ঢাকা ০২:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::

সংস্কারের অভাব ও জনবল সঙ্কট বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক স্টেশন

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ১২:৫৩:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ৩০৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সংস্কারের অভাব এবং জনবল সঙ্কটে বাংলাদেশের রেলওয়ের শতাধিক রেল স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন মেরামত না করার কারণে পুরনো রেলপথের জরাজীর্ণ অবস্থা। ফলে প্রতিনিয়ত রেলপথে লাইনচ্যুতিসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটছে। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত নতুন করে আরো আটটি স্টেশনসহ বর্তমানে মোট ১২০টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে মাস্টার না থাকায় গত সেপ্টেম্বর মাসে জামালপুর টাউন জংশন-বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) রুটের কেন্দুয়াবাজার স্টেশনটি আংশিক বন্ধ করে দেয়া হয়। এর এক মাস আগে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ফতুল্লা স্টেশনটি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়।

জনবল না থাকায় গত বছর মে মাস থেকে আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজার রুটের ছাতকবাজার ও শাহজীবাজার গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন দুটি বন্ধ রয়েছে। এর আগে গত বছর ৭ এপ্রিল থেকে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জবাজার রুটের দুরমুট স্টেশনটি ৯ মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে। এভাবেই প্রতিমাসেই বন্ধ হচ্ছে রেলওয়ের স্টেশন। ফলে স্থানীয় যাত্রীরা পড়ছেন বিপাকে। দীর্ঘদিন স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের কোনো না কোনো অভাবে চুরি হচ্ছে রেলওয়ের মূল্যবান সম্পদ।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলওয়ের মোট রেলস্টেশনের মধ্যে পূর্বাঞ্চলে রয়েছে ২৪৩টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ২৬৮টি স্টেশন। তার মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ৬৭টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। আর পূর্বাঞ্চলে বন্ধ স্টেশন রয়েছে ৫৩টি। রেলওয়ের চার শ্রেণির স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে এ ও বি ক্লাস স্টেশন রেলওয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। আর ডি ও হল্ট ক্লাস স্টেশন মাস্টার বিহীন স্বল্প বিরতির জন্য ব্যবহার করা হয়। রেলওয়ের ১২৬টি স্টেশন ডি ও হল্ট ক্লাসের স্টেশন রয়েছে। এ ছাড়া আংশিক ও এক/দুই শিফট করে বন্ধ রয়েছে ছয়টি স্টেশন। বাকি ১১৪টি স্টেশন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। অধিকাংশ বন্ধ স্টেশনই মাস্টার সংকটের কারণে চালু করা যাচ্ছে না। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ২৪৩টি স্টেশনের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে প্রায় ৫৩টি স্টেশন দীর্ঘদিন যাবৎ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩৩টি ও চট্টগ্রাম বিভাগে ২০টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। ঢাকা বিভাগে আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজার রুটের লস্করপুর স্টেশনটি দীর্ঘ একুশ বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে ২০০৩ সালে ২৬ জুলাই স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর এই রুটে ২০০৯-১০ সালে টিলাগাঁও ও ইটাখোলা স্টেশন দুটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ছাড়া ভাটেরাবাজার, আফজালাবাদ, খাজাঞ্চিগাঁও ও ছাতকবাজার ১০ বছর যাবৎ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৮ আগস্ট লংলা স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। সূত্র জানায়, ঢাকা বিভাগে গত একুশ বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজার রুটের লস্করপুর স্টেশনটি। পরিচালনার লোক না থাকায় ২০০৩ সালের ২৬ জুলাই সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয় স্টেশনের কার্যক্রম।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী বাহুবল উপজেলায় অবস্থিত লস্করপুর রেলওয়ে স্টেশনটি। ১৮৯৬ সালে এ স্টেশন নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় স্টেশন ভবনটিতে নেই কোনো আসবাবপত্র। এই রুটের ইটাখোল, টিলাগাঁও ও লংলাসহ মোট চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশে সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া গত দুই যুগ যাবৎ বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম-গঙ্গাসাগর রুটের বারৈয়াঢালা স্টেশনটি। জনবল না থাকায় ২০০০ সালের ৩ এপ্রিল থেকে স্টেশনটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এই রুটের আরো চারটি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। সেগুলো হলো-বাড়বকুন্ড, মিরসরাই, মস্তাননগর ও মুহরীগঞ্জ। গত এক যুগ যাবৎ বন্ধ থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে রেলওয়ের প্রথম স্টেশন কুষ্টিয়ার জগতি স্টেশনের নাম। সারাদেশে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৫০৭টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে চালু রয়েছে ৩৮৭টি স্টেশন। বাকি ১২০টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে জনবল সংকটের কারণে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত নতুন করে আরো ১০টি স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়। এর মধ্যে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চারটি ও পশ্চিমাঞ্চলে ছয়টি স্টেশন নতুন করে বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া ১৬টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে ২০০৮ সাল থেকে। ২০০৯ সালে ২৬টি এবং ২০১০ সালে ৩৪টি স্টেশন বন্ধ করা হয়।

পরবর্তীতে ২০১১ সাল থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ১২০টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে কম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন বন্ধ রেখে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন চালু রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। লোকবল স্বল্পতার কারণে ২০০৭ সালে একাধিক স্টেশন বন্ধ করে দিতে হয়। গত বছর দুই শতাধিক নতুন সহকারী মাস্টার হিসেবে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু এদের বেশিরভাগ চাকরিতে যোগ দেয়নি। তাই বর্তমানের রেলওয়ে জনবল সংকটটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। সূত্র আরো জানায়, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে ২৬৪টি স্টেশনের মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৬৭টি। এর মধ্যে লালমনিরহাট বিভাগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৫টি স্টেশন হলো আলতাফ নগর, ভেলুরপাড়া, নলডাঙ্গা, চৌধুরানী, কাউগাঁ, মন্মথপুর, খোলাহাটা, অন্নদানগর, ভোমরাদহ, ভোটমারী, বাউরা, পাটগ্রাম, ত্রিমোহনী, রাজারহাট ও উলিপুর।

এ ছাড়া পাকশী বিভাগে ৫২টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা-দর্শনা রুটে ছয়টি বন্ধ স্টেশন হলো ফুলতলা, চেংগুটিয়া, রূপদিয়া, যশোর ক্যান্টনমেন্ট, মেহেরুন্নেসানগর ও আনসারবাড়ীয়া; দর্শনা-ঈশ্বরদী রুটে তিনটি বন্ধ স্টেশন হলো-জয়রামপুর, মোমিনপুর ও মুন্সীগঞ্জ। যশোর-বেনাপোল রুটে নাভারন স্টেশনটি বন্ধ; ঈশ্বরদী-সান্তাহার রুটে মালঞ্চি, ইয়াসিনপুর, বাসুদেবপুর ও সাহাগোলা চারটি স্টেশন দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া সান্তাহার-পার্বতীপুর রুটে তিলকপুর, জামালগঞ্জ ও ভবানীপুর এই তিনটি যাত্রীবাহী স্টেশন বন্ধ রয়েছে। পার্বতীপুর-চিলাহাটি রুটের বেলাইচড়ি, দারোয়ানি, মির্জাগঞ্জ; আব্দুলপুর-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর রুটে নন্দনগাছি ও নাচোল; পোড়াদহ-গোয়ালন্দঘাট রুটে জগতি, চড়াইকোল, মাছপাড়া, বেলগাছি, গোয়ালন্দবাজার ও খোকসাসহ ছয়টি স্টেশন দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। কালুখালি-ভাটিয়াপাড়াঘাট রুটে বহরপুর, নলিয়াগ্রাম, সাতৈর, বোয়ালমারীবাজার ও সহ¯্রাইল পাঁচটি স্টেশন; কাশিয়ানী-গোবরা রুটে পাঁচটি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। সেগুলো হলো চাপতা, ছোটবাহিরবাগ, চন্দ্রদিঘলিয়া, বোড়াশী ও গোবরা স্টেশন।

