ঢাকা ০৯:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

মেট্রোরেলে অস্বস্থি…

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১২:৪১:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫ ৩৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মতিঝিল থেকে উত্তরাগামী হাজারো যাত্রী। প্রতিটি ট্রেন ছুটছে কোচভর্তি যাত্রী নিয়ে। স্টেশনে, ট্রেনে কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। রেলের বগিতে যাত্রীর ঠাসাঠাসি চাপে চলছে ইভটিজিং, মালামাল চুরি, টাকা স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই

পড়ন্ত বিকেল, ক্লান্ত রোজাদাররা। বাইরের তাপমাত্রা বাড়তির দিকে। নিচের সড়কে গাড়ির জট, এমন পরিস্থিতিতে মতিঝিল-উত্তরা পথের যাত্রীদের প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেট্রোরেল। রাজধানীবাসীর আস্থার প্রতীক মেট্রোরেল।

অফিস শেষে মেট্রো স্টেশনে ভিড় জমিয়েছেন মতিঝিল থেকে উত্তরাগামী হাজারো যাত্রী। প্রতিটি ট্রেন ছুটছে কোচভর্তি যাত্রী নিয়ে। স্টেশনে, ট্রেনে কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। রেলের বগিতে যাত্রীর ঠাসাঠাসি চাপে চলছে ইভটিজিং, মালামাল চুরি, টাকা স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই।

যাত্রিদের মধ্যে ঝগড়া, ছিনতাইয়ের অভিযোগে মেট্রোরেলে যাত্রীদের জান ও মালামাল ছিনতাই রোধ এবং যাত্রীর নিরাপত্তাবিধানে সচেষ্ট মেট্রো পুলিশ। মেট্রোরেলের ভেতরে যাত্রীদের মধ্যে বাগ্বিতন্ডা নিয়ন্ত্রণ ও অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য এমআরটি পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি ট্রেনে ২ জন করে পুলিশ সদস্য রয়েছেন। মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তর থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোর কোচের ভেতরে এমআরটি পুলিশ সদস্যদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা সেখানে টহলে থাকবেন। অন্য দিকে জানা গেছে, ৬টি কোচের একটি ট্রেনে মোট ২ জন এমআরটি পুলিশ সদস্য থাকবেন। সেই হিসেবে চলমান ১০টি ট্রেনে ২০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। সকাল থেকে দুপুর ও দুপুর থেকে রাত- এই ২ শিফটে তারা কাজ করবেন। এছাড়া স্টেশনগুলোতে যেসব এমআরটি পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন তারাও থাকবেন।

এছাড়া যাত্রীদের সঙ্গে থাকা বাচ্চা, বৃদ্ধ এবং মালামাল হারানো গেলে তাৎক্ষণিক খুঁজে বের করা, চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধ করা, যাত্রীদের মধ্যে বাগ্বিত-া নিয়ন্ত্রণসহ নাগরিক চাহিদা অনুযায়ী যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে এমআরটি পুলিশ। মেট্রোরেল ও স্টেশনের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে কাজ শুরু করে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পুলিশ।

তিল ধারণের ঠাঁই নেই মেট্রোরেলে। সচিবালয় স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, স্টেশনের কনকোর্স প্লাজার টিকিট কাউন্টারের সামনে গতকালের মতোই সামান্য কিছু মানুষ একক যাত্রার টিকিট সংগ্রহ করতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। তবে কনকোর্স প্লাজা থেকে সরাসরি প্লাটফর্মে উঠে যাচ্ছেন বেশিরভাগ যাত্রী, যাদের কাছে এমআরটি পাস অথবা র‌্যাপিড পাস আছে। এদের বেশিরভাগেরই অফিস এই এলাকায়।
প্ল্যাটফর্মে উঠে দেখা যায়, যেসব ট্রেন উত্তরা থেকে মতিঝিলের দিকে আসছে সেগুলোতে তেমন কোনো যাত্রী নেই। ২০০ থেকে ৩০০ জন যাত্রী এসব ট্রিপে আসছেন।

ফিরতি যাত্রার চিত্র একেবারেই ভিন্ন। মতিঝিল থেকে ৮ মিনিট পরপর এক-একটি ট্রেন সচিবালয় স্টেশনে এসে থামছে। কিন্তু সেগুলোতে চড়ার মতো কোনো অবস্থা নেই। প্রতিটি ট্রেন যাত্রী নিয়ে প্রায় পরিপূর্ণ বোঝাই হয়েই সচিবালয় স্টেশনে আসছে। ফলে প্লাটফর্মে যদি ২০০ জন যাত্রী থাকেন, তার মধ্যে সর্বোচ্চ ৭০-৮০ জন উঠতে পারছেন। বাকিদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে পরের ট্রেনের জন্য। এরই মধ্যে আরও ২০০-৩০০ যাত্রী প্লাটফর্মে চলে আসছেন। ইফতারের আগ পর্যন্ত এমন চাপ থাকবে বলে মনে হচ্ছে। মেট্রোরেলের কর্মীরা ট্রেনের দরজায় ঝুলে থাকা যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করাচ্ছেন। দরজায় মানুষ আটকে যাওয়া বা ব্যাগ আটকে যাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।

রাজধানীর মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশনে মেজবাহ উদ্দিন নামক এক ব্যাংক কর্মকর্তার পকেট থেকে ২৫ হাজার কানাডিয়ান ডলার চুরি হয়েছে। গত ৬ মার্চ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মেজবাহ উদ্দিন মেট্রোরেলে করে মতিঝিল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর যাওয়ার জন্য স্টেশনে এসেছিলেন।
এ বিষয়ে তার বন্ধু মোশারফ হোসেন বলেন, মেজবাহ ডাচ-বাংলা ব্যাংকে চাকরি করেন। তার বোন কানাডিয়ান প্রবাসী এবং বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলেন। বোনের ফেরার কথা থাকায় মেজবাহ তার জন্য কানাডিয়ান ডলার কিনেছিলেন। তিনি বলেন, মেজবাহ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশনে আসেন মিরপুর যাওয়ার জন্য। এরই মধ্যে কে বা কারা তার পকেট থেকে ডলার নিয়ে যায়। মোশারফ আরও জানান, ঘটনাটি শুনে তিনি স্টেশনে আসেন। এরপর চুরির ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা শনাক্ত করার জন্য তারা স্টেশনের বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করছেন। এ বিষয়ে এমআরটি পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সিদ্দিকী তানজিলুর রহমান বলেন, তিনি এখনো বিষয়টি জানেন না। তবে বিস্তারিত জানতে খোঁজ নিচ্ছেন।
সচিবালয় স্টেশন থেকে মিরপুর-১০ স্টেশনগামী নিয়মিত যাত্রী আসাদ আবেদীন জয় বলেন, রমজানের আগে বিকেল বেলা এত ভিড় হতো না। ভিড় হতো অফিস ছুটির পরে, সন্ধ্যার আগে। এখন সরকারি অফিস দুপুর সাড়ে তিনটা পর্যন্ত করা হয়েছে। ফলে অফিস ছুটির পর সবার তাড়া থাকে দ্রুত বাড়ি পৌঁছানোর। ফলে গতকাল থেকে মেট্রোরেলে এই সময়ে বেশি ভিড় দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাসে করে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিরপুর-১০ নম্বরে যেতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তার ওপর বাসের ফ্যানগুলো থাকে নষ্ট, অসহ্য গরমে নাজেহাল হতে হয়। সেই তুলনায় মেট্রোরেল একটা আশীর্বাদ। ঠেলাঠেলি করে হলেও কোনোরকমে উঠতে পারলেই ২৫ মিনিটের মধ্যে মিরপুর যাওয়া যায়।
আহসান হাবীব নামের আরেক যাত্রী বলেন, মেট্রোরেল একটা আস্থার নাম। ঢাকা শহরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেউ গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবে, এই নিশ্চয়তা দিতে পারে না। কিন্তু কষ্ট করে মেট্রোরেলে উঠতে পারলে আর চিন্তা নেই। ২-৩ মিনিট কম বেশি হলেও গন্তব্যে পৌঁছা যায় অনায়াসে। টাকাটা বেশি লাগলেও এসি ট্রেনে আরামে যাওয়া যায়। তিনি বলেন, সবাই ইফতারের আগে বাসায় যেতে চায়। ফলে এই সময়টাতে মেট্রোরেলে যাত্রীর চাপ বেশি। গতকাল আমরা দেখেছি ইফতারের পর কিন্তু ট্রেন প্রায় ফাঁকা চলাচল করেছে। ফলে রোজার মাস জুড়ে বিকেল ৪টা থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত এরকম ভিড় হতেই পারে। এটা মেনে নিয়েই আপাতত চলাচল করতে হবে।
এদিকে রমজান উপলক্ষ্যে সম্প্রতি বিশেষ নির্দেশনা ও সময়সূচি দেয় মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। নির্দেশনায় বলা হয়, পবিত্র রমজানের সময় ইফতারে পানি পান করার জন্য প্রত্যেক যাত্রী মেট্রো ট্রেন ও স্টেশন এলাকায় শুধু ২৫০ মিলিলিটার পানির বোতল বহন করতে পারবেন। তবে পানি যেন পড়ে না যায় সেই বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ব্যবহৃত পানির বোতল অবশ্যই প্ল্যাটফর্ম/কনকোর্স/প্রবেশ ও বাহির হওয়ার গেটে থাকা ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, কোনো অবস্থাতেই প্লাটফর্ম, কনকোর্স ও মেট্রোরেলের ভেতর অন্য কোনো খাবার গ্রহণ করা যাবে না। শনিবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনের এবং শুক্রবারের সময়সূচি অপরিবর্তিত থাকবে।
সময়সূচি অনুযায়ী সর্ব প্রথম মেট্রোরেল উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে সকাল ৭ট ১০ মিনিটে ছাড়বে ও সর্বশেষ ট্রেন রাত ৯টায় ছাড়বে। মতিঝিল থেকে সর্বপ্রথম ট্রেন সকাল সাড়ে ৭টায় এবং সর্বশেষ ট্রেন রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ছাড়বে। এই সময়সূচি অনুযায়ী পুরো রমজান মাস অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের আগের দিন পর্যন্ত চলবে বলে জানায় ডিএমটিসিএল।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মেট্রোরেলে অস্বস্থি…

আপডেট সময় : ১২:৪১:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

মতিঝিল থেকে উত্তরাগামী হাজারো যাত্রী। প্রতিটি ট্রেন ছুটছে কোচভর্তি যাত্রী নিয়ে। স্টেশনে, ট্রেনে কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। রেলের বগিতে যাত্রীর ঠাসাঠাসি চাপে চলছে ইভটিজিং, মালামাল চুরি, টাকা স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই

পড়ন্ত বিকেল, ক্লান্ত রোজাদাররা। বাইরের তাপমাত্রা বাড়তির দিকে। নিচের সড়কে গাড়ির জট, এমন পরিস্থিতিতে মতিঝিল-উত্তরা পথের যাত্রীদের প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেট্রোরেল। রাজধানীবাসীর আস্থার প্রতীক মেট্রোরেল।

অফিস শেষে মেট্রো স্টেশনে ভিড় জমিয়েছেন মতিঝিল থেকে উত্তরাগামী হাজারো যাত্রী। প্রতিটি ট্রেন ছুটছে কোচভর্তি যাত্রী নিয়ে। স্টেশনে, ট্রেনে কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। রেলের বগিতে যাত্রীর ঠাসাঠাসি চাপে চলছে ইভটিজিং, মালামাল চুরি, টাকা স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই।

যাত্রিদের মধ্যে ঝগড়া, ছিনতাইয়ের অভিযোগে মেট্রোরেলে যাত্রীদের জান ও মালামাল ছিনতাই রোধ এবং যাত্রীর নিরাপত্তাবিধানে সচেষ্ট মেট্রো পুলিশ। মেট্রোরেলের ভেতরে যাত্রীদের মধ্যে বাগ্বিতন্ডা নিয়ন্ত্রণ ও অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য এমআরটি পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি ট্রেনে ২ জন করে পুলিশ সদস্য রয়েছেন। মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তর থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোর কোচের ভেতরে এমআরটি পুলিশ সদস্যদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা সেখানে টহলে থাকবেন। অন্য দিকে জানা গেছে, ৬টি কোচের একটি ট্রেনে মোট ২ জন এমআরটি পুলিশ সদস্য থাকবেন। সেই হিসেবে চলমান ১০টি ট্রেনে ২০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। সকাল থেকে দুপুর ও দুপুর থেকে রাত- এই ২ শিফটে তারা কাজ করবেন। এছাড়া স্টেশনগুলোতে যেসব এমআরটি পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন তারাও থাকবেন।

এছাড়া যাত্রীদের সঙ্গে থাকা বাচ্চা, বৃদ্ধ এবং মালামাল হারানো গেলে তাৎক্ষণিক খুঁজে বের করা, চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধ করা, যাত্রীদের মধ্যে বাগ্বিত-া নিয়ন্ত্রণসহ নাগরিক চাহিদা অনুযায়ী যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে এমআরটি পুলিশ। মেট্রোরেল ও স্টেশনের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে কাজ শুরু করে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পুলিশ।

তিল ধারণের ঠাঁই নেই মেট্রোরেলে। সচিবালয় স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, স্টেশনের কনকোর্স প্লাজার টিকিট কাউন্টারের সামনে গতকালের মতোই সামান্য কিছু মানুষ একক যাত্রার টিকিট সংগ্রহ করতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। তবে কনকোর্স প্লাজা থেকে সরাসরি প্লাটফর্মে উঠে যাচ্ছেন বেশিরভাগ যাত্রী, যাদের কাছে এমআরটি পাস অথবা র‌্যাপিড পাস আছে। এদের বেশিরভাগেরই অফিস এই এলাকায়।
প্ল্যাটফর্মে উঠে দেখা যায়, যেসব ট্রেন উত্তরা থেকে মতিঝিলের দিকে আসছে সেগুলোতে তেমন কোনো যাত্রী নেই। ২০০ থেকে ৩০০ জন যাত্রী এসব ট্রিপে আসছেন।

ফিরতি যাত্রার চিত্র একেবারেই ভিন্ন। মতিঝিল থেকে ৮ মিনিট পরপর এক-একটি ট্রেন সচিবালয় স্টেশনে এসে থামছে। কিন্তু সেগুলোতে চড়ার মতো কোনো অবস্থা নেই। প্রতিটি ট্রেন যাত্রী নিয়ে প্রায় পরিপূর্ণ বোঝাই হয়েই সচিবালয় স্টেশনে আসছে। ফলে প্লাটফর্মে যদি ২০০ জন যাত্রী থাকেন, তার মধ্যে সর্বোচ্চ ৭০-৮০ জন উঠতে পারছেন। বাকিদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে পরের ট্রেনের জন্য। এরই মধ্যে আরও ২০০-৩০০ যাত্রী প্লাটফর্মে চলে আসছেন। ইফতারের আগ পর্যন্ত এমন চাপ থাকবে বলে মনে হচ্ছে। মেট্রোরেলের কর্মীরা ট্রেনের দরজায় ঝুলে থাকা যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করাচ্ছেন। দরজায় মানুষ আটকে যাওয়া বা ব্যাগ আটকে যাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।

রাজধানীর মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশনে মেজবাহ উদ্দিন নামক এক ব্যাংক কর্মকর্তার পকেট থেকে ২৫ হাজার কানাডিয়ান ডলার চুরি হয়েছে। গত ৬ মার্চ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মেজবাহ উদ্দিন মেট্রোরেলে করে মতিঝিল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর যাওয়ার জন্য স্টেশনে এসেছিলেন।
এ বিষয়ে তার বন্ধু মোশারফ হোসেন বলেন, মেজবাহ ডাচ-বাংলা ব্যাংকে চাকরি করেন। তার বোন কানাডিয়ান প্রবাসী এবং বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলেন। বোনের ফেরার কথা থাকায় মেজবাহ তার জন্য কানাডিয়ান ডলার কিনেছিলেন। তিনি বলেন, মেজবাহ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশনে আসেন মিরপুর যাওয়ার জন্য। এরই মধ্যে কে বা কারা তার পকেট থেকে ডলার নিয়ে যায়। মোশারফ আরও জানান, ঘটনাটি শুনে তিনি স্টেশনে আসেন। এরপর চুরির ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা শনাক্ত করার জন্য তারা স্টেশনের বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করছেন। এ বিষয়ে এমআরটি পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সিদ্দিকী তানজিলুর রহমান বলেন, তিনি এখনো বিষয়টি জানেন না। তবে বিস্তারিত জানতে খোঁজ নিচ্ছেন।
সচিবালয় স্টেশন থেকে মিরপুর-১০ স্টেশনগামী নিয়মিত যাত্রী আসাদ আবেদীন জয় বলেন, রমজানের আগে বিকেল বেলা এত ভিড় হতো না। ভিড় হতো অফিস ছুটির পরে, সন্ধ্যার আগে। এখন সরকারি অফিস দুপুর সাড়ে তিনটা পর্যন্ত করা হয়েছে। ফলে অফিস ছুটির পর সবার তাড়া থাকে দ্রুত বাড়ি পৌঁছানোর। ফলে গতকাল থেকে মেট্রোরেলে এই সময়ে বেশি ভিড় দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাসে করে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিরপুর-১০ নম্বরে যেতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তার ওপর বাসের ফ্যানগুলো থাকে নষ্ট, অসহ্য গরমে নাজেহাল হতে হয়। সেই তুলনায় মেট্রোরেল একটা আশীর্বাদ। ঠেলাঠেলি করে হলেও কোনোরকমে উঠতে পারলেই ২৫ মিনিটের মধ্যে মিরপুর যাওয়া যায়।
আহসান হাবীব নামের আরেক যাত্রী বলেন, মেট্রোরেল একটা আস্থার নাম। ঢাকা শহরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেউ গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবে, এই নিশ্চয়তা দিতে পারে না। কিন্তু কষ্ট করে মেট্রোরেলে উঠতে পারলে আর চিন্তা নেই। ২-৩ মিনিট কম বেশি হলেও গন্তব্যে পৌঁছা যায় অনায়াসে। টাকাটা বেশি লাগলেও এসি ট্রেনে আরামে যাওয়া যায়। তিনি বলেন, সবাই ইফতারের আগে বাসায় যেতে চায়। ফলে এই সময়টাতে মেট্রোরেলে যাত্রীর চাপ বেশি। গতকাল আমরা দেখেছি ইফতারের পর কিন্তু ট্রেন প্রায় ফাঁকা চলাচল করেছে। ফলে রোজার মাস জুড়ে বিকেল ৪টা থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত এরকম ভিড় হতেই পারে। এটা মেনে নিয়েই আপাতত চলাচল করতে হবে।
এদিকে রমজান উপলক্ষ্যে সম্প্রতি বিশেষ নির্দেশনা ও সময়সূচি দেয় মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। নির্দেশনায় বলা হয়, পবিত্র রমজানের সময় ইফতারে পানি পান করার জন্য প্রত্যেক যাত্রী মেট্রো ট্রেন ও স্টেশন এলাকায় শুধু ২৫০ মিলিলিটার পানির বোতল বহন করতে পারবেন। তবে পানি যেন পড়ে না যায় সেই বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ব্যবহৃত পানির বোতল অবশ্যই প্ল্যাটফর্ম/কনকোর্স/প্রবেশ ও বাহির হওয়ার গেটে থাকা ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, কোনো অবস্থাতেই প্লাটফর্ম, কনকোর্স ও মেট্রোরেলের ভেতর অন্য কোনো খাবার গ্রহণ করা যাবে না। শনিবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনের এবং শুক্রবারের সময়সূচি অপরিবর্তিত থাকবে।
সময়সূচি অনুযায়ী সর্ব প্রথম মেট্রোরেল উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে সকাল ৭ট ১০ মিনিটে ছাড়বে ও সর্বশেষ ট্রেন রাত ৯টায় ছাড়বে। মতিঝিল থেকে সর্বপ্রথম ট্রেন সকাল সাড়ে ৭টায় এবং সর্বশেষ ট্রেন রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ছাড়বে। এই সময়সূচি অনুযায়ী পুরো রমজান মাস অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের আগের দিন পর্যন্ত চলবে বলে জানায় ডিএমটিসিএল।