ঢাকা ০৫:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::

রাজবাড়ী বিআরডিবি অফিসে গ্রাহককে লাঞ্চিত করেছে আরডিও কর্মকর্তা সমির কুমার সেন

রাজবাড়ী প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ২২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজবাড়ী সদর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সমীর কুমার সেন–এর বিরুদ্ধে এক নারী গ্রাহককে ঋণ না দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীর দাবি, প্রকল্পের নিয়ম মেনে সব ধাপ সম্পন্ন করার পরও কর্মকর্তা ব্যক্তিগত কারণে ঋণ আটকে দেন এবং উল্টো তাকে অফিসে ডেকে এনে অপমান ও অশালীন ভাষায় গালাগাল করেন।পরে ঋন কেন দিবেন না তাহলে বার বার অফিসে আসতে বলেন কেন এমন কথা বলা হলে তিনি ঋন গ্রহিতাকে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন।এক পর্যায়ে তার গায়ে হাত তোলেন।এসময় তার বোরখার উপরে ওড়না ধরে টান দিলে তার গলার স্বর্ণের আট আনা ওজনের চেন সহ তা নিয়ে নেয় ওই কর্মকর্তা। চেনটি ওই নারী বিদেশে থাকা কালীন সময়ে কিনে ছিলেন।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের গঙ্গাপ্রসাদপুর গ্রামের সালেহা বেগমের সা‌থে। সা‌লেহা বেগম পল্লী জীবীকায়ন প্রকল্পের দীর্ঘদিনের সদস্য ও নারীদের ম্যানেজার হওসেবে কাজ করেন। তিনি জানান, এর আগে তিনি দুই দফায় ওই প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়েছিলেন—প্রথমে ৩০ হাজার এবং পরে ৪০ হাজার টাকা। প্রতিবারই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ করেন তিনি।
পরবর্তীতে সালেহা বেগম ৫০ হাজার টাকার নতুন ঋণের জন্য আবেদন করেন। প্রকল্পের মাঠ সংগঠক খায়রুল ইসলাম তার আবেদনটি উপজেলা অফিসে জমা দেন এবং নিয়ম অনুযায়ী তা প্রক্রিয়াকরণ হয়। রাজবাড়ী জেলা বিআরডিবি’র উপপরিচালক লুৎফুন নাহার সব কাগজনপত্র দেখে ঋণটি অনুমোদনও দেন।
কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বাধা দেন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সমীর কুমার সেন। সালেহা বেগমের অভিযোগ—গত কয়েক মাস ধরে তিনি অফিসে ঘুরলেও ঋণটি না দিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করছেন।বার বার আসতে বলে তাকে কারনে হয়রানি করা চ্ছেন
