ঢাকা ০৩:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

রাতের ভোট, কারিগরদের খুঁজছে গোয়েন্দারা

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১৬০ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলের রাতের ভোটের কারিগর সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, ৯ নির্বাচন কমিশনার ও দুই নির্বাচন কমিশন সচিবসহ ১২ জনকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা। আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে সংশ্লিস্ট রাতের ভোটের কারিগররা আত্মগোপনে রয়েছে। ইতোমধ্যে এদের দেশ ত্যাগে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আদালতের এ নির্দেশ দেশের সকল সীমান্ত চেকপোষ্ট, বিজিবি বিওপি এবং সমুদ্র বন্দর, হজরত শাহজালাল রা. আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরসহ দেশের সকল বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সীমান্ত চেকপোষ্ট সমুদ্র বন্দর বিমান বন্দরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
আদালতের নির্দেশনোর বলেছেন, কাজী রকিব উদ্দিন ছাড়া নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী, মো. শাহ নেওয়াজ, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান, সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ সাদিক।
গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, ভোররাতে ভোটের বাক্স ভর্তির কারিগর দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এবং গ্রেফতারের তালিকায় আরও রয়েছেন, তারা হলেন. ফেনীর দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা সেবাস্টিয়ান রেমা, আবদুল মতিন, বাগেরহাটের তপন কুমার বিশ্বাস, বরগুনার কবীর মাহমুদ, বগুড়ার ফয়েজ আহাম্মদ, চাঁদপুরের মো. মাজেদুর রহমান খান, ঢাকার আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, খুলনার মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, ময়মনসিংহের ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, নরসিংদীর সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, নাটোরের মো. শাহরিয়াজ, নীলফামারীর নাজিয়া শিরিন, রাজশাহীর এস এম আবদুল কাদের, সাতক্ষীরার এস এম মোস্তফা কামাল, শেরপুরের আনার কলি মাহবুব, সিরাজগঞ্জের কামরুন নাহার সিদ্দিকা প্রমুখ।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন রাতের ভোটের মূল হোতা। শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় পুলিশ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ব্যালট বাক্স ভরলেও রিটার্নিং এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা রাতের ভোটের মূল বাস্তবায়নকারী। তাদের সাজা দিতে হবে।’ বরিশালে অস্বাভাবিক ফলাফলের বিষয়ে জানতে আজিয়রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে সমকাল। তিনি কথা না বলে বরং প্রতিবেদন প্রকাশ বন্ধের জন্য বিএনপি নেতাকে দিয়ে তদবির করান।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৬৪ জেলায় ৬৫ রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। ফেনীতে তপশিল ঘোষণার পর জেলা প্রশাসক বদল হয়েছিল। ঢাকা মহানগর ও চট্টগ্রাম মহানগরে বিভাগীয় কমিশনাররা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। দুই মহানগরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকরা ছিলেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে। ৪৯৪ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা ছিলেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা। ৬৭ রিটার্নিং ও ৫১২ সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার সবাই চাকরিতে রয়েছেন। সমকাল ১৩ সাবেক রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। সবাই বিষয়টি এড়িয়েছেন। তাদের চারজনের কর্মক্ষেত্রে গিয়েও সাক্ষাৎ মেলেনি।
তবে সঙ্কারের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার একাদশ নির্বাচনের ছয় রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ওএসডি করেছে। কয়েকজনকে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি করা হয়েছে। বাকিরা আগের পদেই রয়েছেন। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘যেসব কর্মকর্তা চাকরিবিধি ও আইন লঙ্ঘন করে ভোট কারচুপিতে জড়িত ছিলেন, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের।’ কবে কীভাবে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা স্পষ্ট করেননি উপদেষ্টা।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা ভোটে জয়ী ঘোষণা করে নজিরবিহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে রকিবউদ্দীনের কমিশন। ২০১৮ সালে রাতের আঁধারে ব্যালটে সিল পড়ে, তবু হুদার কমিশন তা চাপা দেয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয় আউয়ালের কমিশন, যার কারণে তা ‘আমি-ডামি’ নির্বাচন নামে পরিচিত হয়।
উপঢৌকন হিসেবে রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, এসপি ৫০ লাখ করে টাকা নিয়েছিলেন। ওসি নিয়েছিলেন ৩০ লাখ টাকা। প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল। ভোটকেন্দ্রের পুলিশ কনস্টেবলদেরও পাঁচ-সাত হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য এবং আমলাদের ভাষ্য অনুযায়ী, রাতে ভোট এইচ টি ইমাম, সেই সময়কার নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ, পুলিশ প্রধান ড. জাবেদ পাটওয়ারী, সচিব কবির বিন আনোয়ারসহ কয়েকজনের মস্তিষ্কপ্রসূত হলেও সব আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তা তা বাস্তবায়ন করেন। কেউ প্রতিরোধের চেষ্টাও করেননি। তৎকালীন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদও সহায়তাকারী ছিলেন।
এবিষয়ে নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এই তিনটি নির্বাচনই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। আর তাতে সহযোগিতা করেছে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনগুলো। ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার অধীনে এসব নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একচ্ছত্র রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, যার মূল্য দিতে হচ্ছে পুরো জাতিকে।
এদিকে আদালত সাবেক সিইসি রকিবউদ্দীন সাবেক ৯ কমিশনার ও ২ সচিবের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানায় বিএনপির করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, ৯ নির্বাচন কমিশনার ও দুই নির্বাচন কমিশন সচিবসহ ১২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান এ আদেশ দেন।
আদালতের আদেশে বলা হয়, আসামিরা বর্তমানে পলাতক আছেন। মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদের বিদেশ গমন বাতিল করার জন্য এসএস ইমিগ্রেশন (প্রশাসন) ও এসবিকে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদানের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা আবেদন করেছেন। আবেদনসহ নথি পর্যালোচনা করলাম। সার্বিক পর্যালোচনায় তদন্তকারী কর্মকর্তার দাখিলকৃত আবেদন মঞ্জুর করা হলো। এ মামলার পলাতক আসামিদের বিদেশ গমন বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এসএস ইমিগ্রেশন (প্রশাসন) ও এসবিকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।
গত ২২ জুন বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব ‘পালন না করে’ উলটো ‘ভয়-ভীতি দেখিয়ে’ জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে মামলা করে বিএনপি। এরপর মামলায় দ-বিধির ১২৪ (ক)/ ৪২০/৪০৬ ধারায় অভিযোগ সংযুক্ত করার আবেদন করা হয়।
মামলায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সিইসি কেএম নূরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ মামলার আসামি। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, একেএম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়েছে মামলায়। এ মামলায় গত ২২ জুন সাবেক সিইসি কেএম নূরুল হুদাকে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ২৩ জুন চার দিন এবং ২৭ জুন আরও চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ মামলায় গত ১ জুলাই তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে গত ২৫ জুন মগবাজার এলাকা থেকে কাজী হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

রাতের ভোট, কারিগরদের খুঁজছে গোয়েন্দারা

আপডেট সময় :

ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলের রাতের ভোটের কারিগর সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, ৯ নির্বাচন কমিশনার ও দুই নির্বাচন কমিশন সচিবসহ ১২ জনকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা। আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে সংশ্লিস্ট রাতের ভোটের কারিগররা আত্মগোপনে রয়েছে। ইতোমধ্যে এদের দেশ ত্যাগে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আদালতের এ নির্দেশ দেশের সকল সীমান্ত চেকপোষ্ট, বিজিবি বিওপি এবং সমুদ্র বন্দর, হজরত শাহজালাল রা. আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরসহ দেশের সকল বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সীমান্ত চেকপোষ্ট সমুদ্র বন্দর বিমান বন্দরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
আদালতের নির্দেশনোর বলেছেন, কাজী রকিব উদ্দিন ছাড়া নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী, মো. শাহ নেওয়াজ, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান, সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ সাদিক।
গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, ভোররাতে ভোটের বাক্স ভর্তির কারিগর দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এবং গ্রেফতারের তালিকায় আরও রয়েছেন, তারা হলেন. ফেনীর দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা সেবাস্টিয়ান রেমা, আবদুল মতিন, বাগেরহাটের তপন কুমার বিশ্বাস, বরগুনার কবীর মাহমুদ, বগুড়ার ফয়েজ আহাম্মদ, চাঁদপুরের মো. মাজেদুর রহমান খান, ঢাকার আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, খুলনার মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, ময়মনসিংহের ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, নরসিংদীর সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, নাটোরের মো. শাহরিয়াজ, নীলফামারীর নাজিয়া শিরিন, রাজশাহীর এস এম আবদুল কাদের, সাতক্ষীরার এস এম মোস্তফা কামাল, শেরপুরের আনার কলি মাহবুব, সিরাজগঞ্জের কামরুন নাহার সিদ্দিকা প্রমুখ।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন রাতের ভোটের মূল হোতা। শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় পুলিশ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ব্যালট বাক্স ভরলেও রিটার্নিং এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা রাতের ভোটের মূল বাস্তবায়নকারী। তাদের সাজা দিতে হবে।’ বরিশালে অস্বাভাবিক ফলাফলের বিষয়ে জানতে আজিয়রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে সমকাল। তিনি কথা না বলে বরং প্রতিবেদন প্রকাশ বন্ধের জন্য বিএনপি নেতাকে দিয়ে তদবির করান।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৬৪ জেলায় ৬৫ রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। ফেনীতে তপশিল ঘোষণার পর জেলা প্রশাসক বদল হয়েছিল। ঢাকা মহানগর ও চট্টগ্রাম মহানগরে বিভাগীয় কমিশনাররা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। দুই মহানগরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকরা ছিলেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে। ৪৯৪ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা ছিলেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা। ৬৭ রিটার্নিং ও ৫১২ সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার সবাই চাকরিতে রয়েছেন। সমকাল ১৩ সাবেক রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। সবাই বিষয়টি এড়িয়েছেন। তাদের চারজনের কর্মক্ষেত্রে গিয়েও সাক্ষাৎ মেলেনি।
তবে সঙ্কারের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার একাদশ নির্বাচনের ছয় রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ওএসডি করেছে। কয়েকজনকে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি করা হয়েছে। বাকিরা আগের পদেই রয়েছেন। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘যেসব কর্মকর্তা চাকরিবিধি ও আইন লঙ্ঘন করে ভোট কারচুপিতে জড়িত ছিলেন, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের।’ কবে কীভাবে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা স্পষ্ট করেননি উপদেষ্টা।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা ভোটে জয়ী ঘোষণা করে নজিরবিহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে রকিবউদ্দীনের কমিশন। ২০১৮ সালে রাতের আঁধারে ব্যালটে সিল পড়ে, তবু হুদার কমিশন তা চাপা দেয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয় আউয়ালের কমিশন, যার কারণে তা ‘আমি-ডামি’ নির্বাচন নামে পরিচিত হয়।
উপঢৌকন হিসেবে রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, এসপি ৫০ লাখ করে টাকা নিয়েছিলেন। ওসি নিয়েছিলেন ৩০ লাখ টাকা। প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল। ভোটকেন্দ্রের পুলিশ কনস্টেবলদেরও পাঁচ-সাত হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য এবং আমলাদের ভাষ্য অনুযায়ী, রাতে ভোট এইচ টি ইমাম, সেই সময়কার নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ, পুলিশ প্রধান ড. জাবেদ পাটওয়ারী, সচিব কবির বিন আনোয়ারসহ কয়েকজনের মস্তিষ্কপ্রসূত হলেও সব আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তা তা বাস্তবায়ন করেন। কেউ প্রতিরোধের চেষ্টাও করেননি। তৎকালীন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদও সহায়তাকারী ছিলেন।
এবিষয়ে নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এই তিনটি নির্বাচনই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। আর তাতে সহযোগিতা করেছে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনগুলো। ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার অধীনে এসব নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একচ্ছত্র রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, যার মূল্য দিতে হচ্ছে পুরো জাতিকে।
এদিকে আদালত সাবেক সিইসি রকিবউদ্দীন সাবেক ৯ কমিশনার ও ২ সচিবের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানায় বিএনপির করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, ৯ নির্বাচন কমিশনার ও দুই নির্বাচন কমিশন সচিবসহ ১২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান এ আদেশ দেন।
আদালতের আদেশে বলা হয়, আসামিরা বর্তমানে পলাতক আছেন। মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদের বিদেশ গমন বাতিল করার জন্য এসএস ইমিগ্রেশন (প্রশাসন) ও এসবিকে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদানের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা আবেদন করেছেন। আবেদনসহ নথি পর্যালোচনা করলাম। সার্বিক পর্যালোচনায় তদন্তকারী কর্মকর্তার দাখিলকৃত আবেদন মঞ্জুর করা হলো। এ মামলার পলাতক আসামিদের বিদেশ গমন বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এসএস ইমিগ্রেশন (প্রশাসন) ও এসবিকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।
গত ২২ জুন বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব ‘পালন না করে’ উলটো ‘ভয়-ভীতি দেখিয়ে’ জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে মামলা করে বিএনপি। এরপর মামলায় দ-বিধির ১২৪ (ক)/ ৪২০/৪০৬ ধারায় অভিযোগ সংযুক্ত করার আবেদন করা হয়।
মামলায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সিইসি কেএম নূরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ মামলার আসামি। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, একেএম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়েছে মামলায়। এ মামলায় গত ২২ জুন সাবেক সিইসি কেএম নূরুল হুদাকে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ২৩ জুন চার দিন এবং ২৭ জুন আরও চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ মামলায় গত ১ জুলাই তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে গত ২৫ জুন মগবাজার এলাকা থেকে কাজী হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।