ঢাকা ১০:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

সংঘাত ও অস্তিত্ব সংকটে দাগনভূঞা বিএনপি

শাখাওয়াত হোসেন টিপু, দাগনভূঞা
  • আপডেট সময় : ১২:৫৮:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫ ৩২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে বিগত সতের বছরে তৃণমূল অবদান ছিল চোখে পড়ার মত। তৃণমূলের নেতা কর্মীরা  ঘর সংসার, ব্যবসা  বানিজ্যকে দূরে রেখে দলের যে কোন কর্মসূচি সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, বিনিময়ে হামলা মামলা নির্যাতন নিপীড়নের খড়কে ছিল জর্জরিত।

কেন্দ্রীয় আন্দোলন কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা ছাত্র জনতা শিখিয়েছে মাত্র ৩৬ দিনে। জুলাই আগষ্ট বিপ্লবের মূল ক্ষেত্রই ছিল রাজধানী কেন্দ্রীক। বিগত সময়ে রাজধানীর ব্যর্থ আন্দোলন সংগ্রামকে বিচার বিশ্লেষণ করে ছাত্র জনতার সিদ্ধান্ত ছিল, যে কোন মূল্যে কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে, যার কারনে ৫ আগষ্ট বিজয়ী হয়েছে বিপ্লবী ছাত্র জনতা।

পেক্ষাপট পরিবর্তনের পর ঢাকা বা বিভাগীয় শহরগুলো কিছুটা সংযত থাকলেও বেপরোয়া আচরণ করছে তৃণমূল। দলীয় সৎ ও নীতিবান নেতারাই তৃনমূলের কর্মকাণ্ডে অনেকটা বিরক্ত।

প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই বিভিন্ন জেলা উপজেলায় চাঁদাবাজি, দখল, দলীয় কোন্দলসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ফেনী জেলার দাগনভূঞায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে চরম কলহ বিরাজ করছে। নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন, অযোগ্য ও জনবিচ্ছিন্নদের পদে আসীনসহ নানা কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অতীতেও দলে দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং ছিল, তবে আপদকালীন সময়ে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই ঐক্যের সুরে কথা বলতেন।

সাম্প্রতিক সময়ে নানা কার্যক্রমে প্রশংসা কুড়াচ্ছে ফেনী জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন। তবে গত চার মাসের জেলা বিএনপির আওয়াতাধীন দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপি বেপরোয়া কর্মকান্ডে অস্বস্তিতে ফেলেছে দলের শীর্ষ নেতাদের। অল্প সময়ের ব্যবধানে চার দফায় সংঘাত- সংঘর্ষে জড়ালেও নেওয়া হয়নি দৃশ্যমান সাংগঠনিক ব্যবস্থা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন তৃণমূলের নেতা কর্মীরা।

০৫ আগস্ট শেখ হাসিনার  পতনের পর থেকে দাগনভুঞা পৌর শহরে বিএনপির দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রুপিং মারামারিসহ নানাবিধ ঘটনা ঘটে চলেছে। উক্ত ঘটনা আরো বেশী খারাপের দিকে চলে যায়, নবগঠিত উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণার পর পর নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এর জের ধরে চলতি বছরের ২৮ শে জানুয়ারি, ৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০ শে মার্চ ও সর্বশেষ ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বারবার এমন কর্মকান্ডের পরেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ও শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছেন তারা।

বিএনপির এক গ্রুপের নেতৃত্বে আছে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য মাহবুবুল হক রিপন। আর বর্তমানে মাহবুবুল হক রিপনের হাত ধরে ফেনী ছাত্র দলের বহিস্কৃত নেতা কাজী জামসেদুর রহমান ফটিক নেতৃত্ব দিচ্ছে। অন্য দিকে আরেক গ্রুপের নেতৃত্বে সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক  আকবর হোসেন ৷ তৎকালীন সরকার পতনের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত উভয়গ্রুপ, উভয় নেতাই নির্যাতিত। উভয় গ্রুপ উভয় নেতা-ই জাতীয়তাবাদী দলের কট্রর সমর্থক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বিএনপি নেতা বলেন, গত ডিসেম্বরে তৃণমূল উপেক্ষা করে প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। তারপর থেকে উপজেলার রাজনীতি একদম ভেঙে পড়ে। এতো কিছু হওয়ার পরও দলের পক্ষ থেকে এখনো দৃশ্যমান  কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে এসব কর্মকান্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। ধ্বংস করছে দাগনভূঞাতে বিএনপির রাজনীতি। দিনে দিনে কমছে ভোটারের হার।

