কারাগারে ভিআইপি বন্দির ঈদ
মোনাজাতে অনুশোচনা কান্নায় ক্ষমা চাইলেন আল্লাহর কাছে

- আপডেট সময় : ০৪:১৫:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫ ৫২ বার পড়া হয়েছে
মনোবল ভেঙ্গেছে পলক ও দীপুমনির
কারাগারে আটক সাবেক মন্ত্রী এমপি, আমলা ব্যবসায়ী ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মিরা ঈদ উদযাপন করেছেন। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম এত বেশী ভিআইপি বন্দি রয়েছে কারাগারে। এদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষের। তবে অভিযোগ রয়েছে, কারাগারের সেলে প্রথম শ্রেনীর মর্যাদাপ্রাপ্তরা সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে আয়েশেই দিন কাটাচ্ছেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছেন, কারাবিধি অনুযায়ী ভিআইপি বন্দিরা সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। বাড়তি কোন প্রকার সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই। তবে আজ পবিত্র ঈদুল ফিতরে তারা জামাতে সুন্দও ভাবে নিয়মমাফিক নামাজ আদায় করেছেন। নারী বন্দির জন্যও আলাদা স্থানে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। নামাজ শেষে মোনাজাতে তারা অনুশোচনায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। উচ্চস্বরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে এ বিপদ থেকে উদ্ধারের প্রার্থনা করেন। এঈদের খুশির দিনে ঘনিষ্টজনদের ফেলে একা কারাগারে আটক রয়েছেন। মোনাজাতে পলককে বলতে শোনা যায়, আল্লাহ আমাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেন। বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। একই প্রক্রিয়ায় গাজীপুরের কাশিমপুর ৩টি কারাগারে আটক ভিআইপি বন্দিরা জামাতে ঈদের নামাজ আদায় ও কান্নাকাটি করেন।
কারা অধিদপ্তরের ডিআইজি প্রিজন্স (ঢাকা বিভাগ) জাহাঙ্গীর কবির এই প্রতিবেদককে বলেন, ভিআইপি বন্দিদের কারাগারে ঈদ কাটবে ভিআইপি ভাবেই। পরিবারে স্বজনদের সঙ্গে ঈদের দিন দেখা করার সুযোগ মিলছে। আসামিরা কারাগারে বসেই পাবেন স্বজনদের পাঠানো ঘরে বানানো খাবার। নিরাপত্তার জন্য ভিআইপি আসামিদের ফোনে কথা বলার সুযোগ বন্ধ থাকলেও ঈদ উপলক্ষে দেওয়া হবে ফোনে কথা বলার সুযোগও। শুধু তাই নয়, ঈদের দিন এসব ভিআইপি কারাবন্দির খাবারের তালিকাও কম রাজকীয় থাকবে না। পায়েস, পোলাও, গরুর মাংস, ডিমের কোর্মা, মুরগির রোস্ট, মাছসহ থাকবে আরও নানা পদের খাবার। খাবার শেষে আথিতেয়তার মতো থাকবে মিষ্টি, পান-সুপারিও।
এবিষয়ে কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম) জান্নাত-উল ফরহাদ এ প্রতিবেদককে জানান, সব বন্দি সাধারণ নিয়মে ১৫ দিনে একবার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারে। তবে এর বাইরেও ঈদ উপলক্ষে ভিআইপিসহ সব আসামি একবার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। ঈদের দিন ও ঈদের পরের দুদিনে এই একবার দেখা করার সুযোগ পাবেন আসামিরা। এ ছাড়া এই তিন দিনে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে একবার কারাগারের বাইরে থেকে স্বজনদের দেওয়া খাবার পাবেন ভিআইপিসহ সব আসামি। খাবার নিরাপদ কি না, তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকবে।
কারা অধিদপ্তরের একাধি সূত্র এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মাধ্যমে জানা গেছে, কাশিমপুর কারাগারে আছেন সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিম, বিএম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ মালেক, আব্দুর রহমান বদি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি আহমদ হোসেন, সাবেক এমপি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ সাংবাদিক মোজ্জাম্মেল হক বাবু, শ্যামল দত্ত, শাকিল আহমেদ ও দেশ টিভির এমডি আরিফ হোসেনসহ অনেকে কাশিমপুর কারাগারে বন্দি রয়েছেন। এ ছাড়া কাশিমপুর কারাগারের নারীদের ভবনে সাবেক শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক এমপি ও হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি, সাবেক এমপি মাসুদা সিদ্দীক রোজী, সাংবাদিক ফারজানা রুপা রয়েছেন।
এ ছাড়া বর্তমানে ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক খাদ্য উপমন্ত্রী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক এমপি সাদেক খান, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামালসহ অনেকে।
কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম) জান্নাত-উল ফরহাদ বলেন, নিরাপত্তার জন্য ডিভিশনপ্রাপ্ত ভিআইপি বন্দিদের আলাদা সেলে রাখা হয়। ঈদের দিন প্রতিটি কারাগারে এসব ভিআইপি বন্দিরা একসঙ্গে নামাজ পড়েছে। তবে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে নয়। কারাগারে খোলা মাঠে জামাতে ঈদের নামাজ পড়েছেন। তবে নারীরা নিজেদের সেলে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
এবিষয়ে জুনাইদ আহমেদ পলকের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, কাশিমপুরে জঙ্গি ও দুর্ধষ আসামিদের হাই সিকিউরিটি ভবনে রাখা হয়েছে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে। ঈদের দিন পলকের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন তার মা, ভাই ও তিন বোন। পলকের পছন্দের খাবার রান্না করে নিয়ে যাবেন তারা। তবে দুদকের মামলা থাকা আগেই পলাতক থাকা স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকার সঙ্গে ঈদের বিশেষ দিনে দেখা হবে না পলকের। স্ত্রীর সঙ্গে দেখা না হওয়ায় অনুশোচনায় ভুগছেন পলক। এর আগে পলক আদালতে এসে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সবাইক ঈদের শুভেচ্ছা ‘ঈদ মোবারক’ জানান।
অপরদিকে সাক্ষাতের অপেক্ষায় কারাগারে রয়েছেন আটক দীপু মণির স্বামী ও মেয়ে। এবিষয়ে দীপু মনির আইনজীবী গাজী ফয়সাল ইসলাম জানান, ঈদের দিন ডা. দীপু মনির সঙ্গে তার একমাত্র মেয়ে তানি দীপাভলী নাওয়াজ ও হুইল চেয়ারে থাকা স্বামী তৌফিক নাওয়াজ দেখা করবেন। এর আগে সাক্ষাতের দিন থাকলেও দেখা করতে পারেননি দীপু মনির স্বামী।
এদিকে বিভিন্ন আইনজীবীদের থেকে জানা গেছে, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম তার মেয়ে ঢাকা উত্তেরর চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনের সঙ্গে দেখা করতে চান। কিন্তু দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় দেখা করবেন না বুশরা। একসময় টাকার তোশকে ঘুমানো আর ঈদে নতুন টাকার বান্ডিল ছাড়া উপহার না নেওয়া আমির হোসেন আমু কারাগারের কাঠের চৌকিতে থেকে ঈদের দিনে সাক্ষাতের চেষ্টায় আছেন স্বজনদের। সালমান এফ রহমানও তার স্বজনদের প্রত্যাশায় রয়েছেন। তবে বেক্সিমকো গ্রুপের খবরাখবর সম্পূর্ণ নিয়ে ঈদের আগেই দেখা ও কথা বলেছেন স্বজন ও আইনজীবীদের।
এ ছাড়া কাশিমপুরে একই কারাগারে থাকলেও নারী ও পুরুষের ভবন আলাদা হওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর ঈদে দেখা হওয়ার সুযোগ নেই সাংবাদিক দম্পতি ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের। তাদের সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা পৃথকভাবে তাদের সঙ্গে দেখা করছেন। এদিকে আইনজীবীরা জানান, সব বন্দির পরিবারই ঈদের দিন ও পরের দুদিনে দেখার করবেন। সবাই চাইছেন ঈদের দিন টার্গেট করে ছিলেন। তবে সবার স্বজনদের একদিনে দেখা করার সুযোগ দেওয়ার যাচ্ছে না। সাক্ষাতের পর্ব ঈদের পর দুদিনে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।