ঢাকা ০২:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ডামুড্যা উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত Logo পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করা হয় Logo `প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে হবে’ Logo খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা, ঘটছে দূর্ঘটনা Logo ঝিনাইদহে তরুন শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পলিথিন নিষিদ্ধ অভিযান Logo হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ঘোষণা Logo অফিস সময়ে রান্না পশ্চিমাঞ্চল রেলের কর্মচারীদরে, কাজে অনীহার অভিযোগ Logo তিতাসে পারফরমেন্স বেজড গ্র্যান্টস স্কিমের আওতায় কৃতি শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ Logo কাঁঠালিয়া মাদক সেবনে বাঁধা দেওয়ায় ভাই ভাবীকে পিটিয়ে জখম Logo গোমস্তাপুরে কৃতি শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ

শোকের মাতম, স্তব্ধ দেশ

মহিউদ্দিন তুষার
  • আপডেট সময় : ৩৯ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

উত্তরায় প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২০ আহত ১৭০

রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বিমানটির পাইলটসহ কমপক্ষে ২০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। বৈমানিকের বিষয়েও কোনো তথ্য এখনো দেয়নি আইএসপিআর। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, তাদের কর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৯ জনের লাশ উদ্ধার করেছে। অর্ধশতাধিকের অধিক আহত ও দগ্ধকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আহতদের দেখতে আসেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ।
এ ঘটনায় আহত আরও শতাধিক শিক্ষার্থীকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতাল ও জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক এসেছে। সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। তাদের মধ্যে একজন মৃত। দগ্ধদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, উদ্ধারকাজে সহায়তায় হেলিকপ্টার, সেনাবাহিনী ও দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। শতাধিক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে।
জানা যায়, রাজধানীর তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর থেকে বিমানটি উড্ডয়নের পর পরই দুপুর ১টা ৬ মিনিটের দিকে উত্তরার মাইলস্টোনে স্কুল এন্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনের ওপর বিমানটি আছড়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেন। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক শোক বার্তায় তা জানানো হয়েছে। একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানটিতে মাঝ আকাশে আগুন ধরে গেলে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাডেমিক ভবনে আছড়ে পড়ে। সেখানে স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলছিল।
আইএসপিআর এক বিবৃতিতে বিভিন্ন হাসপাতালে আহত ও নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আহত ৮ জন, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আহত ৭০ জন ও নিহত ২ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএসএইচ) আহত ১৪ জন ও নিহত ১১ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটালে নিহত ২ জন, উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে আহত ১১ জন ও নিহত ১ জন, উত্তরা আধুনিক হসপিটালে ৬০ আহত জন ও নিহত ১ জন এবং উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আহত একজন।