সালেহা বেগম বলেন, “আমার ঋণ তো পাশ হয়ে গেছে, সব কাগজপত্র ঠিক আছে। কিন্তু সমীর স্যার বারবার বলেন ‘আজ এসো’, ‘কাল এসো’। গত বৃহষ্প‌তিবার অফিসে গীয়ে তার রুমে ঢুকলে তিনি আমাকে বলেন—‘তোকে ঋণ দেব না।’ আমি কারণ জানতে চাইলে উনি রেগে গিয়ে অশালীন ভাষায় গালাগাল শুরু করেন।এক পর্যায়েবতিনি আমাট গায়ে হাত তুলেন।আমার ওড়নায় থাবা দিয়ে স্বর্ণের চেন সহ তিনি তা ছিনিয়ে নেন। পরে অফিসের অন্য লোকজন এসে উনাকে থামান।”
এ ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন পল্লী জীবীকায়ন প্রকল্প (৩য় পর্যায়) রাজবাড়ী সদর উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তা সেলিম রেজা। তিনি বলেন, “সালেহা বেগম এর আগেও দুইবার ঋণ নিয়েছে এবং নিয়ম অনুযায়ী পরিশোধ করেছে। এবারও ঋণ পাশ হয়েছিল। কিন্তু সমীর স্যার কোনো কারণ ছাড়াই তাকে ঋন না দিয়ে হয়রানি করছেন। বৃহস্পতিবার দিন অফিসে গিয়ে আমি নিজেও উনার রূঢ় আচরণের শিকার হই। উনি আমাকে পর্যন্ত হুমকি দেন এবং অশালীন ভাষায় কথা বলেন। তার এমন আচরণ মাঠপর্যায়ে আমাদের কাজ করতে বাধাগ্রস্ত করছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সমীর কুমার সেন নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “সালেহা বেগম ওই প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী ঋণ পাওয়ার যোগ্য নন, তাই তার আবেদন বাতিল করেছি। আমি কোনো অশালীন কথা বলিনি, বরং উল্টো উনি আমাকে লাঞ্ছিত করেছেন।ঋন গ্রহিতাকে ডেকে এনে তাকে অশালীন ভাষায় গালাগাল করা,গায়ে হাত তোলা,তার স্বর্ণের চেন ছিনিয়ে নিয়েছেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এগুলো সব মিথ্যা।উল্টো সে আমাকে পানির বোতল দিয়ে আঘাত করেছে,।
অন্যদিকে রাজবাড়ী জেলা বিআরডিবি’র উপপরিচালক লুৎফুন নাহার জানান,কাগজ পত্র সব কিছু দেখে আমি “ঋণটি অনুমোদন দিয়েছিলাম। এখন কেন উপজেলা কর্মকর্তা তা বাতিল করেছেন, সেটা জানি না। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। যদি অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে সমীর কুমার সেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।গ্রাহকে নাজেহাল ও তার গায়ে হাত তোলার বিষয়ে তিনি বলেন অভিযোগটি আনি শুনেছি,ওই নারী আমাকে অফিসে এসে জানিয়েছে।আমি তার বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছি।
স্থানীয়দের দাবি, পল্লী জীবীকায়ন প্রকল্পটি মূলত গ্রামের দরিদ্র ও স্বনির্ভর হতে ইচ্ছুক নারীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য। কিন্তু এমন হয়রানি ও ঋণ না দেওয়ার অভিযোগে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। তারা দ্রুত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

রাজবাড়ী বিআরডিবি অফিসে গ্রাহককে লাঞ্চিত করেছে আরডিও কর্মকর্তা সমির কুমার সেন

আপডেট সময় :

রাজবাড়ী সদর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সমীর কুমার সেন–এর বিরুদ্ধে এক নারী গ্রাহককে ঋণ না দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীর দাবি, প্রকল্পের নিয়ম মেনে সব ধাপ সম্পন্ন করার পরও কর্মকর্তা ব্যক্তিগত কারণে ঋণ আটকে দেন এবং উল্টো তাকে অফিসে ডেকে এনে অপমান ও অশালীন ভাষায় গালাগাল করেন।পরে ঋন কেন দিবেন না তাহলে বার বার অফিসে আসতে বলেন কেন এমন কথা বলা হলে তিনি ঋন গ্রহিতাকে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন।এক পর্যায়ে তার গায়ে হাত তোলেন।এসময় তার বোরখার উপরে ওড়না ধরে টান দিলে তার গলার স্বর্ণের আট আনা ওজনের চেন সহ তা নিয়ে নেয় ওই কর্মকর্তা। চেনটি ওই নারী বিদেশে থাকা কালীন সময়ে কিনে ছিলেন।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের গঙ্গাপ্রসাদপুর গ্রামের সালেহা বেগমের সা‌থে। সা‌লেহা বেগম পল্লী জীবীকায়ন প্রকল্পের দীর্ঘদিনের সদস্য ও নারীদের ম্যানেজার হওসেবে কাজ করেন। তিনি জানান, এর আগে তিনি দুই দফায় ওই প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়েছিলেন—প্রথমে ৩০ হাজার এবং পরে ৪০ হাজার টাকা। প্রতিবারই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ করেন তিনি।
পরবর্তীতে সালেহা বেগম ৫০ হাজার টাকার নতুন ঋণের জন্য আবেদন করেন। প্রকল্পের মাঠ সংগঠক খায়রুল ইসলাম তার আবেদনটি উপজেলা অফিসে জমা দেন এবং নিয়ম অনুযায়ী তা প্রক্রিয়াকরণ হয়। রাজবাড়ী জেলা বিআরডিবি’র উপপরিচালক লুৎফুন নাহার সব কাগজনপত্র দেখে ঋণটি অনুমোদনও দেন।
কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বাধা দেন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সমীর কুমার সেন। সালেহা বেগমের অভিযোগ—গত কয়েক মাস ধরে তিনি অফিসে ঘুরলেও ঋণটি না দিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করছেন।বার বার আসতে বলে তাকে কারনে হয়রানি করা চ্ছেন
সালেহা বেগম বলেন, “আমার ঋণ তো পাশ হয়ে গেছে, সব কাগজপত্র ঠিক আছে। কিন্তু সমীর স্যার বারবার বলেন ‘আজ এসো’, ‘কাল এসো’। গত বৃহষ্প‌তিবার অফিসে গীয়ে তার রুমে ঢুকলে তিনি আমাকে বলেন—‘তোকে ঋণ দেব না।’ আমি কারণ জানতে চাইলে উনি রেগে গিয়ে অশালীন ভাষায় গালাগাল শুরু করেন।এক পর্যায়েবতিনি আমাট গায়ে হাত তুলেন।আমার ওড়নায় থাবা দিয়ে স্বর্ণের চেন সহ তিনি তা ছিনিয়ে নেন। পরে অফিসের অন্য লোকজন এসে উনাকে থামান।”
এ ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন পল্লী জীবীকায়ন প্রকল্প (৩য় পর্যায়) রাজবাড়ী সদর উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তা সেলিম রেজা। তিনি বলেন, “সালেহা বেগম এর আগেও দুইবার ঋণ নিয়েছে এবং নিয়ম অনুযায়ী পরিশোধ করেছে। এবারও ঋণ পাশ হয়েছিল। কিন্তু সমীর স্যার কোনো কারণ ছাড়াই তাকে ঋন না দিয়ে হয়রানি করছেন। বৃহস্পতিবার দিন অফিসে গিয়ে আমি নিজেও উনার রূঢ় আচরণের শিকার হই। উনি আমাকে পর্যন্ত হুমকি দেন এবং অশালীন ভাষায় কথা বলেন। তার এমন আচরণ মাঠপর্যায়ে আমাদের কাজ করতে বাধাগ্রস্ত করছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সমীর কুমার সেন নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “সালেহা বেগম ওই প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী ঋণ পাওয়ার যোগ্য নন, তাই তার আবেদন বাতিল করেছি। আমি কোনো অশালীন কথা বলিনি, বরং উল্টো উনি আমাকে লাঞ্ছিত করেছেন।ঋন গ্রহিতাকে ডেকে এনে তাকে অশালীন ভাষায় গালাগাল করা,গায়ে হাত তোলা,তার স্বর্ণের চেন ছিনিয়ে নিয়েছেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এগুলো সব মিথ্যা।উল্টো সে আমাকে পানির বোতল দিয়ে আঘাত করেছে,।
অন্যদিকে রাজবাড়ী জেলা বিআরডিবি’র উপপরিচালক লুৎফুন নাহার জানান,কাগজ পত্র সব কিছু দেখে আমি “ঋণটি অনুমোদন দিয়েছিলাম। এখন কেন উপজেলা কর্মকর্তা তা বাতিল করেছেন, সেটা জানি না। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। যদি অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে সমীর কুমার সেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।গ্রাহকে নাজেহাল ও তার গায়ে হাত তোলার বিষয়ে তিনি বলেন অভিযোগটি আনি শুনেছি,ওই নারী আমাকে অফিসে এসে জানিয়েছে।আমি তার বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছি।
স্থানীয়দের দাবি, পল্লী জীবীকায়ন প্রকল্পটি মূলত গ্রামের দরিদ্র ও স্বনির্ভর হতে ইচ্ছুক নারীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য। কিন্তু এমন হয়রানি ও ঋণ না দেওয়ার অভিযোগে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। তারা দ্রুত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।