ঢাকা ০১:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo বিইউপিতে বার্ষিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন Logo সুনীল অর্থনীতি সমৃদ্ধশীল করার লক্ষ্যে উপকূলীয় এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলের সার্বিক নিরাপত্তায় কোস্টগার্ড Logo শৈলকুপায় মহাসড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ Logo ইসলামপুরে জেসমিন প্রকল্পের উদ্যোগে পুষ্টি মেলা অনুষ্ঠিত  Logo কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাতক মুন্নার অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করছে সেকেন্ড ইন কমান্ড ফরিদ  Logo পানি উন্নয়ন বোর্ডের খামখেয়ালীতায়, ভাঙনরোধে ৬ কোটি টাকার প্রকল্প জলে যাবে  Logo প্রচণ্ড গরমে কেশবপুরে  তালশাঁসের কদর বেড়েছে কেশবপুরে তালের শাঁস বিক্রির ধুম Logo বাগেরহাটে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটের গ্রাহকদের টাকা ফেরত ও মালিকের নামে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন Logo হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর ৭০৬তম ওরস মাহফিল রোববার থেকে শুরু, নিরাপত্তার চাদর Logo পত্নীতলায় বিজিবি’র অভিযানে ৬০৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার 

মেডিকেল ভিসায় নতুন শর্ত : ভারতে আটকা শতাধিক বাংলাদেশি

গণমুক্তি ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৩:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪ ৩২৪ বার পড়া হয়েছে

মেডিকেল ভিসায় নতুন শর্তে ভারতে আটকা শতাধিক বাংলাদেশি : ছবি সংগ্রহ

দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সেবার মান বাড়েনি, উল্টো নানা ভোগান্তি

মেডিকেল ভিসা নিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভারতীয় দূতাবাসের নতুন শর্ত আরোপে শতাধিক বাংলাদেশি ভারতে আটকা পড়েছেন। দেশে ফিরতে ভারতীয় ইমিগ্রেশন ব্যুরো অফিসে আবেদন করলেও ধীরগতিতে দুই সপ্তাহ ধরে আটকে আছেন তারা।

৬ মাসের মাল্টিপল ট্যুরিস্ট ভিসায় মাসে দুইবারের বেশি পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে ভ্রমণ করা যায় না। আবার অনেক সময় দেখা যায় বিজনেস ভিসায় বারবার গেলেও নানান জবাব দিতে হয়।

অথচ ভারতীয় পাসপোর্ট যাত্রীরা এ ধরনের কোনো শর্ত ছাড়াই অনায়াসে ব্যবসা, চাকরি বা স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে বাংলাদেশে আসেন।

ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশি ভিসা যাবার পর যেকোন সীমান্ত পথ ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশি নাগরিকদের বেলা তা হয় না। ভারতের নির্ধারণ করা সীমান্ত দিয়েই যাতায়ত করতে হয়।

বাংলাদেশি কোন নাগরিক কলকাতার হাসপাতালে দেখানোর কাগজপত্র দিয়ে মেডিক্যাল ভিসা নেবার পর, অন্য কোথাও দেখালে পরবর্তীতে সেই বাংলাদেশিকে আর ভিসা দিচ্ছে না ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন।

এক ভুক্তভোগীর ছেলে সাফায়েত সংবাদমাধ্যমকে জানান, তার বাবা মোহাম্মদ শাহ আলম জটিল রোগে আক্রান্ত। পরিবারের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসায় জুন মাসে তার বাবাকে ভারতে নিয়ে যান তারা। আসার আগে দূতাবাসের শর্ত অনুযায়ী কলকাতার একটি হাসপাতালের প্রত্যায়নপত্র দেখান। কিন্তু তারা কলকাতায় গিয়ে জানতে পারেন হায়দ্রাবাদে আরও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।

পরে তারা বাবাকে কলকাতায় না দেখিয়ে হায়দ্রাবাদে চিকিৎসা করান। পরে বাবাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অপারেশনের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি ও চিকিৎসার জন্য বড় অঙ্কের অর্থ প্রয়োজন হওয়ায় দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত ২১ জুন দেশে ফেরার সময় ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে তারা অভিযোগ করেন, কলকাতায় না দেখিয়ে কেন হায়দ্রাবাদে ডাক্তার দেখিয়েছেন। একপর্যায়ে তাদের দেশে ফেরার ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয় ও ভুল স্বীকার করে অনলাইনে ইমিগ্রেশন ব্যুরোতে আবেদন করতে বলেন ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা।

এসময় বাধ্য হয়ে একটি আবাসিক হোটেলে উঠে অনলাইনে আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ইমিগ্রেশন থেকে অনুমতি না আসায় দেশে ফিরতে পারছেন না তারা।

জানা যায়, উন্নত চিকিৎসাসেবা, উচ্চশিক্ষা, ব্যবসার খোঁজখবর ও দর্শনীয় স্থান ঘুরতে প্রতিবছর বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহার করে ২০ থেকে ২২ লাখ পাসপোর্টধারী যাতায়াত করে থাকে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করেছে ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪০৭ জন। আর গত অর্থবছরের ১১ মাসে ছিল ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪৭ জন। এক্ষেত্রে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে ১৩ হাজার ৪০ জন। এই খাত থেকে ভিসা ফি বাবদ বেনাপোল ইমিগ্রেশন ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ভারতীয় দূতাবাস বছরে ১২০ কোটি টাকার বেশি আয় করে থাকে।

বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা প্রয়োজনীয় কাজ মেটাতে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বেনাপোল বন্দর হয়ে ভারতে নিয়ে খরচ করছে। আর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে বড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক।

পাসপোর্টধারী রতন সরকার জানান, অনেকে বাধ্য হয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য যায়। কিন্তু এখন দেশে ফেরার সময় বেশ বিপাকে পড়তে হচ্ছে। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে জনবল সংকটে এক একজনকে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ভারত আমাদের বন্ধু দেশ। তারা বাংলাদেশিদের চিকিৎসাসেবা সহজ করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা করছি।

পাসপোর্ট যাত্রী ফজল শেখ জানান, মেডিকেল ভিসায় আগে চিকিৎসার জন্য ডাক্তার বুকিং নিয়ে সেই ডাক্তারকেই দেখানোর ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। তবে এখন সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আয় বাড়াতে দূতাবাস এ পদ্ধতি অবলম্বন করছে বলে লোকমুখে এমনটি শুনেছি।

বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকার ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে যাত্রী যাতায়াত বাড়লেও তারা সেবার মান বাড়ায়নি। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন শেষ করতে এক একজনের প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টার বেশি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেবার মান বাড়াতে বিভিন্ন বাণিজ্যিক বৈঠকে অনেক অনুরোধ করলেও এখন পর্যন্ত তারা কথা রাখেনি।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম জানান, দ্রুত বেনাপোল বন্দর পার হলেও পেট্রাপোল বন্দরে যাত্রীদের কিছুটা ভোগান্তি হয়। তবে সেবার মান বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা সভায় আশ্বস্ত করলেও তারা সেটা মানছে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মেডিকেল ভিসায় নতুন শর্ত : ভারতে আটকা শতাধিক বাংলাদেশি

আপডেট সময় : ০৮:৪৩:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪

 

সেবার মান বাড়েনি, উল্টো নানা ভোগান্তি

মেডিকেল ভিসা নিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভারতীয় দূতাবাসের নতুন শর্ত আরোপে শতাধিক বাংলাদেশি ভারতে আটকা পড়েছেন। দেশে ফিরতে ভারতীয় ইমিগ্রেশন ব্যুরো অফিসে আবেদন করলেও ধীরগতিতে দুই সপ্তাহ ধরে আটকে আছেন তারা।

৬ মাসের মাল্টিপল ট্যুরিস্ট ভিসায় মাসে দুইবারের বেশি পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে ভ্রমণ করা যায় না। আবার অনেক সময় দেখা যায় বিজনেস ভিসায় বারবার গেলেও নানান জবাব দিতে হয়।

অথচ ভারতীয় পাসপোর্ট যাত্রীরা এ ধরনের কোনো শর্ত ছাড়াই অনায়াসে ব্যবসা, চাকরি বা স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে বাংলাদেশে আসেন।

ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশি ভিসা যাবার পর যেকোন সীমান্ত পথ ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশি নাগরিকদের বেলা তা হয় না। ভারতের নির্ধারণ করা সীমান্ত দিয়েই যাতায়ত করতে হয়।

বাংলাদেশি কোন নাগরিক কলকাতার হাসপাতালে দেখানোর কাগজপত্র দিয়ে মেডিক্যাল ভিসা নেবার পর, অন্য কোথাও দেখালে পরবর্তীতে সেই বাংলাদেশিকে আর ভিসা দিচ্ছে না ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন।

এক ভুক্তভোগীর ছেলে সাফায়েত সংবাদমাধ্যমকে জানান, তার বাবা মোহাম্মদ শাহ আলম জটিল রোগে আক্রান্ত। পরিবারের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসায় জুন মাসে তার বাবাকে ভারতে নিয়ে যান তারা। আসার আগে দূতাবাসের শর্ত অনুযায়ী কলকাতার একটি হাসপাতালের প্রত্যায়নপত্র দেখান। কিন্তু তারা কলকাতায় গিয়ে জানতে পারেন হায়দ্রাবাদে আরও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।

পরে তারা বাবাকে কলকাতায় না দেখিয়ে হায়দ্রাবাদে চিকিৎসা করান। পরে বাবাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অপারেশনের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি ও চিকিৎসার জন্য বড় অঙ্কের অর্থ প্রয়োজন হওয়ায় দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত ২১ জুন দেশে ফেরার সময় ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে তারা অভিযোগ করেন, কলকাতায় না দেখিয়ে কেন হায়দ্রাবাদে ডাক্তার দেখিয়েছেন। একপর্যায়ে তাদের দেশে ফেরার ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয় ও ভুল স্বীকার করে অনলাইনে ইমিগ্রেশন ব্যুরোতে আবেদন করতে বলেন ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা।

এসময় বাধ্য হয়ে একটি আবাসিক হোটেলে উঠে অনলাইনে আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ইমিগ্রেশন থেকে অনুমতি না আসায় দেশে ফিরতে পারছেন না তারা।

জানা যায়, উন্নত চিকিৎসাসেবা, উচ্চশিক্ষা, ব্যবসার খোঁজখবর ও দর্শনীয় স্থান ঘুরতে প্রতিবছর বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহার করে ২০ থেকে ২২ লাখ পাসপোর্টধারী যাতায়াত করে থাকে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করেছে ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪০৭ জন। আর গত অর্থবছরের ১১ মাসে ছিল ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪৭ জন। এক্ষেত্রে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে ১৩ হাজার ৪০ জন। এই খাত থেকে ভিসা ফি বাবদ বেনাপোল ইমিগ্রেশন ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ভারতীয় দূতাবাস বছরে ১২০ কোটি টাকার বেশি আয় করে থাকে।

বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা প্রয়োজনীয় কাজ মেটাতে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বেনাপোল বন্দর হয়ে ভারতে নিয়ে খরচ করছে। আর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে বড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক।

পাসপোর্টধারী রতন সরকার জানান, অনেকে বাধ্য হয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য যায়। কিন্তু এখন দেশে ফেরার সময় বেশ বিপাকে পড়তে হচ্ছে। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে জনবল সংকটে এক একজনকে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ভারত আমাদের বন্ধু দেশ। তারা বাংলাদেশিদের চিকিৎসাসেবা সহজ করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা করছি।

পাসপোর্ট যাত্রী ফজল শেখ জানান, মেডিকেল ভিসায় আগে চিকিৎসার জন্য ডাক্তার বুকিং নিয়ে সেই ডাক্তারকেই দেখানোর ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। তবে এখন সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আয় বাড়াতে দূতাবাস এ পদ্ধতি অবলম্বন করছে বলে লোকমুখে এমনটি শুনেছি।

বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকার ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে যাত্রী যাতায়াত বাড়লেও তারা সেবার মান বাড়ায়নি। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন শেষ করতে এক একজনের প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টার বেশি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেবার মান বাড়াতে বিভিন্ন বাণিজ্যিক বৈঠকে অনেক অনুরোধ করলেও এখন পর্যন্ত তারা কথা রাখেনি।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম জানান, দ্রুত বেনাপোল বন্দর পার হলেও পেট্রাপোল বন্দরে যাত্রীদের কিছুটা ভোগান্তি হয়। তবে সেবার মান বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা সভায় আশ্বস্ত করলেও তারা সেটা মানছে না।