মাইলস্টোন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান, তখন বেলা ১টা ১০ মিনিট। হঠাৎ করে শব্দ শুনতে পাই। সে সময় আমি লাইব্রেরিতে ছিলাম। বের হয়ে দেখি একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে দোতলা ভবনের পাশে পড়ে আছে। বিমানটি আছড়ে পড়তেই ঘটনাস্থল থেকে ধোঁয়া বের হতে শুরু করে। দুর্ঘটনায় ক্লাসে থাকা শিক্ষার্থীরা আহত হয়।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় হতাহতদের উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের খুঁজতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ভিড় করেছেন স্বজনরা। মাইলস্টোন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিয়ার খোঁজে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে আসেন তার মা। এই হাসপাতালে তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জরুরি বিভাগের সামনে মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা মেয়ের ছবি দেখে জানান, আফিয়াকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে আফিয়ার মা বলেন, আমার মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে, আমি আমার মেয়েকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। একটু বলেন আমার মেয়ে কোথায় আছে।
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সামিয়ার বাবা আব্দুর রহিম ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, আমি স্কুলে গিয়েছি, আমার বাচ্চাকে আনতে। দুপুর ১টা বাজে ছুটি হয়, আমি পৌঁছেছি ১টা ৪ মিনিটে। এরপর আমার বড় ছেলে ফোন দিয়ে বলল ওর (সামিয়া) ছুটি ২টায়। এ কথা শুনে আমি গেট থেকে সরেছি, এর মধ্যেই ওই প্লেনটা এলো। প্লেনটা এসেই ভবনের উপর পড়ল। তখন শুধু একটা বিকট শব্দ শুনেছি। এরপরই দেখি, আগুন। তখনতো আমি পাগল হয়ে গেছি, আমার মেয়ের জন্য। আমার মেয়ের আগে অনেক মেয়ে বের হলো। আমার মেয়ে ছিল দোতলায়। ও ফোরে পড়ে। ওর নাম সামিয়া। ও এখন মেডিকেলে আইসিইউতে আছে। তার পরিস্থিতি এখন আল্লাহর হাতে। ডাক্তার আমাকে আশ্বাস দিয়েছে। নিজের চোখে আমার নিজের মেয়েকে পুড়তে দেখলাম। অনেক কষ্ট হয়েছে বাবা হিসেবে। আমি নিজে আমার মেয়েকে ভবনের রড ভেঙে বের করেছি।
আব্দুর রহিম আরও বলেন, আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম কীভাবে তাকে বের করব। ভবনের দোতলা থেকে একা বের করতে পারছিলাম না, এরপর আর্মি ও আরও কয়েকজন এসে সবাই রড ভেঙে বের করে এনেছি। আমি ভেবেছিলাম আমার মেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই। যখন আমি তাকে নিয়ে নিচে এলাম, তখন দেখি সে পড়ে গেছে। আমি আবার পাগল হয়ে যাই। পরে আত্মীয় স্বজনদের ফোন দিয়ে আনি। সেখান থেকে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাই। সেখানে আরও করুণ অবস্থা। এত রোগী, ডাক্তাররা পেরে উঠছেন না। অনেক রোগী, অনেক বাচ্চা।
আইএসপিআর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১১ জন, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দুজন, কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটালে দুজন, লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে দুজন, উত্তরা আধুনিক হসপিটালে একজনের লাশ রয়েছে। আর আহতদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ৭০ জন, উত্তরা আধুনিক হসপিটালে ৬০ জন, সিএমএইচে ১৪ জন, লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ১১ জন, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল আটজন এবং উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে একজন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জাতীয় বার্ন ইউনিটে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ২৮ জনের নাম জানা গেছে। ইনস্টিটিউটের ভর্তি তালিকায় এই ২৮ জনের নাম রয়েছে। তারা হলেন- শামীম ইউসুফ (১৪), মাহিন (১৫), আবিদ (১৭), রফি বড়ুয়া (২১), সায়েম (১২), সায়েম ইউসুফ (১৪), মুনতাহা (১১), নাফি () মেহেরিন(১২), আয়মান (১০), জায়েনা (১৩), ইমন(১৭), রোহান (১৪), আবিদ (৯), আশরাফ (৩৭), ইউশা (১১), পায়েল (১২), আলবেরা (১০), তাসমিয়া (১৫), মাহিয়া, অয়ন (১৪), ফয়াজ (১৪), মাসুমা (৩৮), মাহাতা (১৪), শামীম, জাকির (৫৫), নিলয় (১৪), সামিয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শোকের মাতম, স্তব্ধ দেশ