দাগনভূঞা বিএনপির একজন সাবেক নেতা নাম না বলার শর্তে বলেন, দাগনভূঞা বিএনপি নিয়ে দলীয় কোন রাজনীতি নেই। যে যার নিজেদের স্বার্থ নিয়ে রাজনীতি করছে। বাজারের বিভিন্ন ভাগবাটোয়ারা নিয়ে মারামারি হানাহানিতে লিপ্ত রয়েছে। অন্য দিকে  বিএনপির সাধারণ সমর্থকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির এক নেতা বলেন, বর্তমান কমিটি কোন প্রভাব খাটিয়ে হয়নি। কেন্দ্রীয় ভাবে এই কমিটি করা হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ও জেলার সকল মিটিং এ বর্তমান কমিটিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আর যারা বাজারে বিশৃঙ্খলা করছে তারা দলের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এর মধ্যে আপনারা জানেন বিভিন্ন অপরাধে কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে আপনারা দেখেছেন ফটিকের চাঁদাবাজির নিউজ বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।

দাগনভূঞা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, বিএনপির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার মারামরি, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, এছাড়াও প্রায় সময় বাজারের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ক্রেতাসাধারণের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এই ক্ষেত্রে সাধারণ বিএনপি বিএনপির সমর্থকরা দুই পক্ষের গ্রুপিং এর কারনে এইবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী দলীয় ভাবে পালন করা হয়নি।

এই বিষয়ে দাগনভূঞা বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন লিটন বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের বিভিন্ন সময়ে পাল্টা পাল্টি মিছিল মিটিংয়, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার কারনে বাজারের ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে যে সময়ে বাজারে গন্ডগোল হয় তখন ক্রেতার সংখ্যা কমে যাওয়ায় কাচা বাজারের মালামাল নষ্ট হয়ে ব্যাবসায়ীরা ক্ষতি গ্রস্ত হয়। দুই পক্ষের মধ্যে ঐক্য না হলে আমরা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বাজারে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে বাধ্য হবো।

এ বিষয়ে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য এবং উপজেলার সভাপতি প্রার্থী মাহবুবুল হক রিপন বলেন, ব্যক্তি আকবর হোসেনের বিরুদ্ধে আমার কোনো মন্তব্য নেই।  দীর্ঘ ১১ বছর দলের সাংগঠনিক কাঠামো লেজেগোবরে ছিল। প্রত্যেক ইউনিয়ন, পৌর ও উপজেলা কমিটিতে উনার আশীর্বাদপুষ্ট লোকেরা আছে। না আছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা না আছে দল পরিচালনায় অভিজ্ঞতা। তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় কাউন্সিল ছাড়া উনার মনের মতো করে দলের পদবি দিয়েছেন। পদবিধারীদের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোঠায়। তাই দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের উনার মতের সঙ্গে দ্বিমত আছে। দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি জাতীয়তাবাদী সকল সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করছেন। দাগনভূঞাতে বিভিন্ন শোডাউনে তা প্রমাণিত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার বর্তমান আহ্বায়ক আকবর হোসেন বলেন, দলের দুঃসময়ে বারবার দলীয় আদর্শ ত্যাগ করে শুধু পদবির জন্য কতিপয় ব্যক্তি আমার বিরোধিতা করছেন। আমিতো উনাদের নিয়ে কাজ করতে চাই। উনাদেরকে আমন্ত্রণ জানালেও উনারা সাড়া না দিয়ে কোন সূতার টানে বিষোদ্গার করে যাচ্ছেন জানি না। আমারতো কমিটি দেওয়ার এখতিয়ার নেই। জেলা থেকে প্রস্তাবনায় কেন্দ্র কমিটি ঘোষণা দেয়। আমিতো জেল খেটেছি। মামলার খড়গ আমার ওপর নেমে এসেছে। আমার বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে, গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যারা পদপদবির লোভে দলের সুদিনে গর্ত থেকে বের হয়ে বিরোধিতা করছেন তা কতটুকু দলবান্ধব বিবেচনায় রাখছে তৃণমূলের কর্মীরা। আমাকে যখন আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টরা মিছিল থেকে পুলিশে দিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে দিয়েছে তখন উপজেলার সাবেক সহসভাপতি শাহিনা আকবর দলের হাল ধরেছেন। দলের নেতৃত্বের কারণে আমার স্ত্রীসহ আমার মাছুম সন্তানের ওপরও বর্বরোচিত হামলা করেছে ফ্যাসিস্টরা। কেউতো দলের হালও ধরেনি পাশেও থাকেনি বা সহানুভূতিও জানাননি।

আকবর হোসেন আরও বলেন, যারা দলের ত্যাগী বলে এখন সুদিনে এসে নেতা সাজতে চাচ্ছেন তারা কয়টা মামলা খেয়ে জেলে গিয়েছে বা বাড়িতে হামলা হয়েছে প্রমাণ করুক।

ফেনী জেলা বিএনপির  আহবায়ক  শেখ ফরিদ বাহার বলেন, ‘কমিটি ঘোষণার পরপরই প্রতিবাদ করেছিলাম। যারা সৃষ্টি করেছে, তারাই ধ্বংস করছে। কেন্দ্র থেকে বিষয়টি মীমাংসা করার আশ্বাস দিলেও এখনো কোন ধরনের সুরাহা হয়নি। কিছু কেন্দ্রীয় নেতা এখতিয়ার না থাকা সত্ত্বেও জেলার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছেন। এসব কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন,  দাগনভূঞা কমিটি নিয়ে যে সমস্যা হচ্ছে সেটা অচিরেই সমস্যা সমাধান হবে কেন্দ্রীয় ভাবে এই বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সংঘাত ও অস্তিত্ব সংকটে দাগনভূঞা বিএনপি

আপডেট সময় : ১২:৫৮:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

 

বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে বিগত সতের বছরে তৃণমূল অবদান ছিল চোখে পড়ার মত। তৃণমূলের নেতা কর্মীরা  ঘর সংসার, ব্যবসা  বানিজ্যকে দূরে রেখে দলের যে কোন কর্মসূচি সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, বিনিময়ে হামলা মামলা নির্যাতন নিপীড়নের খড়কে ছিল জর্জরিত।

কেন্দ্রীয় আন্দোলন কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা ছাত্র জনতা শিখিয়েছে মাত্র ৩৬ দিনে। জুলাই আগষ্ট বিপ্লবের মূল ক্ষেত্রই ছিল রাজধানী কেন্দ্রীক। বিগত সময়ে রাজধানীর ব্যর্থ আন্দোলন সংগ্রামকে বিচার বিশ্লেষণ করে ছাত্র জনতার সিদ্ধান্ত ছিল, যে কোন মূল্যে কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে, যার কারনে ৫ আগষ্ট বিজয়ী হয়েছে বিপ্লবী ছাত্র জনতা।

পেক্ষাপট পরিবর্তনের পর ঢাকা বা বিভাগীয় শহরগুলো কিছুটা সংযত থাকলেও বেপরোয়া আচরণ করছে তৃণমূল। দলীয় সৎ ও নীতিবান নেতারাই তৃনমূলের কর্মকাণ্ডে অনেকটা বিরক্ত।

প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই বিভিন্ন জেলা উপজেলায় চাঁদাবাজি, দখল, দলীয় কোন্দলসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ফেনী জেলার দাগনভূঞায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে চরম কলহ বিরাজ করছে। নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন, অযোগ্য ও জনবিচ্ছিন্নদের পদে আসীনসহ নানা কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অতীতেও দলে দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং ছিল, তবে আপদকালীন সময়ে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই ঐক্যের সুরে কথা বলতেন।

সাম্প্রতিক সময়ে নানা কার্যক্রমে প্রশংসা কুড়াচ্ছে ফেনী জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন। তবে গত চার মাসের জেলা বিএনপির আওয়াতাধীন দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপি বেপরোয়া কর্মকান্ডে অস্বস্তিতে ফেলেছে দলের শীর্ষ নেতাদের। অল্প সময়ের ব্যবধানে চার দফায় সংঘাত- সংঘর্ষে জড়ালেও নেওয়া হয়নি দৃশ্যমান সাংগঠনিক ব্যবস্থা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন তৃণমূলের নেতা কর্মীরা।

০৫ আগস্ট শেখ হাসিনার  পতনের পর থেকে দাগনভুঞা পৌর শহরে বিএনপির দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রুপিং মারামারিসহ নানাবিধ ঘটনা ঘটে চলেছে। উক্ত ঘটনা আরো বেশী খারাপের দিকে চলে যায়, নবগঠিত উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণার পর পর নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এর জের ধরে চলতি বছরের ২৮ শে জানুয়ারি, ৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০ শে মার্চ ও সর্বশেষ ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বারবার এমন কর্মকান্ডের পরেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ও শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছেন তারা।

বিএনপির এক গ্রুপের নেতৃত্বে আছে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য মাহবুবুল হক রিপন। আর বর্তমানে মাহবুবুল হক রিপনের হাত ধরে ফেনী ছাত্র দলের বহিস্কৃত নেতা কাজী জামসেদুর রহমান ফটিক নেতৃত্ব দিচ্ছে। অন্য দিকে আরেক গ্রুপের নেতৃত্বে সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক  আকবর হোসেন ৷ তৎকালীন সরকার পতনের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত উভয়গ্রুপ, উভয় নেতাই নির্যাতিত। উভয় গ্রুপ উভয় নেতা-ই জাতীয়তাবাদী দলের কট্রর সমর্থক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বিএনপি নেতা বলেন, গত ডিসেম্বরে তৃণমূল উপেক্ষা করে প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। তারপর থেকে উপজেলার রাজনীতি একদম ভেঙে পড়ে। এতো কিছু হওয়ার পরও দলের পক্ষ থেকে এখনো দৃশ্যমান  কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে এসব কর্মকান্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। ধ্বংস করছে দাগনভূঞাতে বিএনপির রাজনীতি। দিনে দিনে কমছে ভোটারের হার।

দাগনভূঞা বিএনপির একজন সাবেক নেতা নাম না বলার শর্তে বলেন, দাগনভূঞা বিএনপি নিয়ে দলীয় কোন রাজনীতি নেই। যে যার নিজেদের স্বার্থ নিয়ে রাজনীতি করছে। বাজারের বিভিন্ন ভাগবাটোয়ারা নিয়ে মারামারি হানাহানিতে লিপ্ত রয়েছে। অন্য দিকে  বিএনপির সাধারণ সমর্থকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির এক নেতা বলেন, বর্তমান কমিটি কোন প্রভাব খাটিয়ে হয়নি। কেন্দ্রীয় ভাবে এই কমিটি করা হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ও জেলার সকল মিটিং এ বর্তমান কমিটিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আর যারা বাজারে বিশৃঙ্খলা করছে তারা দলের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এর মধ্যে আপনারা জানেন বিভিন্ন অপরাধে কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে আপনারা দেখেছেন ফটিকের চাঁদাবাজির নিউজ বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।

দাগনভূঞা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, বিএনপির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার মারামরি, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, এছাড়াও প্রায় সময় বাজারের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ক্রেতাসাধারণের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এই ক্ষেত্রে সাধারণ বিএনপি বিএনপির সমর্থকরা দুই পক্ষের গ্রুপিং এর কারনে এইবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী দলীয় ভাবে পালন করা হয়নি।

এই বিষয়ে দাগনভূঞা বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন লিটন বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের বিভিন্ন সময়ে পাল্টা পাল্টি মিছিল মিটিংয়, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার কারনে বাজারের ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে যে সময়ে বাজারে গন্ডগোল হয় তখন ক্রেতার সংখ্যা কমে যাওয়ায় কাচা বাজারের মালামাল নষ্ট হয়ে ব্যাবসায়ীরা ক্ষতি গ্রস্ত হয়। দুই পক্ষের মধ্যে ঐক্য না হলে আমরা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বাজারে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে বাধ্য হবো।

এ বিষয়ে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য এবং উপজেলার সভাপতি প্রার্থী মাহবুবুল হক রিপন বলেন, ব্যক্তি আকবর হোসেনের বিরুদ্ধে আমার কোনো মন্তব্য নেই।  দীর্ঘ ১১ বছর দলের সাংগঠনিক কাঠামো লেজেগোবরে ছিল। প্রত্যেক ইউনিয়ন, পৌর ও উপজেলা কমিটিতে উনার আশীর্বাদপুষ্ট লোকেরা আছে। না আছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা না আছে দল পরিচালনায় অভিজ্ঞতা। তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় কাউন্সিল ছাড়া উনার মনের মতো করে দলের পদবি দিয়েছেন। পদবিধারীদের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোঠায়। তাই দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের উনার মতের সঙ্গে দ্বিমত আছে। দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি জাতীয়তাবাদী সকল সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করছেন। দাগনভূঞাতে বিভিন্ন শোডাউনে তা প্রমাণিত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার বর্তমান আহ্বায়ক আকবর হোসেন বলেন, দলের দুঃসময়ে বারবার দলীয় আদর্শ ত্যাগ করে শুধু পদবির জন্য কতিপয় ব্যক্তি আমার বিরোধিতা করছেন। আমিতো উনাদের নিয়ে কাজ করতে চাই। উনাদেরকে আমন্ত্রণ জানালেও উনারা সাড়া না দিয়ে কোন সূতার টানে বিষোদ্গার করে যাচ্ছেন জানি না। আমারতো কমিটি দেওয়ার এখতিয়ার নেই। জেলা থেকে প্রস্তাবনায় কেন্দ্র কমিটি ঘোষণা দেয়। আমিতো জেল খেটেছি। মামলার খড়গ আমার ওপর নেমে এসেছে। আমার বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে, গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যারা পদপদবির লোভে দলের সুদিনে গর্ত থেকে বের হয়ে বিরোধিতা করছেন তা কতটুকু দলবান্ধব বিবেচনায় রাখছে তৃণমূলের কর্মীরা। আমাকে যখন আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টরা মিছিল থেকে পুলিশে দিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে দিয়েছে তখন উপজেলার সাবেক সহসভাপতি শাহিনা আকবর দলের হাল ধরেছেন। দলের নেতৃত্বের কারণে আমার স্ত্রীসহ আমার মাছুম সন্তানের ওপরও বর্বরোচিত হামলা করেছে ফ্যাসিস্টরা। কেউতো দলের হালও ধরেনি পাশেও থাকেনি বা সহানুভূতিও জানাননি।

আকবর হোসেন আরও বলেন, যারা দলের ত্যাগী বলে এখন সুদিনে এসে নেতা সাজতে চাচ্ছেন তারা কয়টা মামলা খেয়ে জেলে গিয়েছে বা বাড়িতে হামলা হয়েছে প্রমাণ করুক।

ফেনী জেলা বিএনপির  আহবায়ক  শেখ ফরিদ বাহার বলেন, ‘কমিটি ঘোষণার পরপরই প্রতিবাদ করেছিলাম। যারা সৃষ্টি করেছে, তারাই ধ্বংস করছে। কেন্দ্র থেকে বিষয়টি মীমাংসা করার আশ্বাস দিলেও এখনো কোন ধরনের সুরাহা হয়নি। কিছু কেন্দ্রীয় নেতা এখতিয়ার না থাকা সত্ত্বেও জেলার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছেন। এসব কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন,  দাগনভূঞা কমিটি নিয়ে যে সমস্যা হচ্ছে সেটা অচিরেই সমস্যা সমাধান হবে কেন্দ্রীয় ভাবে এই বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে।