয়, ভূ–উপরিস্থ (এলিভেটেড) মেট্রোরেল নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ২২১ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৯২ কোটি টাকা) এবং ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ৫৫২ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭২৮ কোটি টাকা)।
২০১৫ সালে চীনের ঋণে পাকিস্তানের লাহোরে মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হয়। ২৭ কিলোমিটার উড়াল (এলিভেটেড) রেলপথ তৈরিতে খরচ হয় ১৬৫ কোটি ডলার বা ১৮ হাজার কোটি টাকার কিছুটা বেশি। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ৬৭১ কোটি টাকা। ২০২০ সালে লাহোর মেট্রো চালু হয়। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে পুত্রাজায়া পর্যন্ত ৫৮ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। এটি চালু হয় ২০২২ সালে। ভূগর্ভস্থ ও ভূউপরিস্থ দুই ধরনের লাইন আছে এই মেট্রোতে। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। চীনের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ইউনানের রাজধানী কুনমিংয়ে ২০০৮ সালে প্রথম মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়। ৩৪ কিলোমিটারের ভূ–উপরিস্থ এই মেট্রোরেল চালু হয় ২০১২ সালে। এতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মেঘা প্রকল্পে মেঘা দুর্নীতি

আপডেট সময় :

রাজধানীতে মেট্রোরেলের ব্যারিং প্যাড খুলে ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশের মেঘা প্রকল্পগুলোর কাজের মান, দুর্নীতি ও জবাবদিহির অভাব। হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পগুলোর ব্যর্থতা, অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজ আজ যেন জাতির ঘাড়ে এক বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বছরের পর বছর ধরে চলে আসা দুর্নীতি ও তদারকির অভাবের ফলেই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে, যা কেবল সরকারি সম্পদ নয়, মানুষের জীবনকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে বাস্তবায়িত বা চলমান বড় বড় মেঘা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালসহ আরও বহু প্রকল্প। এসব প্রকল্পে সরকার দাবি করেছে উন্নয়নের জোয়ার, কিন্তু বাস্তবচিত্র ভিন্ন। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, এসব প্রকল্পে খরচ বেড়েছে ৫০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত সময় লেগেছে দ্বিগুণেরও বেশি। প্রকল্প অনুমোদনের সময় নির্ধারিত বাজেট যেখানে ছিল নির্দিষ্ট সীমায়, বাস্তবায়নের সময় সেখানে দেখা গেছে অজস্র বাড়তি বিল, নিম্নমানের উপকরণ ও রাজনৈতিক প্রভাবিত ঠিকাদারি।
পদ্মা সেতুর সময় দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কুশন চুরি কেলেঙ্কারি জনমনে তীব্র ক্ষোভ তোলে। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পায়রা বন্দরে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগও উঠে এসেছে। আর এবার মেট্রোরেলের ব্যারিং প্যাড খুলে যাওয়ার ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে, দুর্নীতির এই সংস্কৃতি বন্ধ না হলে উন্নয়ন শুধু প্রদর্শনীর বস্তু হয়েই থাকবে।
পরিবহন খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে মেঘা প্রকল্প মানেই ব্যয়ের ফুলে ফেঁপে ওঠা আর গুণগত মানে চরম অবনতি। যারা কাজ করে, তাদের জবাবদিহি নেই, যার ফল আজ মেট্রোর দুর্ঘটনা। মেট্রোরেল দুর্ঘটনার পর যাত্রী ও সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তারা বলছে,আমরা ভেবেছিলাম মেট্রোরেল নিরাপদ। কিন্তু এখন ভয় লাগে। যদি কোটি কোটি টাকার প্রকল্পে স্ক্রু খুলে পড়ে, তাহলে অন্য জায়গার কী অবস্থা? আরেকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রোকসানা বলেন, বিলাসবহুল বিজ্ঞাপন আর উদ্বোধনের জাঁকজমক দেখাই মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু টেকসই কাজ হয় না। সবখানেই লুটপাট আর দলীয় ভাগাভাগি।
