সংবাদ শিরোনাম ::
রাজশাহীতে সরকারি প্রতিষ্ঠান সাজিয়ে চলছে প্রতারণা, নেপথ্যে উইমেন চেম্বার অব কমার্স

রাজশাহী ব্যুরো
- আপডেট সময় : ০৪:১১:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫ ১২ বার পড়া হয়েছে
তরুনদের কর্মদক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে দীর্ঘদিন থেকে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। তবে সরকারের এমন উদ্যোগে সরচেয়ে বেশি এগিয়ে এসেছে নারীরা। তাই নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে নারীদের জন্য দেয়া হয়েছে অসংখ্য প্রকল্প। এর মধ্যে বিউটিপার্লার, সেলাই মেশিন শিক্ষা, বুটিক ও ব্লক বাটিক, কম্পিউটার শিক্ষা এবং ফ্রিলান্সিং উল্লেখযোগ্য। অবশ্য সরকারের এই ক্ষুদ্র কাজ গুলো সম্পাদনের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে বা হচ্ছে বিভিন্ন এনজিও এবং সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানকে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সারাদেশে নাম সর্বস্ব বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যাদের নেই কোন কাগজপত্র, নেই কোন অফিস। আবার কেউ কেউ এটাকে পুঁজি করে দারুন ভাবে ব্যবসায় নেমেছেন। যার একটি রাজশাহী উইমেন চেম্বার অব কমার্স। রাজশাহী বিভাগের বড় বড় শিল্পপতি পত্নিদের মাথায় রেখে সংগঠনটির কমিটি সাজানো হলেও কর্তৃত্ব যেন একজনের হাতে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এই সংগঠনের দ্বারা বহু নারী উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার উল্লেখযোগ্য প্রমান রয়েছে মিডিয়ার হাতে। আবার এই সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপকর্মের কথা উঠে এসেছে মিডিয়ার অনুসন্ধানে। উইমেন চেম্বার অব কমার্সের একজন সদস্য হৈমন্তী হিমু । এই হিমুর রাজশাহী শহরে কয়েকটি বিউটিপার্লার রয়েছে। এর আগে নারী কেলেঙ্কারীর অপরাধে কয়েকবার তার প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করেছে প্রশাসন। পরে বিচার বিভাগের ফাঁক দিয়ে এই হৈমন্তী হিমু কোন না কোন ভাবে বেরিয়ে যায়। এবার তার প্রতিষ্ঠানে দেখা মিললো বাংলাদেশ সরকার লিখা সাইনবোর্ড। সেই প্রতিষ্ঠানের নাম প্রিয় দর্শিনী বিউটি পার্লার। যা রীতিমত প্রতারণার সামিল। এদিকে সরকারের প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের “এ্যাসেট প্রকল্প” এর (বিউটি পার্লার প্রশিক্ষণ) কাজ নিয়ে তিনি নানা ভাবে প্রতারণা ও দুর্নীতি করছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এ্যাসেট প্রকল্পের এই কাজ নিতে যে যে চাহিদাপত্র প্রয়োজন হয় তার বেশিরভাগই নেই এই প্রতিষ্ঠানটির। এর মধ্যে এসএসডিএ সার্টিফিকেট ও জায়গা সংকট অন্যতম। আবার প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের জন্য যথেষ্ট পরিমান নাস্তা বরাদ্দ থাকলে সেখানে দেয়া হচ্ছে মাত্র ১০ টাকার নাস্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, তারা যে আশা নিয়ে এখানে শিখতে এসেছি তা সম্পুর্ন ব্যর্থ হচ্ছে। কারন সেখানে জায়গা সংকটের অযুহাতে দেখিয়ে কাজ শেখানো হচ্ছে না।
এব্যাপারে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এর সদস্য হৈমন্তী হিমুর সাথে কথা হলে তিনি জানান, রাজশাহীতে আমার দুইটা পার্লার রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী নিউমার্কেট সংলগ্ন একটি এ্যরিস্টকাট বিউটি পার্লার। এখানে সরকারের এ্যাসেট প্রকল্পের অধিনে বিউটিফিকেশনের উপর ২৪ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এই প্রকল্প নিতে যে কাগজপত্র প্রয়োজন সেগুলো রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এই প্রকল্প আমার নয়, এটি রাজশাহী উইমেন চেম্বার অব কমার্সের। তাদের প্রকল্প, আমাদের এখানে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় মাত্র। অর্থাৎ তার কথায় স্পস্ট হৈমন্তী হিমুর প্রতিষ্ঠানের কোন কাগজপত্র নাই। আর প্রশিক্ষনের যাবতীয় খরচ দেন এবং দেখভাল করেন উইমেন চেম্বার। আপনি সেখানকার প্রেসিডেন্ট রোজিটি নাজনীনের সাথে কথা বলেন।
এরপর কথা হয় রাজশাহী উইমেন চেম্বার অব কমার্স এর প্রেসিডেন্ট রোজিটি নাজনীনের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প দেয়া হয়। নাস্তা কয় টাকার দেন জানতে চাইলে, তিনি জানান প্রতিদিন মাথা প্রতি ২০ টাকা। প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে বাংলাদেশ সরকার লিখতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না। যদি এটা কেউ করে থাকে তাহলে ভুল করেছে। আমি ঠিক করে দিতে বলবো।
এসকল অভিযোগের ব্যাপারে এ্যাসেট প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সবেমাত্র যোগাযোগ দান করেছি তাই তেমন কিছু জানা নাই। আপনার অভিযোগগুলো জানলাম। আপনি বললেন, আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। তবে নিশ্চিত থাকেন, এনএসডিএ সহ প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট ছাড়া এখানে প্রকল্প (কাজ) পাওয়ার কোন সুযোগ নাই। আর সাইনবোর্ডে কেউ যদি উল্টাপাল্টা লিখে তাহলে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে।
এদিকে রাজশাহী উইমেন চেম্বার অব কমার্স নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন অসংগতি ও দুর্নীতি। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা প্রসিডেন্ট রোজিটি নাজনীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে আতাত করে ২০১৫ সালে সংগঠনটির যাত্রা শুরু করেছিলেন। বিগত ১০ বছর ধরে একই পদে বহাল তবিয়তে রাজত্ব করছেন তিনি। ভুক্তভুগীদের দাবী ২০১৬ সালে নিবন্ধন পাওয়ার পর থেকে শুরু হয় সদস্য সংগ্রহের কাজ। বিভিন্ন বয়সী নারীদের প্রলোভন দেখিয়ে সদস্য হতে উৎসাহিত করেছেন প্রেসিডেন্ট রোজিটি নাজনীন। কারো থেকে এক হাজার, কারো থেকে দুই হাজার, আবার কারো চার হাজার একশত টাকা নেওয়া হয়েছে সদস্য ভর্তির নামে। মৌসুমি নামের এক ভুক্তভোগীকে প্রলোভন দেখিয়ে বলা হয়, ১০ জন সদস্য দিতে পারলে তার সদস্য পদ ফ্রি হবে। এর সাথে দেওয়া হয়েছিল প্রকল্পের প্রলোভন। যার কোনটায় জুটেনি তার কপালে। আবার কাউকে সংগঠনের কাজ করিয়ে নিয়েও দেওয়া হয়নি মাসিক বেতন। সাধারণ সদস্যদের প্রশ্ন একটায় সদস্য ভর্তি ফি এর টাকা কোথায় যায় বা কোথায় খরচ করা হয়?