সদরঘাট হারিয়েছে তার চিরচেনা রূপ

- আপডেট সময় : ১২:৩৮:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫ ৩৩ বার পড়া হয়েছে
ভরা ঈদ মৌসুমে দূরপাল্লার অন্য সব যানবাহনে ভিড় থাকলেও সদরঘাটে লঞ্চের চিত্র সম্পূর্ন আলাদা। যাত্রী সংকটে ভুগছে লঞ্চগুলো। যাত্রিহীন টার্মিনালে নোঙ্গর করে পড়ে আছে দীর্ঘ সময়। হাঁক ডাক দিয়েও যাত্রী পাচ্ছেন না
এক সপ্তাহ পরেই আসছে ঈদুল ফিতর। শুক্রবার থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সরকারী সকল অফিস আদালত। জরুরী ছাড়া টানা নয়দিন বন্ধ থাকছে সরকারী সকল কার্যক্রম। পাশাপাশি ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে ব্যস্ততম রাজধানী ঢাকা। রাজধানীর সিংহভাগ মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটছেন নারী ছেঁড়া গ্রামের বাড়িতে। মা বাবাসহ ঘনিষ্টজনদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ভরা ঈদ মৌসুমে দূরপাল্লার অন্য সব যানবাহনে ভিড় থাকলেও সদরঘাটে লঞ্চের চিত্র সম্পূর্ন আলাদা। যাত্রী সংকটে ভুগছে লঞ্চগুলো। যাত্রিহীন টার্মিনালে নোঙ্গর করে পড়ে আছে দীর্ঘ সময়। হাঁক ডাক দিয়েও যাত্রী পাচ্ছেন না । টার্মিনালে ডিউটিরত নিরাপত্তা কর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, তার গ্রামের বাড়ি বরিশালে। প্রায় দশ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, সদরঘাট তার সেই চিরচেনা রূপ হারিয়েছে বেশ আগেই। যাত্রীর ভিড় না থাকায় লঞ্চের সংখ্যাও কমেছে। কাটা পড়েছে অনেক লঞ্চ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই লঞ্চঘাটের এমন চিত্র। লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বরিশাল, ভান্ডারিয়া, ঝালকাঠি অঞ্চলে লঞ্চ সংখ্যা কমেছে। তবে চাঁদপুর, ভোলা চরফ্যাশন, লালমোহন, বরগুনা অঞ্চলে তেমন প্রভাব পড়েনি। পাশাপাশি মাওয়া ঘাটে একই দৃশ্য। যাত্রী সঙ্কটে, স্পীডবোর্ডসহ জলযান। যাত্রী সঙ্কট ও বেচা কেনা শূন্যের কোটায় ঘাটের বৃহৎ মার্কেট ও হোটেল ব্যবসায়িদের মাথায় হাত পড়েছে।
লঞ্চ মালিক সমিতি জানায়, আগের তুলনায় লঞ্চ কমেছে। ঢাকা থেকে প্রায় ৫০টি নৌরুটে আগে লঞ্চ ছিল ২৫০টি। যাত্রী কমায় এখন লঞ্চের সংখ্যা ১৫০টি। যাত্রী সংকটে কমেছে নৌপথও। সদরঘাট থেকে বিভিন্ন নৌপথে প্রতিদিন গড়ে ৬০-৬৫টি লঞ্চ চলাচল করছে।
লঞ্চের ম্যানেজার ও সুপারভাইজার জানায়, ঢাকা থেকে বরিশালগামী লঞ্চের ডেকের ভাড়া ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং ডাবল কেবিনের ভাড়া ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু ঈদের সময় ডেকের ভাড়া ৪০০, সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ২০০ ও ডাবল কেবিনের ভাড়া ২ হাজার ৪০০ টাকা নেওয়া হয়। তবে যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে ভাড়া না বাড়ানোর দাবি জানান লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা। তাসরিফ-১ লঞ্চের সুপারভাইজার আকতার হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় লঞ্চ রুটে প্রভাব পড়েছে। ঈদের আগে যাত্রীদের চাপে বন্ধ হয়ে যেত ঘাট। কিন্তু এখন সেটি স্বপ্নের মতো। আমাদের লঞ্চে অগ্রিম টিকেট বুকিং নেই। ঈদের আগে খুব বেশি হলে তখন ফোনে যোগাযোগ করলেই হয়।
এবিষয়ে গ্লোরি অব শ্রীনগর-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার রাকিব হোসেন বলেন, এখনও সবাই ছুটি পাননি। ছুটি পেলেই হয়তো ২৬ রোজার পর থেকে যাত্রী সংখ্যা বাড়তে পারে। যাত্রা পথে দুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চের টুকটাক কিছু মেরামত করিয়েছেন তিনি।
এছাড়া এমভি অথৈ-১ লঞ্চের সুপারভাইজার সাইদুল ইসলাম বলেন, আমার এই লঞ্চের বয়স মাত্র তিন বছর, এ জন্য বেশি কিছু মেরামত করা লাগেনি। তবে ঈদ উপলক্ষে যাত্রী হবে আশায় এসেছি ঢাকায়। টাকা লস দিয়ে আসতে হয়েছে। এখন ভিড় অনেক কম। ২৬ রোজার পর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। আমাদের অগ্রিম বুকিং এখনও শুরু হয়নি। এডভেঞ্চার-১ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. সেলিম বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার আগে পুরো রমজান যাত্রীর যে ভিড় তা এখন আর হয় না। লঞ্চে কেবিন আছে একশর বেশি। বর্তমানে ২০-২৫টি ভাড়া দিতে পারি। বাকি সকল কেবিন খালি নিয়ে রওয়ানা দিতে হয় গন্তব্যে।
অপরদিকে এমভি মানালীর সুপারভাইজার বলেন, আমাদের লঞ্চে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। বরিশাল অফিস থেকে টিকেট বিক্রি হচ্ছে। ঈদের পরের এবং আগের উভয় সময়ের টিকেট বিক্রি হচ্ছে। আমরা মূলত ১৫ রমজান থেকেই টিকেট ছেড়েছি। তবে সব লঞ্চে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়নি। এমনকি অগ্রিম টিকেট বিক্রির ব্যবস্থাপনাও নেই লঞ্চগুলোতে।
সদরঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য ফজলুল হক বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ঘাটে যাত্রী কম। বলা চলে অর্ধেকেরও কম। ২৫ রমজান থেকে ভিড় একটু বাড়বে।
এদিকে লক্কড়-ঝক্কড় লঞ্চের ব্যাপারে সতর্ক করেছে প্রশাসন। প্রতি বছর ঈদের আগে লক্কড়-ঝক্কড় লঞ্চগুলো রং করে নতুন করে ঈদযাত্রার জন্য আনলেও এবার এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি রেখেছে মালিক সমিতি ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদীবন্দর, সদরঘাট) মুহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, ঈদযাত্রা সুন্দর ও বাধা মুক্ত করতে আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। ফিটনেসবিহীন কোনো লঞ্চ চলাচল করতে পারবে না। যাত্রীদের সেবায় আরও তদারকি বাড়ানো হবে।