বিশিষ্টজনদের মতে, মেঘা প্রকল্পগুলো উন্নয়নের চালিকাশক্তি হতে পারত, যদি সেগুলোর অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, স্বচ্ছতা ও প্রকৌশলগত মান নিয়ন্ত্রণ সঠিকভাবে হতো। আজ দুর্ঘটনার দায় শুধু প্রযুক্তিগত নয়, এটি নীতিগত ব্যর্থতারও প্রতিফলন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বলেন, মেঘা প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন প্রাণহানির আশঙ্কাও বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত তদারকি ছাড়া এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। অন্তবর্তী সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, মেট্রোরেল দুর্ঘটনা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সরকারি সূত্র বলছে, দুর্ঘটনার পেছনে কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি, নিম্নমানের উপকরণ বা রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। অন্তবর্তী সরকারের মন্ত্রী পরিষদের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিগত সরকারগুলো শুধু উদ্বোধনী ফিতা কেটেছে, কিন্তু টেকসই রক্ষণাবেক্ষণ বা নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করেনি। এখন এসব প্রকল্পের প্রকৃত মূল্যায়ন হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এখনই জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা না করা যায়, তাহলে এইসব মেঘা প্রকল্প ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ডেকে আনবে। প্রকৌশল নীতিমালা মেনে না চলা, রাজনৈতিক নিয়োগ, বিদেশি সরবরাহকারীদের সঙ্গে কমিশন বাণিজ্য—সবই মিলে দুর্নীতির এক অদৃশ্য জাল তৈরি করেছে।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সুলতানা কামাল বলেন, দুর্নীতি এখন উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। সরকার পরিবর্তন নয়-মানসিকতা পরিবর্তন জরুরি। তবেই উন্নয়ন টেকসই হবে।
এখন পর্যন্ত এটিই ঢাকার একমাত্র মেট্রোরেল। এর দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। স্টেশনসহ মোটাদাগে প্রতি কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ২০১২ সালে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মেট্রোরেল প্রকল্প পাস করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০২৪ সালে প্রকল্পটি শেষে হওয়ার কথা ছিল। পরে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রেলপথ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলে প্রকল্পের সময় ও মেয়াদ বাড়ানো হয়। এই প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। খরচ বাড়ার হার ৫২ শতাংশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নয়নমূলক কাজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প তুলনামূলকভাবে বেশি খরচে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মেট্রোরেলের তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। অর্থাৎ ঢাকার প্রায় কাছাকাছি সময়ে এই মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়। ওই সময় ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া তথ্য অধিকার আইনের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দিল্লি মেট্রোরেলের খরচ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। ওই খবরে বলা হয়, ভূ–উপরিস্থ (এলিভেটেড) মেট্রোরেল নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ২২১ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৯২ কোটি টাকা) এবং ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ৫৫২ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭২৮ কোটি টাকা)।
২০১৫ সালে চীনের ঋণে পাকিস্তানের লাহোরে মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হয়। ২৭ কিলোমিটার উড়াল (এলিভেটেড) রেলপথ তৈরিতে খরচ হয় ১৬৫ কোটি ডলার বা ১৮ হাজার কোটি টাকার কিছুটা বেশি। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ৬৭১ কোটি টাকা। ২০২০ সালে লাহোর মেট্রো চালু হয়। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে পুত্রাজায়া পর্যন্ত ৫৮ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। এটি চালু হয় ২০২২ সালে। ভূগর্ভস্থ ও ভূউপরিস্থ দুই ধরনের লাইন আছে এই মেট্রোতে। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। চীনের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ইউনানের রাজধানী কুনমিংয়ে ২০০৮ সালে প্রথম মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়। ৩৪ কিলোমিটারের ভূ–উপরিস্থ এই মেট্রোরেল চালু হয় ২০১২ সালে। এতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা।