ঢাকা ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::

শিবচরে মৌবাক্সে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌচাষি

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০১:৪৯:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫ ৬১ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

‘মৌমাছি মৌমাছি/কোথা যাও নাচি নাচি/দাঁড়াও না একবার ভাই/ওই ফুল ফোটে বনে/ যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময় তো নাই।’ নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের এই কবিতার মত মধু চাষীরাও এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরিষার ক্ষেত থেকে মধু আহরণে। মাদারীপুর শিবচরে শর্ষেফুলের হলুদে গ্রামের চারপাশ সেজেছে। এর মধ্যে বসানো হয়েছে মৌবাক্স। ওই সব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।

মৌচাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাষীরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। আর তার ভেতর রাখা হয় একটি রাণী মৌমাছি। রাণী মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন মৌচাষীরা। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মৌ-চাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। মৌ চাষের মাধ্যমে চাষীরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব।

মৌচাষি হারুন জানান, তারা কয়েকজন মিলে শিবচর উপজেলার মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন। উপজেলার দ্বিতীয়খণ্ড ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতে ২৫০টি মৌ বাক্স বসিয়েছেন তারা। এসব বাক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় সাড়ে সাত থেকে আট মণ মধু পাওয়া যাচ্ছে। ওইসব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।

মৌবাক্স পরিচর্যাকারী শ্রমিক আনোয়ার বলেন, সপ্তাহে এক দিন মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি বাক্স থেকে গড়ে দুই কেজি মধু পাওয়া যায়। ১০০ বাক্স থেকে সপ্তাহে ২০০ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। মৌচাষি মো. সাইফুল ইসলাম শিবচরে মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন সাতক্ষীরা এলাকা থেকে। তিনি বলেন, ‘৭০টি বাক্স থেকে ১০ থেকে ১৫ মণ মধু সংগ্রহ করতে পারব। এক মাস এখানে থাকব। প্রায় ৩ লাখ টাকার মধু বিক্রি করতে পারব। পাইকারি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা মণ দরে মধু এবার বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে।

মৌচাষি আবুল কালাম বলেন, ‘মৌ চাষে খরচ অনেক। বছরে ৬/৭ মাস মধু হয় না। এ সময় মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখতে চিনি খাওয়াতে হয়। এ বছরের চিনির দামও বেশি। এ বছরের মধু সংগ্রহে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক আগে থেকে মৌ চাষ করসছি। সরকার যদি সরাসরি মধু সংগ্রহের ব্যবস্থা করত। তাহলে আমরা সঠিক দামটা পেতাম। এতে আমাদের লাভ হতো বেশি।’

মৌচাষি শাহেদ আলী বলেন, মৌচাষিদের মধু আহরণের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মধু সংরক্ষণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা সরকারিভাবে নেওয়া প্রয়োজন। সংরক্ষণ করতে পারলে মৌচাষিরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৩ জন মৌচাষি ১৬১০টি মৌ বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। সাধারণত অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে বেশি পরিমাণে মধু সংগ্রহ করা যায়। মৌবাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহে মৌচাষি ও শর্ষেচাষি—উভয়ই লাভবান হয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, মধু চাষের মাধ্যমে মৌচাষিরা যেমন বাড়তি আয় করেন, তেমন মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে সরিষা ফুল থেকে মধু উৎপাদনের প্রধান মৌসুম। উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকেন মৌয়ালরা। সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু গুণে মানে অত্যন্ত ভালো।

তিনি আরো বলেন, সরিষা চাষিদের ও মৌ বাক্স স্থাপনকারীদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও আমরা নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ ও উৎসাহিত করছি যাতে সরিষা ক্ষেতে মৌ বাক্স স্থাপনের মাধ্যমে মৌচাষ করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শিবচরে মৌবাক্সে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌচাষি

আপডেট সময় : ০১:৪৯:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫

‘মৌমাছি মৌমাছি/কোথা যাও নাচি নাচি/দাঁড়াও না একবার ভাই/ওই ফুল ফোটে বনে/ যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময় তো নাই।’ নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের এই কবিতার মত মধু চাষীরাও এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরিষার ক্ষেত থেকে মধু আহরণে। মাদারীপুর শিবচরে শর্ষেফুলের হলুদে গ্রামের চারপাশ সেজেছে। এর মধ্যে বসানো হয়েছে মৌবাক্স। ওই সব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।

মৌচাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাষীরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। আর তার ভেতর রাখা হয় একটি রাণী মৌমাছি। রাণী মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন মৌচাষীরা। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মৌ-চাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। মৌ চাষের মাধ্যমে চাষীরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব।

মৌচাষি হারুন জানান, তারা কয়েকজন মিলে শিবচর উপজেলার মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন। উপজেলার দ্বিতীয়খণ্ড ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতে ২৫০টি মৌ বাক্স বসিয়েছেন তারা। এসব বাক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় সাড়ে সাত থেকে আট মণ মধু পাওয়া যাচ্ছে। ওইসব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।

মৌবাক্স পরিচর্যাকারী শ্রমিক আনোয়ার বলেন, সপ্তাহে এক দিন মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি বাক্স থেকে গড়ে দুই কেজি মধু পাওয়া যায়। ১০০ বাক্স থেকে সপ্তাহে ২০০ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। মৌচাষি মো. সাইফুল ইসলাম শিবচরে মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন সাতক্ষীরা এলাকা থেকে। তিনি বলেন, ‘৭০টি বাক্স থেকে ১০ থেকে ১৫ মণ মধু সংগ্রহ করতে পারব। এক মাস এখানে থাকব। প্রায় ৩ লাখ টাকার মধু বিক্রি করতে পারব। পাইকারি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা মণ দরে মধু এবার বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে।

মৌচাষি আবুল কালাম বলেন, ‘মৌ চাষে খরচ অনেক। বছরে ৬/৭ মাস মধু হয় না। এ সময় মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখতে চিনি খাওয়াতে হয়। এ বছরের চিনির দামও বেশি। এ বছরের মধু সংগ্রহে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক আগে থেকে মৌ চাষ করসছি। সরকার যদি সরাসরি মধু সংগ্রহের ব্যবস্থা করত। তাহলে আমরা সঠিক দামটা পেতাম। এতে আমাদের লাভ হতো বেশি।’

মৌচাষি শাহেদ আলী বলেন, মৌচাষিদের মধু আহরণের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মধু সংরক্ষণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা সরকারিভাবে নেওয়া প্রয়োজন। সংরক্ষণ করতে পারলে মৌচাষিরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৩ জন মৌচাষি ১৬১০টি মৌ বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। সাধারণত অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে বেশি পরিমাণে মধু সংগ্রহ করা যায়। মৌবাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহে মৌচাষি ও শর্ষেচাষি—উভয়ই লাভবান হয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, মধু চাষের মাধ্যমে মৌচাষিরা যেমন বাড়তি আয় করেন, তেমন মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে সরিষা ফুল থেকে মধু উৎপাদনের প্রধান মৌসুম। উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকেন মৌয়ালরা। সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু গুণে মানে অত্যন্ত ভালো।

তিনি আরো বলেন, সরিষা চাষিদের ও মৌ বাক্স স্থাপনকারীদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও আমরা নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ ও উৎসাহিত করছি যাতে সরিষা ক্ষেতে মৌ বাক্স স্থাপনের মাধ্যমে মৌচাষ করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়।