ঢাকা ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

টেকনাফে ২ বিজিবির ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আশিকুর রহমান

`যতদিন উড়বে লাল-সবুজ পতাকা, ততদিন আমরা দেশের সর্বদক্ষিণ সীমান্তের দুর্ভেদ্য প্রাচীর হয়ে থাকব’

কক্সবাজার প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ৬৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গৌরব, ঐতিহ্য ও সাফল্যের ধারাবাহিকতায় টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি)-এর ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। ১৯৪৮ সালের ২৭ অক্টোবর ময়মনসিংহের খাগডহর থেকে যাত্রা শুরু করা এই ব্যাটালিয়ন আজ দেশের সর্বদক্ষিণ সীমান্তে “সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী” হিসেবে অটলভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ইতিহাসে এ ব্যাটালিয়নের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অবদান। ৩৪ জন বীর সেনানীর আত্মত্যাগে রচিত এই ইউনিটের ইতিহাসে বহু যোদ্ধা পেয়েছেন ‘বীর প্রতীক’। ১৯৯৯ সালে “বাংলাদেশ রাইফেলস্ স্ট্যান্ডার্ড পদক” অর্জনের মধ্য দিয়ে ইউনিটটি অর্জন করেছে বিশেষ স্বীকৃতি।
২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর টেকনাফ এলাকায় দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ব্যাটালিয়নটি সীমান্ত সুরক্ষা, মাদকবিরোধী অভিযান ও মানবপাচার রোধে অসামান্য সাফল্য দেখিয়ে আসছে। সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদারে বিজিবির ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র ইউনিট হিসেবে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন স্থাপন করেছে অত্যাধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ৩০ কিলোমিটার উপকূল ও ২৩ কিলোমিটার সমুদ্রসীমা।
২০২৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন ১৭৯ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে এবং জব্দ করেছে ৪.২০৬ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ৫৭ লক্ষাধিক ইয়াবা ট্যাবলেট, ২.০৮ কেজি স্বর্ণসহ বিভিন্ন দেশী-বিদেশী অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এসব অভিযানে উদ্ধারকৃত মাদক ও চোরাচালানের আনুমানিক মূল্য ২১৮ কোটি টাকারও বেশি।
এছাড়া, মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ব্যাটালিয়নটি ৩৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করেছে। মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে গত এক বছরে উদ্ধার করা হয়েছে ৩৮৭ জন অপহৃত ভুক্তভোগী, আটক করা হয়েছে ৮৭ জন মানবপাচারকারী এবং আরাকান আর্মির নিকট থেকে ফেরত আনা হয়েছে ১২৪ জন বাংলাদেশি জেলে, ১৮টি নৌকা ও বিপুল পরিমাণ মাছ ধরার জাল।
মানবিক কর্মকাণ্ডেও এগিয়ে আছে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন—গত এক বছরে ৪৪০ জনকে শীতবস্ত্র বিতরণ, ৮টি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে ১,০৯৭ জনকে চিকিৎসা সেবা এবং প্রায় ১,০০০ জন অসহায় মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান, পিএসসি বলেন,
“যতদিন উড়বে লাল-সবুজ পতাকা, ততদিন আমরা দেশের সর্বদক্ষিণ সীমান্তের দুর্ভেদ্য প্রাচীর হয়ে থাকব। যাদের আত্মত্যাগ ও পরিশ্রমে আজকের এই অবস্থানে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন, তাদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। আমরা শপথ নিয়েছি—দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনে প্রাণ উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করব না।”
তিনি আরও বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তা, মাদক প্রতিরোধ ও মানবিক সেবায় বিজিবি হয়ে উঠেছে জাতির গর্ব ও আস্থার প্রতীক।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

টেকনাফে ২ বিজিবির ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আশিকুর রহমান

`যতদিন উড়বে লাল-সবুজ পতাকা, ততদিন আমরা দেশের সর্বদক্ষিণ সীমান্তের দুর্ভেদ্য প্রাচীর হয়ে থাকব’

আপডেট সময় :

গৌরব, ঐতিহ্য ও সাফল্যের ধারাবাহিকতায় টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি)-এর ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। ১৯৪৮ সালের ২৭ অক্টোবর ময়মনসিংহের খাগডহর থেকে যাত্রা শুরু করা এই ব্যাটালিয়ন আজ দেশের সর্বদক্ষিণ সীমান্তে “সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী” হিসেবে অটলভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ইতিহাসে এ ব্যাটালিয়নের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অবদান। ৩৪ জন বীর সেনানীর আত্মত্যাগে রচিত এই ইউনিটের ইতিহাসে বহু যোদ্ধা পেয়েছেন ‘বীর প্রতীক’। ১৯৯৯ সালে “বাংলাদেশ রাইফেলস্ স্ট্যান্ডার্ড পদক” অর্জনের মধ্য দিয়ে ইউনিটটি অর্জন করেছে বিশেষ স্বীকৃতি।
২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর টেকনাফ এলাকায় দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ব্যাটালিয়নটি সীমান্ত সুরক্ষা, মাদকবিরোধী অভিযান ও মানবপাচার রোধে অসামান্য সাফল্য দেখিয়ে আসছে। সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদারে বিজিবির ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র ইউনিট হিসেবে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন স্থাপন করেছে অত্যাধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ৩০ কিলোমিটার উপকূল ও ২৩ কিলোমিটার সমুদ্রসীমা।
২০২৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন ১৭৯ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে এবং জব্দ করেছে ৪.২০৬ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ৫৭ লক্ষাধিক ইয়াবা ট্যাবলেট, ২.০৮ কেজি স্বর্ণসহ বিভিন্ন দেশী-বিদেশী অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এসব অভিযানে উদ্ধারকৃত মাদক ও চোরাচালানের আনুমানিক মূল্য ২১৮ কোটি টাকারও বেশি।
এছাড়া, মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ব্যাটালিয়নটি ৩৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করেছে। মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে গত এক বছরে উদ্ধার করা হয়েছে ৩৮৭ জন অপহৃত ভুক্তভোগী, আটক করা হয়েছে ৮৭ জন মানবপাচারকারী এবং আরাকান আর্মির নিকট থেকে ফেরত আনা হয়েছে ১২৪ জন বাংলাদেশি জেলে, ১৮টি নৌকা ও বিপুল পরিমাণ মাছ ধরার জাল।
মানবিক কর্মকাণ্ডেও এগিয়ে আছে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন—গত এক বছরে ৪৪০ জনকে শীতবস্ত্র বিতরণ, ৮টি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে ১,০৯৭ জনকে চিকিৎসা সেবা এবং প্রায় ১,০০০ জন অসহায় মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান, পিএসসি বলেন,
“যতদিন উড়বে লাল-সবুজ পতাকা, ততদিন আমরা দেশের সর্বদক্ষিণ সীমান্তের দুর্ভেদ্য প্রাচীর হয়ে থাকব। যাদের আত্মত্যাগ ও পরিশ্রমে আজকের এই অবস্থানে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন, তাদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। আমরা শপথ নিয়েছি—দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনে প্রাণ উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করব না।”
তিনি আরও বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তা, মাদক প্রতিরোধ ও মানবিক সেবায় বিজিবি হয়ে উঠেছে জাতির গর্ব ও আস্থার প্রতীক।