আপডেট সময় :

উত্তরায় প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২০ আহত ১৭০

রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বিমানটির পাইলটসহ কমপক্ষে ২০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। বৈমানিকের বিষয়েও কোনো তথ্য এখনো দেয়নি আইএসপিআর। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, তাদের কর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৯ জনের লাশ উদ্ধার করেছে। অর্ধশতাধিকের অধিক আহত ও দগ্ধকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আহতদের দেখতে আসেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ।
এ ঘটনায় আহত আরও শতাধিক শিক্ষার্থীকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতাল ও জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক এসেছে। সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। তাদের মধ্যে একজন মৃত। দগ্ধদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, উদ্ধারকাজে সহায়তায় হেলিকপ্টার, সেনাবাহিনী ও দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। শতাধিক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে।
জানা যায়, রাজধানীর তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর থেকে বিমানটি উড্ডয়নের পর পরই দুপুর ১টা ৬ মিনিটের দিকে উত্তরার মাইলস্টোনে স্কুল এন্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনের ওপর বিমানটি আছড়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেন। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক শোক বার্তায় তা জানানো হয়েছে। একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানটিতে মাঝ আকাশে আগুন ধরে গেলে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাডেমিক ভবনে আছড়ে পড়ে। সেখানে স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলছিল।
আইএসপিআর এক বিবৃতিতে বিভিন্ন হাসপাতালে আহত ও নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আহত ৮ জন, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আহত ৭০ জন ও নিহত ২ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএসএইচ) আহত ১৪ জন ও নিহত ১১ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটালে নিহত ২ জন, উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে আহত ১১ জন ও নিহত ১ জন, উত্তরা আধুনিক হসপিটালে ৬০ আহত জন ও নিহত ১ জন এবং উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আহত একজন।
মাইলস্টোন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান, তখন বেলা ১টা ১০ মিনিট। হঠাৎ করে শব্দ শুনতে পাই। সে সময় আমি লাইব্রেরিতে ছিলাম। বের হয়ে দেখি একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে দোতলা ভবনের পাশে পড়ে আছে। বিমানটি আছড়ে পড়তেই ঘটনাস্থল থেকে ধোঁয়া বের হতে শুরু করে। দুর্ঘটনায় ক্লাসে থাকা শিক্ষার্থীরা আহত হয়।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় হতাহতদের উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের খুঁজতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ভিড় করেছেন স্বজনরা। মাইলস্টোন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিয়ার খোঁজে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে আসেন তার মা। এই হাসপাতালে তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জরুরি বিভাগের সামনে মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা মেয়ের ছবি দেখে জানান, আফিয়াকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে আফিয়ার মা বলেন, আমার মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে, আমি আমার মেয়েকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। একটু বলেন আমার মেয়ে কোথায় আছে।
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সামিয়ার বাবা আব্দুর রহিম ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, আমি স্কুলে গিয়েছি, আমার বাচ্চাকে আনতে। দুপুর ১টা বাজে ছুটি হয়, আমি পৌঁছেছি ১টা ৪ মিনিটে। এরপর আমার বড় ছেলে ফোন দিয়ে বলল ওর (সামিয়া) ছুটি ২টায়। এ কথা শুনে আমি গেট থেকে সরেছি, এর মধ্যেই ওই প্লেনটা এলো। প্লেনটা এসেই ভবনের উপর পড়ল। তখন শুধু একটা বিকট শব্দ শুনেছি। এরপরই দেখি, আগুন। তখনতো আমি পাগল হয়ে গেছি, আমার মেয়ের জন্য। আমার মেয়ের আগে অনেক মেয়ে বের হলো। আমার মেয়ে ছিল দোতলায়। ও ফোরে পড়ে। ওর নাম সামিয়া। ও এখন মেডিকেলে আইসিইউতে আছে। তার পরিস্থিতি এখন আল্লাহর হাতে। ডাক্তার আমাকে আশ্বাস দিয়েছে। নিজের চোখে আমার নিজের মেয়েকে পুড়তে দেখলাম। অনেক কষ্ট হয়েছে বাবা হিসেবে। আমি নিজে আমার মেয়েকে ভবনের রড ভেঙে বের করেছি।
আব্দুর রহিম আরও বলেন, আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম কীভাবে তাকে বের করব। ভবনের দোতলা থেকে একা বের করতে পারছিলাম না, এরপর আর্মি ও আরও কয়েকজন এসে সবাই রড ভেঙে বের করে এনেছি। আমি ভেবেছিলাম আমার মেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই। যখন আমি তাকে নিয়ে নিচে এলাম, তখন দেখি সে পড়ে গেছে। আমি আবার পাগল হয়ে যাই। পরে আত্মীয় স্বজনদের ফোন দিয়ে আনি। সেখান থেকে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাই। সেখানে আরও করুণ অবস্থা। এত রোগী, ডাক্তাররা পেরে উঠছেন না। অনেক রোগী, অনেক বাচ্চা।
আইএসপিআর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১১ জন, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দুজন, কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটালে দুজন, লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে দুজন, উত্তরা আধুনিক হসপিটালে একজনের লাশ রয়েছে। আর আহতদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ৭০ জন, উত্তরা আধুনিক হসপিটালে ৬০ জন, সিএমএইচে ১৪ জন, লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ১১ জন, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল আটজন এবং উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে একজন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জাতীয় বার্ন ইউনিটে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ২৮ জনের নাম জানা গেছে। ইনস্টিটিউটের ভর্তি তালিকায় এই ২৮ জনের নাম রয়েছে। তারা হলেন- শামীম ইউসুফ (১৪), মাহিন (১৫), আবিদ (১৭), রফি বড়ুয়া (২১), সায়েম (১২), সায়েম ইউসুফ (১৪), মুনতাহা (১১), নাফি () মেহেরিন(১২), আয়মান (১০), জায়েনা (১৩), ইমন(১৭), রোহান (১৪), আবিদ (৯), আশরাফ (৩৭), ইউশা (১১), পায়েল (১২), আলবেরা (১০), তাসমিয়া (১৫), মাহিয়া, অয়ন (১৪), ফয়াজ (১৪), মাসুমা (৩৮), মাহাতা (১৪), শামীম, জাকির (৫৫), নিলয় (১৪), সামিয়া।