ঢাকা ০৩:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ

মহিউদ্দিন তুষার
  • আপডেট সময় : ০১:০০:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫ ১৩৫ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

* প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক

* সংকট নিরসনে নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি বিএনপির

* নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাই সমাধানের পথ : বামপন্থী রাজনৈতিক দল

* বিএনপির নতুন নতুন শর্তে সংকটের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে দাবি এনসিপির

 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্ট্রা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদ থেকে পদত্যাগের ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কোন কোন রাজনৈতিক দল সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, আবার কিছু দল সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করছে। কিছু দল সরকারের কাজে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা করছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই নিয়ে বিভিন্ন মত প্রকাশ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে, অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনা রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা তৈরি করেছে। এর পর থেকে প্রধান উপদেষ্ট্রার সাথে দফায় দফায় বৈঠক করছেন রাজনৈতিক নেতারা। সংকট নিরসনে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি বিএনপির। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাই সমাধানের পথ দেখছেন বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার দরকার ততটুকু করতে হবে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ চলমান ষড়যন্ত্রের অংশীদার বলে দাবি করেন তিনি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সেক্রেটারি সাইফুল হক বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ সংকট আরও ঘনীভূত হবে। প্রধান উপদেষ্টাকে পুরো সমর্থন জানিয়ে সবার প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। উপদেষ্টাদের সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলেন তিনি। এছাড়া, বন্দর, করিডোর বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করেন তিনি। সংস্কার করে আগামী ১ মাসের মধ্যে জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, পরিস্থিতি এমন যে তার পক্ষে কাজ করা চ্যালেঞ্জিং আর কিভাবে এই পরিস্থিতিকে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় সেটা নিয়েই বৈঠক হয়েছে। তিনি সবার একমত কামনা করেছেন। অন্তবর্তী সরকার একদিকে বিচার অন্যদিকে গণতান্ত্রিক সংস্কারের দিকে যাওয়ার যে দায়িত্ব তা পালন করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে নতুন দল এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলছেন, পদত্যাগ জনিত সংকটের নিরসন হয়েছে, কিন্তু বিএনপির নতুন নতুন শর্তের কারণেই সংকটের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তার দল নির্বাচন ও সংস্কারের জন্য একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে। তারা দুইটি সম্ভাব্য সময়সীমা প্রস্তাব করেছে- ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি, অথবা রমজানের পর দ্রুততম সময়ে, যা সংস্কারের গতি অনুসারে নির্ধারিত হবে।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি করার পাশাপাশি বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের দাবির বিষয়ে কোনো আশ্বাস দেননি। তারা (সরকার) কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্তও দেয়নি। প্রেস সেক্রেটারির আনুষ্ঠানিক বিবৃতি শোনার পর আমরা নিজেদের অবস্থান জানাব। কয়েকজন বিএনপি নেতা বৈঠকের পর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চিত বিষয়গুলোর কোনো সমাধান হয়নি। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি এক বা দুই দিনের মধ্যে তাদের পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করে ঘোষণা করবে।
সূত্রটি আরো জানায়, বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে না, তবে সরকারের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। এই সময়ের মধ্যে, নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা ও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবিকে আরো শক্তিশালী করতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ‘পদত্যাগের ভাবনা’ নিয়ে তৈরি হওয়া সংকটের আপাত নিরসন হলেও প্রকৃত অর্থে সংকট কাটলে, নাকি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হলো, সেই প্রশ্নও আলোচনায় আসছে।

রাজনৈতিক নেতারা জোর দিয়ে বলেন, সরকারকে অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের দ্রুত অপসারণের মাধ্যমে- জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-সহ সকল রাজনৈতিক দলকে সমানভাবে বিবেচনা করে নিজের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিভিন্ন অংশীজনের মতে, চলমান অনিশ্চয়তা বর্তমান সংকটকে আরও তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী করে তুলতে পারে। স্বচ্ছতার অভাবে বর্তমান সমস্যাগুলো আরও জটিল হয়ে উঠবে। বিশেষ করে, যদি সরকার বিএনপির আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠতে পারে। এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টার উচিত নির্বাচন ও সংস্কারভিত্তিক একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এতে অংশগ্রহণে সম্মত হয়, তাহলে চলমান অচলাবস্থা নিরসন সম্ভব।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভিযোগ, সরকার সেদিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নজর দিচ্ছে না। যদিও প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সরকারের এই বক্তব্যে রাজনৈতিক দলগুলো আশ্বস্ত হতে পারছে না। কারণ এখন পর্যন্ত সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ও সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি। সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রধান এবং সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ও রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি করে আসছে। কিন্তু সরকারের দিক থেকে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়। এর মধ্যেই সংকটে পড়লো অন্তর্বর্তী সরকার। আর অন্তর্বর্তী সরকারের এই সংকট তখনই তৈরি হলো যখন রাজপথের কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামে বিএনপি।

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা জানান, গত বছর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব ছিল অন্তর্বর্তী কাজগুলো করা। এই অন্তর্বর্তী কাজগুলোর মধ্যে প্রধান কাজ হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন ও তার জন্য যেগুলো জরুরি সে কাজগুলো করা এবং জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার করা। এগুলোকেই শুধু অগ্রাধিকার না দিয়ে এই অন্তর্বর্তী সরকার আরও অনেক কাজে হাত দিয়েছে। এমন কিছু কাজে সরকার হাত দিয়েছে যেটা এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ বা দায়িত্ব না। এর ফলে দেশের মানুষের মনে বিভিন্ন ধরনের সংশয়, অবিশ্বাস, সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এর থেকে দেশের মধ্যে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এখন এই সংকট কাটিয়ে উঠতে চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং তার জন্য দ্রুত একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা একমাত্র সমাধান বলে তারা মনে করেন।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ

আপডেট সময় : ০১:০০:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

* প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক

* সংকট নিরসনে নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি বিএনপির

* নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাই সমাধানের পথ : বামপন্থী রাজনৈতিক দল

* বিএনপির নতুন নতুন শর্তে সংকটের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে দাবি এনসিপির

 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্ট্রা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদ থেকে পদত্যাগের ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কোন কোন রাজনৈতিক দল সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, আবার কিছু দল সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করছে। কিছু দল সরকারের কাজে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা করছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই নিয়ে বিভিন্ন মত প্রকাশ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে, অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনা রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা তৈরি করেছে। এর পর থেকে প্রধান উপদেষ্ট্রার সাথে দফায় দফায় বৈঠক করছেন রাজনৈতিক নেতারা। সংকট নিরসনে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি বিএনপির। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাই সমাধানের পথ দেখছেন বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার দরকার ততটুকু করতে হবে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ চলমান ষড়যন্ত্রের অংশীদার বলে দাবি করেন তিনি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সেক্রেটারি সাইফুল হক বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ সংকট আরও ঘনীভূত হবে। প্রধান উপদেষ্টাকে পুরো সমর্থন জানিয়ে সবার প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। উপদেষ্টাদের সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলেন তিনি। এছাড়া, বন্দর, করিডোর বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করেন তিনি। সংস্কার করে আগামী ১ মাসের মধ্যে জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, পরিস্থিতি এমন যে তার পক্ষে কাজ করা চ্যালেঞ্জিং আর কিভাবে এই পরিস্থিতিকে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় সেটা নিয়েই বৈঠক হয়েছে। তিনি সবার একমত কামনা করেছেন। অন্তবর্তী সরকার একদিকে বিচার অন্যদিকে গণতান্ত্রিক সংস্কারের দিকে যাওয়ার যে দায়িত্ব তা পালন করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে নতুন দল এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলছেন, পদত্যাগ জনিত সংকটের নিরসন হয়েছে, কিন্তু বিএনপির নতুন নতুন শর্তের কারণেই সংকটের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তার দল নির্বাচন ও সংস্কারের জন্য একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে। তারা দুইটি সম্ভাব্য সময়সীমা প্রস্তাব করেছে- ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি, অথবা রমজানের পর দ্রুততম সময়ে, যা সংস্কারের গতি অনুসারে নির্ধারিত হবে।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি করার পাশাপাশি বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের দাবির বিষয়ে কোনো আশ্বাস দেননি। তারা (সরকার) কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্তও দেয়নি। প্রেস সেক্রেটারির আনুষ্ঠানিক বিবৃতি শোনার পর আমরা নিজেদের অবস্থান জানাব। কয়েকজন বিএনপি নেতা বৈঠকের পর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চিত বিষয়গুলোর কোনো সমাধান হয়নি। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি এক বা দুই দিনের মধ্যে তাদের পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করে ঘোষণা করবে।
সূত্রটি আরো জানায়, বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে না, তবে সরকারের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। এই সময়ের মধ্যে, নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা ও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবিকে আরো শক্তিশালী করতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ‘পদত্যাগের ভাবনা’ নিয়ে তৈরি হওয়া সংকটের আপাত নিরসন হলেও প্রকৃত অর্থে সংকট কাটলে, নাকি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হলো, সেই প্রশ্নও আলোচনায় আসছে।

রাজনৈতিক নেতারা জোর দিয়ে বলেন, সরকারকে অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের দ্রুত অপসারণের মাধ্যমে- জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-সহ সকল রাজনৈতিক দলকে সমানভাবে বিবেচনা করে নিজের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিভিন্ন অংশীজনের মতে, চলমান অনিশ্চয়তা বর্তমান সংকটকে আরও তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী করে তুলতে পারে। স্বচ্ছতার অভাবে বর্তমান সমস্যাগুলো আরও জটিল হয়ে উঠবে। বিশেষ করে, যদি সরকার বিএনপির আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠতে পারে। এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টার উচিত নির্বাচন ও সংস্কারভিত্তিক একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এতে অংশগ্রহণে সম্মত হয়, তাহলে চলমান অচলাবস্থা নিরসন সম্ভব।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভিযোগ, সরকার সেদিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নজর দিচ্ছে না। যদিও প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সরকারের এই বক্তব্যে রাজনৈতিক দলগুলো আশ্বস্ত হতে পারছে না। কারণ এখন পর্যন্ত সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ও সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি। সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রধান এবং সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ও রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি করে আসছে। কিন্তু সরকারের দিক থেকে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়। এর মধ্যেই সংকটে পড়লো অন্তর্বর্তী সরকার। আর অন্তর্বর্তী সরকারের এই সংকট তখনই তৈরি হলো যখন রাজপথের কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামে বিএনপি।

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা জানান, গত বছর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব ছিল অন্তর্বর্তী কাজগুলো করা। এই অন্তর্বর্তী কাজগুলোর মধ্যে প্রধান কাজ হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন ও তার জন্য যেগুলো জরুরি সে কাজগুলো করা এবং জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার করা। এগুলোকেই শুধু অগ্রাধিকার না দিয়ে এই অন্তর্বর্তী সরকার আরও অনেক কাজে হাত দিয়েছে। এমন কিছু কাজে সরকার হাত দিয়েছে যেটা এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ বা দায়িত্ব না। এর ফলে দেশের মানুষের মনে বিভিন্ন ধরনের সংশয়, অবিশ্বাস, সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এর থেকে দেশের মধ্যে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এখন এই সংকট কাটিয়ে উঠতে চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং তার জন্য দ্রুত একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা একমাত্র সমাধান বলে তারা মনে করেন।