ঢাকা ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

সরকারী হাসপাতালগুলোতে কিডনী ডায়ালাইসিসের উপকরন সংকট

হালিম মোহাম্মদ
  • আপডেট সময় : ০২:০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫ ২২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
  • চরম ভোগান্তিতে নিম্ম-মধ্যবিত্ত রোগী

  • ভারতীয় স্যানডোর বকেয়া পরিশোধের তাগিদ

  • বকেয়া না পেয়ে চমেকে বন্ধ কিডনি ডায়ালাইসিস

  • প্রতিশ্রুতিতে ফের কিডনী ডায়ালাইসিস শুরু

বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাসে ফের কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস সেবা শুরু করেছে জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারতীয় কোম্পানি স্যানডোর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস কর্মীরা। স্যানডোর সার্ভিস ম্যানেজার নিয়াজ খান জানান, গত তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে। তাই বকেয়া টাকা আদায়ে স্যানডোরে কর্মরত চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য সেবাকর্মীরা সেবা কার্যক্রম বন্ধের এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। হাসপাতাল পরিচালক আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন পহেলা জুন তারিখের মধ্যে আমাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে। আমরা হাসপাতাল পরিচালকের আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
এর আগে গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বকেয়া বেতনের দাবিতে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ রাখে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। একই দাবিতে গতকাল সোমবারও ৩ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এতে সেবা নিতে আসা রোগীরা দুর্ভোগে পড়েন।
রাজধানীর কলেজ গেট কিডনি ইনস্টিটিউট ও ইউরোলজী হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্যানডর পাওনা বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় গতকাল মঙ্গলবার মুমুর্ষ রোগীর ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ রেখেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা। স্যানডর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর জাতীয় কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ রেখেছে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্যানডর। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দূর দূরান্ত থেকে আসা কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগীরা।
এদিকে গতবছরের ন্যায় ৩ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে রাজধানীর জাতীয় কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে ডায়ালাইসিস সেবা। এর আগে সোমবারও ৩ ঘণ্টার জন্য কর্মবিরতি পালন করেছে স্যানডরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। পাশাপাশি বাইরে ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা গুণে আর্থিক ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, সেবা পেতে গতকাল দুপুরে অনেক রোগী ৬ ঘণ্টা ধরে বসে আছেন। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই অতি দ্রুত ডায়ালাইসিসের সেবা চালু করার দাবি জানান রোগীরা৷
এদিকে স্যানডরের ম্যানেজার নিয়াজ খান বলেছেন, বাড়িভাড়াসহ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। তাই তাদের বকেয়া বেতন দ্রুত পরিশোধ করলে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন তারা।
অপরদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ডায়ালাইসিস উপকরণ নেই দিনাজপুর মেডিকেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বাইরে ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন কিডনি রোগীরা। এর আগে গতবছরের শুরুতেও একইভাবে ঘোষণা দিয়ে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রাখে ডায়ালাইসিস সেবা। পরে বকেয়া পরিশোধের আশ্বাসে পুনরায় সেবা চালু করে স্যান্ডর। গত তিন বছর ধরে সরকারের কাছে ডায়ালাইসিস ফি বাবদ ৩১ কোটি টাকা বকেয়া থাকায় বাধ্য হয়ে সেবা বন্ধের ঘোষণা দিতে হতে পারে বলে জানিয়েছে স্যান্ডর কর্তৃপক্ষ। আর বারবার সেবা বন্ধের ঘোষণায় বিপাকে পড়েন কিডনি রোগীরা।
ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের ওই নোটিশে স্যান্ডর জানায়, গত নভেম্বর থেকে অনেক কাঁচামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আংশিক এবং কেউ কেউ পূর্ণাঙ্গ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ করে নগদ মালামাল ক্রয় করে ডায়ালাইসিস সেবা চালু রাখলেও বর্তমানে আমাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ না থাকার কারণে মালামাল ক্রয় কোনও প্রকারেই সম্ভব হচ্ছে না। এমন অবস্থায় ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল স্বল্পতায় আগামী দু-একদিনের মধ্যে সেবা বিঘ্নিত হতে পারে। যেহেতু ডায়ালাইসিস সেবা অত্যন্ত স্পর্শকাতর জরুরি সেবা, সেহেতু সংশ্লিষ্ট সকল রোগীদের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অগ্রিম অনুরোধ করা হলো।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন একশোর বেশি রোগীকে ডায়ালাইসিস সেবা দিচ্ছি। প্রতিদিনই কিন্তু দেনা বাড়ছে। সেটা এখন ৩১ কোটিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই দেনা বাড়ছে কিন্তু পরিশোধ হচ্ছে একেবারে আংশিক। যার কারণে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান আসছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অমায়িক তারা সহযোগিতা করছেন। কিন্তু এখানে শুধু একপক্ষ না। সবাইকে সমানভাবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে অন্তত কোনো একটা সমাধান পাওয়া যেত। অপরদিকে চট্টগ্রামে বকেয়া টাকা না পাওয়ায় চমেক হাসপাতালে বন্ধ হলো কিডনি ডায়ালাইসিস।
অন্যদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, স্যান্ডরের সেবা বন্ধের নোটিশের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। স্যান্ডর মেডিকেইডস ও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে রোগীদের। তবে আগামী তিনদিনের ভেতর চমেক হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে ডায়ালাইসিস মেশিন চালু করা হবে।
এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান সিভয়েসকে বলেন, ‘স্যান্ডরের সঙ্গে আমরা সরাসরি সম্পর্কিত না। আমরা সরকারের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় অধিদপ্তর জানিয়েছে বিষয়টি তারা দেখছেন। আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মেশিনগুলো আগামী তিন দিনের ভেতর চালু করা সম্ভব হতে পারে। মেশিন বসানোর কাজ চলছে। স্যান্ডর ৩১টি মেশিন দিয়ে সেবা দিচ্ছে আর আমাদের চালু হবে ১৩টি। সেগুলো চালু হলে আমরা এক তৃতীয়াংশ রোগীকে সেবা দিতে পারবো। কিন্তু তাও আমাদের চাপ থাকবে অনেক। তারপরেও আমরা বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়ে বলেছি।’
এ বিষয়ে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডরের ম্যানেজার (হিসাব) নাজমুল হাসান সিভয়েসকে বলেন,সেবা বন্ধ নিয়ে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। আমরা কোনোভাবেই সেবা বন্ধ করতে চাই না বা বন্ধ করছি না। কিন্তু একটা অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে। গত তিন বছর ধরে একই সংকট চলছে। আমাদের এখন বকেয়া ৩১ কোটি টাকা। আমরাও চাকরি করি। আমরা যাদের থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও কাঁচামাল কিনে আনি তারা এখন আমাদেরকে আর বাকিতে সরবরাহ করতে চাইছে না। আর কাঁচামাল না পেলে ডায়ালাইসিস সেবা কন্টিনিউ রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ডায়ালাইসিস সেবা অনেক ব্যয়বহুল। আমরা চাই রোগীরা যেন কোনোভাবে কষ্ট না পান। তাই আগে থেকে আমরা রোগীদের জানিয়ে দিচ্ছি তারা যেন বিকল্প ব্যবস্থা করে নেন।
উল্লেখ্য,২০১৬ সাল থেকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে রাজধানীর জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউট (নিকডু) এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ডায়ালাইসিস সেন্টার পরিচালনা করে আসছে ভারতীয় কোম্পানি স্যানডোর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস।ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি হাসপাতালে সেবা দিচ্ছে স্যানডোর। মোট ডায়ালাইসিসের ১০ শতাংশ করে তারা। শুধুমাত্র জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্রতিদিন দেড় শতাধিক কিডনি রোগী ডায়ালাইসিস সেবা নিয়ে থাকেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সরকারী হাসপাতালগুলোতে কিডনী ডায়ালাইসিসের উপকরন সংকট

আপডেট সময় : ০২:০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
  • চরম ভোগান্তিতে নিম্ম-মধ্যবিত্ত রোগী

  • ভারতীয় স্যানডোর বকেয়া পরিশোধের তাগিদ

  • বকেয়া না পেয়ে চমেকে বন্ধ কিডনি ডায়ালাইসিস

  • প্রতিশ্রুতিতে ফের কিডনী ডায়ালাইসিস শুরু

বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাসে ফের কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস সেবা শুরু করেছে জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারতীয় কোম্পানি স্যানডোর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস কর্মীরা। স্যানডোর সার্ভিস ম্যানেজার নিয়াজ খান জানান, গত তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে। তাই বকেয়া টাকা আদায়ে স্যানডোরে কর্মরত চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য সেবাকর্মীরা সেবা কার্যক্রম বন্ধের এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। হাসপাতাল পরিচালক আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন পহেলা জুন তারিখের মধ্যে আমাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে। আমরা হাসপাতাল পরিচালকের আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
এর আগে গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বকেয়া বেতনের দাবিতে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ রাখে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। একই দাবিতে গতকাল সোমবারও ৩ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এতে সেবা নিতে আসা রোগীরা দুর্ভোগে পড়েন।
রাজধানীর কলেজ গেট কিডনি ইনস্টিটিউট ও ইউরোলজী হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্যানডর পাওনা বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় গতকাল মঙ্গলবার মুমুর্ষ রোগীর ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ রেখেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা। স্যানডর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর জাতীয় কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ রেখেছে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্যানডর। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দূর দূরান্ত থেকে আসা কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগীরা।
এদিকে গতবছরের ন্যায় ৩ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে রাজধানীর জাতীয় কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে ডায়ালাইসিস সেবা। এর আগে সোমবারও ৩ ঘণ্টার জন্য কর্মবিরতি পালন করেছে স্যানডরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। পাশাপাশি বাইরে ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা গুণে আর্থিক ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, সেবা পেতে গতকাল দুপুরে অনেক রোগী ৬ ঘণ্টা ধরে বসে আছেন। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই অতি দ্রুত ডায়ালাইসিসের সেবা চালু করার দাবি জানান রোগীরা৷
এদিকে স্যানডরের ম্যানেজার নিয়াজ খান বলেছেন, বাড়িভাড়াসহ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। তাই তাদের বকেয়া বেতন দ্রুত পরিশোধ করলে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন তারা।
অপরদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ডায়ালাইসিস উপকরণ নেই দিনাজপুর মেডিকেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বাইরে ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন কিডনি রোগীরা। এর আগে গতবছরের শুরুতেও একইভাবে ঘোষণা দিয়ে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রাখে ডায়ালাইসিস সেবা। পরে বকেয়া পরিশোধের আশ্বাসে পুনরায় সেবা চালু করে স্যান্ডর। গত তিন বছর ধরে সরকারের কাছে ডায়ালাইসিস ফি বাবদ ৩১ কোটি টাকা বকেয়া থাকায় বাধ্য হয়ে সেবা বন্ধের ঘোষণা দিতে হতে পারে বলে জানিয়েছে স্যান্ডর কর্তৃপক্ষ। আর বারবার সেবা বন্ধের ঘোষণায় বিপাকে পড়েন কিডনি রোগীরা।
ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের ওই নোটিশে স্যান্ডর জানায়, গত নভেম্বর থেকে অনেক কাঁচামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আংশিক এবং কেউ কেউ পূর্ণাঙ্গ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ করে নগদ মালামাল ক্রয় করে ডায়ালাইসিস সেবা চালু রাখলেও বর্তমানে আমাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ না থাকার কারণে মালামাল ক্রয় কোনও প্রকারেই সম্ভব হচ্ছে না। এমন অবস্থায় ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল স্বল্পতায় আগামী দু-একদিনের মধ্যে সেবা বিঘ্নিত হতে পারে। যেহেতু ডায়ালাইসিস সেবা অত্যন্ত স্পর্শকাতর জরুরি সেবা, সেহেতু সংশ্লিষ্ট সকল রোগীদের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অগ্রিম অনুরোধ করা হলো।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন একশোর বেশি রোগীকে ডায়ালাইসিস সেবা দিচ্ছি। প্রতিদিনই কিন্তু দেনা বাড়ছে। সেটা এখন ৩১ কোটিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই দেনা বাড়ছে কিন্তু পরিশোধ হচ্ছে একেবারে আংশিক। যার কারণে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান আসছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অমায়িক তারা সহযোগিতা করছেন। কিন্তু এখানে শুধু একপক্ষ না। সবাইকে সমানভাবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে অন্তত কোনো একটা সমাধান পাওয়া যেত। অপরদিকে চট্টগ্রামে বকেয়া টাকা না পাওয়ায় চমেক হাসপাতালে বন্ধ হলো কিডনি ডায়ালাইসিস।
অন্যদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, স্যান্ডরের সেবা বন্ধের নোটিশের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। স্যান্ডর মেডিকেইডস ও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে রোগীদের। তবে আগামী তিনদিনের ভেতর চমেক হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে ডায়ালাইসিস মেশিন চালু করা হবে।
এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান সিভয়েসকে বলেন, ‘স্যান্ডরের সঙ্গে আমরা সরাসরি সম্পর্কিত না। আমরা সরকারের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় অধিদপ্তর জানিয়েছে বিষয়টি তারা দেখছেন। আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মেশিনগুলো আগামী তিন দিনের ভেতর চালু করা সম্ভব হতে পারে। মেশিন বসানোর কাজ চলছে। স্যান্ডর ৩১টি মেশিন দিয়ে সেবা দিচ্ছে আর আমাদের চালু হবে ১৩টি। সেগুলো চালু হলে আমরা এক তৃতীয়াংশ রোগীকে সেবা দিতে পারবো। কিন্তু তাও আমাদের চাপ থাকবে অনেক। তারপরেও আমরা বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়ে বলেছি।’
এ বিষয়ে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডরের ম্যানেজার (হিসাব) নাজমুল হাসান সিভয়েসকে বলেন,সেবা বন্ধ নিয়ে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। আমরা কোনোভাবেই সেবা বন্ধ করতে চাই না বা বন্ধ করছি না। কিন্তু একটা অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে। গত তিন বছর ধরে একই সংকট চলছে। আমাদের এখন বকেয়া ৩১ কোটি টাকা। আমরাও চাকরি করি। আমরা যাদের থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও কাঁচামাল কিনে আনি তারা এখন আমাদেরকে আর বাকিতে সরবরাহ করতে চাইছে না। আর কাঁচামাল না পেলে ডায়ালাইসিস সেবা কন্টিনিউ রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ডায়ালাইসিস সেবা অনেক ব্যয়বহুল। আমরা চাই রোগীরা যেন কোনোভাবে কষ্ট না পান। তাই আগে থেকে আমরা রোগীদের জানিয়ে দিচ্ছি তারা যেন বিকল্প ব্যবস্থা করে নেন।
উল্লেখ্য,২০১৬ সাল থেকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে রাজধানীর জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউট (নিকডু) এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ডায়ালাইসিস সেন্টার পরিচালনা করে আসছে ভারতীয় কোম্পানি স্যানডোর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস।ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি হাসপাতালে সেবা দিচ্ছে স্যানডোর। মোট ডায়ালাইসিসের ১০ শতাংশ করে তারা। শুধুমাত্র জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্রতিদিন দেড় শতাধিক কিডনি রোগী ডায়ালাইসিস সেবা নিয়ে থাকেন।