রাত গভীর, জেগে ওঠে নীলা মার্কেট

- আপডেট সময় : ১১৫ বার পড়া হয়েছে
সন্ধ্যা নেমে আঁধারের নীরবতা যখন চারপাশকে ঘিরে ধরে ঠিক তখনই জেগে ওঠে নীলা মার্কেট। খানিকটা রাত হলেই আস্তে আস্তে নামী দামি গাড়ী হাঁকিয়ে নীলা মার্কেটে আসতে শুরু করে শহরের ধনীর দুলালীরা। শুধু তাই নয়, রাত যত গভীর হয়, নিশাচরের মতো নীলা মার্কেটে হাঁসের মাংস খেতে চলে আসে রাষ্টীয় নীতি নির্ধারক, উপদেষ্টা শিল্পপতির ছেলে, আমলা সচিব রাজনৈতিক নেতারা। নীলা মার্কেটের অস্থায়ী রেঁেস্তারায় গল্প, আড্ডা, বিনোদন আর ভরপুর খাওয়া-দাওয়ায় সব মিলিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত সরগরম থাকে পুরো এলাকা। কাকডাকা ভোরে নিশাচরের মতো যখন চোখে ঘুমের ভাব হয়, আর তখনি মনে হয় বাসা বাড়িতে যেতে হচ্ছে। আর তখন ধনীর দুলারীরা বিদায় হলেই সাঙ্গ হয় নীলা মার্কেটের সকল কার্যক্রম।
সরেজমিনে এই প্রতিবেদকের অভিজ্ঞতার আলোকে নীলা মার্কেটের হাঁসের মাংস সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে একেবারে যেন কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। আমরাও হাঁসের মাংসের জন্যই সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। ভেবেছিলাম, যাবো, একটা ভালো হোটেলে বসে হাঁসের মাংস খাবো এবং ফিরে আসবো। কিন্তু নীলা মার্কেটে পৌঁছে ধারনা বদলে গেল।
গত শুক্রবার ছুটির দিনের সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমরা চারজন পৌঁছলাম নীলা মার্কেটে। গাড়ি থেকে নেমেই দেখি ভিড়ে ঠাসা এলাকা। কেউ ঘুরছেন, কেউ কেনাকাটায় ব্যস্ত, কেউ আবার ডুবে আছেন খাবারের স্বাদে। কাষ্টমাওে গিঁজ গিঁজ করছে হাঁসের মাংসের দোকানে। প্রবেশের মুখেই চোখে পড়ে গ্রামীণ লটারির হাকডাক। লটারিতে নাম উঠলেই মিলছে ডিনার সেট, জগ বা মগের মতো নানা উপহার। পাশেই চলছে জুয়ার চরকা। সেখানে হৈ চৈ হাঁক ডাক চলছে। যেন এক রঙ্গের বাজার।
সবশেষে দৃষ্টি যায় লোভনীয় এবং আলোচিত হাঁসের মাংসের দিকে। আগত ক্রেতাদের বেশিরভাগই এখানে এসেছেন হাঁসের মাংস দিয়ে রুমালি রুটি খেতে। সঙ্গে মিলছে ছিটা রুটি কিংবা চাপলির স্বাদও। জনৈক ব্যবসায়ী বলেন, মাওয়া যেমন ইলিশ মাছের জন্য বিখ্যাত, নীলা মার্কেট তেমনি হাসের মাংসের জন্য। এখানকার নিয়মও চমকপ্রদএ যেখানেই খান না কেন, হাঁসের মাংসের দাম ২৫০ টাকা ফিক্সড। শুধু হাঁস নয়, নীলা মার্কেট যেন একেবারে ফুড হাব। এখানে আছে সি-ফুড, বারবিকিউ, চাইনিজসহ নানা আয়োজন। টুনা ফিশ, কোরাল মাছ, স্কুইড, অক্টোপাস, কাঁকড়া, রূপচাঁদাসহ সামুদ্রিক মাছের লম্বা তালিকা। দাম শুরু ৩০ টাকা থেকে, কোনো কোনো আইটেমের দাম পৌঁছায় ২০০০ টাকায়। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো— যা পছন্দ করবেন, সেটাই আপনার সামনে রান্না করে দেয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে রেষ্ট্ররেণ্ট ব্যবসায়ী বলেন, এখানে বড় বড় লোকেরা আসেন। এখানে বর্তমান ড. মুহাম্মদ ইউনুস সরকারের উপদেষ্টা সজীব ভুইয়া, গন অধিকার পরিষদের প্রধান নুরুল হক নুরসহ উচ্চ পর্যায়ের অতিথিরা। ভোর পর্যন্ত এই খাবারের হোটেল খোলা থাকে। বিশেষ করে রাত যত গভীর হয়, ততই ক্রেতার সমাগম ঘটে। প্রাডো গাড়ী চরে ধনীন দুলারীরা আসেন হাঁসের মাংস খেতে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী বলেন, এখানকার আরেকটি বড় আকর্ষণ গরম গরম মিষ্টি। সকালে তৈরি হয় আর দুপুর থেকেই বিক্রি শুরু। বালিশ মিষ্টি, রসমলাই, ক্ষীর মালাই, বেবি সুইটস, ছানা, রাজভোগ, গোলাপ জাম, লেংচা— তালিকায় আছে প্রায় সবকিছুই। সেখানে গিয়ে রাত সাড়ে দশটার দিকে দেখা মেলে একাধিক মিডিয়া কর্মীর। তারা বলেন, আমরা প্রথমেই হাঁসের মাংস দিয়ে রুমালি রুটি এবং ছিটা রুটি খেলাম। তারপর কোরাল মাছ ফ্রাই খেলাম। এরপর কয়েক রকম মিষ্টি নিলাম। তাদের মতে, সবগুলো খাবারই সুস্বাদু ছিলো। খাওয়া দাওয়ার ফাঁকে বালু নদীর তীরে শীতল বাতাসে জমিয়ে আড্ডাও দিলাম। গরম কফি খেলাম। রাত ১১টা পর্যন্ত মিডিয়া কর্মীদের সঙ্গে নীলা মার্কেটে ছিলাম। পুরো সময়ই ছিল প্রচুর ভিড়। রাত যত গভীর হচ্ছে লোকজনের ভীড় বাড়ছে। আবার পরিবারের সকল সদস্য গাড়ি হাঁকিয়ে এসে খাবার খেল এবং পারসেল নিয়েও গেলো। দোকানিরা জানালেন, শুক্র-শনিবারসহ ছুটির দিনগুলোতে বেশি ভিড় থাকে। পাশেই দেখলাম বিনোদন স্পট। খাবারের পাশাপাশি নীলা মার্কেটে আছে বিনোদনের বিভিন্ন ব্যবস্থা। বাচ্চাদের জন্য রাইড, আর বড়দের জন্য চা-ফুচকা-চটপটি। প্রতিদিন বিকেল থেকে শুরু হয়ে মার্কেট জমজমাট থাকে মধ্যরাত পর্যন্ত। যেন রিসোটের চেয়ে কম নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধারণত শুধু নীলা মার্কেটের খাবারের কথা বলা হয় কিন্তু বন্ধু কিংবা পরিবার নিয়ে গেলে বিনোদন আর আড্ডাও জমিয়ে দেয়া যাচ্ছে। বায়ৃ দুথন আর শব্দদুষন গিঞ্জি পরিবেশ থেকে কিছু সময়ের রিফ্রেস হতে সেখানে যাওযা যায়। ব্যস্ততার ফাঁকে সারা সপ্তাহের কর্মব্যস্ততার ফাঁকে সহজেই একটা রিফ্রেশমেন্ট হয়ে যাবে।
লোকেশনের বিষয়ে জানা যায়, রাজধানীর কাছাকাছি হলেও নীলা মার্কেট কিন্তু নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মধ্যে পড়েছে। ঢাকার গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে নীলা মার্কেটের দূরত্ব ২২ কিলোমিটারের মতো। ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে নীলা মার্কেট যাওয়া যায়। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ভুলতাগামী বিআরটিসি বাস চলমান রয়েছে। সেই বাসে করেই নীলা মার্কেট যাওয়া যায়, ভাড়া পড়বে ১০ টাকা। এ ছাড়া অটোরিকশায়ও যাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে দরদাম করে যেতে হবে। তবে নিজের মোটরসাইকেল থাকলে খুব সহজেই অল্প সময়ে স্বাধীনভাবে ঘুরে আসতে পারবেন নীলা মার্কেট। নিতে পারেন হাঁসের মাংসের স্বাদ।