শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কা বাড়ছে

- আপডেট সময় : ১১:৩৯:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫ ৫৯ বার পড়া হয়েছে
প্রতি বছরই ঈদের আগে শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় শ্রম অসন্তোষ দেখা দেয়। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিল্প এলাকাগুলোর অসন্তোষের ঝুঁকি অন্যান্যবারের তুলনায় বেড়েছে। কারণ আগে থেকেই শ্রম অসন্তোষ চলমান। শিল্প পুলিশ বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিল্প এলাকার কারখানাগুলোকে নিবিড় পর্যালোচনায় রেখেছে
ঈদের আগে দেশের বিপুলসংখ্যক শিল্প-কারখানাই শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে সমস্যায় রয়েছে। তাতে বাড়ছে শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কা। প্রতি বছরই ঈদের আগে শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় শ্রম অসন্তোষ দেখা দেয়। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিল্প এলাকাগুলোর অসন্তোষের ঝুঁকি অন্যান্যবারের তুলনায় বেড়েছে। কারণ আগে থেকেই শ্রম অসন্তোষ চলমান। শিল্প পুলিশ বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিল্প এলাকার কারখানাগুলোকে নিবিড় পর্যালোচনায় রেখেছে। শিল্প পুলিশের হিসাবে ঈদুল ফিতরের আগে বেতন-ভাতা পরিশোধ ও ছুটিসংক্রান্ত বিষয়ে দুই শতাধিক কারখানা সমস্যাসংকুল পরিস্থিতিতে রয়েছে। শিল্পখাত এবং শিল্প পুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শিল্প অধ্যুষিত দেশের আটটি এলাকা আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেটে মোট ৯ হাজার ৭১৮টি কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে আশুলিয়ায় মোট ১ হাজার ৮৪৫টি কারখানার মধ্যে ৪৮টি কারখানা সমস্যাসংকুল। গাজীপুরে মোট ২ হাজার ১৯৫টির মধ্যে ৫৬টি কারখানা সমস্যাসংকুল। চট্টগ্রামে শিল্প পুলিশের আওতাভুক্ত কারখানা রয়েছে ১ হাজার ৭২৫টি। এর মধ্যে সমস্যাসংকুল কারখানা ৩৭টি। নারায়ণগঞ্জে মোট ১ হাজার ৭৯৮টির মধ্যে সমস্যাসংকুল কারখানা রয়েছে ১২টি। ময়মনসিংহে মোট ২৬৫টি কারখানার মধ্যে সমস্যাসংকুল ২৬টি। খুলনায় মোট ৭৭৫টির মধ্যে সমস্যাসংকুল কারখানা ১৫টি। কুমিল্লায় মোট ৩৭৫টির মধ্যে সমস্যাসংকুল কারখানা আটটি। সিলেটে মোট ৭৪০টির মধ্যে চিহ্নিত সমস্যাসংকুল কারখানা একটি।
সূত্র জানায়, পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য সমস্যাসংকুল কারখানা সংখ্যা ৮৭টি আর বিকেএমইএর সদস্য কারখানা ১৭টি। সুতা-কাপড় উৎপাদনকারী বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সদস্য কারখানাগুলোর মধ্যে সমস্যাসংকুল ২০টি। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজার) আওতাধীন সমস্যাসংকুল ১৮টি কারখানা চিহ্নিত হয়েছে। আর কোনো সংগঠনের আওতায় নেই এমন সমস্যাসংকুল কারখানার সংখ্যা ৬১টি শিল্প এলাকাগুলোয় তৈরি পোশাক খাতের সমস্যাসংকুল কারখানাই সবচেয়ে বেশি। যদিও তৈরি পোশাক খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, সবসময়ই এ ধরনের সমস্যাসংকুল কারখানা ছিলো এবং এবারো আছে। ওই ধরনের কারখানাগুলোকে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর মাধ্যমে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। গোয়ন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আশুলিয়া, গাজীপুরের মতো এলাকাগুলোকে ১৫টি ক্লাস্টারে ভাগ করে নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিশেষ হটলাইন নাম্বারও কাজে লাগানো হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, ইতিমধ্যে ঈদের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে একাধিক সভা। তার মধ্যে সরকার-শ্রমিক-মালিকের ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ সভাও হয়েছে। তাতে ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকের ন্যায্য প্রাপ্য পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অন্যবারের তুলনায় এবারের শিল্প পরিস্থিতি ভিন্ন বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত তিন বছরের তথ্য ও প্রেক্ষিত বিশ্লেষণের মাধ্যমে শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে ২০৩টি কারখানা চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত কারখানাগুলোর প্রতি মাসে বেতন পরিশোধযোগ্যতাসহ বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করেছে শিল্প পুলিশ। অংশীজনদের সঙ্গে শিল্প পুলিশের বৈঠকগুলোয় কারখানা মালিকরা যাতে ঈদের আগে শ্রমিক ছাঁটাই বা লে-অফ না করে সে বিষয়ে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতাকে কেন্দ্র করে কোনো অপশক্তি যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সে বিষয়েও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধির পাশাপাশি শিল্প পুলিশ সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে।
এদিকে শিল্প পুলিশ দেশের শিল্প ও শ্রম পরিস্থিতির বর্তমান ভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কারখানার পরিস্থিতি অনুধাবনে আনুষঙ্গিক অনেক বিষয় পর্যবেক্ষণে রেখেছে। বিশেষভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে চিহ্নিত সমস্যাসঙ্কুল ২০৩টি কারখানা মালিকদের রাজনৈতিক মতাদর্শও। ২০৩টি কারখানার মধ্যে ৬৮টি কারখানা মালিক আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মতাদর্শের, ১১টি কারখানার মালিক বিএনপির রাজনৈতিক মতাদর্শের, একটির মালিক জাতীয় পার্টির মতাদর্শের এবং নির্দলীয় রাজনৈতিক মতাদর্শের মালিকদের কারখানা সংখ্যা ১২৩টি। চিহ্নিত ওসব কারখানার মধ্যে বিগত তিন বছরে ঈদের বেতন-বোনাস ও ছুটি নিয়ে ৮৯টি কারখানার অসন্তোষের ইতিহাস রয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ৪২টি, বিকেএমইএর সদস্য ১১টি, বিটিএমএর সদস্য চারটি, বেপজার আওতাধীন কারখানা সাতটি এবং কোনো সংগঠনের সদস্য নয় এমন কারখানা ২৫টি। অন্যদিকে এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের অ্যাডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেল মো. ছিবগাত উল্লাহ (পিপিএম) জানান, শিল্প পুলিশ সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। কারখানা মালিকদের সহানুভূতিশীল হতে হবে। ২০ রমজানের মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধের জন্য তাদের বলা হয়েছে। তাছাড়া সব অংশীজনকে তাগাদা দিয়ে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এবার পরিশোধ করতে হবে ফেব্রুয়ারির বেতন, ঈদ বোনাস ও মার্চের অন্তত ১৫ দিনের বেতন। অবশ্যই তা কারখানা মালিকদের জন্য চাপের। সব মিলিয়ে এবার বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। আশা করা যায় মালিকরা নির্ধারিত সময়ে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের পাশাপাশি ছুটিও দেবে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, এবার অন্যান্যবারের তুলনায় ঝুঁকিটা অনেক বেশি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রতিনিয়ত একটা গ্রুপ অস্থিতিশীলতা তৈরির কাজ করছে। পাশাপাশি এবার একবারে তিন মাসের বেতন দিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করা হচ্ছে। আর সবার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিজিএমইএ কার্যক্রম চলমান রেখেছে। বর্তমান সরকার ন্যায্য পাওনা অধিকারের বিষয়ে সচেতন। সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাছাড়া এবার একসঙ্গে দুই মাসের বেতন ও বোনাস দিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে এবারের বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জের। পরিস্থিতি সামালে ব্যাংকগুলো যেন সহায়ক ভূমিকা রাখে সে বিষয়েও অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোরও তারল্য সংকট রয়েছে। তাই সেখানেও তারল্য সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।