মাঝগ্রাম-ঢালারচর রুটে দাশুড়িয়া, টেবুনিয়া, পাবনা, দুবলিয়া, তাতীবান্ধা ও কাশিনাথপুরসহ ছয়টি স্টেশন; পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর-ভাঙ্গা রুটে খানখানাপুর-তালমা-পুকুরিয়া যাত্রীবাহী স্টেশন দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের এই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলো দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এদিকে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকসই উন্নয়ন মানে নতুনের পাশাপাশি পুরনোকে আরো সমৃদ্ধ করা। নতুন নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হলো কিন্তু পুরনো রেললাইন ও ব্রিজগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকলো। এ ক্ষেত্রে নতুন লাইন নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। আর পুরনো লাইন সংস্কার না করার কারণে ট্রেনের গতি কমে যায়। নতুন লাইন নির্মাণ হলেও প্রোডাকশন বা রেলওয়ের গতি তেমন বাড়েনি। এর কারণ পুরনো লাইন, সেতু ও স্টেশনগুলো সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

তাই সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য নতুন লাইন নির্মাণের পাশাপাশি নতুন লাইন, স্টেশন ও সেতু সংস্কারের প্রতি জোর দেয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে রেলওয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির জানান, সহকারী মাস্টার পদে জনবল নিয়োগের কাজ চলছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে বন্ধ স্টেশনগুলো পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে। জনবল সংকটের কারণে রেলওয়ের বেশিরভাগ স্টেশন বন্ধ রয়েছে। গত বছর কয়েক ধাপে কিছু জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেছে, এদের অনেকেই চাকরিতে যোগ দেয়নি। পরে শূন্যপদে আবারও নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে বন্ধ স্টেশনগুলো পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সংস্কারের অভাব ও জনবল সঙ্কট বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক স্টেশন

আপডেট সময় : ১২:৫৩:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

সংস্কারের অভাব এবং জনবল সঙ্কটে বাংলাদেশের রেলওয়ের শতাধিক রেল স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন মেরামত না করার কারণে পুরনো রেলপথের জরাজীর্ণ অবস্থা। ফলে প্রতিনিয়ত রেলপথে লাইনচ্যুতিসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটছে। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত নতুন করে আরো আটটি স্টেশনসহ বর্তমানে মোট ১২০টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে মাস্টার না থাকায় গত সেপ্টেম্বর মাসে জামালপুর টাউন জংশন-বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) রুটের কেন্দুয়াবাজার স্টেশনটি আংশিক বন্ধ করে দেয়া হয়। এর এক মাস আগে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ফতুল্লা স্টেশনটি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়।

জনবল না থাকায় গত বছর মে মাস থেকে আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজার রুটের ছাতকবাজার ও শাহজীবাজার গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন দুটি বন্ধ রয়েছে। এর আগে গত বছর ৭ এপ্রিল থেকে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জবাজার রুটের দুরমুট স্টেশনটি ৯ মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে। এভাবেই প্রতিমাসেই বন্ধ হচ্ছে রেলওয়ের স্টেশন। ফলে স্থানীয় যাত্রীরা পড়ছেন বিপাকে। দীর্ঘদিন স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের কোনো না কোনো অভাবে চুরি হচ্ছে রেলওয়ের মূল্যবান সম্পদ।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলওয়ের মোট রেলস্টেশনের মধ্যে পূর্বাঞ্চলে রয়েছে ২৪৩টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ২৬৮টি স্টেশন। তার মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ৬৭টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। আর পূর্বাঞ্চলে বন্ধ স্টেশন রয়েছে ৫৩টি। রেলওয়ের চার শ্রেণির স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে এ ও বি ক্লাস স্টেশন রেলওয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। আর ডি ও হল্ট ক্লাস স্টেশন মাস্টার বিহীন স্বল্প বিরতির জন্য ব্যবহার করা হয়। রেলওয়ের ১২৬টি স্টেশন ডি ও হল্ট ক্লাসের স্টেশন রয়েছে। এ ছাড়া আংশিক ও এক/দুই শিফট করে বন্ধ রয়েছে ছয়টি স্টেশন। বাকি ১১৪টি স্টেশন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। অধিকাংশ বন্ধ স্টেশনই মাস্টার সংকটের কারণে চালু করা যাচ্ছে না। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ২৪৩টি স্টেশনের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে প্রায় ৫৩টি স্টেশন দীর্ঘদিন যাবৎ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩৩টি ও চট্টগ্রাম বিভাগে ২০টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। ঢাকা বিভাগে আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজার রুটের লস্করপুর স্টেশনটি দীর্ঘ একুশ বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে ২০০৩ সালে ২৬ জুলাই স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর এই রুটে ২০০৯-১০ সালে টিলাগাঁও ও ইটাখোলা স্টেশন দুটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ছাড়া ভাটেরাবাজার, আফজালাবাদ, খাজাঞ্চিগাঁও ও ছাতকবাজার ১০ বছর যাবৎ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৮ আগস্ট লংলা স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। সূত্র জানায়, ঢাকা বিভাগে গত একুশ বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজার রুটের লস্করপুর স্টেশনটি। পরিচালনার লোক না থাকায় ২০০৩ সালের ২৬ জুলাই সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয় স্টেশনের কার্যক্রম।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী বাহুবল উপজেলায় অবস্থিত লস্করপুর রেলওয়ে স্টেশনটি। ১৮৯৬ সালে এ স্টেশন নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় স্টেশন ভবনটিতে নেই কোনো আসবাবপত্র। এই রুটের ইটাখোল, টিলাগাঁও ও লংলাসহ মোট চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশে সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া গত দুই যুগ যাবৎ বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম-গঙ্গাসাগর রুটের বারৈয়াঢালা স্টেশনটি। জনবল না থাকায় ২০০০ সালের ৩ এপ্রিল থেকে স্টেশনটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এই রুটের আরো চারটি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। সেগুলো হলো-বাড়বকুন্ড, মিরসরাই, মস্তাননগর ও মুহরীগঞ্জ। গত এক যুগ যাবৎ বন্ধ থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে রেলওয়ের প্রথম স্টেশন কুষ্টিয়ার জগতি স্টেশনের নাম। সারাদেশে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৫০৭টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে চালু রয়েছে ৩৮৭টি স্টেশন। বাকি ১২০টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে জনবল সংকটের কারণে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত নতুন করে আরো ১০টি স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়। এর মধ্যে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চারটি ও পশ্চিমাঞ্চলে ছয়টি স্টেশন নতুন করে বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া ১৬টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে ২০০৮ সাল থেকে। ২০০৯ সালে ২৬টি এবং ২০১০ সালে ৩৪টি স্টেশন বন্ধ করা হয়।

পরবর্তীতে ২০১১ সাল থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ১২০টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে কম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন বন্ধ রেখে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন চালু রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। লোকবল স্বল্পতার কারণে ২০০৭ সালে একাধিক স্টেশন বন্ধ করে দিতে হয়। গত বছর দুই শতাধিক নতুন সহকারী মাস্টার হিসেবে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু এদের বেশিরভাগ চাকরিতে যোগ দেয়নি। তাই বর্তমানের রেলওয়ে জনবল সংকটটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। সূত্র আরো জানায়, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে ২৬৪টি স্টেশনের মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৬৭টি। এর মধ্যে লালমনিরহাট বিভাগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৫টি স্টেশন হলো আলতাফ নগর, ভেলুরপাড়া, নলডাঙ্গা, চৌধুরানী, কাউগাঁ, মন্মথপুর, খোলাহাটা, অন্নদানগর, ভোমরাদহ, ভোটমারী, বাউরা, পাটগ্রাম, ত্রিমোহনী, রাজারহাট ও উলিপুর।

এ ছাড়া পাকশী বিভাগে ৫২টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা-দর্শনা রুটে ছয়টি বন্ধ স্টেশন হলো ফুলতলা, চেংগুটিয়া, রূপদিয়া, যশোর ক্যান্টনমেন্ট, মেহেরুন্নেসানগর ও আনসারবাড়ীয়া; দর্শনা-ঈশ্বরদী রুটে তিনটি বন্ধ স্টেশন হলো-জয়রামপুর, মোমিনপুর ও মুন্সীগঞ্জ। যশোর-বেনাপোল রুটে নাভারন স্টেশনটি বন্ধ; ঈশ্বরদী-সান্তাহার রুটে মালঞ্চি, ইয়াসিনপুর, বাসুদেবপুর ও সাহাগোলা চারটি স্টেশন দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া সান্তাহার-পার্বতীপুর রুটে তিলকপুর, জামালগঞ্জ ও ভবানীপুর এই তিনটি যাত্রীবাহী স্টেশন বন্ধ রয়েছে। পার্বতীপুর-চিলাহাটি রুটের বেলাইচড়ি, দারোয়ানি, মির্জাগঞ্জ; আব্দুলপুর-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর রুটে নন্দনগাছি ও নাচোল; পোড়াদহ-গোয়ালন্দঘাট রুটে জগতি, চড়াইকোল, মাছপাড়া, বেলগাছি, গোয়ালন্দবাজার ও খোকসাসহ ছয়টি স্টেশন দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। কালুখালি-ভাটিয়াপাড়াঘাট রুটে বহরপুর, নলিয়াগ্রাম, সাতৈর, বোয়ালমারীবাজার ও সহ¯্রাইল পাঁচটি স্টেশন; কাশিয়ানী-গোবরা রুটে পাঁচটি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। সেগুলো হলো চাপতা, ছোটবাহিরবাগ, চন্দ্রদিঘলিয়া, বোড়াশী ও গোবরা স্টেশন।

মাঝগ্রাম-ঢালারচর রুটে দাশুড়িয়া, টেবুনিয়া, পাবনা, দুবলিয়া, তাতীবান্ধা ও কাশিনাথপুরসহ ছয়টি স্টেশন; পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর-ভাঙ্গা রুটে খানখানাপুর-তালমা-পুকুরিয়া যাত্রীবাহী স্টেশন দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের এই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলো দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এদিকে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকসই উন্নয়ন মানে নতুনের পাশাপাশি পুরনোকে আরো সমৃদ্ধ করা। নতুন নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হলো কিন্তু পুরনো রেললাইন ও ব্রিজগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকলো। এ ক্ষেত্রে নতুন লাইন নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। আর পুরনো লাইন সংস্কার না করার কারণে ট্রেনের গতি কমে যায়। নতুন লাইন নির্মাণ হলেও প্রোডাকশন বা রেলওয়ের গতি তেমন বাড়েনি। এর কারণ পুরনো লাইন, সেতু ও স্টেশনগুলো সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

তাই সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য নতুন লাইন নির্মাণের পাশাপাশি নতুন লাইন, স্টেশন ও সেতু সংস্কারের প্রতি জোর দেয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে রেলওয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির জানান, সহকারী মাস্টার পদে জনবল নিয়োগের কাজ চলছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে বন্ধ স্টেশনগুলো পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে। জনবল সংকটের কারণে রেলওয়ের বেশিরভাগ স্টেশন বন্ধ রয়েছে। গত বছর কয়েক ধাপে কিছু জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেছে, এদের অনেকেই চাকরিতে যোগ দেয়নি। পরে শূন্যপদে আবারও নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে বন্ধ স্টেশনগুলো পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে।